সিরাজদ্দৌলা নাটক শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত
শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের "সিরাজদ্দৌলা" নাটকের প্রশ্নোত্তর আলোচনা করা হয়েছে।
সিরাজউদ্দৌলা
শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত
প্রতিটি প্রশ্নের মান -৫
কমবেশি ১৫০ টি শব্দের মধ্যে উত্তর দাও।
(১) সিরাজদৌলার চরিত্রটি কতখানি প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে তা আলোচনা কর।
উঃ যেকোনো নাট্যাংশের মধ্য দিয়ে লেখক জীবনের সামগ্রিক রূপের সন্ধান করেন। সেই সময় তিনি যে সমস্ত ঘটনা বা চরিত্রের উল্লেখ করেন তা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মূল বিষয়ের সাথে যুক্ত করেন। আলোচ্য সিরাজদৌলা নাট্যাংশে সিরাজের যে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য গুলি ধরা পড়েছে তাদের মধ্যে অন্যতম হলো, তিনি ছিলেন একজন উদার ও আদর্শবাদী, সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী, অপার সহিষ্ণু এবং সমালোচনায় ক্ষতবিক্ষত, রক্তাক্ত এক মানুষ। তার চরিত্রটি নাট্যাংশে কতখানি প্রানবন্ত হয়ে উঠেছে তা নাট্যাংশ অনুসরনে আলোচনা করা হলো।
সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী :
আলোচ্য নাট্যাংশে আমরা সিরাজকে দেখি বাংলার গৌরব, মান-মর্যাদা রক্ষাকারী একজন সৈনিক হিসাবে। কারণ রাজবল্লব, জগৎশেঠ, রায় দুর্লভ প্রভৃতি ব্যাক্তিদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেছেন,-" বাংলা শুধু হিন্দুর নয়, বাংলা শুধু মুসলমানের নয়, মিলিত হিন্দু মুসলমানের মাতৃভূমি গুলবাগ এই বাংলা।" এই উক্তির মধ্য দিয়ে সিরাজের সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী দিকটির পরিচয় পাওয়া যায়।
উদার ও আদর্শবাদঃ
উদার ও আদর্শবাদ হল সিরাজ চরিত্রের এক অন্যতম বৈশিষ্ট্য। মাতৃভূমির স্বাধীনতা রক্ষার্থে তিনি ব্যক্তিগত শত্রুতাকে ভুলে গেছেন। তিনি মীরজাফরকে বলেছেন- "আজ বিচারের দিন নয়, সৌহার্দ্য স্থাপনের দিন"। এমনকি যুদ্ধের শেষে জয়লাভ করার পর তিনি সিংহাসন ছেড়ে দিতেও রাজি হয়েছেন।
অপার সহিষ্ণুতা :
নবাবের রাজসভায় থেকে তারই বিরুদ্ধে যখন নানা প্রকার কুৎসা রটেছিল তখন তিনি জেনেও তাদের কোনরকম প্রতিবাদ করেনি। এর মধ্য দিয়ে সিরাজের অপার সহিষ্ণুতার দিকটি আমাদের কাছে প্রতিভাত হয়।
সর্বোপরি তিনি ছিলেন একজন ক্ষতবিক্ষত, রক্তাক্ত এক রাজা। নানা নির্মম পরিচয় পেয়ে তিনি কোন মানুষকে শ্রদ্ধা করতেও পারেন না ভালোবাসতেও পারেন না। এদিক থেকে সিরাজ চরিত্রটি যথার্থই সার্থক হয়েছে।
(২) "কিন্তু ভদ্রতার অযোগ্য তোমরা"- কে কাকে কথাটি বলেছেন? একথা বলার কারণ কি?
উঃ প্রখ্যাত নাট্যকার শচীন্দ্র সেনগুপ্ত রচিত 'সিরাজদ্দৌলা' নামক নাট্যাংশের অন্তর্গত আলোচ্য উক্তিটির বক্তা হলেন সিরাজদ্দৌলা। তিনি ওয়াটসকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্নোদ্ধৃত কথাটি বলেছেন।
ওয়াটস হলেন মুর্শিদাবাদের রাজদরবারে প্রেরিত একজন ইংরেজ প্রতিনিধি। ইংরেজদের বিরুদ্ধে সিরাজদৌলা কলকাতা জয় করে সেই নগরের নাম রেখেছিলেন আলিনগর। এই যুদ্ধের ফলেই ইংরেজদের সঙ্গে সিরাজের মধ্যে এক সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়। সেই সন্ধি আলিনগরের সন্ধি নামে পরিচিত। এই সন্ধি অনুযায়ী স্থির হয় যে, ইংরেজরা কোনভাবেই নবাবের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করবে না। কিন্তু সিরাজের হাতে কলকাতার এডমিরাল ওয়াটসনের একটি পত্র এসে পৌঁছায়। যার মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন যে ,এডমিরাল ওয়াটসনের নেতৃত্বেই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ইতিমধ্যেই সেনাবাহিনী পাঠিয়ে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য উদ্যোগ নিয়েছেন। এছাড়াও তিনি জানতে পারেন যে কর্নেল ক্লাইভ বহুদিন আগেই এই যুদ্ধের এক কষে ছিলেন। তাই পরিকল্পিতভাবেই তারা আলিনগরের সন্ধির শর্ত ভঙ্গ করতে উদ্যোগী হয়েছে। আর তারই রাজসভায় থেকে ওয়াটস এই ষড়যন্ত্রের অংশীদার হয়েছেন। তাই ক্রূদ্ধ হয়ে সিরাজ রাজসভায় প্রকাশ্যে আলোচ্য কথাটি বলেছেন।
(৩) "তোমাদের কাছে আমি লজ্জিত"- কে কাকে কথাটি বলেছে? বক্তা লজ্জা প্রকাশ করেছেন কেন?
উঃ শচীন্দ্র সেনগুপ্ত রচিত 'সিরাজদ্দৌলা' নামক নাট্যাংশে বাংলার নবাব সিরাজ দৌলা ফরাসি প্রতিনিধি মঁসিয়ে লা'কে উদ্দেশ্য করে আলোচ্য কথাটি বলেছেন।
ফরাসিদের উপনিবেশ ছিল চন্দননগর। সেখানে তারা দীর্ঘদিন তথা দীর্ঘকাল থেকে বাংলাদেশে বাণিজ্য করতো। তারা কোনদিনই বাংলার নবাবের সঙ্গে কোনো অসৎ ব্যবহার করেনি। কিন্তু ইংরেজরা ফরাসিদের উপনিবেশ অধিকার করে নিলে নবাবের সাহায্য পাওয়ার আশায় সিরাজের রাজ দরবারে উপস্থিত হয়েছেন। কিন্তু সিরাজ তাদের প্রতি অত্যন্ত সহানুভূতিশীল হলেও তিনি জানান যে, কলকাতা আর পূর্ণিয়ার শত্তকত জঙ্গের সঙ্গে সংগ্রামের ফলে বহু লোকক্ষয় ও অর্থ ব্যয় হয়েছে। তাছাড়া, তাঁর মন্ত্রী মন্ডলও যুদ্ধের পক্ষপাতি নন। তাই তিনি ফরাসিদের সাহায্য করতে পারবেন না জানিয়ে সিরাজ আলোচ্য কথাটি বলেছেন।
(৪) "বাংলা হিন্দুর নয়, বাংলা শুধু মুসলমানের নয়, মিলিত হিন্দু মুসলমানের মাতৃভূমি গুলবাগ এই বাংলা"- বক্তা কাদের উদ্দেশ্য করে কেন এ কথা বলেছেন?
উঃ আলোচ্য অংশটি 'সিরাজদৌলা' নামক নাট্যাংশে বাংলার নবাব সিরাজ দৌলা রাজসভায় উপস্থিত রাজবল্লভ, জগৎশেঠ, রায়দুর্লভ প্রভৃতি ব্যক্তিদের উদ্দেশ্য করে প্রশ্নোদ্ধৃত উক্তিটি করেছিলেন।গুলবাগ হল ফুলের বাগিচা বা বাগান। বাংলার নবাব ইংরেজ প্রতিনিধি ওয়াটসকে তার রাজসভা থেকে বহিষ্কার করেন। সেই জন্যই তার রাজসভায় শোরগোল পড়ে যায়। সিরাজের বিরুদ্ধে ইংরেজদের সঙ্গে যারা গোপন আঁতাত তৈরি করেছেন, তারা তীব্র সমালোচনা শুরু করে। তারা হলেন রাজা রাজবল্লভ, জগৎশেঠ, রায়দুর্লভ এবং মীরজাফর। আর সিরাজের পক্ষে থাকেন মাত্র দুজন মোহনলাল এবং মীরমদন। ইতিমধ্যেই সিরাজ মির্জাফরকে লেখা ওয়াটসনের একটি চিঠিও প্রমাণ হিসাবে দাখিল করেন। ফলে সভাস্থলে অত্যন্ত জটিল পরিস্থিতির তৈরি হয়। যারা সিরাজের উপর দোষারোপ করেন তারা সভা ত্যাগ করে চলে যেতে উদ্যত হন। তখন সিরাজ আন্তরিকভাবেই সকলের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন এবং দেশের স্বাধীনতার জন্য মরণপন করে আত্মোৎসর্গ করতে বলেন। বাংলার মান, বাংলার মর্যাদা, বাংলার স্বাধীনতা রক্ষার জন্য তাদের সকলকে সংঘবদ্ধ হয়ে তাকে সাহায্য করার কথা জানিয়েছেন।সকলের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ ফিরিয়ে এনে বাংলার স্বাধীনতাকে ত্বরান্বিত করার জন্য তিনি আলোচ্য কথাগুলি বলেছেন।
Comments
Post a Comment
Haven't doubt please let me know.