জয় গোস্বামীর নুন কবিতা একাদশ শ্রেণী

                 নুন 

                       জয় গোস্বামী 
 

(১) নুন কবিতায় কবি কোন অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন?

উঃ সাধারণ মানুষের ন্যূনতম খাদ্যপ্রাপ্তির অভিপ্রায় ব্যক্ত  করেছেন ।

(২)"আমরা তো এতেই খুশি"- কিসে খুশি ?

উঃ সাধারণ ভাত কাপড়ে।

(৩)"রাত্রিতে দুই ভাই মিলে টান দিই গঞ্জিকাতে"- কারণ কি?

উঃ অভাবের তাড়নায়, অসুখে, ধার দেনার কষ্ট ভুলতে বাপ বেটা দুই ভাই মিলে গঞ্জিকাতে টান দেয়। 

(৪) নুন কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে?

উঃ ভুতুম ভগবান।

(৫)"কিনে আনি গোলাপ চারা"- গোলাপ চারা কিসের প্রতীক? 

উঃ স্বপ্ন দেখার প্রতীক।

(৬)নুন কবিতায় কথকের দিন যায় কিভাবে?

উঃ অসুখে আর ধার দেনাতে।

(৭) "-ফুল কি হবেই তাতে"- কোন ফুল?

উঃ গোলাপ ফুল। 

(৮)"চলে যায় দিন আমাদের"- কিসে?

উঃ অসুখে ধার দেনাতে।

(৯) নুন কবিতায় কোন ঘটনা কবিকে ভাবিয়ে তোলে?

উঃ রাত্রিতে দুই ভাই মিলে গঞ্জিকাতে টান দেওয়ার বিষয়টি।

(১০) গোলাপ চারা কখন কেনা হয়?

উঃ যেদিন মাত্র ছাড়া বাজার হয়।

(১১) "আমরা তো অল্পে খুশি"- তাদের অল্পে খুশির কারণ কি?

উঃ কারণ তাদের আকাঙ্ক্ষা সামান্য।

(১২) "রাগ চড়ে যায়"- কারণ কি ?

উঃ ঠান্ডা ভাতে নুন নেই।

(১৩) "আমি তার মাথায় চড়ি"-কার মাথায়?

উঃ রাগের।

(১৪)"সব দিন বাজার হয় না"- কারণ কি?

উঃ নুন কবিতায় কথকদের আর্থিক দুরবস্থার কারণে সব দিন বাজার হয় না।

(১৫) "ফুল কি হবেই তাতে"- কবির কেন এই সংশয় ?

উঃ গাছ লাগানোর জায়গার অভাব এবং তার পরিচর্যা করার জন্য কবির মনে এই সংশয় জেগেছে।

(১৬)"করিতো কার তাতে কি"- এই রকম কথায় কবি কি ইঙ্গিত করেছেন?

উঃ নিম্ন বৃত্ত দরিদ্র মানুষদের বেপরোয়া মানসিকতাকে কবি ইঙ্গিত করেছেন। এখানে সাড়াপাড়া মাথায় করার বর্ণনা প্রসঙ্গে লেখক আলোচ্য কথাটি বলেছেন।

(১৭)"সে অনেক পরের কথা"- কবির কাছে পরের কথা কোনটি ?

উঃ বাজার থেকে গোলাপ চারা এনে কোথায় পোঁতা হবে এবং তাতে ফুল হবে কিনা সেটা অনেক পরের কথা।


(১৮) "বাড়িতে ফেরার পথে কিনে আনি গোলাপ চারা"- বক্তা কে? এই গোলাপ চাড়া কিনে আনার মধ্য দিয়ে কোন সত্য প্রকাশিত হয়েছে? 

উঃ     আলোচ্য প্রশ্নোদ্ধৃত উক্তিটির বক্তা হলেন কবি জয় গোস্বামী নিজেই।

           নিম্ন বৃত্তদের জীবন প্রতিদিন অভাব-অনটন ধার দেনার মধ্য দিয়েই অতিবাহিত হয়। তার উপর অসুখ বিসুখ তো আছেই। এই অভাবের তাড়নায় সব দিন বাজার হয় না, আবার যেদিন হয় মাত্রা ছাড়া হয়। এই অভাব আর ধার দেনা সত্ত্বেও তাদের জীবন দর্শনের মধ্যে আছে সুখ খুঁজে বেঁচে থাকার প্রবল ইচ্ছা। তাই বেহিসাবি মানুষটি বাজার থেকে ফেরার পথে গোলাপ চারা কিনে আনে। তারপরই কবির প্রশ্ন পুঁতবো কোথায়? ফুল কি হবে তাতে? তাই বলা যায় এই গোলাপচারার মধ্যে ফুটে উঠেছে নিম্ন বৃত্ত মানুষের সুখ ও স্বপ্নের প্রতিচ্ছবি। জীবন ভাগ্যকে কেন্দ্র করে রচিত নুন কবিতাটি নিম্নবৃত্ত পরিবারের এক অসামান্য দলিল চিত্র। দারিদ্র্যের পোশাক হাতে জর্জরিত এক বিপন্ন পরিবারের সদস্য ছিলেন কবি। সাধারণ ভাত কাপড়ে, অসুখে, ধার দেনা তে তাদের কোনোরকমে জীবন অতিবাহিত হয়। এইরকম জীবনকে বাস্তবে ভুলে থাকার জন্য কখনো কখনো নেশাগ্রস্থ জীবনকে বেছে নিতে হয়। আবার গভীর রাতে বাড়িতে ফিরে ঠান্ডা ভাতে নুন না থাকায় মাথায় রাগ চড়ে যায়। এর মধ্য দিয়ে কবির অভাব ও অসহায় যন্ত্রনার প্রকাশ ঘটেছে। ---

                " আমরা তো সামান্য লোক --

       আমাদের শুকনোভাতে লবণের ব্যবস্থা হোক" ।


(১৯) শ্রমজীবী বঞ্চিত মানুষের জীবন যন্ত্রণা নুন কবিতায় যে ভাবের প্রকাশিত হয়েছে তা সংক্ষেপে আলোচনা কর?

উঃ       আধুনিক কবি জয় গোস্বামী রচিত ভুতুম ভগবান কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত নুন কবিতাটি দারিদ্র্য পীড়িত শ্রমজীবী বঞ্চিত মানুষের এক অসামান্য দলিল চিত্র। এখানে তিনি নিম্নবিত্ত পরিবারের নিত্য জীবন যাপনের কাহিনী বর্ণনা করেছেন। এই সমস্ত মানুষদের অল্পে খুশি থাকতে হবে জেনে এরা কঠোর পরিশ্রম করে সমাজের ভার বহন করে চলে। তাদের জীবনে শখ বা স্বপ্নবিলাসের কোনো স্থান থাকে না।

        নিম্ন বৃত্তদের জীবন অভাব অনটন ধার দেনার মধ্য দিয়েই অতিবাহিত। সাধারণ ভাত কাপড়েই তাদের সন্তুষ্ট থাকতে হয়। তবুও তারা তার মধ্য থেকে সুখ খুঁজে পাওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করে। তারা জানে দুঃখ করে কোন লাভ নেই। কঠোর বাস্তব থেকে রক্ষা পেতে তারা রাত্রিতে নেশার আশ্রয় নেয়। সামাজিক সম্পর্কের ধারণাকে পাল্টে দিয়ে পিতা পুত্র দুই ভাই এর মত গাঁজা সেবন করে। দারিদ্রতার জন্য প্রতিদিন বাজার করা সম্ভব হয় না, আবার হাতে দুটো পয়সা এলে খরচ হয়ে ওঠে মাত্রা ছাড়া। কিন্তু তাদের মধ্যেও থাকে গোপন স্বপ্নবিলাস ও সৌন্দর্যপ্রিয়তা। তাই কখনো কখনো বাড়ি ফেরার পথে গোলাপ চাড়াও কিনে আনতে দেখা যায়। এইভাবে অল্পে খুশি থেকে দুঃখ কষ্টের মধ্য দিয়ে তারা বেঁচে থাকার সার্থকতা খোঁজে। আর মাঝে মাঝে যখন কঠোর পরিশ্রম করে ঠান্ডা ভাতে সামান্য নুনের যোগান পায় না তখন বাপ বেটা মিলে সারা পাড়া মাথায় করে। তাই কবির দীর্ঘ প্রত্যাশা শুকনো ভাতে লবণের ব্যবস্থা হোক। এইভাবে কবি আলোচ্য কবিতায় দারিদ্র পীড়িত শ্রমজীবী মানুষের জীবন যন্ত্রণার প্রকাশ ঘটিয়েছেন।




Comments

Popular posts from this blog

কর্ভাস (Carvas)প্রফেসর শঙ্কুর ডায়রি

বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা তারতম্যের কারণগুলি আলোচনা কর।

আদর্শ ফুলের গঠন চিত্র ( দশম শ্রেণী)