রক্তের উপাদানগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করLife science

      জীবন বিজ্ঞান 

১) রক্তের উপাদানগুলি লেখ।

উঃ রক্ত হল একটি তরল যোগকলা। রক্তের প্রধান দুটি উপাদান হলো রক্তরস (৫৫%) এবং রক্তকণিকা (৪৫%)। রক্তরসে থাকে ৯১ - ৯২ % শতাংশ জল এবং ৮-৯% কঠিন পদার্থ। রক্তের কঠিন পদার্থ আবার জৈব(০.৯%) এবং অজৈব(৭-৮ %) শ্রেণীতে বিভক্ত। রক্তের জৈব উপাদান গুলির মধ্যে আছে সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস ইত্যাদি। জৈব উপাদান আবার তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত- প্রোটিন, প্রোটিন বিহীন এবং অন্যান্য জৈব বস্তু।

                 রক্তকণিকা তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত- লোহিত রক্তকণিকা, শ্বেত রক্তকণিকা এবং অনুচক্রিকা। শ্বেত রক্তকণিকা অ্যাগ্রানুলোসাইট এবং গ্র্যানুলোসাইট এই দুটি অংশে বিভক্ত। অ্যাগ্রানুলোসাইট মনোসাইট এবং লিম্ফোসাইটে বিভক্ত। আবার গ্র্যানুলৈসাইট ইওসিনোফিল, নিউট্রোফিল বেসোফিল কণায় বিভক্ত।


২) লোহিত রক্ত কণিকার উৎপত্তি, আয়ুষ্কাল এবং কাজ লেখ।

উঃ উৎপত্তিঃ ভ্রুণ অবস্থায় ভ্রনের ভাসকুলাসা অঞ্চল থেকে জন্মের একমাস পূর্বে যকৃত ও প্লীহা এবং জন্মের পর লাল অস্থিমজ্জা থেকে উৎপন্ন হয়।

জীবনকালঃ মানুষের লোহিত রক্ত কণিকার গড় আয়ু ১২০ দিন।

লোহিত রক্ত কণিকার কাজঃ

 ক) শ্বাসবায়ু পরিবহন করা।

খ) রক্তের অম্লত্ব এবং খারত্বের সমতা রক্ষা করা।

গ) রক্তের সান্দ্রতা বজায় রাখা।

ঘ) রক্তের ধনাত্মক ও ঋণাত্মক আয়নের সমব্যবস্থা বজায় রাখা।

৩) শ্বেত রক্তকণিকার উৎপত্তি, জীবনকাল এবং কাজ লেখ।

উঃ শ্বেত রক্ত কণিকার উৎপত্তিঃ শ্বেতকণিকা অস্থিমজ্জা, প্লীহা এবং লসিকা গ্রন্থি থেকে উৎপন্ন হয়।

জীবনকালঃ শ্বেত রক্তকণিকার গড় আয়ু ১ থেকে ১৫ দিন।

শ্বেতকণিকার কাজঃ

ক) মানবদেহে শ্বেতকণিকা বিভিন্ন কাজ করে। যেমন-

 ক) মনোসাইট ও নিউট্রোফিল শ্বেতকণিকা ফ্যাগোসাইটোসিস পদ্ধতিতে রোগ জীবাণু ধ্বংস করে ।

খ) লিম্ফোসাইট শ্বেতকণিকা এন্টিবডি সৃষ্টি করে দেহে রোগাক্রম প্রতিরোধ করে।

গ) বেসোফিল শ্বেত কণিকা রক্তে হেপারিন নিঃসরণ করে রক্তবাহে রক্ত তঞ্চন রোধ করে।

ঘ) ইউসিনোফিল শ্বেতকণিকা হিস্টামিন নিঃসরণ করে অ্যালার্জি প্রতিরোধ করে।

৪) অনুচক্রিকার উৎপত্তি, জীবনকাল এবং কাজ লেখো।

উঃ অনুচক্রিকার উৎপত্তিঃ অনুচক্রিকা লাল অস্থিমজ্জায় মেগাক্যারিওসাইড কোষের ক্ষণপদ থেকে সৃষ্টি হয়। 

জীবনকালঃ অনুচক্রিকার গড় আয়ু ৮ থেকে ৯ দিন।

অনুচক্রিকার কাজঃ

ক) রক্ত ক্ষরণের সময় অনুচক্রিকা থ্রম্বোপ্লাস্টিন নিঃসরণ করে প্রোথ্রম্বিনকে থ্রম্বিনে পরিণত করে রক্তকে জমাট বাঁধায়।

খ) অনুচক্রিকা রক্তজালিকার ক্ষতিগ্রস্ত আন্তঃআবরণীয় গায়ে এঁটে গিয়ে মেরামতির কাজকে ত্বরান্বিত করে।

৫) লোহিত কণিকার সংখ্যা স্বাভাবিক অপেক্ষা কমে গেলে কোন রোগ হয় ?

উঃ অ্যানিমিয়া 

৬) শ্বেতকণিকা স্বাভাবিক অপেক্ষা বেড়ে গেলে কোন রোগ হয়?

উঃ লিউকিমিয়া বা ব্লাড ক্যান্সার 

৭)  অনুচক্রিকার সংখ্যা স্বাভাবিক অপেক্ষা কমে গেলে কোন রোগ হয় ?

উঃ পারপিউরা। 

৮) কোন রক্তকণিকায় নিউক্লিয়াস থাকে না ?

উঃ লোহিত রক্ত কণিকা এবং অনুচক্রিকা।

৯) রক্তের বিভাগগুলি লেখ।

উঃ A,B,AB,O 

১০) সার্বিক দাতা বলা হয় কোন বিভাগের রক্তকে ?

উঃ O

১১) কোন বিভাগের রক্তকে সার্বিকগ্রহীতা বলা হয় ?

উঃ AB 

১২) ABO অসঙ্গতি বলতে কী বোঝো ?

উঃ রক্তের তিনটি প্রধান বিভাগ হল A,B,O ।  কোন এক ব্যক্তি তার রক্তের বিভাগের বাইরে কোন বিভাগ থেকে রক্ত গ্রহণ করলে অনাক্রমতন্ত্রের ওপর বিক্রিয়া ঘটে, একেই ABO অসঙ্গতি বলে।

১৩) ক্রস ম্যাচিং কাকে বলে? 

উঃ যে ব্যক্তির দেহে রক্ত সঞ্চালন হবে, তার রক্তের সঙ্গে দাতার রক্ত সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা তা নির্ণয় করাকে ক্রসিং ক্রস ম্যাচিং বলে। 

১৪) হিমলাইসিস কি ?

উঃ ত্রুটিপূর্ণ রক্ত সঞ্চালন ঘটলে গ্রহীতার অনাক্রম্যতন্ত্র দ্বারা গৃহীত লোহিত রক্তকণিকা বিনষ্ট হওয়ার ঘটনাকে হিমালাইসিস বলে।

১৫) রক্তদান সংক্রান্ত ভ্রান্ত ধারণাটি লেখ। তার থেকে প্রতিকারের উপায়গুলি লেখ।

উঃ রক্তদান সম্পর্কে বহু মানুষ আজও কুসংস্কার আচ্ছন্ন। তাদের ভয় হল রক্তদান করলে শরীরের রক্ত কমে যাবে এবং তা আর পূরণ হবে না। ফলে রোগভোগ ও জীবনাবসান হতে পারে। 

            জনগণের এরূপ ভীতি দূর করার প্রয়াস নিতে হবে। এর জন্য রক্তদান শিবির গঠন করে বহু মানুষকে রক্তদানে আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে। রক্তদান একটি মহৎ দান । এতে একটি মুমূর্ষ রোগীর প্রাণ বাঁচবে অথচ যে ব্যক্তি রক্তদান করছেন তার কিছুই ক্ষতি হবে না। কয়েক মাসের মধ্যেই তার রক্ত নিজে নিজেই পূরণ হয়ে যাবে। ১৮ বছর বয়স হলে এবং ওজন কমপক্ষে ৫০ কেজি হলে এবং উচ্চরক্তচাপ না থাকলে সেই ব্যক্তি স্বাচ্ছন্দে রক্তদান করতে পারবে। রক্তদান সম্পর্কে মানুষের ভয় দূর করার জন্য প্রচার চালানো খুবই প্রয়োজনীয়।

১৬) রক্তবাহে রক্ত জমাট বাঁধে না কেন ?

উঃ রক্তবাহে হেপারিন নামক তঞ্চকরোধক পদার্থ থাকার কারণে রক্তবাহে রক্ত জমাট বাঁধে না।

১৭) ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্ততঞ্চক রোধক কোন পদার্থ ব্যবহার করা হয় ?

উঃ সোডিয়াম সাইট্রেট।


             রক্ত তঞ্চন

১) রক্ত তঞ্চন কাকে বলে ?

উঃ যে প্রক্রিয়ায় দেহের কোন ক্ষতস্থান থেকে নির্গত রক্ত জমাট বেঁধে অর্ধকঠিন জেলির মতো পদার্থে পরিণত হয় তাকে রক্ত তঞ্চন বলে।

২) রক্ত জমাট বাঁধতে কত সময় লাগে ?

উঃ ৩-৭ মিনিট।

৩) রক্ত তঞ্চনের শর্ত গুলি লেখ।

উঃ রক্ত তঞ্চনের প্রধান শর্ত গুলি হল ফাইব্রিনোজেন, প্রোথ্রম্বিন, কলা থ্রম্বোপ্লাস্টিন এবং ক্যালসিয়াম আয়ন।

১৯) রক্ত তঞ্চনের বিভিন্ন পর্যায়ে গুলি আলোচনা করো।

উঃ সমগ্র রক্ত তঞ্চন প্রক্রিয়াটি প্রধান তিনটি ধাপে সম্পন্ন হয়।

 প্রথম ধাপঃ আঘাত প্রাপ্ত স্থান থেকে এবং ভাঙ্গা অনুচক্রিকা থেকে থ্রম্বোপ্লাস্টিন নিঃসৃত হয়। এই থ্রম্বোপ্লাস্টিন ক্যালসিয়াম আয়নের সঙ্গে মিলিত হয়ে প্রোথ্রম্বিনেজ নামক এনজাইম গঠন করে।


দ্বিতীয় ধাপঃ প্রোথ্রম্বিনেজ হেপারিনের ক্রিয়া বিনষ্ট করে এবং প্রোথ্রম্বিনকে থ্রম্বিনে পরিণত করে।

তৃতীয় ধাপঃ  থ্রম্বিন ফাইব্রিনোজেনের সঙ্গে মিলিত হয়ে ফাইব্রিন গঠন করে। ফাইব্রিন জালিকায় রক্তকণিকাগুলি আটকে যায় এবং থল থলে তঞ্চিত পদার্থ গঠন করে। 












Comments

Popular posts from this blog

কর্ভাস (Carvas)প্রফেসর শঙ্কুর ডায়রি

বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা তারতম্যের কারণগুলি আলোচনা কর।

আদর্শ ফুলের গঠন চিত্র ( দশম শ্রেণী)