নদীমাতৃক সভ্যতা বলতে কী বোঝো? নদীমাতৃক সভ্যতা গড়ে ওঠার কারণ গুলি লেখ
আদিম মানব থেকে প্রাচীন সভ্যতা সমূহ
১) নদীমাতৃক সভ্যতা কাকে বলে? নদীমাতৃক সভ্যতা গড়ে ওঠার কারণগুলি লেখ।
উঃ আদিম মানুষ লক্ষ্য করেছিল যে, নদীর তীরে বসবাস করা তুলনামূলকভাবে বেশি সুবিধাজনক। এজন্য প্রাচীনকালে নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে জনবসতির প্রসার ঘটে। পৃথিবীতে প্রথম প্রাণের উদ্ভব ঘটেছিল জলে আবার প্রাচীন সভ্যতাগুলিও বিকাশ ঘটেছিল জলের কাছে অর্থাৎ নদীর উপত্যকায়। নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে গড়ে ওঠা প্রাচীন সভ্যতা গুলিকে বলা হয় নদীমাতৃক সভ্যতা।
যেমন - সিন্ধু নদীর তীরে হরপ্পা সভ্যতা, নীল নদের তীরে মিশরীয় সভ্যতা, ইউফ্রেটিস ও টাইগ্রিস নদীর তীরে মেসোপটেমিয়া ও ব্যাবিলন সভ্যতা, ইয়াংসিকিয়াং ও হোয়াংহো নদীর তীরে চৈনিক সভ্যতা প্রভৃতি অন্যতম।
নদীমাতৃক সভ্যতা গড়ে ওঠার কারণঃ
প্রাচীনকালে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় নদীমাতৃক সভ্যতা গড়ে ওঠার পিছনে যে একাধিক কারণ ছিল সেগুলি হল --
উর্বর কৃষিজমিঃ
আদিম মানুষ লক্ষ্য করেছিল যে, নদীতে প্লাবনের ফলে নদীর দুকূল ছাপিয়ে যখন বন্যার জল উপত্যকা অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে তখন উপকূল অঞ্চলে নদীর পলিমাটি সঞ্চিত হয়। তাই এই জমিতে তুলনামূলকভাবে বেশি ফসল উৎপাদিত হয়।
জলসেচের সুবিধাঃ
নদীর উপকূল অঞ্চলে চাষবাস করলে জলসেচের সুবিধা পাওয়া যায়। নদীতে বাঁধ দিয়ে এবং সেখানে খাল কেটে কৃষি জমিতে জল সেচ করা সম্ভব। কৃষি উৎপাদনের সুবিধার জন্য আদিম মানুষ দলবদ্ধভাবে নদীর উপত্যকা অঞ্চলে জনবসতি গড়ে তুলেছিল।
পশুপালনের সুবিধাঃ
নদী,হ্রদ তীরবর্তী অঞ্চল যথেষ্ট উর্বর হয়। সেখানে জলের সরবরাহ থাকায় জলাশয় সংলগ্ন অঞ্চলে তৃণভূমির প্রসার ঘটতো।ফলে সেই অঞ্চলে পশুপালনের পক্ষে বিশেষ সহায়ক ছিল। পশুপালনের সুবিধা পাওয়ার জন্য নদী তীরবর্তী অঞ্চলে আদিম মানুষ বসবাস করত।
যাতায়াতের সুবিধাঃ
প্রাচীনকালে স্থলপথে যাতায়াত বিশেষ সুবিধাজনক ছিল না। নদীর তীরে বসবাস করলে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাতায়াত এবং পণ্য পরিবহনে বিশেষ সুবিধা হয়। তাই কৃষিজাত দ্রব্য এবং অন্যান্য পণ্য দূর-দূরান্তে পাঠানোর জন্য নদীপথই ছিল সবচেয়ে উপযোগী।
মাছ শিকারঃ
আদিম মানুষ যখন যাযাবর জীবন ছেড়ে কৃষিকাজে নিযুক্ত হলো তখন শিকার করে মাংস সংগ্রহের পরিমাণ কমতে শুরু করল। কিন্তু নদীর তীরে বসবাস করে মানুষ তা পুষিয়ে নিতে পারল মাছ ধরে। নদী ও হ্রদে প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। মানুষ তখনকার অনুন্নত হাতিয়ার ব্যবহার করেই নদী থেকে প্রচুর মাছ ধরত। উৎপাদিত খাদ্যশস্য এবং নদীর মাছ ধরার ফলে তখনকার মানুষের খাদ্যের কোন অভাব ছিল না।
অধিক নিরাপত্তাঃ
আদিম যুগে শিকার, সম্পদ সংগ্রহ এবং অন্যান্য কারণে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে প্রায়ই সংঘর্ষ হত। তাই প্রতিটি জনগোষ্ঠীর কাছে নিরাপত্তার বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মানুষ উপলব্ধি করেছিল যে, স্থলভাগে বসবাস করলে যখন তখন অন্য গোষ্ঠীর দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার ভয় থাকে। কিন্তু নদীর জলরাশি অতিক্রম করে সহসা এরূপ আক্রমণ সম্ভব নয়। তাই প্রাকৃতিক নিরাপত্তার কারণেও মানুষ নদীর তীরে বসবাস করত।
অনুকূল আবহাওয়াঃ
নদী বা জলাশয়ের ধারে আবহাওয়া তুলনামূলকভাবে আরামদায়ক হয়। জলরাশি থেকে দূরবর্তী স্থানে গ্রীষ্মকালে বেশি গরম এবং শীতকালে বেশি শীত অনুভূত হয়। কিন্তু জলাশয়ের নিকটবর্তী অঞ্চলে আবহাওয়া সেই তুলনায় নাতিশীতোষ্ণ প্রকৃতির হয়। তাই অনুকূল আবহাওয়ার কারণেও মানুষ নদীর তীরে বসবাস শুরু করেছিল।
পানীয় জলের সুবিধাঃ
আদিম মানুষের কাছে পানীয় জলের একমাত্র উৎস ছিল নদীর জল। পানীয় জল প্রাপ্তির সুবিধার জন্য আদিম মানুষ নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেছিল।
উপসংহারঃ
আদিম মানুষ নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে বসবাস করার ফলে বিভিন্ন সুবিধা লাভ করেছিল। নদীর উপত্যকার উর্বর জমিতে প্রচুর শস্য উৎপন্ন হওয়ায় তাদের খাদ্যের অভাব ছিল না। খাদ্য সংগ্রহের জন্য অধিক সময় ব্যয় করতে হতো না। এছাড়া অনুকূল পরিবেশ হওয়ার কারণে নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে মানুষ বসতে গড়ে তুলেছিল।
Comments
Post a Comment
Haven't doubt please let me know.