বাংলা ভাষা এবং উপভাষা
বাংলাভাষা এবং উপভাষা
১) উপভাষা কাকে বলে? উপভাষা কয় প্রকার ও কি কি ? ভাষা ও উপভাষার মধ্যে সম্পর্ক কি? নিজের ভাষায় লেখ।
উত্তরঃ বিশাল ভৌগোলিক এলাকা জুড়ে যদি কোন ভাষা প্রচলিত থাকে তবে অঞ্চল ভেদে ওই একই ভাষার মধ্যে কিছু কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যযুক্ত ভাষার যে নতুন রূপ তাকে বলে আঞ্চলিক ভাষা। নতুন সৃষ্ট এই আঞ্চলিক ভাষাকে উপভাষা বলা হয়।
ভাষাচার্য সুকুমার সেনের মতে, বাংলা ভাষা গোষ্ঠীর মানুষদের মধ্যে পারস্পরিক ভাব বিনিময়ের যে সাকার ব্যবস্থা ছড়িয়ে রয়েছে তাকেই উপভাষা বলে। বিশাল এক ভৌগোলিক অঞ্চলজুড়ে গড়ে উঠেছে ভাষার এই প্রত্যক্ষ ব্যবহারিক উপভাষা।
যেমন-রাঢ় অঞ্চলে গড়ে উঠেছে রাঢ়ি উপভাষা, বরেন্দ্রভূমি অঞ্চলে গড়ে উঠেছে বরেন্দ্রী উপভাষা,তেমনি ঝাড়খণ্ডে রয়েছে ঝাড়খন্ডি উপভাষা, বঙ্গালভূমিতে রয়েছে বাঙালি উপভাষা।
বাংলায় মোট পাঁচটি উপভাষা আছে। সেগুলি হল -রাঢ়ী,বঙ্গালী,বরেন্দ্রী,ঝাড়খন্ডী এবং কামরূপী বা রাজবংশী।
ভাষা ও উপভাষার মধ্যে সম্পর্কঃ
ভাষাতাত্ত্বিকদের মতানুসারে, ভাষা হল কোন ভাষা গোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে পারস্পরিক ভাব বিনিময়ের একটি বিশেষ ব্যবস্থা। আর উপভাষা হলো সেই ব্যবস্থার প্রত্যক্ষ ব্যবহারিক রূপ। সুতরাং ভাষা ও উপভাষার মধ্যে একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে।
ক) উপভাষা হলো একটি ভাষার আঞ্চলিক রূপ।
খ) আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্যগুলোই উপভাষাকে ভাষা থেকে পৃথক করেছে।
গ) উপভাষা ব্যবহারকারী লোকেরা লেখালেখির সময় সাধারণত নিজস্ব উপভাষার ব্যবহার না করে আদর্শ ভাষাকেই লেখার অবলম্বন হিসাবে ব্যবহার করেন।
ঘ) উপভাষাগুলিতে তেমনভাবে সাহিত্য লেখার চল নেই। তবে আদর্শ ভাষার রচনায় যখন আঞ্চলিক চরিত্র চিত্রিত হয় তখন সেই আঞ্চলিক চরিত্রের মুখের ভাষা হিসেবে আঞ্চলিক উপভাষা ব্যবহার হয়।
ঙ) উপভাষাতে যেসব গান লেখা হয় তার জনপ্রিয়তা আছে এবং এগুলিকে লোকগীতি বা লোকসাহিত্য বলা হয়ে থাকে।
চ) উপভাষার শব্দাবলীতে এমন অনেক শব্দ পাওয়া যায়, যা নৃতাত্ত্বিক, ঐতিহাসিক এবং সামাজিক দিক থেকে গবেষণার অপেক্ষা রাখে।
২) মৌখিক উপভাষা এবং সাহিত্যিক উপভাষা কাকে বলে ? উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দাও।
উঃ যে উপভাষা মুখে মুখে কথাবার্তার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার হয় তাকে বলা হয় মৌখিক উপভাষা। আমরা জানি, উপভাষা হলো ভাষার অন্তর্গত এমন একটি বিশেষ রূপ, যা এক একটি বিশেষ অঞ্চলের মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত থাকে। যার সঙ্গে সেই আদর্শ ভাষা বা মূল ভাষাটির ধ্বনিগত এবং রূপগত বেশ কিছু পার্থক্য দেখা যায়। এই উপভাষাটি যখন মানুষের মুখে কথ্যভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হয় তখন তাকে বলা হয় মৌখিক উপভাষা।
উপভাষা যখন সাহিত্যের ভাষার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয় তখন তাকে সাহিত্যিক উপভাষা বলে। উপভাষাটি যখন সাহিত্য লেখার বা লেখালেখির মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয় তখনই তাকে বলে সাহিত্যিক উপভাষা।
উদাহরণঃ রাঢ় অঞ্চলে মৌখিক উপভাষার একটি উদাহরণ- একটা লোকের দুটি ছেলে ছিল।
ঝাড়খণ্ডী উপভাষায় - এক লোকের দুটা বেটা ছিল।এই হল মৌখিক উপভাষার উদাহরণ। সাহিত্যিক উপভাষার একটি উদাহরণ-কুড়ায় ডাকে ঘন ঘন আষাঢ় মাস আসে।
Comments
Post a Comment
Haven't doubt please let me know.