স্বর্ণপর্ণী(Swarnapirni)সত্যজিৎ রায়

   

  

              স্বর্ণপর্ণী 

সত্যজিৎ রায় রচিত প্রফেসর শঙ্কুর ডায়েরি গল্পের অন্তর্গত একটি অংশ হল স্বর্ণপর্ণী।এই গল্পাংশ থেকে যেসব প্রশ্নগুলি আসে সেগুলো নিয়েই আমাদের আলোচনা করা হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক প্রণীত নবম শ্রেণীর পাঠ্য হিসাবে আলোচ্য অংশ অংশটি গৃহীত হয়েছে।

প্রফেসর শঙ্কুর ডায়েরি -- সত্যজিৎ রায়

           স্বর্ণপর্ণী 

১) প্রফেসর শঙ্কু কবে জন্মগ্রহণ করেন ?
উঃ 16 জুন 

২) প্রফেসর শঙ্কুর বাবার নাম কি ?
উঃ ত্রিপুরেশ্বর শঙ্কু 

৩) প্রফেসর শঙ্কুর প্রথম আবিষ্কার কি? 
উঃ মিরাকিউরল

৪) মিরাকিউরল শব্দের অর্থ কি? 
উঃ সর্বরোগনাশক বড়ি 

৫) শঙ্কুর বাবা কত বছর বয়সে কি রোগে মারা যান ?
উঃ পঞ্চাশ বছর বয়সে হার্টব্লকে মারা যান ।

৬) প্রফেসর শঙ্কু আই এস সি পাস করেন যখন তার বয়স কত ?
উঃ চোদ্দ 

৭) স্বর্ণপর্ণী গাছের সন্ধান কে দিয়েছিল ?
উঃ টিকড়ীবাবা 

৮) কলকা থেকে কসৌলির দূরত্ব কত ?
উঃ ৪৬ কিলোমিটার 

৯) পিগম্যালিয়ন নাটকের লেখক কে ?
উঃ বার্নার্ড শ

১০) আগে এয়ারপোর্টকে কি বলা হত ?
উঃ এয়ারোড্রাম 

১১) জেরেমি সন্ডার্স কত বছর ভারতবর্ষে ছিলেন ?
উঃ তার জন্মের পর থেকে সাত বছর 

১২) সোনেপত্তি কি ?
উঃ স্বর্ণপর্ণী নামক সর্বরোগনাশক ভেষজের হিন্দি নাম হল সোনেপত্তি। চরক সংহিতায় উল্লেখ থাকলেও এদের আধুনিক মানুষের অজানা। 

১৩) স্বর্ণপর্ণী পাতাকে ওষুধ হিসাবে খাইয়ে প্রথম কে সুস্থ হয়েছিলেন ?
উঃ উকিল জয়গোপাল মিত্র 

১৪) হাইনরিখ স্টাইনার কে ছিলেন ?
উঃ সংস্কৃত অধ্যাপক ও ভারত তাত্ত্বিক 

১৫) টিকড়ীবাবা কে ছিলেন ?
উঃ টিকড়ীবাবা ছিলেন একজন বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন সাধু। তিনি উস্রি নদীর ওপারে একটা গ্রামে গাছের তলায় বসে ধ্যান করতেন।

৬) শঙ্কুর কয়েকটি আবিষ্কার ও তাদের গুণের বর্ণনা দাও। 

উঃ প্রফেসর শঙ্কুর কয়েকটি আবিষ্কার ও তাদের গুণের বর্ণনা করা হলো--
 ক) মীরাকিউরল -- এটি ছিল সর্বরোগনাশক বড়ি।

 খ) অ্যানাইহিলিন পিস্তল -- এই পিস্তলের গুণ ছিল              শত্রুকে নিহত না করে নিশ্চিহ্ন করা।

 গ) এয়ারকন্ডিশনিং পিল -- ইহা জিভের তলায় রাখলে         শীতকালে গরম এবং গ্রীষ্মকালে শরীরকে ঠান্ডা             রাখে।

 ঘ) লিঙ্গুয়াগ্রাফ -- অচেনা ভাষা ইংরেজিতে অনুবাদ              করার জন্য ইহা ব্যবহৃত হয়। 

 ঙ) অরনিথন -- পাখিদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য ব্যবহার        হয়।

 চ) রিমেমব্রেন-- মনে রাখার জন্য 

 ছ) সমনোলিন -- ঘুমের অব্যর্থ বড়ি হিসাবে ব্যবহার              করা হয়। 

৭) টিকড়িবাবা কে ?
উঃ টিকড়িবাবা ছিলেন একজন সাধু। তিনি উশ্রী নদীর ওপারে একটি গ্রামে গাছের নিচে বসে ধ্যান করতেন।

৮) প্রফেসর শঙ্কু কোন কলেজে কোন বিষয়ে অধ্যাপনার কাজ করেছিলেন ?
উঃ শঙ্কু কুড়ি বছর বয়সে স্কটিশ চার্চ কলেজে পদার্থ বিজ্ঞানে অধ্যাপনার কাজ করেছিলেন।

৯) নিউটনের বয়স কত বছর হয়েছিল ?
উঃ ২৪ বছর (চব্বিশ)

১০) সোনেপত্তি কী ?
উঃ সোনেপত্তি হলো স্বর্ণপর্ণী নামক সর্বরোগনাশক ভেষজ উদ্ভিদের হিন্দি নাম। চড়ক সংহিতায় এর উল্লেখ থাকলেও আধুনিক মানুষের কাছে ইহা অজানা ছিল।

১১) শঙ্কু স্বর্ণপর্ণীর বড়ির নাম কি দিয়েছিলেন ?
উঃ মিরাকিউরল অর্থাৎ মিরাকর কিওর ফর অল কমপ্লেন্টস।

১২) শঙ্কু লন্ডনে কোন থিয়েটারে নাটক দেখেছিলেন?
উঃ মারমেড থিয়েটারে পিগম্যালিয়ন নাটক দেখেছিলেন।

১৩) পিগম্যালিয়ন নাটকটি কার লেখা? 
উঃ বার্নাড- শ 

১৪) গেস্টাপো কী ?
উঃ হিটলারের আমলে জার্মানির গুপ্ত পুলিশ।

১৫) কোন প্রাচীন শাস্ত্রে স্বর্ণপর্ণীর উল্লেখ আছে ?
উঃ চরক সংহিতায় 

১৬) আগে এয়ারপোর্টকে কি বলা হত ?
উঃ এয়ারোড্রাম 

১৭) সর্ভাসটিক এর বাংলা অর্থ কি? 
উঃ স্বস্তিক 

১৮) ডাক্তার ও বৈজ্ঞানিককে জার্মান ভাষায় কি বলা হত?
উঃ আর্টস্ট ও ভিজনশাফটলের 

১৯) স্বর্ণপর্ণী গল্প অনুসরণে স্বর্ণপর্ণী কোথায় পাওয়া যায় তা লেখ। 
উঃ কসৌলি থেকে তিন ক্রোশ উত্তরে ভাঙ্গা চামুণ্ডার মন্দিরের পিছনে জঙ্গলে থাকা একটা ঝরনার পাশে সনেপত্তির গাছ পাওয়া যায় ।


২০) "বাবার এই কথাগুলো আমার মনে গভীরভাবে রেখাপাত করেছিল"-- এখানে বাবা বলতে কার কথা বলা হয়েছে ? কোন কথাগুলির প্রসঙ্গে এ কথা বলা হয়েছে ?

উঃ আলোচ্য অংশটি সত্যজিৎ রায় রচিত স্বর্ণপর্ণী নামক গল্পাংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। এখানে "বাবা" বলতে প্রফেসর শঙ্কুর বাবা ত্রিপুরেশ্বর শঙ্কুর কথা বলা হয়েছে তিনি ছিলেন গিরিডির এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী চিকিৎসক। আয়ুর্বেদিক মতে তিনি চিকিৎসা করতেন বলে লোকে তাকে ধন্বন্তরি বলতো।
                প্রফেসর শঙ্কুর বাবা স্বাভাবিকভাবেই অনেক অর্থ উপার্জন করেছিলেন। সেই জন্যই তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছিলেন। পেশাদারি প্র্যাকটিস ছাড়াও তিনি সারা জীবনে বহু দরিদ্র মানুষের চিকিৎসা করেছিলেন। আর সেই জন্যই তিনি অনেক রোজগার করলেও তা কখনো মাত্রাছাড়া করেননি। তাই তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছিলেন-- ক্ষমতা আছে বলেই যে প্রচুর উপার্জন করতে হবে তার কোন মানে নেই। স্বচ্ছল জীবন যাপনের জন্য অর্থের প্রয়োজন আছে ঠিকই, কিন্তু তাতে মানসিক শান্তির পথ অনেক সহজ হয়ে যায়। আর যারা সেই দু-বেলা দু-মুঠো ভাতের জন্য মাথার ঘাম পায়ে ফেলে বা যারা কোন উপায়েই উপার্জন করতে পারে না ,তাদের দুঃখ যদি লাঘব করতে পারা যায় তার চেয়ে বড় সার্থকতা, তার চেয়ে বড় আনন্দ আর কিছুতেই নেই ।এই কথাগুলি প্রফেসর শঙ্কুর মনে গভীরভাবে রেখাপাত করেছিল এবং তিনি শেষ বয়স পর্যন্ত মনে রেখেছিলেন।

২১) "সেদিন রাত্রে বাবা আমাকে একটা আশ্চর্য ঘটনা বলেন।"-- কোন দিনের কথা বলা হয়েছে? আশ্চর্য ঘটনাটি কি? 

উঃ আলোচ্য অংশটি সত্যজিৎ রায় রচিত "প্রফেসর শঙ্কুর ডায়েরি" গল্পগ্রন্থের অন্তর্গত 'স্বর্ণপর্ণী' নামক গল্পাংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। এখানে সেই দিন বলতে প্রফেসর শঙ্কুর বাবা হার্টব্লক হয়ে মারা যাওয়ার ঠিক তিনদিন আগে যেদিন প্রফেসর শঙ্কু বাড়িতে আসেন সেই দিনের কথা বলা হয়েছে। 
                প্রফেসর শঙ্কু সেদিন তার বাবার কাছ থেকে এক আশ্চর্য ঘটনার কথা জানতে পারেন। উশ্রী নদীর ওপারে একটি গ্রামে গাছতলার নিচে টিকড়ীবাবা নামে একজন সাধু ধ্যান করতেন। তিনি শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। তার চিকিৎসার জন্য টিকড়িবাবাকে প্রফেসর শঙ্কুর বাবার কাছে আনা হয়েছিল। টিকড়ীবাবার অলৌকিক ক্ষমতায় কিছুটা অবাক হয়ে ত্রিপুরেশ্বর শঙ্কু জানায় যে, তার রোগের কোন চিকিৎসা নেই। তখন টিকড়ীবাবা জানান যে, সনেপত্তি অর্থাৎ স্বর্ণপর্ণী দ্বারা তার চিকিৎসা সম্ভব। তিনি আরও জানান যে, কসৌলি থেকে তিন ক্রোশ উত্তরে একটা চামুণ্ডার মন্দিরের ভগ্নাবশেষের পিছনের জঙ্গলে যে ঝরনা আছে, তার পাশে সনেপত্তির গাছ জন্মায়।টিকড়ীবাবার আশ্চর্য অলৌকিক ক্ষমতায় স্বর্ণপর্ণীর সন্ধান দেওয়াকে প্রফেসর শঙ্কুর আশ্চর্য বলেই মনে হয়েছিল। 

২২) স্বর্ণপর্ণীর উপযোগিতা গল্পে কিভাবে প্রমাণিত হয়েছে তা আলোচনা কর ।

উঃ স্বর্ণপর্ণী গল্পের পুরো ঘটনাই স্বর্ণপর্ণীর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। স্বর্ণপর্ণীর খোঁজ প্রফেসর শঙ্কু তার বাবার কাছ থেকে পেয়েছিলেন। তার বাবা ছিলেন গিরিডির একজন নামকরা আয়ুর্বেদ চিকিৎসক। তার কাছে টিকড়িবাবা হাঁপানির চিকিৎসা করাতে আসলে, শঙ্কু তার কাছ থেকে স্বর্ণপর্ণির খোঁজ পেয়েছিলেন। কসৌলি থেকে তিন ক্রোশ উত্তরে চামুণ্ডার মন্দিরের ভগ্নাবশেষের পিছনে জঙ্গল আছে। সেই জঙ্গলে অবস্থিত ঝরনার পাশে এই স্বর্ণপর্ণীর গাছ জন্মায়।
           যেকোনো রোগের অব্যর্থ ওষুধের কাজ করে এই স্বর্ণপর্ণীর পাতার গুঁড়ো। প্রফেসর শঙ্কুর পিতা নিজের জন্য এই ওষুধ কাজে লাগাতে পারেননি। তার আগেই তিনি মারা যান। কিন্তু প্রফেসর শঙ্কু এই স্বর্ণপর্ণী গাছ জোগাড় করে তার পাতা থেকে মিরাকিউরল নামক এক ঔষধ তৈরি করেন। তারপর ধীরে ধীরে তিনি ক্যান্সার, যক্ষা, হাঁপানি ,ডায়াবেটিস ,সর্দির মতো সকল রোগ সারিয়ে ফেলেন। এইভাবেই গল্পে স্বর্ণপর্ণীর উপযোগিতা প্রমাণিত হয়েছে।


।।।


Comments

Popular posts from this blog

কর্ভাস (Carvas)প্রফেসর শঙ্কুর ডায়রি

বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা তারতম্যের কারণগুলি আলোচনা কর।

আদর্শ ফুলের গঠন চিত্র ( দশম শ্রেণী)