একাদশ শ্রেণীর বাংলা শিক্ষার সার্কাস

       শিক্ষার সার্কাস 

                 আইয়াপ্পা পানিক্কর


(১) "সব শিক্ষা একটা সার্কাস"- কারণ কি?

উঃ শিক্ষার সাহায্যে আমরা একের পর এক শ্রেণীতে উঠি।

(২)জ্ঞান কখন ধোঁকা হতে পারে?

উঃ জ্ঞানী মানুষদের অসদ-আচরণের ফলে।

(৩)আইয়াপ্পা পানিকরের অন্যতম কাব্যগ্রন্থের নাম কি ?

উঃ কৃতি কাল।

(৪)পানিকর কোন ভাষার কবি?

উঃ মালায়ালাম।

(৫)শিক্ষার সার্কাস কবিতাটির অনুবাদকের নাম কি ?

উঃ উৎপল কুমার বসু।

(৬)"সে যেখানে গেছে, সেটা ধোঁকা" কথাটির অর্থ কি?

উঃ মানুষের মধ্যে নৈতিক অধঃপতন এসেছে।

(৭)সব শিক্ষা একটি সার্কাস কবির এমন মন্তব্যের কারণ কি 

উঃ কবি মনে করেছেন যে গতানুগতিকতার সঙ্গে সার্কাসের খেলার সাদৃশ্য আছে।

(৮)'সে যেখানে গেছে সেটা ধোঁকা'- কার সম্পর্কে একথা বলা হয়েছে?

উঃ জ্ঞানের সম্পর্কে।

(৯)শিক্ষার সার্কাস কবিতাটির উৎস কি?

উঃ দিন ও রাত্রি।

(১০)'আমি তবু পরের শ্রেণীতে যাব'- এখানে বক্তার কোন মানসিকতার প্রকাশ পেয়েছে?

উঃ বক্তার গতানুগতিক সার্কাস সদৃশ শিক্ষায় পাস করে যাওয়ার মানসিকতা প্রকাশ পেয়েছে।

(১১)যদি আমি দ্বিতীয় শ্রেণীতে পাশ করি তাহলে কি হবে?

উঃ আমি সোজা তৃতীয় শ্রেণীতে যাব।

(১২)'সব শিক্ষা একটি সার্কাস'- কবির এ কথায় কিসের ইঙ্গিত পাওয়া যায় ?

উঃ তথাকথিত শ্রেণী পাস করা শিক্ষার বিষয়ে ব্যঙ্গাত্মক নেতিবাচক দিকের ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

(১৩)'যদি সব শ্রেণী শেষ হয়ে যায়'- সব শ্রেণী শেষ হলে কবি কি করবেন?

উঃ কবি পরের শ্রেণীতে যাবেন।

(১৪)তুমি যদি তৃতীয় শ্রেণীতে পাশ করো তাহলে কি হবে?

উঃ তাহলে কবি ও তৃতীয় শ্রেণীতে পাশ করে চতুর্থ শ্রেণীতে বসতে পারেন।

(১৫)'সে যেখানে গেছে'-সে কে? সে কোথায় গেছে বলে কবির ধারণা ?

উঃ জ্ঞান , ধোঁকায় পর্যবসিত হয়েছে।

(১৬)'সব শিক্ষা সার্কাস'- সব শিক্ষা বলতে কী বোঝো?

উঃ প্রতিষ্ঠানিক পুঁথি নির্ভর শিক্ষা।

(১৭)"যার সাহায্যে আমরা পরের শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হই"- কবি পুরো কবিতায় পাশ লেখার পরে এখানে উত্তীর্ণ লিখলেন কেন?

উঃ এখানে পাস কথাটি থাকলে পোমক্তিটির শ্রুতি মাধুর্য ক্ষুন্ন হতো তাই কবি উত্তীর্ণ কথাটি ব্যবহার করেছেন।


(১৮) শিক্ষার সার্কাস কবিতায় কবি শিক্ষাকে কেন সার্কাসের সঙ্গে তুলনা করেছেন?

উঃ আইয়াপ্পা পানিকর রচিত শিক্ষা সার্কাস কবিতাটি একটি শিক্ষা বিষয়ক ভাবনার কাব্যিক উপস্থাপন মাত্র। তার মতে বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা যেন ধারাবাহিক কৌশলের সমষ্টি। সেখানে পরীক্ষার সাফল্যই শিক্ষার্থীর জীবনে প্রধান হয়ে ওঠে। তাই কবি শিক্ষা বিষয়ক পরিকাঠামোকে তীব্র ব্যঙ্গ করে তাকে কিভাবে সার্কাসের সঙ্গে তুলনা করেছেন তা আলোচনা করা হলো।

        শিক্ষা হল শিক্ষার্থীর ধারাবাহিক অনুশীলনের মাধ্যমে জ্ঞান আহরণের ফল। আর সার্কাস হলো নানা যন্ত্রের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করার এক মজাদার কৌশল। ব্যক্তিগত সাফল্যের জন্য কোনো মানুষ এক শ্রেণী থেকে অন্য শ্রেণীতে এগিয়ে চলে শিক্ষার্থীও তেমনি এক শ্রেণী থেকে অন্য শ্রেণীতে যাওয়ার মধ্য দিয়ে শিক্ষার সার্থকতা খোঁজে। সেখানে পরীক্ষায় পাশ করাই শিক্ষার্থীদের একমাত্র লক্ষ্য। কারণ এর মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা অর্থ উপার্জনের লক্ষ্যেই পৌঁছতে পারে। জ্ঞান সেখানে তুচ্ছ হয়ে যায়। তাই বলা যায় শিক্ষা হল আত্ম সুখের একটি প্রক্রিয়া মাত্র। অপরদিকে সার্কাস খেলায় খেলোয়াড়রা যেমন বুদ্ধির দ্বারা একটি দড়ি ছেড়ে অন্য একটি দড়ি ধরে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে অর্থ উপার্জন করে তা যেন শিক্ষার্থীর এক শ্রেণী থেকে অন্য শ্রেণীতে উত্তোলনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা লাভ করার মতোই।

         পরিশেষে বলা যায়, বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষা ব্যক্তির সত্তা বিকাশের বাহক নয়। ইহা ব্যক্তির আত্ম সুখেরই একটি প্রক্রিয়া মাত্র। তাই শিক্ষা ব্যবস্থাকে কবি মজার সার্কাস বলে মনে করেছেন। এই শিক্ষা পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের যান্ত্রিক বানিয়ে তোলে। তাই কবি শিক্ষাকে সার্কাসের সঙ্গে তুলনা করেছেন।


(১৯) শিক্ষার সার্কাস কবিতার নামকরণের সার্থকতা আলোচনা কর।

উঃ        কোনো কবিতার নামকরণ বা কোনো শিল্পের নামকরণের পিছনে কবির মানসিক অভিপ্রায় লুকিয়ে থাকে। কখনো তিনি প্রধান চরিত্রের নামে নামকরণ করে থাকেন। কখনো বিশেষ বস্তু বা ঘটনাকে নামকরণের জন্য বেছে নেন।আবার কখনো রূপক সাংকেতিক নামকরণ করে থাকেন। আলোচ্য কবিতাটি একটি ব্যাখ্যা মূলক বা বিশ্লেষণ ধর্মী কবিতা।এই ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণের অন্তরালে থেকে কবিতাটির নামকরণ কতখানি সার্থক হয়ে উঠেছে তা আলোচনা করা হলো।

        আইয়াপ্পা পানিকরের 'শিক্ষার সার্কাস' কবিতাটির নামকরণ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।  আপাতভাবে কবিতাটি খুবই সরল হলেও কবি এখানে শিক্ষা সম্পর্কিত কাব্যিক ভাবনার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় শিক্ষা হলো পরীক্ষায় পাশ করা এবং এক শ্রেণী থেকে অন্য শ্রেণীতে উত্তরণের একটি পদ্ধতি মাত্র। শিক্ষার্থীর জীবনে কেবলমাত্র এইরকম পদ্ধতি লক্ষ্য করা যায়। তাতে কবির মন বেদনা গ্রস্ত হয়ে উঠেছে। জ্ঞানের সাথে সংযোগহীন এই শিক্ষা ব্যবস্থা আসলে শিক্ষার্থীদের কাছে ধোঁকা মাত্র। সার্কাস খেলোয়াড় যেভাবে ঝুলে একটি দড়ি ছেড়ে আরেকটি দড়ি ধরে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছায়।শিক্ষার্থীরা সেভাবে এক শ্রেণী থেকে অন্য শ্রেণীতে ওঠার মধ্য দিয়ে শিক্ষার সার্থকতা খোঁজে। এই তাৎপর্যের মধ্য দিয়ে শিক্ষার সার্কাস কবিতাটির নামকরণ যথার্থই সার্থক হয়ে উঠেছে।


(২০) "সে যেখানে গেছে সেটা ধোঁকা"- ধোঁকা শব্দটির মাধ্যমে কবির কোন মানসিকতার প্রকাশ ঘটেছে?

উঃ     আলোচ্য অংশটি আইয়াপ্পা পানিকর রচিত 'শিক্ষার সার্কাস' কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। এখানে তিনি বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় যে মানুষের প্রাপ্ত শিক্ষা প্রকৃত তাৎপর্য হারিয়েছে এবং সেই শিক্ষা যে আত্মিক বিকাশের সহায়ক নয়, সেই প্রসঙ্গে প্রশ্নোদ্ধৃত উদ্ধৃতিটি করেছেন।

        প্রতিটি শিক্ষা ব্যবস্থার উদ্দেশ্য হলো জ্ঞান সঞ্চয় করা এবং শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ ঘটানো। বারবার অধ্যায়ন ও অনুশীলনের মাধ্যমে মানুষ নিজেকে জীবজগতের শ্রেষ্ঠতম প্রতিনিধির মর্যাদা দেবে এবং তাদের জ্ঞানভাণ্ডার সমৃদ্ধ করে তুলবে, এটাই একমাত্র প্রত্যাশা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বর্তমান শিক্ষা, তার আদর্শ ও উদ্দেশ্য থেকে বঞ্চিত হয়েছে। শিক্ষা এখন ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠা অর্জনে একটি সিঁড়ি মাত্র।এক শ্রেণী থেকে আর এক শ্রেণীতে উত্তোলন এবং তার জন্য পরীক্ষায় পাশ করার প্রানপণ চেষ্টা। শিক্ষার সার্থকতা কেবল এইটুকু পরিসরের মধ্যে সীমাবদ্ধ। তাই একজন শিক্ষার্থী সেই শিক্ষাই অর্জন করুক সেখানে প্রকৃত জ্ঞানের চর্চা থাকে না। সেখানে স্কুল-কলেজের শিক্ষা পদ্ধতি নিষ্ফল বলেই প্রমাণিত হয়। এই ধরনের শিক্ষা পদ্ধতির ফলে শিক্ষার্থীদের আত্মিক মৃত্যু হয়ে ওঠে অনিবার্য। ধোঁকা শব্দটির দ্বারা শিক্ষার এই ভ্রান্তিকেই বোঝানো হয়েছে।



Comments

Popular posts from this blog

কর্ভাস (Carvas)প্রফেসর শঙ্কুর ডায়রি

বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা তারতম্যের কারণগুলি আলোচনা কর।

আদর্শ ফুলের গঠন চিত্র ( দশম শ্রেণী)