গঙ্গাস্তোত্রম শংকরাচার্য
পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ কর্তৃক প্রণীত দ্বাদশ শ্রেণীর সংস্কৃত বিষয়ে "শ্রীগঙ্গাস্তত্রম" কবিতাটি পাঠ্যপুস্তক এর অন্তর্গত "গঙ্গাস্তোত্রম্" কবিতার যে ১৪ টি শ্লোক রয়েছে তার মধ্যে দশটি শ্লোক দ্বাদশ শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তকের অন্তর্গত।
এখানে যে বড় প্রশ্ন হয় সেগুলি আলোচনা করা হয়েছে।
১) "গঙ্গাস্তোত্রম" কবিতায় কবি যে যে বিশেষণ ব্যবহার করেছেন তা লেখ।
উঃ দার্শনিক কবি শংকরাচার্য রচিত একটি স্তোত্রমূলক কবিতা হল "শ্রীগঙ্গাস্তোত্রম"। এখানে তিনি দেবী গঙ্গার রূপ সৌন্দর্য ও অলৌকিক মহিমা বর্ণনা দিতে গিয়ে গঙ্গাকে যে একাধিক নামে সম্বোধন করেছেন, তা আলোচনা করা হল-
আলোচ্য কবিতার প্রথম শ্লোকে গঙ্গার প্রতি ভক্তি বর্ণনা দিতে গিয়ে গঙ্গাকে তিনি দেবী, সুরেশ্বরী, ভগবতী, গঙ্গে, ত্রিভুবনতারিণী, তরলতরঙ্গে, শংকরমৌলি বিহারিনী, বিমলে প্রভৃতি বিশেষণ ব্যবহার করেছেন।
আবার গঙ্গা জলের মহিমা বর্ণনায় তিনি গঙ্গাকে ভাগীরথী, সুখদায়িনি মাতঃ বলে সম্বোধন করেছেন। গঙ্গার উৎপত্তি ও তরঙ্গের বর্ণনা প্রসঙ্গে গঙ্গাকে হরিপাদপদ্ম তরঙ্গিনী, হিমবিধিমুক্তাধবল তরঙ্গে বলে উল্লেখ করেছেন।
এছাড়াও গঙ্গাকে তিনি বলেছেন যে, এই গঙ্গা দেবী পতিতোদ্ধারিনী। তিনি জাহ্নবী, ভীষ্মজননী, মুনিবর কন্যে। তিনি এই ত্রিভুবন ধন্যা। এই গঙ্গার স্রোতে স্নানের বর্ণনায় তিনি গঙ্গাকে নরকনিবারণকারিনী, কলুষ বিনাশিনী বলে সম্বোধন করেছেন।
পরিশেষে তিনি এই গঙ্গা দেবীর উদ্দেশ্যেই জয় কামনা করে বলেছেন, পরিলসদঙ্গে, পূন্যতরঙ্গে, করুণাপাঙ্গে, ইন্দ্রমুকুটমনিরাজিত চরণে, সুখদে, শুভদে ভৃত্যশরণ্যে প্রভৃতি। এভাবেই কবি আলোচ্য কবিতায় পর্যায়ক্রমে গঙ্গা দেবীর অজস্র বিশেষণ ব্যবহার করেছেন।
২) "শংকরমৌলীবিহারিনী"- পৌরাণিক কাহিনী উল্লেখ করে এই সম্বোধনটির সার্থকতা দেখাও।
উঃ আলোচ্য অংশটি দার্শনিক কবি শঙ্করাচার্য রচিত শ্রীগঙ্গাস্তোত্রম নামক কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। এখানে তিনি দেবী গঙ্গার মাহাত্ম্যের অপূর্ব বর্ণনা দিয়েছেন। এই মর্তভূমিতে গঙ্গার প্রথম বিচরণ ক্ষেত্রটি হল মহাদেবের মস্তক। তাই তিনি তাকে সম্বোধন করে বলেছেন, শংকরমৌলীবিহারিনি অর্থাৎ মহাদেবের মাথায় বিচরণকারিনী।
পৌরাণিক কাহিনী অনুসরণে জানা যায় যে, প্রাচীনকালে সগর নামে এক রাজা ছিলেন। তার ছিল ৬০ হাজার পুত্র। কপিল মুনির অভিশাপে তার ষাট হাজার পুত্র ভষ্মীভূত হয়। বহুকাল অতিক্রান্ত হওয়ার পর তিনি জানতে পারেন যে, গঙ্গা যদি ওই ভস্মীভূত স্তূপের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়, তাহলে তিনি তার পুত্রদের পুনরায় ফিরে পাবেন। এবার বহুদিন পর ভগীরথ দীর্ঘ তপস্যা করে সন্তুষ্ট করে গঙ্গাকে স্বর্গ থেকে নামিয়ে আনার অনুমতি পান। কিন্তু গঙ্গা অবতরণের সময় তাকে ধারণ করার ক্ষমতা একমাত্র মহাদেবেরই আছে। তাই তাকেও তপস্যা দ্বারা সন্তুষ্ট করে রাজী করালে গঙ্গা মহাদেরকে ভাসিয়ে দেবে ভেবে ইচ্ছা করে প্রবল বেগে নামতে থাকে।মহাদেব তার অভিপ্রায় বুঝতে পেরে এমন জটাজালে আবদ্ধ করেছিলেন যে, তিনি আর সেখান থেকে বের হতে পারলেন না। আবার ভগীরথ শিবকে তপস্যা করে তাকে সন্তুষ্ট করলে, তার জটাজাল থেকে গঙ্গাকে মুক্ত করলেন। এই বৃত্তান্তকে স্মরণ করেই কবি গঙ্গাকে শংকরমৌলিবিহারিনী বলে সম্বোধন করেছেন।
৩) "তব তট নিকটে যস্য নিবাসঃ খলু বৈকুণ্ঠে তস্য নিবাসঃ" --ভাব সম্প্রসারণ কর।
উঃ বৈকুণ্ঠ হলো স্বর্গধাম। সেখানে চিরসুখ ও শান্তি বিরাজমান। পৌরাণিক কাহিনী অনুযায়ী স্বর্গ হলো দেবতাদের আশ্রয়স্থল। কিন্তু বৈকুন্ঠ হলো ভগবান হরির আবাসস্থল। কোন পুন্য কর্মের দ্বারা মানুষ সেই স্থান লাভ করতে পারে। তাই বৈকুণ্ঠ হলো মানুষের শ্রেষ্ঠ মোক্ষধাম।
গঙ্গা হল এক বৃহৎ প্রকৃতিসত্তা। গঙ্গা তার পবিত্র জলধারায় মানুষের পাপকে ক্ষয় করে পূর্ণতা দিয়ে বৈকন্ঠে প্রেরণ করে। গঙ্গা থেকে দূরবর্তী মানুষের ক্ষেত্রে সেই মুক্তির সম্ভাবনা অনেক কম থাকে। কিন্তু যারা গঙ্গা তটের নিকটবর্তী স্থানে বাস করে তাদের পাপ স্খলনের সুযোগ অনেক বেশি থাকে। প্রতিদিন গঙ্গাকে প্রণাম করে, গঙ্গার জলে স্নান করে ও সেই গঙ্গার জল পান করে তাদের পুণ্যলাভের সুযোগ থাকে অনেক বেশি। তাই গঙ্গাভক্তির দ্বারা পুণ্য লাভ করে বৈকুন্ঠে গমন করতে পারে। বৃহতের সান্নিধ্যে এসে ক্ষুদ্রের মনোভাব যেমন মহৎ হতে পারে, গঙ্গাও তেমনি নদীরূপে প্রবাহিত হয়ে আমাদের জীবনকে পূর্ণ কর্মেই চালিত করে। গঙ্গার এই নৈসর্গিক মাহাত্ম্য আমাদের গর্ব।
৪) "গঙ্গাস্তোত্রম" কবিতা অবলম্বনে গঙ্গাজলের মহিমার বর্ণনা দাও।
উঃ কবি শঙ্করাচার্য "গঙ্গাস্তোত্রম" কবিতায় দেবী গঙ্গার অপূর্ব মাহাত্ম্যের বর্ণনা দিয়েছেন। এই মর্ত্যভূমিতে মানুষের মানস মন্দিরে গঙ্গা পবিত্র রূপে আজও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কবি এর জলের মহিমা বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন--
গঙ্গা শিবের জটায় বাস করেন। তিনি সেই স্থান থেকে নেমে এসে ভূখণ্ডের বুক চিরে প্রবাহিত হন। তিনি হলেন চঞ্চল ও তরঙ্গময়ী। তার জলের মহিমা বেদাদি শাস্ত্রে বিখ্যাত হয়ে আছে। তার জলের তরঙ্গ গুলি তুষার চন্দ্র ও মুক্তার মত শ্বেতবর্ণযুক্ত । তার এই পবিত্র জল যে পান করেছে সে নিশ্চয়, শ্রেষ্ঠ পদ লাভ করেছে-- "তব জলমমলং যেন নিপীতং পরমপদং খলু তেন গৃহীতম।" এই গঙ্গা কল্পল লতার মতো ফল দান করে। এর স্রোতে স্নান করলে পুনরায় মাতৃ গর্ভে জন্ম লাভ করতে হয় না- "তব কৃপয়া চেন্মাতঃ স্রোতঃ স্নাতঃ পুনরপি জঠরে সঃ অপি ন জাতঃ।
Comments
Post a Comment
Haven't doubt please let me know.