ভাষা শিক্ষা ব্যাকরণের ভূমিকা role of grammar

 ভাষা শিক্ষাঃ ব্যাকরণের ভূমিকা 

Role of grammar 


১) ভাষা হল ভাবের বাহন আর ব্যাকরণ হল সেই বাহনের____________।

উঃ বিজ্ঞান 

২) ব্যাকরণ শব্দের বুৎপত্তিগত অর্থ কি ?

উঃ বিশ্লেষণ 

৩) ব্যাকরণ শব্দের ব্যুৎপত্তি লেখো।

উঃ বি-আ-কৃ+অন্ 

৪) ব্যাকরণ কাকে বলে? 

উঃ ভাষাচার্য সুনিতি কুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে, যে বিদ্যার দ্বারা কোন ভাষাকে বিশ্লেষণ করে তার স্বরূপটি আলোচিত হয় এবং সেই ভাষার পঠনে ও লিখনে এবং তাতে কথোপকথনে শুদ্ধরূপে তার প্রয়োগ করা যায় , সেই বিদ্যাকে সেই ভাষার ব্যাকরণ বলে। 

৫) বাংলা ভাষার প্রথম ব্যাকরণ রচনা করেন কে?

উঃ পর্তুগিজ পাদরি মনোএল দ্য আসসুম্পসাম।১৭৪৩ খ্রিস্টাব্দে পর্তুগালের রাজধানী লিসবন থেকে রোমান অক্ষরে এটি মুদ্রিত হয়েছিল।

৬) কোন বাঙালি প্রথম ইংরেজি ভাষায় বাংলা ব্যাকরণ লিখেছিলেন ?

উঃ রাজা রামমোহন রায়।

৭) বাংলা ব্যাকরণ শিক্ষাদানের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আলোচনা কর।

উঃ বাংলা ব্যাকরণ শিক্ষাদানের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো--

 ক) ব্যাকরণের জ্ঞান ভাষাকে শুদ্ধভাবে প্রয়োগ করতে সাহায্য করে।

খ) উপযুক্ত শব্দ প্রয়োগে সাহায্য করে 

গ) শুদ্ধ বর্ণ বিন্যাসে ব্যাকরণের শিক্ষা দান সাহায্য করে

 ঘ) যদি, ছেদ ও বিরতি চিহ্নের যথাযথ জ্ঞান 

ঙ) সন্ধির জ্ঞান 

চ) সমাসের জ্ঞান 

ছ) বিভক্তি, কারকের জ্ঞান 

জ) বাগধারা ও বিশিষ্টার্থক শব্দের প্রয়োগ 

ঝ) অন্য ভাষায় ব্যাকরণ জানার আগ্রহ 

ঞ) ভাষার মিষ্টতা ও সৌন্দর্য আনয়নের সাহায্য করা

 ট) বিচার শানিত করে 

ঠ) উচ্চারণের জ্ঞান বৃদ্ধি করা।

৮) ব্যাকরণ পড়ানোর উদ্দেশ্য কি ?

উঃ ভাষা শিক্ষার মূল উদ্দেশ্যের পরিপূর্ণতার জন্যই ব্যকরণ শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।ক) ছাত্রকে ভাষার জ্ঞানে অনুরাগী করা,খ) ভাষার মধ্যে যে নিয়ম আছে তাকে সহজ করে নেওয়া,গ) ভাষার বিপদ কোথায় তার সম্বন্ধে সাবধান করে দেওয়া, যাতে বিভিন্ন পদের সম্বন্ধ বুঝতে পারা যায় ঘ) অন্যান্য ভাষা শেখার পথ প্রশস্ত করা।

৯) ভাষা শিক্ষার উদ্দেশ্য গুলি লেখ।

উঃ মূলত ভাষা শিক্ষার চারটি উদ্দেশ্য হলো ক) শুদ্ধভাবে লিখতে পারা,খ) বলতে পারা, গ) পড়ে বুঝতে পারা ও ঘ) শুনে বুঝতে পারা।

১০) ব্যাকরণ শিক্ষাদানে শিক্ষকের ভূমিকা কি ?

উঃ ব্যাকরণ পড়াবার পূর্বে শিক্ষকের ব্যাকরণের জ্ঞান থাকা চাই। ব্যাকরণ সম্পর্কে শিক্ষকের যথাযথ জ্ঞান না থাকলে তার ব্যাকরণ পড়া উচিত নয়। শিক্ষকের ব্যাকরণ জ্ঞানের মধ্যে অনুপাত বোধ, শিক্ষার্থীর ধারণ ক্ষমতা বা উপলব্ধির ক্ষমতা, বাস্তব প্রয়োগের উপযোগিতা, সূক্ষ্ম বিষয়বস্তু গ্রহণ করার ক্ষমতা, স্বাভাবিক এবং সঠিক ব্যাপারে দৃঢ় আস্থা থাকা একান্ত দরকার। এছাড়াও কয়েকটি ব্যাপারে শিক্ষকের জ্ঞান থাকা একান্ত জরুরী। সেগুলি হল--

 ক) বাংলা ভাষার ছাঁচ ও প্রাকৃত প্রকৃতি সম্পর্কে জ্ঞান থাকা দরকার। 

খ) বাংলা ব্যাকরণ ও সংস্কৃত ব্যাকরণ যে এক নয় তার স্পষ্ট ধারণা থাকা দরকার ।

গ) বিভক্তির পরিপূর্ণ ধারণা এবং অদ্ভুত প্রত্যয়ের স্পষ্ট বোধ ও তাদের পার্থক্য এবং সন্ধি সমাসের পার্থক্য সম্বন্ধে ধারণা থাকা চাই। 

ঘ) ধ্বনি বিজ্ঞানের জ্ঞান থাকা অবশ্যই প্রয়োজন।

ঙ) সাধু চলিত রূপ, বানান ভুল ও বানান সংস্কার, অনুসর্গ, উপসর্গ ও বিভক্তি ঘটিত বিষয়ের স্পষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন। 

চ) শব্দের ব্যুৎপত্তির যেন স্পষ্ট ধারণা থাকে।

ছ) ব্যাকরণ গঠন ও তার পরিবর্তনের রীতিনীতি সম্পর্কে অবহিত হওয়া প্রয়োজন।

জ) অর্থ পরিবর্তন, ধ্বনি পরিবর্তন, ছন্দ ও অলংকারের জ্ঞান থাকা বাঞ্ছনীয়।

ঝ) ব্যাকরণ শিক্ষকের হাতের অক্ষর ভালো হওয়া বাঞ্ছনীয়। ধৈর্য ধরে ব্যাকরণ পড়াবার ক্ষমতা যেন তার থাকে।

১১) ব্যাকরণ পাঠে কি ধরনের মানসিক প্রস্তুতি প্রয়োজন ?

উঃ ক) ব্যাকরণ বুদ্ধিগ্রাহ্য বিষয়, বুদ্ধির কিছুটা পরিপক্কতা না এলে ব্যাকরণ পাঠ আরম্ভ করা যাবে না।

খ) ব্যাকরণ বিচার বিশ্লেষণ সাপেক্ষ বিষয়, সে ক্ষমতা পূর্বেই অর্জন করতে হবে।

গ) ভাষার সীমিত জ্ঞান ব্যাকরণ পাঠের পক্ষে উপযোগী নয়। তাই কথনে, লিখনে, পঠনে, স্বাধীন ভাষা ব্যবহারে সক্ষম হলেই তবে ব্যাকরণ পাঠ শুরু করা যেতে পারে।

ঘ) উদাহরণ থেকে সূত্রে আসা ব্যাকরণের একটি বিশেষ দিক । এই সূত্রকে উপলব্ধি করার মতো মানসিক প্রস্তুতির দরকার।

ঙ) মনের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বুদ্ধির বৃদ্ধিরও পরিণমন ঘটতে থাকবে। তাই মানসিক বৃদ্ধি ও ক্ষমতার ভিত্তিতে ধীরে ধীরে ব্যাকরণের সহজ থেকে কঠিন বিষয়ের আলোচনায় মনোবিজ্ঞান সম্মতভাবে এগিয়ে যেতে হবে।

১২) ব্যাকরণ শিক্ষার কয়টি স্তর ও কি কি ?

উঃ ভাষা শিক্ষার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞরা দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত চারটি স্তরের কথা উল্লেখ করেছেন---

 প্রথম স্তরঃ পঞ্চম শ্রেণী থেকে ষষ্ঠ শ্রেণি

 দ্বিতীয় স্তরঃ সপ্তম শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণী 

তৃতীয় স্তরঃ নবম শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী 

চতুর্থ স্তরঃ একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণী।

১৩) ব্যাকরণ শিক্ষা দানের সমস্যা গুলি আলোচনা করো। 

উঃ ক)আপাত কাঠিন্য ঃঃ

                  ব্যাকরণ একটি শুষ্ক, নীরস ও জটিল বিষয়। তাই সহজে শিক্ষার্থীরা এর প্রতি আকৃষ্ট হয় না। তাই ব্যাকরণ পাঠে তাদের অনিচ্ছা বেশি থাকে।

খ) নানা নিয়মের জটিলতাঃ 

                    শিক্ষার্থীরা ব্যাকরণের জটিল নিয়মগুলি সহজে আয়ত্ত করতে পারেনা। তাই ব্যাকরণ তাদের পক্ষে বিশেষ বোঝা হয়ে ওঠে।

গ) শিক্ষকদের অনিহাঃ 

                    বিদ্যালয় শ্রেণীতে বহু শিক্ষক ব্যাকরণকে ভালো চোখে দেখেন না। ব্যাকরণকে সরসভাবে সুন্দরভাবে আকর্ষণীয় করে পড়াবার আগ্রহ বহু শিক্ষকের থাকে না। তাই ছাত্ররাও অনীহা বোধ করে ও আগ্রহী হয় না। 

ঘ) ব্যাকরণের বাস্তব উপযোগিতার সীমাবদ্ধতাঃ 

           কেবলমাত্র পরীক্ষা প্রভৃতির প্রয়োজনে ব্যাকরণের উপযোগিতা বেশি। তাছাড়া চিঠিপত্র লেখা প্রভৃতি ক্ষেত্রে ব্যাকরণের উপযোগিতা ততটা লক্ষ্য করা যায় না। এর ফলে ছাত্রছাত্রীরা ব্যাকরণ পাঠে আগ্রহী হয় না।

ঙ) বিশ্লিষ্ট শব্দের প্রতি অনীহাঃ 

                        ব্যাকরণের সাহায্যেই শিক্ষক শব্দকে বিশ্লেষণ করা যায় ।একটি সুন্দর শব্দকে বিশ্লেষণ করা যায় ,একটি সুন্দর শব্দকে ব্যাকরণের খাতিরে ব্যবচ্ছেদ করতে হয়। একটি সুন্দর ফুলকে ছেড়ার মতই।এতে অনেকে তৃপ্তিবোধ করেন না। এর ফলে ছাত্র-ছাত্রীরা ও ব্যাকরণ পাঠের প্রতি আগ্রহ দেখায় না।

চ) গতানুগতিক পদ্ধতির ব্যবহারঃ 

                         গতানুগতিক প্রচলিত যান্ত্রিক পদ্ধতি ব্যাকরণের পঠন পাঠনে ব্যবহৃত হয়, বলে ছাত্র-ছাত্রীরা ব্যাকরণ পাঠে উৎসাহী হয় না।যথার্থ মনোবিজ্ঞান পদ্ধতিতে ব্যাকরণ পড়ানো হলে শিক্ষার্থীদের ব্যাকরণ পাঠে ভালো লাগবে।

Comments

Popular posts from this blog

কর্ভাস (Carvas)প্রফেসর শঙ্কুর ডায়রি

বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা তারতম্যের কারণগুলি আলোচনা কর।

আদর্শ ফুলের গঠন চিত্র ( দশম শ্রেণী)