তেলেনাপোতা আবিষ্কার প্রেমেন্দ্র মিত্র একাদশ শ্রেণীর পাঠ্য
তেলেনাপোতা আবিষ্কার
প্রেমেন্দ্র মিত্র
(১) "তেলেনাপোতা আবিষ্কার" গল্পটি কতখানি রোমান্টিক ভাবমূলক গল্প আলোচনা কর।
উঃ প্রখ্যাত সাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্র "তেলেনাপোতা আবিষ্কার" গল্পের রোমান্টিকতার এক অপূর্ব বর্ণনা দিয়েছেন। লেখকের কল্পনার গুণে ও বর্ণনার আতিশয্যে প্রকৃতি প্রেম ও মানব প্রেম একাকার হয়ে উঠেছে। আর এইসব দিক বিচার করে গল্পটির যে রোমান্টিক গল্প হয়ে উঠেছে তা আলোচনা করা হলো।
আলোচ্য অংশের অন্যতম বিষয় হলো তেলেনাপোতা নামক স্থানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। সেই সৌন্দর্যে বিভোর হয়েই লেখক প্রাকৃতিক পরিবেশের রোমান্টিক রস পরিবেশন করেছেন। প্রাকৃতিক পরিবেশের বর্ণনায় উঠে এসেছে কৃষ্ণপক্ষের বিলম্বিত ক্ষয়িত চাঁদ, অট্টালিকার ধ্বংসাবশেষ, পুকুর ঘাটে মাছ ধরতে এসে মাছরাঙ্গা পাখি, সাপ ও উদাস ঘঘুর ডাক প্রভৃতি। এসবের মধ্য দিয়ে লেখকের কল্পনা প্রবণ মন যেন রোমান্টিকতায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
মানব প্রেমের বর্ণনায় লেখক এর মধ্যে উঠে এসেছে আন্তরিকতা, আবেগে স্বতঃস্ফূর্ততা, আত্মপ্রকাশের বেক্তি স্বাধীনতা প্রভৃতি। নিরঞ্জনের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ। যামীনীর জীবনের দুর্ভাগ্য, যামিনীর অন্ধ বৃদ্ধা মায়ের অসহায় চিন্তা কথককে আন্তরিকভাবেই আঘাত করেছে। আবার পুকুর ঘাটে দেখা জামিনের বিস্তৃত পরিচয় জানতে আগের দিন রাত্রে ভাঙ্গা প্রাসাদে দেখা রহস্যময়ীর পরিচয় মধ্য দিয়ে তার আবেগের স্বতঃস্ফূর্ততা প্রকাশ পায়। আবার গল্পংশের শেষে যামিনীকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতির মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশের ব্যক্তির স্বাধীনতা প্রকাশিত হয়েছে।
পরিশেষে বলা যায় কৌতূহল প্রবণতার সঙ্গে রোমান্টিকতা ওতপ্রতভাবে জড়িত। গল্পের কথক নিজেই একটি রোমান্টিক চরিত্র। তা না হলে মাত্র কয়েক ঘন্টার পরিচয়ে জামিনীর প্রতি অনুরাগ জন্মাতো না এবং যামিনীকে বিয়ে করার ও প্রতিশ্রুতি দিত না। তাই এইসব দিক বিচার করে গল্পটিকে রোমান্টিক ভাবমূলক গল্প বলা যায়।
(২) "জীবন্ত পৃথিবী ছাড়িয়ে অতীতের কোনো কুজ্ঝটিকাচ্ছন্ন স্মৃতি লোক এসে পড়েছেন"- কুজ্ঝটিকা শব্দের অর্থ কি? এর মধ্য দিয়ে লেখক কি বোঝাতে চেয়েছেন?
উঃ আলোচ্য অংশটি প্রেমেন্দ্র মিত্র রচিত "তেলেনাপোতা আবিষ্কার " নামক ছোটগল্প থেকে নেওয়া হয়েছে। এখানে কুজ্ঝটিকা শব্দের অর্থ হলো কুহেলিকাচ্ছন্ন বা কুয়াশাচ্ছন্ন।
আলোচ্য অংশের মধ্য দিয়েই বোঝা যায় যে লেখক হলেন প্রকৃতিপ্রেমিক। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে তিনি মনের মনিকোঠা দিয়ে অনুভব করেছেন। আর সেই জন্যই তিনি রোমাঞ্চিত হয়ে পড়েছেন। তার অতুলনীয় বর্ণনায় উঠে এসেছে ঘন অন্ধকার অরণ্য যেন সুরঙ্গের মতো একটু একটু করে পথ উন্মোচন করে দিচ্ছে গরুর গাড়িটিকে। তাছাড়া কৃষ্ণপক্ষের বিলম্বিত ক্ষয়িত চাঁদের আবছা আলোয় তিনি দেখেছেন প্রাচীন অট্টালিকার ধ্বংসাবশেষ। যেন তারা মহাকালের কাছে সাক্ষাৎ দেবার ব্যর্থ আশায় দাঁড়িয়ে আছে। এই সমস্ত কিছুই লেখকের মনের আবেগের পরিস্ফুটিত রূপ।
পরিশেষে বলা যায়, গল্পকথক তেলেনাপোতা মোহগ্রস্ত হয়ে উঠেছিলেন। কিন্তু সেখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ ত্যাগ করে যখন তিনি কলকাতা শহরে ফিরে আসেন তখন তিনি অন্য মানুষের পরিণত হন। তার মনে তখন আমূল পরিবর্তন ঘটে। আর তখনই তার মনে হয় তেলেনাপোতা বলে কোথাও কিছু সত্য নেই। আবেগের অবচেতন মনের কোন দুর্বল মুহূর্তের অবাস্তব কুজ্ঝটিকাচ্ছন্ন স্মৃতি লোক বলেই মনে হবে।
(৩) "তাহলে হঠাৎ একদিন তেলেনাপোতা আপনিও আবিষ্কার করতে পারেন"- বক্তা কে? কাকে উদ্দেশ্য করে কথাটি বলেছেন? তেলেনাপোতা আবিষ্কার করতে হলে লেখক কি পরামর্শ দিয়েছিলেন তা লেখ?
উঃ প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্র রচিত তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পাংশে গল্পকার নিজেই আলোচ্য কথাটি বলেছিলেন।
প্রশ্নোদ্ধৃত উক্তিটিতে লেখক পাঠকবর্গ কে উদ্দেশ্য করেই কথাটি বলেছেন।
গল্পাংশটি পর্যালোচনায় আমরা দেখতে পাই, গল্পের শুরুতেই লেখক পাঠকদের উদ্দেশ্যে বলেছেন শনি ও মঙ্গলবার এর মধ্যে সম্ভবত মঙ্গলেই যোগাযোগ হলে তেলেনাপোতা আবিষ্কার করা যেতে পারে। কাজকর্মে মানুষের ভিড়ে হাঁপিয়ে ওঠার পর যদি হঠাৎ দু দিনের জন্য ছুটি পাওয়া যায়, আর যদি সেই সময় কেউ বলে কোন এক আশ্চর্য সরোবরের পৃথিবীর সরলতম মাছেরা তাদের হৃদয় বিদ্ধ করার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে তাহলেই সেই তেলেনাপোতা আবিষ্কার করা যায়।
এই তেলেনাপোতা আবিষ্কারের জন্য দুজন বন্ধু ও সঙ্গীর প্রয়োজন। আর যিনি এই তেলেনাপোতা আবিষ্কারের উদগ্রীব তার অবশ্যই মাছ ধরার নেশা থাকতে হবে। তারপর একদিন বিকেল বেলায় পড়ন্ত রোদে জিনিসে মানুষে ঠেসাঠেসি একটি বাসে উঠতে হবে। ভাদ্রের গরমে রাস্তার ঝাকানি এবং মানুষের গুতো খেতে খেতে ধুলো চটচটে শরীর নিয়ে দু'ঘণ্টা বাদে রাস্তার মাঝখানে হঠাৎ নেমে পড়তে হবে। এইভাবে লেখক তেলেনাপোতা আবিষ্কারের এক সুন্দর বর্ণনা দিয়েছেন।
(৪) গরুর গাড়ির গাড়োয়ান থেকে থেকে কি বাজার ছিল?
উঃ ক্যানেস্তারা।
(৫) আনমনা কথকের চমক ভেঙেছিল কিসে?
উঃ ঘুঘুর ডাকে।
(৬) তেলেনাপোতায় যাওয়া গান রসিক বন্ধুর নাম কি ছিল?
উঃ মনি।
(৭) মহানগরী থেকে তেলেনাপোতার দূরত্ব কত?
উঃ ৩০ মাইল।
(৮) তারা মশাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় কুলিন ম্যালেরিয়া দেবীর অদ্বিতীয় বাহন কে?
উঃ অ্যানোফিলিস।
(৯) ক্যানেস্তারা শব্দের অর্থ কি?
উঃ টিন।
(১০) কলকাতায় ফিরে এসে তেলেনাপোতার স্মৃতিকে কি বলে মনে হবে?
উঃ অবাস্তব কুয়াশার কল্পনা মাত্র।
(১১) কথককে যামিনীর মা কাকে ভেবেছিলেন?
উঃ নিরঞ্জন।
(১২) যামিনী মা তেলেনাপোতা কে কী বলেছেন ?
উঃ প্রেতপুরি।
(১৩) "তেলেনাপোতা আবিষ্কার" গল্পে রামায়ণের কোন চরিত্রের উল্লেখ আছে?
উঃ কুম্ভকর্ণ।
(১৪) তেলেনাপোতা আবিষ্কারের জন্য আপনার সঙ্গে কতজন বন্ধু প্রয়োজন?
উঃ দুজন।
(১৫) মেয়েটা আপনার দিকে কিভাবে তাকাবে?
উঃ সোজাসুজি ভাবে।
(১৬) তেলেনাপোতা আবিষ্কারের জন্য গল্পে কোন মাসের কথা বলা হয়েছে?
উঃ ভাদ্র মাস।
(১৭) "মনি সিঁড়ির দিকে পা বাড়াবে"- কোন কথা বলে সিঁড়ির দিকে পা বাড়াবে?
উঃ কর্মভোগ সেরে আসি।
(১৮) যামিনীর মুখে শান্ত করুন দাম্ভীর্য দেখে কি মনে হবে?
উঃ মনে হবে যামিনী জীবনের সুদীর্ঘ নির্মম পথ অতিক্রম করে এসেছে।
(১৯) "ছাদে গিয়ে দেখবেন"- প্রথমে কি দেখা যাবে?
উঃ আলিশা ভেঙে ধুলিস্যাৎ হয়েছে।
(২০) "সেই কঙ্কালের মধ্যেও যেন চাঞ্চল্য দেখা দেবে"- কেন?
উঃ আপনাদের পদশব্দ শুনে।
(২১) "মহাকালের কাছে সাক্ষী দেওয়ার ব্যর্থ আশায় দাঁড়িয়ে আছে"- দাঁড়িয়ে থাকা জিনিস গুলির মধ্যে কি কি ছিল?
উঃ কোথাও থাম, দেউড়ির খিলনি, মন্দিরের ভগ্নাংশ।
(২২) "মেয়েটির দিকে আপনাকে একবার তাকাতেই হবে"- কিভাবে?
উঃ অপ্রস্তুতভাবে।
(২৩) ছেলেবেলায় যামিনীর সঙ্গে কার সম্বন্ধ হয়েছিল?
উঃ নিরঞ্জন এর।
(২৪) যামিনীদের ঘরে ঢুকে লেখকের কি মনে হয়েছে?
উঃ মাটির তলার সুরঙ্গে প্রবেশ করেছেন।
(২৫) "আর পালাবে না"- কথাটির বক্তা কে?
উঃ গল্পের কথক।
(২৬) "বসে আছেন কেন টান দিন"- কার উক্তি?
উঃ যামীনির।
(২৭) তেলেনাপোতা আবিষ্কারের জন্য কতদিন ছুটির দরকার?
উঃ দুদিন।
(২৮) গরুর গাড়ির সংক্ষিপ্ত সংস্করণ টি পাতালের কোন দেশের বলে মনে হয়?
উঃ বামনের দেশের।
(২৯)গরুর গাড়িটি আপনাকে কখন নিতে আসবে?
উঃ বিকেল বেলা।
(৩০)তেলেনাপোতা আবিষ্কারের জন্য দুই বন্ধুর কি হওয়া প্রয়োজন?
উঃ একজন পান রসিক বন্ধু এবং আর একজন নিদ্রা বিলাসী।
Comments
Post a Comment
Haven't doubt please let me know.