ধর্মমঙ্গল কাব্যের রচয়িতা কে ? তার কাব্য প্রতিভা সম্পর্কে আলোচনা কর
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস
মঙ্গলকাব্য
ধর্মমঙ্গল
১) ধর্মমঙ্গল কাব্যের রচয়িতা কে ? তার কাব্যপ্রতিভা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উঃ ধর্মমঙ্গল কাব্যের রচয়িতা হলেন ঘনারাম চক্রবর্তী।
কবি পরিচিতিঃ
ধর্মমঙ্গল কাব্যের সর্বাধিক প্রচারিত ও শ্রেষ্ঠ কবি ঘনারাম চক্রবর্তী। তিনি বর্ধমান জেলার দামোদর নদের তীরে কৃষ্ণপুর কুকুরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ছিলেন গৌরিকান্ত এবং মাতার নাম সীতাদেবী। গুরু শ্রীরামদাসের আদেশ অনুসারে তিনি ধর্মমঙ্গ কাব্য রচনা ব্রতী হয়েছিলেন। তার প্রতি ভাই মুগ্ধ হয়ে বর্ধমানের রাজা তাকে কবিরত্ন উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন।
ধর্মমঙ্গল কাব্যের বিষয়বস্তুঃ
ধর্মমঙ্গল কাব্যের কাহিনীতে গৌড়ের রাজা নিজের শ্যালিকা রঞ্জাবতীর সঙ্গে বিপত্ননিক সামন্ত রাজা কর্ণসেনের বিবাহ দেন। কিন্তু রঞ্জাবতীর দাদা মহামদ এই বিয়ে মেনে নেননি।
ধর্মঠাকুরের কৃপায় রঞ্জাবতী পুত্র সন্তান লাভ করলে সেই পুত্রের নাম রাখা হয় লাউসেন। মহামদ যুবক লাউসেনের ক্ষতি করার জন্য বারবার তাকে বিভিন্ন ঝুঁকিবহুল যুদ্ধে পাঠাবার চক্রান্ত করলেও তিনি ধর্মঠাকুরের কৃপায় জয় লাভ করেন। ধর্ম ঠাকুরের কৃপায় যুদ্ধে নিহত হন ইছাই ঘোষ। তারপরেও মহামদের প্ররোচনায় গৌড়ের রাজা লাউসেন ধর্মঠাকুরের প্রকৃত ভক্ত কি না তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন। তিনি লাউসেনকে পশ্চিম দিকে সূর্যোদয় ঘটিয়ে ধর্মঠাকুরের ভক্ত হওয়ার প্রমাণ দিতে বলেন। হাকন্দ নামক একটি জায়গায় লাউসেন এই অসাধ্য সাধন করেন। লাউসেন যখন তপস্যারত, তখন সেই সুযোগে মহামদ ময়নাগড় আক্রমণ করেন । নিহত হন কালু ডোম এবং তার প্রথমা স্ত্রী কলিঙ্গা। লাউসেন ময়নাগরে ফিরে ধর্মঠাকুরের স্তব শুরু করলে সকলেই বেঁচে ওঠে। মহাপাপের জন্য মহামদ কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হলে লাউসেন ধর্ম ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করায় তিনি রোগ মুক্ত হন। এভাবে ধর্মঠাকুর পূজা প্রচার করে। লাউসেন তার পুত্র চিত্রসেনের হাতে রাজ্যভার দিয়ে যথাসময়ে স্বর্গারোহন করেন।
কবি প্রতিভাঃ
ঘনারাম চক্রবর্তীর কাব্যে মহাকাব্যোচিত আভিজাত্যের প্রকাশ ঘটেছে। তার কাব্যে রামায়ণ, ভাগবত, মহাভারত প্রভৃতির ছায়া যেমন দেখা যায় তেমনি পাণ্ডিত্য ও কবিত্বের অদ্ভুত মিলও লক্ষ্য করা যায়। বিভিন্ন চরিত্রচিত্রনের ক্ষেত্রে তার সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষণ শক্তি এবং বাস্তববোধের গভীর পরিচয় পাওয়া যায়। লাউসেন চরিত্রটিকে তিনি বলিষ্ঠ পুরুষ ও বীরত্বের প্রতিমূর্তি রূপে গড়ে তুলেছেন। তার সৃষ্ট নারী চরিত্র গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো রঞ্জবতি, কলিঙ্গা, কানাড়া। এদের কেউ স্নেহময়ী জননী, কেউ বীরাঙ্গনা, কেউ বা আবার লাবণ্যময়ী প্রেমিকা। শব্দ নির্বাচন এবং ছন্দ অলংকার প্রয়োগেও তিনি অসাধারণ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন।
২) ভারতচন্দ্রের বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থটির নাম ও রচনাকাল উল্লেখ কর? সংক্ষেপে কবির জীবন কথা উল্লেখ কর।
উঃ মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের রাজসভার সভাকবি ছিলেন ভারতচন্দ্র।তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থটি হল অন্নদা মঙ্গল। এই কাব্যের রচনাকাল 1674 শকাব্দ বা ১৭৫২ - ৫৩ খ্রিস্টাব্দ। এটি বাংলা মঙ্গলকাব্যের ইতিহাসের ধারায় অন্যতম একটি কাব্যগ্রন্থ।
ভারতচন্দ্রের জীবন কথাঃ
হুগলির পেঁরো গ্রামে ১৭১২ খ্রিস্টাব্দে ভারতচন্দ্র রায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম নরেন্দ্রনারায়ন রায় এবং মায়ের নাম ভবানী দেবী। বর্ধমানের রাজার সঙ্গে তার বাবার বিবাদের কারণে ভারতচন্দ্রকে আশ্রয় নিতে হয় মামার বাড়িতে। সেখানে থাকাকালীন তিনি সংস্কৃত শিক্ষা পান। তারপর হুগলি জেলার দেবানন্দপুর গ্রামে রামচন্দ্র মুন্সির আশ্রয়ে থেকে ফরাসি ভাষা শেখেন। তার প্রথম জীবন কাটে নানা বাধা-বিপত্তির মধ্যে দিয়ে আর বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়িয়ে।
অবশেষে ফরাসডাঙ্গার দেওয়ান ইন্দ্রনারায়ণ চৌধুরীর মধ্যস্থতায় তিনি রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সভাকবি নিযুক্ত হন। কৃষ্ণচন্দ্র তাকে ইজারা হিসাবে মুলাজোড় নামে একটি গ্রাম দান করেন। তার বহুমুখী প্রতিভা এবং মূলত অন্নদামঙ্গল কাব্য রচনার জন্য রাজা কৃষ্ণচন্দ্র তাকে রায়গুণাকর উপাধিতে ভূষিত করেন। ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে বহুমূত্র রোগে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৪৮ বছর বয়সে ভারতচন্দ্রের জীবন অবসান ঘটে।
Comments
Post a Comment
Haven't doubt please let me know.