বাঙ্গালী ও বরেন্দ্রী উপভাষার ধ্বনিতাত্ত্বিক ও রূপতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য
বাঙ্গালী ও বরেন্দ্রী উপভাষার ধ্বনিতাত্ত্বিক ও রূপতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য
(১) বঙ্গালী উপভাষা কোথায় কোথায় প্রচলিত? এই উপভাষার ধ্বনিতাত্ত্বিক ও রূপতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য গুলি লেখ।
উঃ বাঙালি উপভাষাটি প্রধানত ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল, যশোহর, খুলনা , নোয়াখালী, কুমিল্লা প্রভৃতি এলাকায় প্রচলিত।
বঙ্গালি উপভাষার ধ্বনিতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য :
(ক) বঙ্গালি উপভাষার প্রধান বৈশিষ্ট্য অপিনিহিতির সার্বিক প্রয়োগ। সাধারণত শব্দ তো বটেই ক্ষ, হ্ম জ্ঞ বা য-ফলা যুক্ত শব্দেও অপিনিহিতি দেখা যায়। যেমন : করিয়া> কইরা, ধরিয়া >ধইরা, আজি > আইজ, যজ্ঞ > যইজ্ঞ ।
(খ) বঙ্গালি ভাষায় শব্দের উচ্চারণে 'র' এবং ' ড়' ধ্বনির বিপর্যয় ঘটে। এই উপভাষায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে 'র' কে 'ড়' এবং 'ড়' কে 'র' উচ্চারিত হয়। যেমন : তাড়াতাড়ি বাড়ি এসো> তারাতারি বারি এসো। চার > চাড়, করি > কড়ি ।
(গ) এই উপভাষায় অনেক সময় ও উচ্চারিত হয় উ ধ্বনী হিসেবে। যেমন: দোষ > দুষ , কোপ > কুপ।
(ঘ) এই উপভাষায় শ্ বা স্ ধ্বনি উচ্চারিত হয় উ ধ্বনি হিসেবে। যেমন : শতায়ু > হতায়ু , বসো > বহো।
বঙ্গালী উপভাষার রূপতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য :
(ক) কর্তৃকারকে এ বিভক্তি যুক্ত হয়। যেমন: রাম খায় > রামে খায়। শ্যাম ডাকে > শ্যামে ডাকে।
(খ) অধিকরণ কারকে বিভক্তি হলো ঃ- 'ত'। তথা ঃ বাড়িতে থাকুম।
(গ) মধ্যম পুরুষের সাধারণ ভবিষ্যৎ কালের বিভক্তি হলো 'বা' এবং উত্তম পুরুষের সাধারণ ভবিষ্যৎ কালের বিভক্তি হলো 'মু' । যেমন ঃ যাবে নাকি? > যাবা নাকি? আমি যাব > আমি যামু।
(ঘ) যৌগিক ক্রিয়া পদে 'ই' অন্ত অসমাপিকা ক্রিয়া প্রযুক্ত হয়। যেমন ঃ করিয়াছি > করসি।
(২) বরেন্দ্রী উপভাষা সম্পর্কে সচেতন একটি প্রবন্ধ রচনা করো।
অথবা উদাহরণ দিয়ে বরেন্দ্রী উপভাষার দুটি ধ্বনিতাত্ত্বিক ও দুটি রূপতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।
উঃ বরেন্দ্রী উপভাষা সাধারণত বরেন্দ্রভূমি বা উত্তরবঙ্গে প্রচলিত। প্রধানত মালদহ, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর এবং পূর্ববঙ্গের তথা বাংলাদেশের রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া জেলার লোক বরেন্দ্রী উপভাষায় কথা বলে। ভাষাতাত্ত্বিকদের মতে এই উপভাষাটি রাঢ়ি উপভাষার মধ্যেই ছিল বা এরা দুটিতে একই উপভাষা ছিল। পরে উত্তরবঙ্গের ভাষায় কিছুটা মিশে যায় পূর্ব ভঙ্গের ভাষা। এমনকি বিহারের ভাষাও এর ওপরে খানিকটা প্রভাব বিস্তার করে। ফলে সবমিলিয়ে বরেন্দ্রী একটি স্বতন্ত্র উপভাষা হিসেবে জন্মলাভ করে।
ধ্বনিতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যঃ
ক) শব্দের আদিতে যেখানে র নেই, সেখানে র -এর আগম ঘটে এবং যেখানে র আছে তার আকস্মিক লোপ হয়।
যেমন--রামবাবুর আমবাগান > আমবাবুর রামবাগান
খ) এই উপভাষায় অনেকটা রাঢ়ির মতনই অনুনাসিক স্বরধনি ব্যবহৃত হয়।
যেমন -- চাঁদ, পুঁথি, পেঁচা ইত্যাদি
গ) স্বরধনি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অপরিবর্তিত থাকে। তবে সাধারণত এ ধ্বনি অ্যা হিসাবে উচ্চারিত হয়।
যেমন - দ্যান,দ্যাও ইত্যাদি
ঘ) এই উপভাষায় কেবলমাত্র শব্দের আদিতে সঘোষ মহাপ্রাণ ধ্বনি থাকে। শব্দের মধ্যে বা শেষে অবস্থিত মহাপ্রাণ ধ্বনিটি অল্পপ্রাণ হয়ে যায়।
যেমন - দুধ > দুদ, বাঘ > বাগ
ঙ) বরেন্দ্রী উপভাষায় শ্বাসাঘাতের কোন নির্দিষ্ট স্থান নেই।
রূপতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যঃ
ক) এই উপভাষায় অধিকরণ কারকে ত বিভক্তির প্রয়োগ দেখা যায়।
যেমন - মনে > মনত, বুকে > বুকত
খ) এই উপভাষায় কর্তৃকারকের বহুবচনে গুলি, গিলা এবং অন্য কারকের বহুবাচনে দের বিভক্তির প্রয়োগ দেখা যায়।
যেমন - ছাইলাদের, মাইয়াদের ইত্যাদি।
গ) সামান্য অতীতকালে উত্তম পুরুষের লাম বিভক্তি যোগ হয়।
যেমন- খেলাম, দেখলাম, গেলাম ইত্যাদি ।
Comments
Post a Comment
Haven't doubt please let me know.