ভারত ও বিশ্বের ইতিহাস

       ভারত ও বিশ্বের ইতিহাস 

              একাদশ শ্রেণি

১) মেহেরগড় সভ্যতা সম্পর্কে যা জানো লেখো।

উঃ ভূমিকাঃ ভারতের প্রাচীনতম সভ্যতা হল মেহেরগড় সভ্যতা। এই সময়কালকে অনেকে তাম্র প্রস্তর যুগ হিসাবেও চিহ্নিত করে থাকেন। এই সভ্যতা সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো - 

আবিষ্কারঃ ফরাসি প্রত্নতত্ত্ববিদ জা ফ্রাঁসোয়া জারিজ পাকিস্তানের ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে বালুচিস্থানের পশ্চিম সিন্ধু উপত্যকার কাচ্চি সমভূমিতে মেহেরগড় সভ্যতার প্রাচীন নিদর্শন আবিষ্কার করেন। 

বিভিন্ন কেন্দ্রঃ মেহেরগড় সভ্যতার প্রধান কেন্দ্র ছিল মেহেরগড়। এখানেই এই সভ্যতার প্রথম নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে বলে এর নামকরণ হয়েছে মেহেরগড় সভ্যতা। এই সভ্যতার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কেন্দ্র হল, তরকাইকেল্লা, শেরী খান, তরকাই কাচ্চিবেগ, নৌসেরা, রানা ,ঘুনডাই, কুল্লি, গাজীশাহ প্রভৃতি।

সভ্যতার অগ্রগতিঃ মেহেরগড় সভ্যতায় মোট সাতটি পর্যায় লক্ষ্য করা গেছে। এগুলোর মধ্যে প্রথম তিনটি পর্যায়ে নব্য প্রস্তর যুগের প্রতিটি বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। 

ক) হাতিয়ার ও অন্যান্য সামগ্রীঃ মেহেরগড় সভ্যতায় নব্য প্রস্তর যুগের বিভিন্ন হাতিয়ার আবিষ্কৃত হয়েছে। সেই হাতিয়ারগুলি মূলত পাথর দিয়ে তৈরি হতো। কৃষি যন্ত্রপাতির মধ্যে অন্যতম ছিল কাস্তে। এছাড়া মাটির পাত্র, শিলনোড়া, যাঁতা, হামানদিস্তা, নিড়ানি ইত্যাদি যন্ত্রপাতি পাওয়া গিয়েছে।

খ) বসতি স্থাপনঃ প্রথমদিকে শিকার এবং পরে পশুপালন ছিল এখানকার মানুষের প্রধান জীবিকা।তখন মানুষ ছিল যাযাবর।পরে মানুষ যাযাবর জীবন ছেড়ে নির্দিষ্ট স্থানে স্থায়ীভাবে বসতি গড়ে তোলে এবং কৃষিকাজ শুরু করে।রোদে পোড়ানো সমান মাপের ইট দিয়ে গৃহ তৈরি করে। 

গ) তামার ব্যবহারঃ পাথরের ব্যবহারের ভিত্তিতে মেহেরগড় সভ্যতার বিকাশ ঘটলেও এই সভ্যতার প্রথম পর্যায়ে একটি তামার পুঁথি থেকে অনুমান করা হয় যে, এই সভ্যতার মানুষ তামা গলানোর প্রক্রিয়া আয়ত্ত করেছিল। এখানকার তৃতীয় পর্যায়ে তামার সিলমোহর আবিষ্কার হয়েছে। এই সভ্যতার তৃতীয় পর্যায়কে তাম্র প্রস্তর যুগ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। 

ঘ) পশুপালনঃ মেহেরগড় সভ্যতায় কৃষির প্রয়োজনে পশুপালনের গুরূত্ব বেড়েছিল। তাছাড়া খাদ্য হিসেবে মাংসের প্রয়োজনে পশুপালন করা হতো। কৃষি ও পশুপালনের পাশাপাশি খাদ্যের প্রয়োজনে শিকার করার পেশা তখনও প্রচলিত ছিল। প্রথমদিকে ছাগল, ষাঁড়, ভেড়া প্রভৃতি পশুকে তারা পোষ মানিয়েছিল।পরে মোষ ও অন্যান্য পশুকে পোষ মানিয়ে পালন করা শুরু হয়।

অর্থনৈতিক জীবনঃ মেহেরগড় সভ্যতার প্রথমদিকে শিকার ও পশুপালন মানুষের প্রধান জীবিকা ছিল। পরবর্তীকালে কৃষিকাজের বিকাশ ঘটে। তাছাড়া এখানে শিল্প ও বানিজ্যের ও বিকাশ ঘটেছিল।

ক) কৃষিঃ ভারতে প্রথম কৃষি ও পশুপালন অর্থনীতির বিকাশ ঘটেছিল মেহেড়গর সভ্যতাতেই। এখানে গম ও যব চাষের প্রমান পাওয়া যায়। বিভিন্ন ছোট ছোট জলধারা থেকে বাঁধ নির্মাণ করে কৃষিজমিতে জলসেচ করা হতো।ফসল সংরক্ষণ করার জন্য এখানে শস্যগারও তৈরী করা হতো।

খ) পশুপালনঃ মেহেরগড় সভ্যতায় কৃষির প্রয়োজনে পশুপালনের গুরুত্ব বেড়েছিল। তাছাড়া খাদ্য হিসেবে মাংসের প্রয়োজনেও পশুপালন করা হতো। অবশ্য কৃষি ও পশুপালনের পাশাপাশি খাদ্যের প্রয়োজনে  শিকার করার পেশা তখনও প্রচলিত ছিল। এই সভ্যতায় প্রথম দিকে ছাগল, ভেড়া, মোষ প্রভৃতি পশুকে তারা পোষ মানিয়েছিল। কিন্তু পরে মোষ এবং অন্যান্য পশুকে তারা পোষ মানিয়েছিল।

গ) বয়নশিল্পঃ মেহেরগড় সভ্যতায় বয়ন শিল্পের বিকাশ ঘটেছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। এখানে কার্পাস তুলো প্রচুর পোড়া বীজ পাওয়া গেছে। এটি ভারতের কার্পাস তুলো চাষের প্রাচীনতম নিদর্শন বলে মনে করা হয়। কার্পাস তুলো দিয়ে সুতো তৈরি করে তা কাপড় বোনার কাজে ব্যবহার করা হতো। হাতের সেলাই করা বিভিন্ন বস্ত্রাদি ব্যবহারের নিদর্শনও এখানে পাওয়া গেছে।

ঘ) অন্যান্য শিল্পঃ মেহেরগড় সভ্যতায় অন্যান্য বিভিন্ন শিল্প ও প্রযুক্তির বিকাশ ঘটেছিল। এর মধ্যে অন্যতম ছিল অলংকার শিল্প। অলংকারগুলি তৈরি হতো পাথর দিয়ে। এখানে ছোট ছোট শঙ্খ, নীলকান্ত মনি, চুনি প্রভৃতির যথেষ্ট ব্যাবহার ছিল। নলখাগড়ার তৈরির ঝুড়ি, পশুর লোমের বস্ত্র প্রভৃতির নিদর্শনও এখানে পাওয়া যায়। এছাড়া ঘর গরম রাখার জন্য চুল্লি, গোলাঘর, সিল প্রভৃতি আবিষ্কৃত হয়েছে। 

বাণিজ্যঃ মেহেরগড় সভ্যতার তৃতীয় পর্যায়ে প্রাপ্ত তামার সিলমোহর থেকে অনুমান করা হয় যে, এই সভ্যতার মানুষ বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত ছিল। তামার সিলমোহরের দ্বারা বণিকরা নিজেদের পণ্য চিহ্নিতকরণের কাজ করত বণিকরা অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উভয় ধরনের বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত ছিল বলে অনেকে মনে করেন। 




Comments

Popular posts from this blog

কর্ভাস (Carvas)প্রফেসর শঙ্কুর ডায়রি

বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা তারতম্যের কারণগুলি আলোচনা কর।

আদর্শ ফুলের গঠন চিত্র ( দশম শ্রেণী)