সুভাষ মুখোপাধ্যায় ও প্রমথনাথ চৌধুরীর অবদান আলোচনা কর
বাংলা গদ্য সাহিত্যের ইতিহাস
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস থেকে নানা প্রশ্ন এখানে পেয়ে যাবেন।
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে সুভাষ মুখোপাধ্যায় ও প্রমথ নাথ চৌধুরীর কাব্যপ্রতিভা সম্পর্কে আলোচনা করো।
১) রবীন্দ্রত্তর বা রবীন্দ্র পরবর্তী কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের আধুনিক কাব্য সাহিত্যে অবদান সম্পর্কে আলোচনা করো।
উঃ রবীন্দ্রোত্তর বা রবীন্দ্র পরবর্তী কবিদের মধ্যে যারা সাম্যবাদী আদর্শকে আঁকড়ে ধরেছিলেন,তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়। তিনি সাম্যবাদী আন্দোলনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন। তিনি বাংলা কবিতার জগতে সমাজ পরিবর্তনের আশা বুকে নিয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন। কবিতাকে তিনি সংগ্রামের হাতিয়ার হিসাবে নিয়েছিলেন। সুভাষ মুখোপাধ্যায় সাম্যবাদী ও সংগ্রামী মানুষের কবি নামে পরিচিত। বিদ্রোহ ও বিপ্লববাদের ধ্বজা উড়িয়ে পদাতিক নিয়ে বাংলা সাহিত্যে তার আবির্ভাব। তিনি পদাতিক কবি হিসেবে সমাধিক পরিচিত। পদাতিক কাব্যে প্রথম কবিতাটিতে তিনি বলেছেন-
" প্রিয় ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য,
ধ্বংসের মুখোমুখি আমরা,
চোখে আর স্বপ্নে নেই নীল মদ্য
কাঠ ফাট রোদ সেঁকে চামড়া"।।
এমন স্পষ্ট উচ্চারণ সেদিনের পাঠক সমাজকে আলোড়িত করেছিল। এরপর একে একে অগ্নিবেশন(১৯৪৮), চিরকুট(১৯৫০), ফুল ফুটুক না ফুটুক(১৯৫৭), যত দূরেই যাই (১৯৬২), কাল মধুমাস(১৯৬৬), ছেলে গেছে বনে(১৯৭২), যারে কাগজের নৌকা (১৯৮৯)ইত্যাদি।
কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় জীবনের সঙ্গে জীবন মিলিয়ে বালি ধুসরিত মাটির পথ চষা গান গেয়েছেন। তার কথায় ধ্বনিত হয়েছে-
" পথ আমাকে ভীষণ টানে।"
তিনি তার কবিতায় সমকালীন জীবন, সমাজ, মানুষের বেদনা, ভালোবাসা প্রভৃতিকে চিহ্নিত করেছেন। সাধারণের মুখের ভাষাকে ছন্দময়তায় কবিতার ভাষার রূপগান করেছেন। তার কবিতা পারস্পরিক কথোপকথনের মত সহজ- সরল। সেখানে রয়েছে দৈনন্দিন জীবনের মতো স্বাভাবিকতার চূড়ান্ত আশীর্বাদ--
" শতাব্দী শেষ হয়ে আসছে
একটু পা চালিয়ে ভাই; একটু পা চালিয়ে।"
বাংলা সাহিত্যে প্রমথ চৌধুরীর অবদান সম্পর্কে জানতে হলে নিচে লেখা আছে দেখে নিন-
২) বাংলা সাহিত্যে প্রমথ নাথ চৌধুরীর অবদান লেখ।
উঃ বাংলার "বীরবল" নামে পরিচিত প্রমথ চৌধুরী।তিনি বাংলা সাহিত্যে পদার্পণ করেছিলেন সবুজপত্র পত্রিকাকে অবলম্বন করে। বাংলা সাহিত্যে গদ্যরীতিতে অভিনবত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে তার অবদান অনস্বীকার্য। তিনিই প্রথম সাহিত্যিক ভাষা ও সাধারণ মানুষের মৌখিক ভাষার ব্যবধান ঘোচাতে সক্ষম হয়েছিলেন। তার সমসাময়িক পরবর্তী লেখকদের চলিত গদ্যরীতিতে সাহিত্য রচনা করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ক্রিয়া পদে অর্থ খণ্ড খন্ড বাক্যাংশ, শব্দের বিভিন্ন অর্থের প্রকাশ, বাক্যের গাঢ়োবদ্ধতা, বাগধারা, পদবিন্যাসের যথার্থ রীতি প্রমথ চৌধুরীর গদ্য রীতিতেই প্রথম দেখা গেল বাংলা সাহিত্যে যা বীরবলি গদ্য রীতি নামে পরিচিত।
বীর বলি গদ্য রীতি অবলম্বনে প্রমথ চৌধুরী বিভিন্ন প্রবন্ধ রচনা করেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল তেল নুন লকরি(১৯০৬), বীরবলের হালখাতা(১৯১৭), নানা কথা (১৯১৯), আমাদের শিক্ষা (১৯২০), নানা চর্চা (১৯৩২), রায়তের কথা (১৯২৬)।
মিতভাষিতা, হীরক কাঠিন্য বীরবলি গদ্য রীতির ও রচনা রীতির প্রধান বৈশিষ্ট্য। আমাদের অতি কথন ও অতি লেখকের ভাষা সম্বন্ধে বলেছিলেন "অনেকখানি ভাব সবে একটুখানি ভাষায় পরিণত না হলে রসক গ্রাহি লোকের নিকট তা মুখোরোচক হয় না"। তার গদ্য রীতিতে আছে সংহতি ও প্রসাদ গুণ। তার মন ছিল স্বচ্ছ, বুদ্ধিদীপ্ত যা হাল আমলের কোন ঝাঁকুনি বা কুয়াশা তার মনকে বিচলিত করতে পারেনি। তাই প্রসাদ গুন বীরবলী ভাষার অন্যতম প্রধান গুন।
Comments
Post a Comment
Haven't doubt please let me know.