একাদশ শ্রেণীর বাংলা class 11bengali
গ্যালিলিও
সত্যেন্দ্রনাথ বসু
(১) গ্যালিলিও কোথায় কবে জন্মগ্রহণ করেছিলেন?
উঃ ইতালির পিসা শহরে ১৫ ই ফেব্রুয়ারি ১৫৬৪ খ্রিস্টাব্দে।
(২) গ্যালিলিওর পরিবারের নাম কি ছিল?
উঃ গ্যালিলাই।
(৩) গ্যালিলিওর পিতা কি বাজাতে পারতেন?
উঃ লিউট । একপ্রকার বাদ্যযন্ত্র।
(৪) ১৩ বছর বয়সে গ্যালিলিও কোন মঠে কি নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেছিলেন?
উঃ বেনেডিকটিং সম্প্রদায়ের মঠে সাহিত্য, ন্যায় ও ধর্মশাস্ত্র নিয়ে লেখাপড়া শুরু করেছিলেন।
(৫) "শেষ অবধি তাকে মোট ছাড়তে হলো"- কারণ কি?
উঃ গ্যালিলিওর পিতা আশঙ্কা করেছিলেন যে, ছেলে যদি সন্ন্যাসী হয় তাহলে সংসারের হতশ্রী কে পুনরুদ্ধার করতে পারবে না। এই কারণে তাকে মঠ ছাড়তে হয়েছিল।
(৬) কোথায় কবে গ্যালিলিও ডাক্তারি পড়তে এসেছিলেন?
উঃ ১৫৮১ খ্রিস্টাব্দে ১৭ বছর বয়সে পিসা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
(৭) "কখনো কখনো শিক্ষকদের সঙ্গেও বেধে যেত বাকযুদ্ধ"- কারণ কি?
উঃ গ্যালিলিও অ্যারিস্টোটলের তত্ত্ব মাথা পেতে মেনে না নিয়ে হাতে কলমে পরীক্ষা করে যাচাই করতে চাইতেন।
(৮) গ্যালিলিও কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন?
উঃ ইতালির পিসা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫৮৮ খ্রিস্টাব্দে।
(৯) গ্যালিলিওর পিতা কবে মারা গিয়েছিলেন?
উঃ ১৫৯১ খ্রিস্টাব্দে।
(১০) গ্যালিলিওর ভাইয়ের নাম কি ছিল? তিনি কি করতেন?
উঃ মাইকেল এঞ্জেলো।তিনি গান বাজনা নিয়েই থাকতেন এবং পোল্যান্ডের রাজদরবার এ একজন কলাবিদ ছিলেন।
(১১) কোথায় কবে থেকে শুরু হল তার প্রকৃত বিজ্ঞানের জীবন?
উঃ ১৫৯২ সালে পাডুয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
(১২) গ্যালিলিও কখন ফ্লোরেন্সে আসতেন?
উঃ গ্রীষ্মের ছুটিতে।
(১৩) তার প্রিয় ছাত্রের নাম কি ছিল?
উঃ ডিউক এর ছেলে কস্ম।
(১৪) ১৬০৯ সালে কি নতুন ঘটনা ঘটেছিল?
উঃ দূরবীন যন্ত্রের আবিষ্কার।
(১৫) গ্যালিলিও কখন জ্যোতিষ চর্চা করতেন?
উঃ প্রিয় ছাত্রের মায়ের আগ্রহে যখন তিনি গ্রীষ্মের ছুটিতে বাড়িতে আসতেন।।
(১৬) প্রথম জীবনে গ্যালিলিওকে অর্থ কষ্টে ভুগতে হয়েছিল কেন?
উঃ তিনি আশানুরূপ বেতন পেতেন না বলে।
(১৭) গ্যালিলিও প্রচুর অর্থগমের চেষ্টা করতেন কেন?
উঃ কারণ তার এক বিশাল একান্নবর্তী পরিবারের দেখাশোনার দায়িত্ব ছিল।
(১৮) হল্যান্ডের তৈরি প্রথম দূরবীনের সঙ্গে গ্যালিলিওর দূরবীনের পার্থক্য কোথায়?
উঃ হল্যান্ডের তৈরি দুরবিনে সব জিনিস উল্টো দেখায়। আর গ্যালিলিওর তৈরি দুরবিনে সব জিনিস ঠিকঠাক অবস্থানে দেখা যায়।
(১৯) "ভেনিসের কর্তৃপক্ষের কাছে তার কদর বেড়ে গেল"- কারণ কি?
উঃ শত্রুপক্ষের হাত থেকে ভেনিসকে বাঁচাবার উপায় হল গ্যালিলিওর তৈরি দূরবীন।
(২০) গ্যালিলিও ১৬১০ সালে ভেনিস ছেড়ে তাসকানে চলে গেলেন কেন?
উঃ নতুন ডিউক প্রচুর অর্থ সম্পদ দিয়ে গ্যালিলিওকে রাজ পন্ডিত পদে নিয়োগ করেছিলেন।
(২১) পাডুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্যালিলিও একটানা কত বছর কাটিয়েছিলেন?
উঃ ১৮ বছর কাটিয়েছিলেন।
(২২) বাবার আরোপিত কোন অজুহাতে গ্যালিলিওকে মঠ ছাড়তে হয়েছিল?
উঃ ছেলের দৃষ্টি শক্তি ক্ষীন বেশি পড়াশোনা ক্ষতিকর এই অজুহাতে।
(২৩) তাসকানির বৃদ্ধ ডিউক মারা গেলে সেই গতিতে কে বসেছিল?
উঃ তার পুত্র কস্ম সেই গদিতে বসেছিলেন।
(২৪) পাডুয়া ছেড়ে গ্যালিলিও পুনরায় কোথায় এসেছিলেন?
উঃ ফ্লোরেন্সে এসেছিলেন।
(২৫) গ্যালিলিওর সম্পর্কে পোপ বেলারিমিনকে কি বলতে বলেছিলেন?
উঃ গ্যালিলিওকে ডেকে বলেন যে তিনি এই ভ্রান্ত বিশ্বাস ত্যাগ করেন।
(২৬) সত্যের জয় কথাটি কোন প্রেক্ষিতে লেখক বলেছেন?
উঃ চার শত বৎসর বাদেও তার প্রতি নানা লোকের ভক্তির তর্ঘ্য এই প্রেক্ষিতে।
(২৭) "তার মতবাদ গ্যালিলিওর অভ্রান্ত বলে মনে হয়"- কার মতবাদ?
উঃ কোপার্নিকাস এর মতবাদ।
(২৮) ১৬১০ সালে গ্যালিলিও ফ্লোরেন্সে চলে গেলেন কেন?
উঃ কারণ রাজ পন্ডিত ও দার্শনিক হিসেবে স্বর্ণপদকে বিভূষিত হলেন তিনি।
(২৯) গ্যালিলিও কার বিশ্ব বিন্যাসে বিশ্বাসি ছিলেন?
উঃ কোপার্নিকাসের।
(৩০) ভেনিস সরকার কত খ্রিস্টাব্দে কত বছর গ্যালিলিওর চাকরির মেয়াদ বাড়িয়ে দিয়েছিল?
উঃ ১৬০৪ সালে ৬ বছরের মেয়াদ।
(৩১) পাডুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্যালিলিও কার মতবাদের পক্ষে বক্তৃতা দিয়েছিলেন?
উঃ কোপারনিকাসের।
(৩২) গ্যালিলিওর ওপর কিসের ভার পড়েছিল?
উঃ দূরবীন জোগাড় দেওয়ার।
(৩৩) "প্রবাদে আছে যে"- প্রবাদে কি আছে বলে লেখক জানিয়েছেন?
উঃ প্রবাদে আছে যে, Inquisition বিচারকদের সামনে হাঁটু গাড়া থেকে যখন তিনি দাঁড়িয়ে উঠলেন তখন নাকি তিনি বলেছেন- এই সত্ত্বেও পৃথিবী চলমান।
(৩৪) গ্যালিলিওর জীবন অত্যন্ত দুঃখ কষ্টের মধ্য দিয়ে কত বছর কেটেছিল?
উঃ ৯ বছর।
(৩৫) কোপারনিকাসের বই কবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়?
উঃ ১৬১৬ সালে মার্চ মাসে।
(৩৬) "গ্যালিলিও রাজি হলেন"- কি সে রাজি হলেন?
উঃ দূরবীন যন্ত্র জোগান দেবার জন্য।
(৩৭) 'প্রথমে ইনকুইজিসান রায় দিলেন'- কি রায় দিয়েছিলেন?
উঃ সূর্য যে জগতের কেন্দ্র স্বরূপ এটি অযৌতিক এবং যথার্থ ধর্মমতের পরিপন্থী।
(৩৮) গ্যালিলিওকে প্রথম কোথায় নজরবন্দি করে রাখা হয়?
উঃ প্রথমে তাকে সিয়েনাতে Archbishop এর নজর বন্দি করে রাখা হয়।
(৩৯) কার্ডিনাল বেলারিমিন কোথায় গ্যালিলিওকে ডেকেছিলেন?
উঃ তিনি নিজের বাড়িতে।
(৪০) 'বুঝিয়ে বললেন'-বুঝিয়ে কে কাকে কি বললেন?
উঃ বেলারিমিন গ্যালিলিওকে।
(৪১) 'আবার অন্যত্র লিখেছেন' অন্যত্র কি লেখার কথা বলা হয়েছে?
উঃ রোজ রোজ নানা উদ্ভাবন করা হচ্ছে অবসর ও সাহায্য গেলে অনেক বেশি পরীক্ষা ও আবিষ্কার করতে পারে।
(৪২) বিচারকদের সামনে হাঁটুগাড়া থেকে উঠে দাঁড়িয়ে গ্যালিলিও কি বলেছিলেন বলে প্রচলিত?
উঃ এ সত্ত্বেও পৃথিবী চলমান।
(৪৩) 'সংগীতে ও গণিতে তার দখল ছিল'- কার কথা বলা হয়েছে?
উঃ গ্যালিলিওর কথা বলা হয়েছে।
(৪৪) ফ্লোরেন্সে সভা পন্ডিতের কাছে গ্যালিলিও কি বিষয়ে পড়তে শুরু করেছিলেন?
উঃ গণিত ও পদার্থবিদ্যা বিষয়ে।
(৪৫)ইকুইজিশন কী?
উঃ রোমান ক্যাথলিক ধর্মমতের বিরুদ্ধ বাদীদের অনুসন্ধান করে দমন করার জন্য স্থাপিত বিশেষ এক ধরনেরবিচারালয়।
(৪৬) গ্যালিলিওর মৃত্যু হয় কবে?
উঃ ৪ই জানুয়ারি ১৬৪২ সালে ৭৭ বছর বয়সে।
(৪৭) গ্যালিলিও দূরবীন যন্ত্রে কি কি দেখতে পেয়েছিলেন?
উঃ চাঁদের পাহাড়, ছায়াপথের মধ্যে লক্ষ লক্ষ তারার সমাবেশ এবং নতুন নতুন উপগ্রহের খবর।
(৪৮) "বাড়ি হয়ে উঠল ফ্যাক্টরি কারুশালা"- বাড়ি কিভাবে ফ্যাক্টরি কারুশালায় পরিণত হয়েছিল?
উঃ প্রখ্যাত বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর লেখা গ্যালিলিও প্রবন্ধে আমরা জানতে পারি যে 1609 সালে জেনসন নামক একজন হোল্যান্ডবাসী কাচের নলের একপাশে চোখ রেখে দেখেছিলেন যে, দূরের জিনিসকে কাছে দেখাচ্ছে। তার এই অভিনব যন্ত্র নির্মাণের কথা গ্যালিলিওর কাছে পৌঁছাতেই তিনি অতি সহজেই দূরবীন যন্ত্র আবিষ্কার করেছিলেন। সেই দূরবীন যন্ত্রের যোগান দিতে গিয়ে বাড়ি কিভাবে ফ্যাক্টরি কারুশালায় পরিণত হয়েছিল তা আলোচনা করা হলো।
ভেনিস ছিল ইতালির এক সমৃদ্ধশালি নগর। সেই সময়ে ভেনিস নানা স্থানে সমুদ্রপথে জাহাজে করে ব্যবসা-বাণিজ্য চালাতো। ফলে মাঝে মধ্যেই ভেনিসের বাণিজ্য জাহাজ গুলিকে শত্রুদের আক্রমণে পড়তে হতো। সেই আক্রমণ থেকেই রক্ষা পাওয়ার জন্য ভেনিস সরকার প্রতিটি জাহাজে গ্যালিলিওর তৈরি দূরবীন রাখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করল। কারণ শত্রু পক্ষকে আগে থেকে দেখা গেলে একদিকে যেমন যুদ্ধের প্রস্তুতি যথাসময়ে নেওয়া সম্ভব হবে অন্য দিক থেকে তেমনি ব্যবসা বাণিজ্যে দ্রব্য সামগ্রীও রক্ষা পাবে। সেই কারণেই দুরবিনের যোগান দেবার ভার পড়লো গ্যালিলিওর উপর। আর সেই জন্যই তার বাড়ি হয়ে উঠল ফ্যাক্টরি কারু শালা। সেখান থেকে তিনি প্রচুর দূরবীন বিক্রি করতে লাগলেন। এই দূরবীন যন্ত্র তৈরির সঙ্গে সঙ্গে নতুন গুলি আগের থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী হতে থাকলো। এইভাবে বাড়ি ফ্যাক্টরি কারুশালায় পরিণত হয়ে উঠলো।
(৪৯) গ্যালিলিওর ছাত্র জীবন সম্পর্কে যাহা জান লেখ।
উঃ বিজ্ঞানাচার্য সত্যেন্দ্রনাথ বসুর লেখা গ্যালিলিও প্রবন্ধে তার ছাত্র জীবন সম্পর্কে যা জানা যায় তা নিম্নে আলোচনা করা হলো।
গ্যালিলিও ১৫৬৪ সালে ১৫ ই ফেব্রুয়ারি গ্যালিলাই পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। মাত্র ১৩ বছর বয়সে তিনি বেনেডিকটিং সম্প্রদায়ের মঠে দু বছর ধরে সাহিত্য, ন্যায় ও ধর্মশাস্ত্র বিষয়ে অধ্যায়ন করেছিলেন। কিন্তু ছেলে সন্ন্যাসী হয়ে যাওয়ার ভয়ে তার পিতা তাকে সেই মঠ থেকে নিয়ে চলে এসেছিলেন। তারপর দেখা যায় পনেরশো একাশি সালে ১৭ বছর বয়সে পিসা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাক্তারি পড়েছিলেন। ছেলেবেলা থেকেই তিনি হাতে কলমে পরীক্ষা করে যাচাই করে তবেই সমস্ত ঘটনাকে তিনি বিশ্বাস করতে চাইতেন। আর সেই জন্যই কখনো কখনো শিক্ষকদের সঙ্গে বাক যুদ্ধ চালাত এবং অন্য ছাত্রদের সঙ্গেও তর্ক চালাতো। ছাত্র অবস্থা থেকেই যুক্তি তর্কের প্রবণতা লক্ষ্য করা যেত।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত গ্যালিলিওর ডাক্তারি পড়াও হলো না। গণিত শাস্ত্রে এক মহা পন্ডিতের কাছে গণিতের ব্যাখ্যা শুনে তিনি গণিতের দিকেই ঝুঁকে পড়েছিলেন। ফলে তিনি গণিত ও পদার্থবিদ্যাতে অধ্যায়ন শুরু করেছিলেন। অল্প দিনের মধ্যেই তিনি গুরুকে অনেক পিছনে ফেলে এগিয়ে গিয়েছিলেন। প্রথম প্রথম তাকে অর্থ কষ্টের জন্য অনেক ভুগতে হয়েছিল। তারপর দেখা যায় পনেরশো-৮৮ সালে পিসা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিতে শিক্ষকতা করেছেন। এইভাবে তার ছাত্র জীবন থেকে কর্মজীবন পর্যন্ত এক সুন্দর বর্ণনা দিয়েছেন লেখক।
(৫০) গ্যালিলিও প্রবন্ধ অবলম্বনে গ্যালিলিও চরিত্রের প্রতিবাদী এবং আপসকামী সত্তার পরিচয় দাও?
উঃ কোন গদ্যাংশের মধ্য দিয়ে বা কোন বিষয়ের মধ্য দিয়ে লেখক জীবনের সামগ্রিক রূপের সন্ধান করে। সেই সময় লেখক যে সমস্ত ঘটনা বা চরিত্রের উল্লেখ করে সেগুলি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মূল বিষয়ের সাথে যুক্ত করেন। আলোচ্য গদ্যাংশে কেন্দ্রীয় চরিত্র হলো গ্যালিলিও। তিনি কখনো আত্মরক্ষার জন্য আপোষ করেছেন। আবার ছাত্র জীবন থেকেই নানা কারণে তিনি প্রতিবাদী হয়ে উঠেছেন। তাই গ্যালিলিও চরিত্রে প্রতিবাদী ও আপসহীন সত্তার যে পরিচয় পাওয়া যায় তা আলোচনা করা হলো।
ছাত্র অবস্থা থেকেই গ্যালিলিও আপ্তবাক্যকে বিশ্বাস করতেন না। তৎকালীন সময়ে অ্যারিস্টোটোলিও তত্ত্বকে মেনে নিয়ে সবকিছুকেই বিশ্বাস করে নিতেন। সবকিছুই কিন্তু গ্যালিলিও হাতে-কলমে পরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই করে তবেই বিশ্বাস করতে চাইতেন। আর সেই জন্য অনেক সময় সহপার্টিদের সঙ্গে আবার কখনো শিক্ষকদের সঙ্গে বাক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তেন। ১৬০৯ সালে দূরবীন যন্ত্র আবিষ্কার করে ধর্মবিরূপ পণ্ডিতদের বিরাগ আজন হয়েছেন। দূরবিনে চোখ না রেখে তারা প্রচার করতে লাগলেন যে যন্ত্রের কারসাজির সাহায্যে গ্যালিলিও কোপারনিকাসের মতবাদের পক্ষে যুক্তি সংগ্রহ করে মেতে উঠেছেন। তখন এক বৃদ্ধ ধর্ম যাজকের মৃত্যু হলে গ্যালিলিও কৌতুক করে বলেছেন সর্গযত্রা পথে বৃহস্পতির উপগ্রহগুলি তিনি নিশ্চয়ই দেখতে পাবেন।
গ্যালিলিওকে সারা জীবনে বেশ কিছু আপোস করতে হয়েছে। একান্নবর্তী পরিবারকে চালানোর জন্য অর্থনৈতিক কারণে তিনি আপোস করেছেন। চাকরির জন্য তিনি যেমন উমেদারী করেছেন, তেমনি কসমোকে পড়াতে গিয়ে তার মায়ের মন যোগানোর জন্য জ্যোতিষের অবিশ্বাসী হওয়া সত্ত্বেও তাকে ভবিষ্যৎ গননা করতে হয়েছে। তিনি ধর্মযাজকের সঙ্গে বিচারালয়ে তর্ক করেননি। তবুও তাকে প্রতীজ্ঞা করতে হয়েছিল ,যে তিনি ধর্ম বিরোধী কোনো কথা মুখে আনবেন না। বিচার সভায় তাকে হাঁটু গেড়ে বলতে হয়েছিল তিনি যা লিখেছেন তা সবই বৃথা গর্বের অগ্রতা ও সতর্কতার নির্দেশ। এই ভেবেই গ্যালিলিও ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য আপোস করেননি। এইভাবেই প্রবন্ধ অবলম্বনে গ্যালিলিওর প্রতিবাদী ও আপোষকালীন সত্তার পরিচয় পাওয়া যায়।
(৫১) স্বদেশে ফেরার পরে ধার্মিক ও শিক্ষিত মানুষদের সঙ্গে কিভাবে গ্যালিলিও সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছিলেন?
উঃ বিজ্ঞান নিষ্ঠ প্রাবন্ধিক সত্যেন্দ্রনাথ বসুর রচিত গ্যালিলিও প্রবন্ধে গ্যালিলিও এর ছাত্র জীবন থেকে শুরু করে তার জীবনাবসান পর্যন্ত বর্ণিত হয়েছে। ছাত্র অবস্থা থেকেই তিনি নানা সংঘাতে জড়িয়ে ছিলেন। তিনি স্বদেশভূমিতে ফিরেও তার আবিষ্কার কে কেন্দ্র করে কিভাবে ধার্মিক ও শিক্ষিত মানুষদের সঙ্গে নানা সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছিলেন তা আলোচনা করা হলো।
১৬১১ খ্রিস্টাব্দে গ্যালিলিও স্বদেশে ফেরার পর জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ে এমন অনেক নতুন কথা প্রকাশ করলেন যা পন্ডিত মহলে সাড়া ফেলে দিয়েছিল। সেই সময়ে তিনি ল্যাটিন ভাষা ত্যাগ করে ইতালির মাতৃভাষা ইতালিয়ান ভাষায় লেখালেখি শুরু করেছিলেন। ফলে সেখানকার শিক্ষিত মানুষেরা তার আবিষ্কার ও মতামত গুলি খুব সহজেই বুঝতে পারে। আবার তিনি টলেমির বিশ্ব মতবাদের বিরুদ্ধে এবং কোপার্নিকাসের সূর্য কেন্দ্রিক বিশ্ব মতবাদের স্বপক্ষে একটি বই রচনা করেছিলেন। এর ফলে সনাতনীরা ও বহু ছাত্র অধ্যাপক ও বিরোধীরা তার বিরোধিতা শুরু করল। ফ্লোরেন্সে ও পিসার ডোমিনিকান সম্প্রদায়ের ধর্ম যাজকরা প্রচার করতে শুরু করেন যে , গ্যালিলিওর অধ্যাপনা ধর্মানুরাগের বিপক্ষে। এমনকি তা বাইবেলের অনেক কথা বিরোধী। তাদের এই অভিযোগের ভিত্তিতেই ১৬১৬ খ্রিস্টাব্দে রোম নগরীর ধর্মসভায় তার ডাক পরে ।গ্যালিলিওর হিতাকাঙ্খী বেলারি মিনের অনুরোধে গ্যালিলিও সেখানকার ধর্মযাজকের সঙ্গে তর্ক করা এবং নিজমত ব্যাখ্যা করা থেকে বিরত থাকলেও সেই ধর্মসভার অধ্যক্ষরা তাকে প্রতিজ্ঞা করিয়ে নেন যে, তিনি যেন ভবিষ্যতে কখনো ধর্ম বিরোধী মত মুখে না আনে। দীর্ঘদিন তর্কবিতর্ক মতামত থেকে দূরে থাকার পর টলেমি ও কোপারনিকাসের বিশ্ব মতবাদ আলোচনা করে তিনি একটি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন । এই গ্রন্থের জন্য তাকে জীবনের শেষ নয় বছর অতি দুঃখ ও কষ্টের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করতে হয়েছিল।
Comments
Post a Comment
Haven't doubt please let me know.