জীবনানন্দ দাশ ও তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়

 #জীবনানন্দ দাশ ও তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাব্যপ্রতিভা আলোচনা করো ।


(১) রবীন্দ্রোত্তর কবি হিসেবে জীবনানন্দ দাশের কাব্য চর্চার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

উঃ       আপন প্রতিভার ক্ষমতায় যে সকল রবীন্দ্রোত্তর কবি বাংলা সাহিত্যে সম্পূর্ণ হতে পেরেছিলেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন জীবনানন্দ দাশ। তিনি আধুনিক বাংলা রোমান্টিক কবিতায় নিজস্ব সুর এনেছিলেন। সহযাত্রী কবি বুদ্ধদেব বসুর ভাষায় ঘুমে ভরা সুর, স্বপ্নে ভরা শিশির কোমল। এক্ষেত্রে জীবনানন্দের কবিতাযর ভাষাই তার কাব্য ভঙ্গির ব্যাখ্যায় মনে হয়েছিল বুদ্ধদেবের।

              তার প্রথম কাব্য 'ঝরাপালক'(১৯২৭) এ সত্যেন্দ্রনাথ, মোহিতলাল, কাজী নজরুল ইসলামের প্রভাব খুব স্পষ্ট। কিন্তু তারপর থেকে তার কবিতায় প্রকাশ পেল স্বতন্ত্র নিজস্ব লক্ষণ। তার জীবনদশায় প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থগুলি হল- বনলতা সেন(১৯৪২), মহাপৃথিবী(১৯৪৬), সাতটি তারার তিমি(১৯৪৮), ধূসর পান্ডুলিপি (১৯৩৬), রূপসী বাংলা (১৯৫৭) প্রভৃতিতে প্রকৃতি প্রেম, মৃত্যু ক্লান্তি ও নিঃসঙ্গতা তার কাব্যের প্রধান বিষয় হয়ে উঠেছে।" বোধ " কবিতায় তিনি লিখেছেন--                           "সকল লোকের মাঝে বসে                                            আমার নিজের মুদ্রাদোষে                                              আমি একা হতেছি আলাদা।" 

অথচ তিনি আশ্রয় খোঁজেন রোমান্টিক স্বপ্নময়তায়। বনলতা সেনের চোখ তাই----                                                        "পাখির নীড়ের মতো                                                   চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নেশা।" 

কবির কাব্যের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল চিত্ররূপময়তা। এছাড়া তার কবিতায় দেখা যায় নতুন ভাবভঙ্গীর প্রকাশ। যা বাংলা কবিতার জগতে বিরল। তার বিভিন্ন কাব্যগ্রন্থে খুঁজে পাওয়া যায় বাংলা প্রকৃতির রূপ। কবি বাংলার রূপে মুগ্ধ হয়ে বলে উঠেছেন------।                                            " বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি                                        তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাইনা আর।"

  তার কবিতার মধ্যে বাংলার প্রকৃতি রূপের পাশাপাশি সেই রুপে আত্মলীন হবার দুর্বার ইচ্ছার প্রকাশ লক্ষ্য করা যায়------                                                        "আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে এই বাংলায়   হয়তো মানুষ নয় হয়তো বা শঙ্খচিল শালিকের বেশে।"

    শব্দ ব্যবহারের ক্ষেত্রে তিনি সংস্কৃত শব্দের পাশাপাশি লৌকিক শব্দের বহুল প্রয়োগ ঘটিয়েছেন।


২) তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাব্য চর্চার বর্ণনা দাও।

উঃ উত্তর শরৎ যুগের সর্বশ্রেষ্ঠ কথা সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। তার উপন্যাস ও ছোটগল্পে তার যে বিচিত্র অভিজ্ঞতা, তীব্র অন্তর্দৃষ্টি, বলিষ্ঠ জীবন বোধের পরিচয় মেলে তা এককথায় দুর্লভ।' কল্লোল' পত্রিকার সঙ্গে তিনি একসময় যুক্ত ছিলেন কিন্তু পরবর্তীকালে তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন। 

উপন্যাস সমূহঃ 

            তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলি হল- রাইকমল(১৯৩৫), ধাত্রীদেবতা (১৯৩৯), কালিন্দী(১৯৪০), গণদেবতা(১৯৪২), নীলকন্ঠ (১৯৪৩), পঞ্চগ্রাম(১৯৪৩), হাঁসুলি বাঁকের উপকথা(১৯৪৭) ইত্যাদি। 

উপন্যাসের বৈশিষ্ট্যঃ 

ক) কাহিনীর বিশাল পটভূমিকায় ও আঞ্চলিকতায় অধিকাংশ উপন্যাস রাঢ় বাংলার প্রকৃতি ও মানুষ গুরুত্ব পেয়েছে। তার সেরা উপন্যাস হাঁসুলী বাঁকের উপকথা।

খ) পুরনো যুগের সঙ্গে নতুন যুগের সংঘাত কালিন্দী উপন্যাসে তারাশঙ্কর এই দন্দকে সুন্দরভাবে ফুটিয়েছেন।

গ) চরিত্রের নানা বৈচিত্র লক্ষ্য করা যায় তার গ্রন্থগুলিতে। সব উপন্যাসেই এই বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। তবে" আরোগ্য নিকেতন" উপন্যাসটি এক্ষেত্রে অনন্য।

Comments

Popular posts from this blog

কর্ভাস (Carvas)প্রফেসর শঙ্কুর ডায়রি

বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা তারতম্যের কারণগুলি আলোচনা কর।

আদর্শ ফুলের গঠন চিত্র ( দশম শ্রেণী)