বাংলা উপন্যাস সাহিত্যের ইতিহাসে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্থান নির্দেশ কর

      বাংলা উপন্যাস 

    বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস 


১) বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্থান নির্ণয় কর।

উঃ বাংলা উপন্যাসের ইতিহাসে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র স্বরূপ। বিজ্ঞানের মেধাবী ছাত্র ছিলেনমানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর আসল নাম প্রবোধকুমার। বিজ্ঞানমনস্ক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তিনি বাংলা সাহিত্যে আবির্ভূত হন জলন্ত ধুমকেতুর ন্যায়। বিজ্ঞান ও মার্কসীয় চেতনার প্রকাশ তার রচনার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তিনি কেন লেখেন সে সম্পর্কে তার অভিমত-" জীবনকে আমি যেভাবে ও যতভাবে উপলব্ধি করেছি অন্যকে তার ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ ভাগ দেওয়ার তাগিদে আমি লিখি।"

 মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাসঃ 

                মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় তার জীবনকালে মোট 40 টি উপন্যাস রচনা করেন। সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল দিবারাত্রির কাব্য(১৯৩৫), পুতুল নাচের ইতিকথা(১৯৩৬), পদ্মা নদীর মাঝি(১৯৩৬), শহরতলী, শহর বাসের ইতিকথা, চতুস্কোন, সোনার চেয়ে দামি, ইতিকথার পরের কথা, হলুদ নদী সবুজ বন প্রভৃতি।

               কাব্য গুণান্বিত "দিবারাত্রির কাব্য" উপন্যাসকে বলা হয়ে থাকে জটিল কুটিল মননের আশ্চর্য শিল্প রূপ। পুতুল নাচের ইতিকথা উপন্যাসটিতে তিনি গাউদিয়া নামক একটি গ্রামের জীবনযাত্রা প্রণালী এবং কয়েকটি সমস্যার ছবি ফুটিয়ে তুলে তৎকালীন পল্লী সমাজের একটি বিশেষ রূপ প্রকাশ করেছেন। ১৯৩৬ খ্রিঃ প্রকাশিত তার জনপ্রিয় উপন্যাস" পদ্মা নদীর মাঝি"। পদ্মার তীরবর্তী ধীবর পল্লীর মাঝিদের দুঃসাহসিক জীবনযাত্রার বর্ণনা আর পূর্ববঙ্গীয় কথ্য ভাষার সুষ্ঠ প্রয়োগ এই উপন্যাসটিকে সুখ্যাতির আসনে উত্থিত করেছে। 

মূল্যায়নঃ 

          মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস গুলি পড়লে বোঝা যায় বাস্তবকে তিনি খুব কাছ থেকে উপলব্ধি করেছেন। আর সেই অভিজ্ঞতা শিল্পরূপ দিয়েছেন তার কথা সাহিত্যে। এককথায় বলা যায়, তিনি ছিলেন রোমান্টিক বর্জিত, কঠিন- কঠোর বাস্তবের রূপকার। কোনরকম মুখোশের আড়ালে গা ঢাকার মতো শিল্পী তিনি ছিলেন না। তিনি বিজ্ঞানের যেমন অনুরাগী ছিলেন তেমনি বৈজ্ঞানিকের নির্মোহ দৃষ্টি নিয়ে বিচার-বিশ্লেষণে বিশ্বাসীও ছিলেন। 


২) বাংলা উপন্যাসে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবদান লেখো।

উঃ রবীন্দ্র জীবনের শেষ দিকে যে তিনজন বন্দ্যোপাধ্যায় (বিভূতিভূষণ, তারাশঙ্কর, মানিক) বাংলা কথা সাহিত্যে নতুন ধারণার সূচনা করেন, তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। রবীন্দ্রোত্তর পর্বের একজন প্রধান উপন্যাসিক হলেও রাবীন্দ্রিক আদর্শের সঙ্গে তার কোন বিরোধ ছিল না। আসলে তার জীবন দর্শনে অতৃপ্তি, হতাশা, নৈরাশ্য কখনো বড় হয়ে ওঠেনি। তিনি ছিলেন আনন্দময়, আলোক পথের যাত্রী। জীবনের কঠোর বাস্তবকে তিনি খুব কাছ থেকে দেখেছেন। কিন্তু তারই মধ্যে খুঁজে পেয়েছেন অপার অপার্থিব আনন্দ।

উপন্যাস সমূহঃ 

           বর্ণনার স্বচ্ছতা, নির্মল প্রকৃতির প্রতি অন্তরের আকর্ষণ আর গভীর সহানুভূতি দিয়ে রচনা করেন, যা পাঠকবর্গের অন্তরে স্থান পাওয়ার মতো উপন্যাস পথের পাঁচালী(১৯২৯), অপরাজিত(১৯৩২), আরণ্যক(১৯৩৯), ইছামতি(১৯৫০) প্রভৃতি। 

          তার প্রথম উপন্যাস পথের পাঁচালী। গ্রাম বাংলার প্রকৃতি, ছোট ছোট সুখ দুঃখে ভরা প্রাত্যহিক জীবন আর একটি স্বপ্নময় সৌন্দর্যমুগ্ধ বালকের কথায় পরিপূর্ণ একটি আশ্চর্য শিল্পকর্ম। দেখার চোখ থাকলে অতি তুচ্ছ দৃশ্য কিভাবে অসাধারন হয়ে উঠতে পারে, মন সংবেদনশীল হলে অতি তুচ্ছ ঘটনাও কতখানি মহিমা  যুক্ত হতে পারে তারই দৃষ্টান্ত লুকিয়ে আছে পথের পাঁচালীর প্রতিটি পাতায় পাতায়। তার প্রকৃতি প্রীতির চরম নিদর্শন মেলে আরণ্যক উপন্যাসে। 

মূল্যায়নঃ 

            বিভূতিভূষণের সাহিত্যে দু ধরনের চরিত্র লক্ষণীয়। একদিকে তিনি একটি সরল পল্লী গ্রামের মানুষ, যে সামাজিক হৃদয়বান, পরদুঃখে কাতর, সংযত ইন্দ্রিয় আবার অন্যদিকে তিনি ঘোরভোলা এক মুগ্ধ দৃষ্টি কিশোর। যার চোখের সামনে প্রকৃতি প্রতিদিন নব নব রহস্যের যবনিকা উন্মোচিত করছে। তাই অবশেষে বলা যায়, বাংলা উপন্যাসে তিনি নিয়ে এসেছেন এক অভিনব আস্বাদ‌।


Comments

Popular posts from this blog

কর্ভাস (Carvas)প্রফেসর শঙ্কুর ডায়রি

বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা তারতম্যের কারণগুলি আলোচনা কর।

আদর্শ ফুলের গঠন চিত্র ( দশম শ্রেণী)