Environment science (পরিবেশ ব্যবস্থাপনা)
পরিবেশ বিদ্যা//পরিবেশ ব্যবস্থাপনা//environmental science//environment science questions and answers//class-12//higher secondary education 2022//environment science suggestions//উচ্চমাধ্যমিক পরিবেশ বিদ্যার পরিবেশ ব্যবস্থাপনা থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর সম্পর্কে আলোচনা।
পরিবেশ ব্যবস্থাপনা
রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর
পূর্ণ মান - ৮
১) পরিবেশ ব্যবস্থাপনা বলতে কী বোঝো?
উঃ পরিবেশ ব্যবস্থাপনাঃ
জীবন বিজ্ঞান, ভৌতবিজ্ঞান, প্রযুক্তি বিজ্ঞান, আইন প্রভৃতি শাখার সম্মিলিত জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে পেশাদার পরিবেশবিদগণ ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে যে পদ্ধতিতে পরিবেশের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে এবং পরিবেশের বিভিন্ন কার্যাবলী অক্ষুন্ন রাখে তাকে পরিবেশ ব্যবস্থাপনা বলে।
২) পরিবেশ সচেতনতা বাড়িয়ে তোলার ক্ষেত্রে শিল্প সংস্থাগুলির ভূমিকা সংক্ষেপে লেখ।
উঃ শিল্পবিপ্লবের পর থেকে প্রাকৃতিক সম্পদ গুলির ওপর ভিত্তি করে মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে। কিন্তু প্রাকৃতিক সম্পদের পরিমাণ সীমিত। শিল্পের জোয়ারে বহু ছোট বড় কলকারখানা বর্তমানে তৈরি হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও হবে । এর ফলে পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে । তাই উন্নয়নের জন্য পরিবেশ সচেতনতা বাড়াতে শিল্প সংস্থাগুলিকে এগিয়ে আসতে হবে। পরিবেশ সচেতনতা বাড়িয়ে তোলার ক্ষেত্রে শিল্প সংস্থাগুলি নিম্নলিখিত ভূমিকা গুলি পালন করবে --
পরিবেশ দিবস পালন এবং বৃক্ষ রোপনঃ
কোন শিল্পসংস্থা যে অঞ্চলে অবস্থিত সেই অঞ্চলের সাধারণ মানুষ, স্কুল- কলেজের ছাত্রছাত্রী, এবং কারখানার কর্মীদের নিয়ে বিশ্বপরিবেশ দিবস উপলক্ষ্য বৃক্ষ রোপন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করলে পরিবেশ সচেতনতা বাড়ে।
অরণ্য সপ্তাহ পালন ঃঃ
জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ অরণ্য সপ্তাহ হিসাবে পালন করা হয়। তাই শিল্পাঞ্চলে প্রতিটি কারখানার ৩৩ শতাংশ ফাঁকা জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির দেশী উদ্ভিদ স্থাপন করে গ্রীন বেল্ট স্থাপন করলে কারখানার কর্মচারী এবং এলাকার মানুষজনের গাছ লাগানোর প্রতি উৎসাহ বাড়ে। ফলে পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি পায়।
প্রচার অভিযানঃ
শিল্পাঞ্চলের জনবহুল এলাকায় বসবাসকারী মানুষজনের মধ্যে পরিবেশ দূষণের কুফল এবং পরিবেশ সুরক্ষা বিষয়ে অভিযান এবং অনুষ্ঠানের আয়োজনের মাধ্যমে পরিবেশ সচেতনতা বাড়ানো সম্ভব।
কারখানার নিজস্ব বিভাগ স্থাপনঃ
পরিবেশ সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রতিটি কারখানার একটি করে পরিবেশ বিভাগ স্থাপন করা প্রয়োজন। এই বিভাগে অভিজ্ঞ ও দক্ষ কর্মীকে নিয়োগ করে কারখানার কর্মীদের এবং এলাকার মানুষদের মধ্যে পরিবেশ সুরক্ষা বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানো সম্ভব।
স্কুল কলেজে আলোচনাঃ
কলকারখানাগুলি স্বেচ্ছায় এলাকায় অবস্থিত বিভিন্ন স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে বসে আঁকো প্রতিযোগিতা, প্রবন্ধ রচনা, সভা, কুইজ, নাটকের আয়োজন করে তাদের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারে।
পরিবেশ বিষয়ক সাইনবোর্ড প্রদর্শনঃ
পরিবেশ দূষণ, পরিবেশ সুরক্ষা প্রভৃতি বিষয়ে নানা ধরনের ছোট-বড় সাইনবোর্ড, ফেস্টুন তৈরি করে জনবহুল এলাকার রাস্তার মোড়ে, রেল স্টেশনে, খেলার মাঠের ধারে, হাটে বাজারে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেও পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি করা যায়।
বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধিঃ
বর্তমান যুগকে বিজ্ঞাপনের যুগ হিসাবে ধরা হয়। যার সবচেয়ে ভালো মাধ্যম বিভিন্ন টিভি চ্যানেল, ইন্টারনেট ,রেডিও, খবরের কাগজের মাধ্যমে প্রাকৃতিক সম্পদের পরিমিত ব্যবহার, পরিবেশ দূষণের হ্রাস, অরণ্য সংরক্ষণ, অপ্রচলিত শক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি, প্রভৃতি বিষয়ে বিজ্ঞাপন দিয়ে পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি করা সম্ভব।
৩) পরিবেশ সুরক্ষায় গণসচেতনতা ও পরিবেশ আইনের প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর।
উঃ প্রাকৃতিক পরিবেশের অবক্ষয় এবং পরিবেশ দূষণ পৃথিবীর প্রতিটি দেশের কাছে এক ভয়াবহ সমস্যা সৃষ্টি করেছে। এর ফলস্বরূপ পৃথিবীর প্রতিটি দেশের জলবায়ু দ্রুত পরিবর্তন ঘটছে। মানুষসহ সকল প্রকার প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে। তাই পরিবেশ সুরক্ষার ক্ষেত্রে গণসচেতনতা গড়ে তোলা একান্ত প্রয়োজন। সেগুলি হল-
ক) সাধারণ মানুষের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি করে তাদের বোঝাতে হবে যে, প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক অতি নিবিড়। তাই কোন নির্দিষ্ট অঞ্চলের প্রাকৃতিক পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেই অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষেরও ক্ষতির সম্ভাবনা তৈরি হয়ে থাকে।
খ) প্রাকৃতিক সম্পদের বিভিন্ন উপাদান বেশি মাত্রায় ব্যবহার করলে তা নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই গণসচেতনতার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে প্রাকৃতিক সম্পদের যথাযথ ব্যবহারের সুফল সম্পর্কে জানাতে হবে।
গ) পরিবেশ সুরক্ষার ক্ষেত্রে অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে পরিবেশ দূষণ। তাই প্রতিটি দেশের জনসাধারণের মধ্যে পরিবেশ দূষণ এবং তার ফলে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে জানিয়ে দূষণ কমানোর করার চেষ্টা করতে হবে।
ঘ) সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভিন্ন প্রকার প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
পরিবেশ আইনের প্রয়োজনীয়তা গুলি নিম্নে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো -
১) পরিবেশের সুরক্ষা প্রদানঃ
পরিবেশের সার্বিক সুরক্ষা প্রদানের জন্য পরিবেশ সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করা একান্ত প্রয়োজন। পরিবেশের খুঁটিনাটি বিষয়গুলির সুরক্ষার জন্য 1986 খ্রিস্টাব্দে আমাদের দেশে একটি সামগ্রিক পরিবেশ আইন প্রণয়ন করা হয়। এটি পরিবেশ সুরক্ষা আইন নামে পরিচিত ।
বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণঃ
মাত্রাতিরিক্ত বায়ু দূষকের ফলে বায়ুমণ্ডল ক্রমশ দূষিত হচ্ছে। তাই নির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন করে বায়ু দূষণের মাত্রা কমানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এই উপলক্ষে বায়ু দূষণের হাত থেকে পরিবেশকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে 1981 খ্রিস্টাব্দে আমাদের দেশে বায়ু দূষণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ আইন চালু করা হয়েছে।
জল দূষণ নিয়ন্ত্রণঃ
জল আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ। বর্তমানে মানুষের বিভিন্ন অর্থনৈতিক ক্রিয়া কোলাপের জন্য জল দূষিত হচ্ছে। দূষিত জলের ব্যবহার স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। তাই জল দূষণের মাত্রা কমানোর জন্য নির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন। সেই উদ্দেশ্যে 1974 খ্রিস্টাব্দে জল দূষণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ আইন চালু করা হয়
মাটি দূষণ নিয়ন্ত্রণঃ
উর্বর মাটি বিভিন্ন ফসলের দ্রুত বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। কিন্তু মাটিতে রাসায়নিক সার, কীটনাশক এবং পর্যাপ্ত বর্জ্য পদার্থের উপস্থিতি মাটিকে দূষিত করে তোলে। মাটি দূষণের পরিমাণ কমানোর উদ্দেশ্যে মাটিদূষণ নিয়ন্ত্রণ আইন চালু করা হয়।
শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণঃ
মানুষ সামাজিক জীব। সমাজে তারা মিলেমিশে বসবাস করে। কিন্তু সেই সমাজে যানবাহন, শিল্প, কলকারখানা, হাট- বাজার, বাজি ফাটানো, মাইকের তীব্র আওয়াজ শব্দ দূষণ ঘটায়। শব্দ দূষণের হাত থেকে পরিবেশকে এবং জনসাধারণকে সুরক্ষা প্রদানের প্রয়োজন। তাই 2000 খ্রিস্টাব্দে 'শব্দ দূষণ আইন' প্রণয়ন করা হয়।
জীব বৈচিত্র্য রক্ষাঃ
কোন দেশের জীববৈচিত্র্য সেই দেশের সমৃদ্ধির পরিচয়ক। বর্তমানে অনিয়ন্ত্রিত বৃক্ষছেদন, চোরাশিকার, কলকারখানা স্থাপন প্রভৃতির কারণে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হতে চলেছে। জীববৈচিত্রকে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করার উদ্দেশ্যে 2002 খ্রিস্টাব্দে জীবৈচিত্র আইন প্রণয়ন করা হয়। এছাড়া বন্যপ্রাণীদের সুরক্ষার জন্য আমাদের দেশে বন্যপ্রাণী সুরক্ষা আইন 1972 খ্রিস্টাব্দে প্রচলন করা হয়
।
৪) পরিবেশ ব্যবস্থাপনার উপাদানগুলি সংক্ষেপে বিবৃত কর ।
উঃ পরিবেশ ব্যবস্থাপনা তিনটি প্রক্রিয়া বা উপাদানের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। সেই উপাদান গুলি হল- অর্থনৈতিক দিক, প্রযুক্তিগত দিক ও সামাজিক দিক।
অর্থনৈতিক দিকঃ
বর্তমান যুগে মানুষের সংখ্যা শুধু বৃদ্ধি পাচ্ছে না, প্রতিটি মানুষের চাহিদাও ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। এই কারণে অধিক দ্রব্য ও পরিষেবার যোগান দিতে সব দেশেরই অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রয়োজন।শোষণ নীতির ফলে ধনী আরও ধনী হচ্ছে এবং দরিদ্র দেশগুলি আরো গরিব হচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশগুলির পরিবেশ বিপন্ন হওয়ার কারণ গুলি হল-
ক) দারিদ্র্য ও প্রকৃত শিক্ষা এবং পরিবেশ সচেতনতার অভাব।
খ) অত্যাধিক হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি
গ) অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বিপুল জনসংখ্যার চাহিদা মেটানো।
ঘ) পৃথিবীতে মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হলেও লক্ষ্য করা গেছে যে উন্নয়নশীল দেশগুলির অধিকাংশ মানুষই দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করে।
প্রযুক্তিগত দিকঃ
প্রযুক্তিগত দিক থেকে পরিবেশ সচেতন না হলে পরিবেশ ব্যবস্থাপনার কাজ সম্পন্ন হবে না। প্রযুক্তিগত বিষয় গুলি হল-
ক) জনসংখ্যা রোধ করার জন্য আধুনিক প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে হবে।
খ) সৌরশক্তি, ভূগর্ভস্থ তাপশক্তি, জোয়ার ভাঁটা শক্তি প্রভৃতিকে কাজে লাগিয়ে ধীরে ধীরে প্রথাগত বিদ্যুৎ বা জ্বালানি শক্তিকে প্রতিস্থাপিত করতে হবে।
গ) কারখানা থেকে নির্গত গ্যাস বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় অপসারিত করতে হবে
সামাজিক দিকঃ
সামাজিক সচেতনতা ছাড়া পরিবেশ ব্যবস্থাপনা সম্ভব নয়-
ক) জনগণকে দূষণের বিরূপ প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সচেতন করতে হবে
খ) আলোচনা সভা, লিফলেট বিতরণ প্রভৃতি সাহায্যেও মানুষকে পরিবেশ সচেতন করা প্রয়োজন ।
গ) দরিদ্র মানুষকে আর্থিক সাহায্যের মাধ্যমে দূষণমুক্ত পরিবেশে বসবাস করার সুযোগ করে দিতে হবে।
ঘ) গণমাধ্যমে প্রচারের সাহায্যে মানুষকে সুস্থায়ী উন্নয়ন সম্পর্কে অবগত করতে হবে।
৫) পরিবেশ সুরক্ষা আইনের উপর সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।
উঃ
৬) কার্বন ব্যবসা বলতে কী বোঝো? পরিবেশগত হিসাব পরীক্ষা সংক্ষিপ্তভাবে বিবৃত কর।
উঃ পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণের যে পদ্ধতিতে অন্যান্য পন্য সামগ্রীর ব্যবসার মতো কোনো দেশ, জাতি বা কোম্পানিকে কার্বন ক্রেডিট ব্যবহারের সুযোগ দিয়ে তার থেকে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়া যায় তাকে কার্বন ব্যবসা বলা হয়।
ক) কার্বন ক্রেডিটঃ
কার্বন ক্রেডিট হলো কোন সংস্থা বা জাতির এমন একটি শংসাপত্র যার দ্বারা কোন দেশ নির্দিষ্ট সময়ে এক টন কার্বন ডাই-অক্সাইড অথবা তার সমতুল্য অপর কোন গ্রিনহাউস গ্যাস উৎপাদনের ক্ষমতা অর্জন করে থাকে।
খ) কার্বন ব্যবসার সুফল ও কুফলঃ
২০১৮ খ্রিস্টাব্দের পর থেকে কিয়োটো প্রটোকলের মূল বিষয় হয়ে ওঠে কার্বন ব্যবসা। কার্বন ব্যবসার অন্যতম বিষয় হলো কার্বনের মূল্য নির্ধারণ করা। কার্বনের মূল্য নির্ধারিত হয় কোন দেশের সঞ্চিত কার্বনের পরিমাণের ওপর। আধুনিক পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, কোন দেশের কার্বন মূল্য অনেকাংশে পরিবেশকে কার্বন মুক্ত করার নিষেধের উপর নির্ভরশীল।
কার্বন ব্যবসার সুফল এবং কুফল দুই বর্তমান। কোন দেশের উন্নতির সূচক হিসেবে কার্বন ব্যবহারের দিকটি বিবচিত হয়। যে দেশ যত বেশি কার্বন ব্যবহার করবে, সেই দেশ তত বেশি উন্নত হবে। কিন্তু কোন দেশ নিজেকে উন্নত করার জন্য যত বেশি মাত্রায় কার্বন ব্যবহার করবে দূষণের মাত্রা তত বাড়বে। এর ফলস্বরূপ গ্রীন হাউসের গ্যাসের মাত্রা বৃদ্ধি পাবে। আর পরিবেশে গ্রীন হাউস গ্যাসের পরিমাণ বিশ্বব্যাপী বিপদের সংকেত বাড়বে।
গ) পরিবেশগত হিসাব পরীক্ষাঃ
ভারত সরকারের পরিবেশ ও বন মন্ত্রক বাঁধ নির্মাণ, শক্তিকেন্দ্র, তৈল শোধনাগার, লৌহ ইস্পাত কেন্দ্র, খনিজ তেল উৎপাদন কেন্দ্র, সিমেন্ট উৎপাদন কেন্দ্র, কাগজ উৎপাদন কেন্দ্র, প্লাস্টিক উৎপাদন কেন্দ্র, রাসায়নিক দ্রব্য উৎপাদন কেন্দ্র, ব্যাটারি উৎপাদন কেন্দ্র, কোল্ড স্টোরেজ প্রভৃতি ক্ষেত্রগুলিকে পরিবেশগত হিসাব পরীক্ষার আওতায় নিয়ে এসেছে। পরিবেশের অধীনে থাকা জাতীয় পরিবেশ সুরক্ষা কমিটি ১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে জানুয়ারি মাস থেকে পরিবেশের উপরোক্ত উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলির ক্ষেত্রে এনভারমেন্টাল অডিট বাধ্যতামূলক করেছে।
৭) রাজ্যদূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের উদ্দেশ্য গুলি লেখ। সুস্থায়ী উন্নয়নের রাজনৈতিক বাধাগুলি কি কি?
উঃ কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের অধীনে থাকা প্রতিটি রাজ্যের বিভিন্ন জেলাগুলিতে দূষণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ গঠন করা হয়েছে। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের মুখ্য উদ্দেশ্য গুলি হল-
ক) পরিবেশের গুণমান রক্ষাঃ
রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ রাজ্য স্তরে পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের গুনমান রক্ষা করে থাকে। বর্তমানে মনুষ্যসৃষ্ট বিভিন্ন ক্রিয়া-কলাপের জন্য জল, বাতাস, মাটির গঠনগত উপাদানের পরিবর্তন ঘটে থাকে ।
খ) সুস্থায়ী উন্নয়নঃ
দূষণ সৃষ্টিকারী প্রযুক্তি হ্রাস করে রাজ্যের প্রতিটি শিল্পাঞ্চল গুলিতে সুস্থায়ী উন্নয়ন প্রযুক্তি ব্যবহারে উৎসাহ দেওয়া রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের মূল উদ্দেশ্য। কল কারখানা, যানবাহন প্রভৃতি ক্ষেত্রে সুস্থায়ী উন্নয়ন সহায়ক প্রযুক্তি ব্যবহারে উৎসাহ প্রদান করা।
গ) প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়নঃ
পরিবেশের জল, বাতাস ,মাটি ,জীববৈচিত্র্য ও বন্যপ্রাণী রক্ষার জন্য নির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন এবং তাদের প্রয়োগ করা। কোন ব্যক্তি বা সংস্থা আইন অমান্য করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।
ঘ) কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনাঃ
শহরাঞ্চল ও শিল্পাঞ্চল গুলিতে উৎপন্ন কঠিন বর্জ্যকে সরাসরি পরিবেশে নিক্ষেপ না করে পুনরায় ব্যবহার করার প্রযুক্তি ব্যবহারে পরামর্শ দেওয়া।
সুস্থায়ী উন্নয়নের বাধা সমূহ গুলি আলোচনা করা হল--
ক) অপরিকল্পিত কল কারখানা স্থাপনঃ
বর্তমান যুগ হল শিল্পায়নের যুগ। শিল্পের জোয়ারে পৃথিবীর প্রতিটি দেশ প্রতিযোগিতায় নেমেছে। এর ফলে জনবহুল এলাকায় বা কৃষিভিত্তিক অঞ্চলেও শিল্প স্থাপন হতে দেখা যাচ্ছে। এমনকি রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে অমান্য করে কিছু সংখ্যক রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় থেকে কল কারখানার মালিকগণ এইসব অঞ্চলে কল কারখানা গড়ে তুলে সুস্থায়ী উন্নয়নের পথে বাধা সৃষ্টি করেছে।
খ) বর্জ্য পদার্থ নিক্ষেপঃ
শহরাঞ্চল থেকে উৎপন্ন পৌর আবর্জনা এবং শিল্পাঞ্চল থেকে উৎপন্ন কঠিন বর্জ্যবস্তুকে সঠিকভাবে নিক্ষেপের উপযোগী না করে পরিবেশে নিক্ষেপ করা হচ্ছে ।এর ফলে সুস্থায়ী উন্নয়নের পথে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।
গ) ঘুষ নিতে বাধ্য করাঃ
স্বাভাবিক পদ্ধতিতে কলকারখানা প্রতিষ্ঠা করতে বাধা পেলে মালিকগণ রাজনৈতিক নেতাদের শরণাপন্ন হয়ে সরকারি প্রতিনিধিদের ঘুষ দিয়ে অর্ডার পাস করিয়ে থাকেন। এভাবে অন্যায় পদ্ধতিতে কল কারখানা প্রতিষ্ঠা করা সুস্থায়ী উন্নয়নের পথকে বাধা প্রদান করে থাকে।
ঘ) পুরানো যানবাহনঃ
ত্রিশ চল্লিশ বছরের পুরানো অটোমোবাইল ইঞ্জিন থেকে ব্যাপকভাবে বায়ু দূষক নির্গত হয়ে থাকে। এর ফলে বিভিন্ন শহরে পুরনো যান চলাচলের বাধা নিষেধ থাকে। গাড়ির মালিকগণ রাজনৈতিক নেতাদের আশ্রয় নিয়ে দূষণকারী পুরানো যানবাহন গুলি চালিয়ে ব্যাপক দূষণ সৃষ্টি করে, যা সুস্থায়ী উন্নয়নে বাধা প্রদান করে থাকে।
Comments
Post a Comment
Haven't doubt please let me know.