শ্বসন(Respiration)জীবন বিজ্ঞান (Life science)
শ্বসন
১) শ্বসন কাকে বলে ?
উঃ যে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় কোশস্থ খাদ্য জারিত হয়ে খাদ্যস্থ স্থৈতিক শক্তির মুক্তি ঘটে তাকে শ্বসন বলে।
২) উদ্ভিদের শ্বাসস্থানগুলির নাম লেখ।
উঃ পত্ররন্ধ্র,লেন্টিসেল ও শ্বাসমূল ছিদ্র
৩) বিষমপৃষ্ঠ পাতার পত্ররন্ধ্র কোথায় অবস্থিত ?
উঃ নিম্নত্বকে
৪) সমাঙ্গ পৃষ্ঠ পাতার পত্ররন্ধ কোথায় অবস্থিত ?
উঃ উভয় ত্বকে
৫) পত্ররন্ধ্র কি দ্বারা গঠিত ?
উঃ পত্ররন্ধ্র দুটি অর্ধচন্দ্রাকৃতি জীবিত রক্ষীকোষ দ্বারা গঠিত।
৬) লেন্টিসেল কি ?
উঃ গুল্ম ও বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদের বায়বী অংশে বিশেষ করে ত্বকের বিদীর্ণ অংশে এক প্রকার ছোট ছোট ছিদ্র দেখা যায় তাদের লেন্টিসেল বলে।
৭) কোন উদ্ভিদের শ্বাসমূল দেখা যায় ?
উঃ সুন্দরী, গরান, গেঁও প্রভৃতি
৮) অ্যামিবা, হাইড্রা ও প্যারামেসিয়াম এর শ্বাস অঙ্গের নাম কি?
উঃ দেহতল
৯) আরশোলা, ফড়িং এর শ্বাস অঙ্গের নাম কি ?
উঃ ট্রাকিয়া বা শ্বাসনালী
১০) মাছের শ্বাস অঙ্গের নাম কি ?
উঃ ফুলকা
১১) বুকগিল কি ?
উঃ চিংড়ি, কাঁকড়ার ফুলকাকে বুকগিল বলে।
১২) অতিরিক্ত শ্বাসযন্ত্র দেখা যায় এমন কয়েকটি মাছের নাম লেখ।
উঃ কই, শিঙ্গি, মাগুর
১৩) মানুষের শ্বাস অঙ্গের নাম কি ?
উঃ ফুসফুস
১৪) ফুসফুসের আবরণের নাম কি ?
উঃ প্লুরা
১৫) প্রতিটি ফুসফুসে বায়ুথলির সংখ্যা কত ?
উঃ প্রায় সাড়ে তিন কোটি
১৬) মানুষের শ্বসন কৌশল প্রক্রিয়া বর্ণনা কর।
উঃ মানুষের শ্বসন প্রক্রিয়াটি দুটি পর্যায়ে সম্পন্ন হয়।যথা- প্রশ্বাস ও নিঃশ্বাস।
প্রশ্বাস বা শ্বাসগ্রহণঃ শ্বাসগ্রহণ প্রক্রিয়ায় মধ্যচ্ছদা এবং বক্ষপিঞ্জর মধ্যস্থ পেশিসমূহ প্রধান ভূমিকা পালন করে। প্রশ্বাসের সময় মধ্যচ্ছদা সংকুচিত হয়ে নীচের দিকে নেমে আসে। সেইসঙ্গে পিঞ্জরমধ্যস্থ পেশিগুলি সংকুচিত হয়। ফলে বক্ষগহবর দৈর্ঘ্যে ও প্রস্থে প্রসারিত হয়। বক্ষগহ্বর প্রসারিত হওয়ায় ফুসফুসের চাপ কমে যায় এবং ওই সময় ফুসফুসের মধ্যে বায়ুর চাপ বেশি থাকার জন্য ফুসফুস দুটি দৈর্ঘ্যে ও প্রস্থের বেড়ে যায়। ফলে প্রসারিত ফুসফুসের মধ্যে বায়ুর চাপ কমে যাওয়ায় বাইরের অক্সিজেন যুক্ত বায়ু বহিঃনাসারন্ধ্র, নাসাপথ, অন্তঃনাসারন্ধ্র, ট্রাকিয়া প্রভৃতির মাধ্যমে ফুসফুসে প্রবেশ করে বায়ুথলি গুলিকে পূর্ণ করে তোলে। এরপর বায়ুথলিতে ব্যাপন প্রক্রিয়ায় রক্তজালকের রক্তের সঙ্গে বায়ুর আদান প্রধান ঘটে শ্বাসগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
নিঃশ্বাস বা শ্বাসত্যাগঃ শ্বাসগ্রহণের পর সমস্ত শ্বাসপেশিগুলি শিথিল হওয়ায় মধ্যচ্ছদা পুনরায় ওপরে উঠে আসে এবং বক্ষপিঞ্জর আগের অবস্থায় ফিরে আসে। ফলে বক্ষগহ্বরের প্রাচীর ফুসফুসের ওপর চাপ দেয়।তখন ফুসফুস মধ্যস্থ কার্বন-ডাই-অক্সাইড যুক্ত বায়ু বিপরীত পথে বহিঃনাসারন্ধ্র দিয়ে দেহের বাইরে বেরিয়ে যায়।
এইভাবেই মানবদেহে শ্বসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
১৭) ধূমপানের ক্ষতিকারক দিকগুলি উল্লেখ কর।
উঃ ধূমপান মানুষের স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকারক। এর ক্ষতিকর দিকগুলি উল্লেখ করা হল-
ক) ধূমপানের ফলে ফুসফুসের স্থিতিস্থাপকতা হ্রাস পায়।
খ) বায়ুপথের প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়।
গ) ফুসফুসের আবরণ প্লুরা প্রদাহ দেখা দেয়।
ঘ) শ্বাসতন্ত্র সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রতিবর্ত ক্রিয়ার জটিলতা দেখা দেয়।
১৮) ধূমপানের ফলে নির্গত কয়েকটি বিষাক্ত পদার্থের নাম লেখ।
উঃ কার্বন মনোক্সাইড, কার্বন ডাই অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড, অ্যাসিটোন, হাইড্রোজেন সায়ানাইড ,বেঞ্জো পাইরিন প্রভৃতি।
১৯) দূষিত পদার্থযুক্ত ধোঁয়া ফুসফুসে কি রোগের সৃষ্টি করে?
উঃ ব্রংকাইটিস, এমফাইসীমা, ফুসফুস ও মূত্রাশয় ক্যান্সার ইত্যাদি।
২০) শ্বসনের বিক্রিয়াগুলি কোষের কোথায় সম্পন্ন হয় ?
উঃ সাইটোপ্লাজম এবং মাইটোকন্ড্রিয়ার মধ্যে সম্পন্ন হয়
২১) শ্বসনের প্রকারভেদ আলোচনা কর। যেকোনো একটি শ্বসন প্রক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা কর।
উঃ শ্বসন তিন প্রকারের হয় যথা সবাত শ্বসন, অবাত শ্বসন এবং সন্ধান।
২২) সবাত শ্বসন কাকে বলে? সবাত শ্বসন কোথায় সম্পন্ন হয় ? সবাত শ্বসন পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা কর।
উঃ যে শ্বসন পদ্ধতিতে মুক্ত অক্সিজেনের উপস্থিতিতে বায়ুজীবী জীবকোষ মধ্যস্থ শ্বসন বস্তু (গ্লুকোজ) সম্পূর্ণরূপে জারিত হয়ে কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও জল উৎপন্ন করে এবং শ্বসন বস্তু মধ্যস্থ শক্তি সম্পূর্ণরূপে নির্গত হয় তাকে সবার শ্বসন বলে।
সবাত শ্বসনের স্থানঃ এককোষী ও বহুকোষী সকল প্রকার উদ্ভিদ ও প্রাণীদেহ।
গ্লুকোজ+অক্সিজেন=কার্বন ডাই অক্সাইড+জল+শক্তি
সবাত শ্বসন প্রক্রিয়াটি তিনটি পর্যায়ে সম্পন্ন হয়। যথা-ক) গ্লাইকোলাইসিস অর্থাৎ গ্লুকোজ অনুর পাইরুভিক এসিডে পরিণত হওয়া খ) ক্রেবস চক্র অর্থাৎ পাইরুভিক এসিডের পরবর্তী জারনে কার্বন-ডাই-অক্সাইড, জল এবং শক্তি উৎপন্ন হওয়া এবং গ) প্রান্তীয় কোষ অর্থাৎ গ্লাইকোলাইসিস ও ক্রেবস চক্রে উৎপন্ন বিজারিত হাইড্রোজেন গ্রাহকগুলি মুক্ত আণবিক অক্সিজেন দ্বারা সম্পূর্ণভাবে জারিত হয়ে জল ও শক্তির সম্পূর্ণ পায়।
২৩) অবাত শ্বসন কাকে বলে ? অবাত শ্বসন কোথায় সম্পন্ন হয় ?
উঃ যে শ্বসন প্রক্রিয়ায় অবায়ুজীবী জীবকোষে, মুক্ত অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে কোশস্থ খাদ্য অক্সিজেনযুক্ত যৌগের অক্সিজেন দ্বারা অসম্পূর্ণভাবে জারিত হয়ে কার্বন-ডাই-অক্সাইড, জল ও শক্তি উৎপন্ন করে, তাকে অবাত শ্বসন বলে।
অবাত শ্বসনের স্থানঃ সালফার ব্যাকটেরিয়া, মিথেন ব্যাকটেরিয়া, ডিনাইট্রিফাইং ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদি।
২৪) সন্ধান কাকে বলে? সন্ধান প্রক্রিয়া কোথায় সংঘটিত হয়? সন্ধানের অর্থনৈতিক গুরুত্ব আলোচনা কর।
উঃ যে শ্বসন প্রক্রিয়ায় শ্বসন বস্তু (গ্লুকোজ) অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে ব্যাকটেরিয়া, ইস্ট জাতীয় ছত্রাকের দেহকোষ নিঃসৃত উৎসেচকের প্রভাবে আংশিকভাবে জারিত হয়ে বিভিন্ন জৈব যৌগ উৎপন্ন হয়ে কোষের বাইরে সঞ্চিত হয় এবং শ্বসন বস্তুস্থিত শক্তির আংশিক নির্গমন ঘটে তাকে সন্ধান বলে।
সন্ধানের অর্থনৈতিক গুরুত্বঃ অর্থনৈতিক দিক থেকে সন্ধান প্রক্রিয়ার ব্যবহারিক গুরুত্ব অপরিসীম।
ক) অ্যালকোহল প্রস্তুতিতে
খ) গবেষণাগারে এবং চিকিৎসা বিজ্ঞানে বহুল ব্যবহৃত ইথাইল অ্যালকোহল উৎপাদনে
গ) দই, ভিনিগার ইত্যাদি প্রস্তুতিতে
ঘ) পাউরুটি ও বিস্কুট কারখানায়
ঙ) নানাবিধ খাদ্য সামগ্রী ও রাসায়নিক শিল্পজাত দ্রব্য প্রস্তুতিতে সন্ধানের গুরুত্ব অপরিহার্য।
২৫) গ্লাইকোলাইসিস বলতে কী বোঝো? সংক্ষেপে গ্লাইকোলাইসিস প্রক্রিয়াটি বর্ণনা কর।
উঃ শ্বসনের প্রথম পর্যায়ে যে প্রক্রিয়ায় কোষের সাইটোপ্লাজমে গ্লুকোজ অনু বিভিন্ন উৎসেচকের প্রভাবে আংশিকভাবে জারিত হয়ে ২ অনু পাইরোভিক এ্যাসিড এবং ২ অনু ATP উৎপন্ন করে তাকে গ্লাইকোলাইসিস বলে।
গ্লাইকোলাইসিস প্রক্রিয়াঃ গ্লাইকোলাইসিস প্রক্রিয়াটির বিক্রিয়াগুলি প্রধান তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত।
প্রথম পর্যায়ঃ এই পর্যায়ে ১অনু গ্লুকোজ উৎসেচকের সহায়তায় ১অনু ছয় কার্বনযুক্ত- ১-৬ বিসফসফেট তৈরী করে।পর্যায়টি সম্পন্ন করতে ২অনু ATP প্রয়োজন হয়।
দ্বিতীয় পর্যায়ঃ এই পর্যায়ে ফ্রুকটোজ-১, ৬ বিসফসফেট ভেঙে এক অনু ৩- কার্বনযুক্ত ৩- ফসফো- গ্লিসারলডিহাইড ও এক অনু ৩ কার্বনযুক্ত বিস-হাইড্রক্সিনঅ্যাসিটোন ফসফেট তৈরি করে।
তৃতীয় পর্যায়ঃ এই পর্যায়ে ৩- ফসফোগ্লিসারালডিহাইড ভেঙে ২- ফসফোগ্লিসারিক এসিডের মাধ্যমে ২ অনু ৩- কার্বনযুক্ত পাইরুভিক এসিড এবং ২-অনু ATP উৎপন্ন হয়।
২৬) ক্রেবস চক্র কাকে বলে?
উঃ সবাত শ্বসনের যে পর্যায়ে গ্লাইকোলাইসিসে উৎপন্ন পাইরুভিক অ্যাসিড সম্পূর্ণ জারিত হয়ে বিভিন্ন প্রকার জৈব অ্যাসিড তৈরির মাধ্যমে একটি চক্রাকার পথে কার্বন ডাই অক্সাইড, জল এবং শক্তি উৎপন্ন করে তাকে ক্রেবস চক্র বলে।
২৭) ক্রেবস চক্রে উৎপাদিত বিভিন্ন জৈব অ্যাসিড গুলির মধ্যে প্রথম উৎপাদিত দ্রব্যটির নাম কি ?
উঃ সাইট্রিক অ্যাসিড
২৮) TCA -এর পুরো কথাটি কি?
উঃ ট্রাই-কার্বলিক অ্যাসিড
২৯) ক্রেবস চক্র কোথায় সম্পন্ন হয়?
উঃ মাইটোকন্ড্রিয়া
৩০) গ্লাইকোলাইসিস প্রক্রিয়া কোথায় সম্পন্ন হয়?
উঃ সাইটোপ্লাজম
৩১) শ্বসন ও দহনের পার্থক্য লেখ।
উঃ ক) শ্বসন একটি জৈব-রাসায়নিক প্রক্রিয়া ।
দহন একটি অজৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়া।
খ) শ্বসনে উৎসেচকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
দহনে উৎসেচকের কোনো ভূমিকা নেই।
গ) শ্বসনে শক্তির মুক্তি ঘটে ধীরে ধীরে।
দহনে শক্তির মুক্তি ঘটে দ্রুত।
ঘ) শ্বসন প্রতিটি জীবদেহে দিবারাত্রি চলে।
দহন যেকোনো দাহ্য বস্তুতে সম্ভব।
ঙ) শ্বসন অক্সিজেন ছাড়া ঘটতে পারে।
দহন অক্সিজেন ছাড়া সম্ভব নয়।
।
Comments
Post a Comment
Haven't doubt please let me know.