রূপনারাণের কূলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

     রূপনারানের কূলে 

                        রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 

(১) "এ জগৎ স্বপ্ন নয়"- রূপনারানের কূলে কবিতা অবলম্বনে কবির এই ভাবনার তাৎপর্য গুলি লেখ।

উঃ     বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের "শেষ লেখা" কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত রূপনারানের কূলে কবিতাটি 11 সংখ্যক কবিতা। কবি জীবন সারণ্যে উপনীত হয়ে সত্য ও জীবনের সন্ধান করেছেন। তিনি স্বপ্নের জগৎ থেকে ফিরে তাকিয়েছেন এই রূপময় পৃথিবীর দিকে।তাইতো তিনি বলেছেন এ জগৎ স্বপ্ন নয়। জগৎ জীবনের কঠিন বাস্তবকে তিনি আলোচ্য কবিতায় তুলে ধরেছেন।

           কবি রবীন্দ্রনাথ কখনোই জগতের প্রতি বিমুখ ছিলেন না। তিনি ছিলেন মর্ত প্রেমিক তথা মানব প্রেমিক। জগৎ জীবনকে তিনি কোন সময়েই ভুলে যাননি। তার কাল্পনিক জগতের সঙ্গে কোন মিলই তিনি খুঁজে পাননি। মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে কবি জগতকে সত্য হিসাবে দেখেছেন। তার মতে এই জগৎ আধার সংঘাত মুখর ও বেদনায় কাতর। ব্যক্তিগত জীবনের দুঃখ দুর্দশা সামাজিক ও রাজনৈতিক দন্ডের মধ্যে দিয়ে জীবনের যথার্থ পরিচয় পাওয়া যায়। তাই এই জীবন স্বপ্নের রঙে রঙিন নয়। রক্তের অক্ষরে এর যথার্থ পরিচয়। এই জীবনের দুঃখের তপস্যাই হলো সত্য। এই সত্য হলো জীবনের যথাযথভাবে বুঝতে শেখানো। তাই স্বপ্ন বিলাসিতা নয় দুঃখ তরঙ্গের মধ্যেই জীবন সত্যকে খুঁজে পাওয়া যায়।


(২) "সত্য যে কঠিন"- এই উপলব্ধিকে কবি কিভাবে উপনীত করেছেন?

উঃ        রূপনারানের কূলে কবিতায় কবি এই রূপময় বাস্তব পৃথিবীর দিকে আলোকপাত করেছেন। তিনি এই জগতকে সত্য হিসেবে দেখেছেন। তাই তার কাছে এই জগৎ স্বপ্ন নয়। এখানে আঘাত বেদনা এবং রক্তক্ষরণকে তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন। আর সেই অভিজ্ঞতাকে তিনি সত্য হিসেবে মনে করেছেন।

            কবির মতে এই সত্য কঠিন। তবুও তিনি সেই কঠিন কেই ভালোবেসেছেন। এই কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন সত্য কখনো বঞ্চনা বা ছলনা করেনা। আসলে কবির ভাবনায় ফুটে উঠেছে যে জীবন হল দুঃখের তপস্যা। কিন্তু তা সত্যের মূল্য শোধ করার জন্য। কল্পনা বা স্বপ্নবিলাসের দ্বারা জীবনের এই সত্যকে এগিয়ে যাওয়ার অর্থ জীবনের স্বাভাবিক গতিকে অস্বীকার করা। অন্যদিকে কঠিনই জীবনের সত্যটাকে চিনিয়ে দেয়। সেই জন্যই কবি সত্য কঠিন হওয়া সত্ত্বেও সেই কঠিন কে ভালোবেসে সারা জীবন নানা কাজে এগিয়ে গেছেন।


(৩) "চিনিলাম আপনারে"- বক্তা কে? তিনি কিভাবে নিজেকে চিনেছেন?

উঃ       বিশ্ববরেণ্য বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রূপনারানের কূলে নামক কবিতায় আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।

           জীবনের শেষ পর্বে উপনীত হয়ে কবি পৃথিবীর বুকে জেগে উঠেছেন। তাই তিনি কল্পনার জগতের সঙ্গে বাস্তব জগতের কোন মিল খুঁজে পাননি। আঘাত সম্ভাবের মধ্য দিয়ে যে জীবনের বিকাশ হয় তা তিনি স্পষ্টভাবে উপলব্ধি করেছেন। সামাজিক রাজনৈতিক দন্ডের মধ্য দিয়েই যে সভ্যতার বিকাশ জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে যে রক্তক্ষরণ কবি তাকেই উপলব্ধি করেছেন এবং নিজের স্বরূপকে চিনতে পেরেছেন।

          রাতের আঁধারে কবি নিজেকে চিনতে পেরেছিলেন। এখন তিনি উপলব্ধি করেছিলেন সত্যের স্বরূপ অত্যন্ত কঠিন। কিন্তু তার সত্বেও তিনি কঠিন কে ভালোবেসে ছিলেন। তার মতে সত্য কখনো ছলনা করে না। ফলে তার দ্বারা কাউকে বঞ্চিত হতে হয় না। তাই এক কথায় বলা যায় আঘাত আর বেদনায় বিদ্ধ হয়ে কবি নিজেকে চিনেছেন।


(৪) রূপনারানের কূলে কবিতায় কবির আধ্যাত্মিক চেতনার পরিচয় দাও।

উঃ        রূপনারানের কূলে কবিতাটি কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষ লেখা কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ১১ সংখ্যক কবিতা এখানে তিনি পরিণত বয়সের এক অপূর্ব জীবন দর্শনের প্রকাশ ঘটিয়েছেন।।

           আলোচ্য কবিতায় দেখা যায় কবি স্বপ্নের জগৎ থেকে ফিরে এসেছেন এই রূপময় পৃথিবীর দিকে। আঘাতে বেদনায় তিনি উপলব্ধি করেছেন নিজের স্বরূপকে। তিনি বুঝেছেন মানব জীবন কঠোর সত্যের মুখোমুখি দাঁড়ানোর মধ্য দিয়ে সার্থকতা লাভ করে। তাতেই জীবনের গতিশীলতা প্রকাশ পায়। কবির কথায় আমৃত দুঃখের তপস্যাই হলো এ জীবন। অথচ তাকে অস্বীকার করে কল্পনার রঙিন জগতে আশ্রয় নেওয়ার মধ্যে জীবন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়াটাই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। রবীন্দ্রনাথ এই প্রসঙ্গে বলেছেন "সত্য কঠিন"। অনেক দুঃখ দাবি নিয়ে আসে। স্বপ্নে তা তো থাকে না। কিন্তু তবুও আমরা কঠিন কেই ভালোবাসি। সেই কঠিন এর জন্যই আমরা যে কোন দুঃসাহ কাজ করি। এভাবেই এই জীবনকে ভোগ করে দেনা শোধ করার কথা বলেছেন। আলোচ্য কবিতায় এভাবেই কবি সত্য ও জীবনের সন্ধান করেছেন।


Comments

Popular posts from this blog

কর্ভাস (Carvas)প্রফেসর শঙ্কুর ডায়রি

বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা তারতম্যের কারণগুলি আলোচনা কর।

আদর্শ ফুলের গঠন চিত্র ( দশম শ্রেণী)