পথের পাঁচালী বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

 ছোটদের পথের পাঁচালী 

   বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় 

সহায়ক পাঠ- অষ্টম শ্রেণী 

পথের পাঁচালী উপন্যাসটিকে লেখক তিনটি পর্বে ভাগ করেছেন। পর্বগুলোর নাম হল বল্লালি বালাই, আম আঁটির ভেঁপু এবং অক্রূর সংবাদ।
 বর্তমানে অষ্টম শ্রেণীর পাঠ্য হিসাবে আম আঁটির ভেঁপু অংশটিকে সম্পাদনা করে নাম দেওয়া হয়েছে "ছোটদের পথের পাঁচালী"।

হাতে কলমে সমাধান 

অতি সংক্ষেপে নিচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও 

১) কুঠির মাঠ দেখতে দেখতে যাওয়ার পথে কি দেখে অপু সবথেকে বেশি অবাক হয়েছিল ?

উঃ খরগোশ দেখে 

২) আলকুশি কি ?

উঃ আলকুশি হল এক ধরনের রোঙাযুক্ত উজ্জ্বল রঙের ফল। যাতে হাত দিলেই চুলকায় এবং পরে ফোসকা পড়ে যায়। এই বিষাক্ত ফলে হাত দিলেই জ্বালা করতে থাকে।

৩)" এই দেখো মা আমার সেই মালাটা"-- কে কখন এই কথা বলেছে? 

উঃ মুখুর্জ্যে বাড়ির মেয়ে টুনু যখন দুর্বার খেলনার বাক্স ঘেঁটে তার হারানো পুতির মালাটি খুঁজে পায় তখন সে তার মাকে একথা বলেছিল।

৪) অপু কার পাঠশালায় পড়তে গিয়েছিল ?

উঃ প্রশন্ন গুরুমশাইয়ের পাঠশালায় 

৫) পড়াশোনার পাশাপাশি আর কোন কাজ করতেন? কজন ছাত্র-ছাত্রী ছিল?

উঃ প্রসন্ন গুরুমশাইয়ের পাঠশালা বসতো বিকেলবেলা

    পাঠশালায় ৮-১০ জন ছাত্রছাত্রী ছিল।

৬) আতুরি ডাইনি কে ? বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার সম্পর্কে অপুর ধারণা বদলে গেল কিভাবে ?

উঃ নিশ্চিন্দিপুর গ্রামের এক অসহায় বৃদ্ধা। সে গ্রামের এক প্রান্তে একা বাস করত। একবার দক্ষিণ মাঠে পাখির ছানা দেখতে গিয়ে ফেরার পথে পথ হারিয়ে নিলু আর অপু তার কুটিরে পৌঁছে গিয়েছিল। ছেলেবেলায় শুনেছিল জেলে পাড়ার একটি ছেলের প্রাণ কেড়ে নিয়ে কচু পাতায় ডুবিয়ে রেখেছিল এই আতুরি ডাইনি।

            একটু বড় হয়ে অপু বুঝতে পারে যে আতুরি ডাইনি সত্যিকারের ডাইনি নয়। সে এক গরীব অসহায় বৃদ্ধা। তাকে দেখার কেউ ছিল না ।এমনকি তার মৃত্যুর পর সৎকারের জন্য কাউকে পাওয়া যায়নি। 

৭) অপু কড়ি খেলতে কোথায় গিয়েছিল? তার সঙ্গি-সাথী কারা ছিল লেখ ।

উঃ অপু কড়ি খেলতে গিয়েছিল জেলেপাড়ায় ।

                  সেখানে তার সঙ্গি-সাথী ছিল জেলেপাড়ার ছেলেরা আর ব্রাহ্মণপাড়ার ছেলে পটু ।

৮) সর্বদর্শন সংগ্রহ বইটিতে মানুষের ওড়ার ব্যাপারে কি লেখা ছিল ?

উঃ সর্বদর্শন সংগ্রহ বইটিতে মানুষের ওড়ার ব্যাপারে অনেক কথা লেখা ছিল। সহজ করে বললে তা হল এইরকম, শকুনের ডিমের মধ্যে পারদ পুরে কয়েকদিন রোদে রাখতে হয় । পরে সেই ডিম মুখের ভেতর পুরলে মানুষ ইচ্ছা করলে আকাশে ওড়ার ক্ষমতা লাভ করতে পারে। 

৯) "আমি মরবার সময় বইখানা তোমায় দিয়ে যাব দাদু"- কে কাকে একথা বলেছিলেন? কোন বই খানি দিয়ে যাওয়ার কথা ছিল?

উঃ গাঙ্গুলি পাড়ার অধিবাসী বৃদ্ধ নরোত্তম দাস বাবাজি অপুকে একথা বলেছিলেন।

            তার প্রিয় প্রেমভক্তিচন্দ্রিকা বইটি অপুকে দিয়ে যাওয়ার কথা ছিল।

১০) অপুর দপ্তরে কি কি বই ছিল ? কোন মাসিক পত্রিকা হাতে নিয়ে অপুর মন নানা কল্পনায় ভরে উঠতো?

উঃ অপুর দপ্তরে ছিল ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের লেখা চরিতমালা এবং তৃতীয় নামতা ।

               বঙ্গবাসী নামক মাসিক পত্রিকা হাতে নিয়ে অপুর মন নানা কল্পনায় ভরে উঠতো।

১১)" দুর্গা কতবার খুঁজিয়াছে ও খেলা আর কোনদিন আসে নাই।"- কোন খেলার কথা বলা হয়েছে ?

উঃ বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের "ছোটদের পথের পাঁচালী" অংশে এক বৃদ্ধ বাঙালি মুসলমানের একটা বড় রং করা কাঁচ বসানো টিনের বাক্স নিয়ে খেলা দেখানোর কথা বলা হয়েছে। দুর্গা ওপাড়ার জীবন চৌধুরীর উঠোনে সেই বাক্সের গায়ে লাগানো একটা চঙ্গে চোখ রেখে অনেক সাহেব,মেম, ঘরবাড়ি ও যুদ্ধের ছবি দেখছিল। ভাইকে দেখানোর ইচ্ছে নিয়ে সে পরে বহুবার সেই খেলা খুঁজেছে কিন্তু কোথাও পায়নি।

১২) অপু বসে বসে খাতায় কি রেখে ?

উঃ অপু বসে বসে খাতায় একটি নাটক লেখে, যার বিষয়বস্তু হলো রাজ পরিবারের কাহিনী ।

১৩) অপুর টিনের বাক্সতে কি কি বই ছিল ?

উঃ অপুর টিনের বাক্সে ছিল একখানা নৃত্য কর্মপদ্ধতি, একটি পুরানো প্রাকৃতিক ভূগোল, একখানা শুভঙ্করী, একখানা পাতা ছেড়া বীরাঙ্গনা কাব্য আর তার মায়ের কাশীদাসী মহাভারত।

১৪) "তোরা নাকি এ গাঁ ছেড়ে চলে যাবি? "-কে কাকে এ কথা বলেছে? কোন গাঁয়ের কথা এখানে বলা হয়েছে?

উঃ রানী দিদি অপুকে একথা বলেছে।

     এখানে নিশ্চিন্দিপুর গ্রামের কথা বলা হয়েছে।

১৫) দুর্গা অপুর খেলাধুলার সরঞ্জাম বলতে কি ছিল ?

উঃ দুর্গা অপুর খেলাধুলার সরঞ্জাম বলতেছিল একটা ডালা ভাঙ্গা টিনের বাক্সে রাখা একটা রং ওঠা কাঠের ঘোড়া, চার পয়সা দামের একটা টোল খাওয়া টিনের ভেঁপু, কয়েকটা কড়ি, দু পয়সা দামের একটা খেলনা পিস্তল আর কয়েকটি শুকনো নাটা ফল।

১৬) অপুর পাঠশালাটি কেমন ছিল ?

উঃ অপুর পাঠশালাটি ছিল নিশ্চিন্দিপুর গ্রামে প্রসন্ন গুরুমশায়ের পাঠশালা। পাঠশালা চালানোর পাশাপাশি গুরুমশাই একটি মুদির দোকান চালাতেন। পাঠশালাটি ছিল এই দোকানেরই পাশে। বেত ছাড়া সেই পাঠশালায় শিক্ষাদানের জন্য আর কোন উপকরণ ছিল না। পাঠশালাটি বসত বিকেলে। ৮-১০ জন ছেলেমেয়ে সেখানে পড়তে আসতো। পাঠশালা যে ঘরে বসত তার কোন দিকে দেওয়াল বলে কিছু ছিল না।

১৭) আশ মিটিয়ে যুদ্ধ জিনিসটা উপভোগ করার জন্য অপু কি করত ?

উঃ মায়ের মুখে মহাভারত শুনে কল্পনাপ্রবণ অপুর মনে হতো মহাভারতে যুদ্ধ জিনিসটা বড়ই কম লেখা আছে। তাই আশ মিটিয়ে যুদ্ধ জিনিসটা উপভোগ করার জন্য সে একটি নতুন উপায় বের করেছিল। একটা বাখারী কিংবা হালকা কোন গাছের ডালকে অস্ত্রের মতো হাতে নিয়ে সে বাড়ির পিছনে বাঁশবাগানের পথে কিংবা বাইরের উঠোনে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলতো। 

১৮) "বাঁকা কঞ্চি অপুর জীবনের এক অদ্ভুত জিনিস"- একথা বলার কারণ কি? সামান্য উপকরণ নিয়ে খেলার আনন্দ সম্পর্কে লেখ।

উঃ নিতান্ত তুচ্ছ, সামান্য একখানা বাঁকা কঞ্চি হাতে নিয়ে অপু খাওয়া-দাওয়ার কথা ভুলে কোন নদীর ধারে কিংবা কোন নির্জন বনের পথে অপূর্ব আনন্দে সারাটা দিন একা একা কাটিয়ে দিতে পারে। এ কারণে বাঁকা কঞ্চিকে অপুর জীবনের এক অদ্ভুত জিনিস আখ্যা দেওয়া হয়েছে। একটা শুকনো হালকা বাঁকা কঞ্চি হাতের নিয়ে অপুর মন আনন্দে ভরে ওঠে। তাতে যেন সে হয়ে ওঠে রাজপুত্র কখনো বা ভ্রমণকারী আবার কখনো মহাভারতের অর্জুন।

       ছেলেবেলায় এমন সামান্য জিনিস নিয়ে খেলার আনন্দই আলাদা ।শুকনো গাছের ডাল কুড়িয়ে পাতা রঙিন পাথর সাইকেলের চাকার রিং, ডাংগুলি দেশলাইয়ের মার্কা ,কাচের গুলি এসবের মধ্যেই লুকিয়ে আছে আমাদের শৈশব । প্রায় কোনো খরচই নেই এসব জিনিস সংগ্রহ করার মধ্যে অথচ এগুলি নিয়ে খেলা করে অনেক আনন্দ পেয়েছি।

১৯) শূন্যে ওড়ার ক্ষমতা অর্জনের জন্য অপু কি করেছিল ?

উঃ চুপি চুপি বাবার বইয়ের বাক্স ঘেঁটে পাওয়া সর্ব-দর্শন সংগ্রহ বইটি পড়ে অপু শূন্যে ওড়ার কথা জেনেছিল। একই সাথে জেনেছিল শকুনীর ডিমের মধ্যে পারদ ভরে দিয়ে কয়েকদিন রোদে রেখে সেই ডিম মুখে নিয়ে নাকি মানুষ ইচ্ছে করলে উড়তে পারে। এই শূন্যে ওড়ার ক্ষমতা পাওয়ার জন্য অপু শকুনের বাসার খোঁজ নেয়। অবশেষে সে তাদের পাড়ার এক রাখালের থেকে চার পয়সা ও তার প্রাণের চেয়েও প্রিয় কিছু কড়ির বিনিময়ে দুটি শকুনের দিন সংগ্রহ করে। সলতে পাকানোর জন্য ছেঁড়া ন্যাকড়া খোঁজার সময় দুর্গার হাত লেগে তাক থেকে ডিম দুটি পড়ে গিয়ে ভেঙে যায়। তার সঙ্গে ভেঙে যায় ওপর আকাশে ওরা স্বপ্ন।

২০) ভুলো কুকুরকে নিয়ে দুর্গা কিভাবে আমদ উপভোগ করত ?

উঃ  গ্রামের ভুলো নামের কুকুরটিকে নিয়ে দুর্গা সীমাহীন আমোদ উপভোগ করত। একদিন দুপুরে খাওয়ার পর অপুকে সেই সব মজার বিষয় দেখানোর জন্য সে বাড়ির পিছন দিকের বাঁশ বাগানে নিয়ে যায়। তার হাতে ছিল এক মুঠো ভাত। আয় ভুলো তু-উ-উ বলে ডেকে দুর্গা রহস্য প্রকাশের আনন্দ নিয়ে অপুর দিকে এক অপূর্ব হাসি হাসি মুখে চেয়ে থাকে। হঠাৎ বন-জঙ্গল থেকে কুকুরটি এসে উপস্থিত হয়। দুর্গার গায়ে যেন শিহরণ জেগে ওঠে। এই আনন্দ উপভোগ করার জন্য মায়ের বকুনি সহ্য করেও নিজে কিছু কম খেয়ে অল্প ভাত সেই কুকুরটির জন্য পাতের এক পাশে জোর করে রাখত।

   দ্বিতীয় পর্যায়ক্রমিক মূল্যায়ন

                     (৯ - ১৮ পরিচ্ছেদ)

 ১) অপু কাকে দাদু বলে ডাকত ?
উঃ নরোত্তমদাস বাবাজিকে 

২) হরিহর কোন শিষ্যর বাড়ি গিয়েছিলেন ?
উঃ লক্ষণ মহাজনের বাড়িতে 

৩) অপু কড়ি খেলতে কোথায় গিয়েছিল?
উঃ জেলেপাড়া 

৪) অপু কার কাছ থেকে শকুনের ডিম সংগ্রহ করে এনেছিল ?
উঃ অপু হিরু নাপিতের কাঁঠালতলার এক পাড়ার রাখালের কাছ থেকে দুটো পয়সার বিনিময়ে শকুনের ডিম সংগ্রহ করে এনেছিল। দুর্গা ছোট হাড়িতে কি রান্না করেছিল ভাত ও মেটে আলু ভুবন মুখুজ্জের বাড়িতে

 


Comments

Popular posts from this blog

কর্ভাস (Carvas)প্রফেসর শঙ্কুর ডায়রি

বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা তারতম্যের কারণগুলি আলোচনা কর।

আদর্শ ফুলের গঠন চিত্র ( দশম শ্রেণী)