শম্ভু মিত্রের বিভাব নাটকের প্রশ্ন ও উত্তর

বিভাব নাটকের প্রশ্ন ও উত্তর।। শম্ভু মিত্রের বিভাব নাটকের প্রশ্ন।। বিভাব- শম্ভু মিত্র।। শম্ভু মিত্রের বিভাব নাটক।

                   বিভাব

                         শম্ভু মিত্র 


) বিভাব নাটকের নাট্য রীতির যে অভিনবত্ব ফুটে উঠেছে তার নিজের ভাষায় লেখ।

উঃ বাংলা রঙ্গমঞ্চের অন্যতম ব্যক্তিত্ব হলেন শম্ভু মিত্র। তিনি বিভাব নাটকের নাট্য রীতির এক অসাধারণ অভিনবত্ব ফুটিয়ে তুলেছেন ।ভালো মঞ্চ, আলো বা মঞ্চসজ্জার নানা উপকরণ না থাকলেও যে নাটক অভিনীত হতে পারে, তা তিনি এই নাটকে প্রথম দেখিয়েছেন। কেবলমাত্র ভঙ্গির সাহায্যে নাটকের বিষয়কে দর্শকদের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলাই এই নাটকের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। 
                    নাটকের সূচনাতেই শম্ভু মিত্র নাটক অভিনয়ের নানা সমস্যার কথা বলেছেন। তার মধ্যে অন্যতম সমস্যা হল মঞ্চের। তিনি একদিকে যেমন তার নাট্য ভাবনাকে তুলে ধরেছেন তেমনি অন্যদিকে বাঙালির ঔপনিবেশিক মানসিকতাকেও আক্রমণ করেছেন। তাছাড়া এই নাটকের সংলাপগুলিও সুগঠিত নয়। হাসির নাটক মঞ্চস্থ করার অভিপ্রায় নিয়ে সংলাপ শুরু হলেও তার সঙ্গে বক্স অফিসের চাহিদাকেও জুড়ে দেওয়া হয়। আসলে নাটকের গুণগতমানের থেকে দর্শকদের চাহিদাকে গুরুত্ব দেওয়ার যে প্রয়াস তা নাট্যরীতির অভিনবত্বে ফুটে উঠেছে।
                  পরিশেষে বলা যায় কেবলমাত্র হাসির খোরাক হিসাবে জীবনকে দেখা, মানুষের সমস্যাকে উপলব্ধি না করা নাট্যকারের শিল্প দর্শন ছিল না। তাইতো হাসির উপকরণ খুঁজতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে মৃত মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে বলেছেন -"এবার নিশ্চয়ই লোকের খুব হাসি পাবে"। এই তীব্র ব্যাঙ্গের মধ্য দিয়ে মধ্যবিত্তের সস্তা মানসিকতাকে আঘাত করে নাটকটিকে এক অসাধারণ মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছে।


২) "কোথাও জীবনের খোরাক হাসির খোরাক নেই"- বক্তা কে ? কোথাও জীবনের খোরাক হাসির খোরাক নেই বলে বক্তা মনে করেছেন কেন ?


উঃ নাট্যকার শম্ভু মিত্র রচিত "বিভাব" নাটকের অন্তর্গত আলোচ্য উক্তিটির বক্তা হলেন শম্ভু মিত্র নিজেই ।
                     বিভাব নাটকের প্রেক্ষাপটে আছে হাসির নাটক মঞ্চস্থ করার জন্য হাসির উপকরণের সন্ধান। তাই ঘরের মধ্যে প্রথমে কাল্পনিক বসার ভঙ্গির মাধ্যমে এবং পরে লভসিন ও প্রগ্রেসিভ লভসিন অভিনয় করেও হাসির নাটক সৃষ্টিতে তারা ব্যর্থ হন।  তাই শম্ভু মিত্র ঘরের চার দেয়াল থেকে বের করে বাইরের মানুষের মধ্যে নিয়ে যেতে বলেন। তার মতে সেখানেই হাসির খোরাক, পপুলার জিনিসের খরাক পাওয়া যাবে। এই প্রসঙ্গে শম্ভু মিত্রের যথার্থ উক্তি -"এই চার দেয়ালের মধ্যে এই ঘরের মধ্যে জীবনকে উপলব্ধি করা যাবে না।" বাইরের জীবনের সঙ্গে পরিচয়ের মাধ্যমে জীবনকে উপলব্ধির মধ্য দিয়ে আকাঙ্ক্ষিত হাসির খোরাক মিলবে।
                 বক্তার চেতনায় ধরা পড়ে যে ,চার দেয়ালের বাইরে জীবনের বিরাট তাৎপর্য আছে। সেই গণ্ডিবদ্ধ জীবনের বাইরে রাস্তায় মোটর গাড়ি, বাস চলে। ঘন্টি বাজিয়ে ছুটে চলে ট্রাম। হাত রিক্সা নিয়ে মুখে আওয়াজ করতে করতে চালক ছুটে চলে। এসবের মধ্যেও কোথাও হাসির উপকরণ বক্তা খুঁজে পান না। অন্যদিকে মানুষের প্রতিদিন বেঁচে থাকার লড়াই, শোষণ ও বঞ্চনার কাহিনীও বক্তার চেতনায় ধরা পড়েনি। তাই হাসির খোরাক খুঁজতে বেড়িয়ে জীবন কি তা তিনি দেখলেন। রাস্তায় কাপড় ও খাদ্যের দাবিতে দীন-দুঃখী মানুষের মিছিল, মিছিলের উপর গুলি বর্ষণ, রক্তের স্রোত ও মৃত্যু এসবের মধ্যেও কোন হাসির উপকরণ সৃষ্টি হতে পারে না। তাই শম্ভু মিত্র আলোচ্য কথাটি বলেছেন।

৩) "এবার নিশ্চয় লোকের খুব হাসি পাবে"।- কোন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বক্তা একথা বলেছেন ? উক্তিটির তাৎপর্য আলোচনা কর।


উঃ নাট্যকার শম্ভু মিত্রের 'বিভাব' নাটকটি একটি সার্থক সৃষ্টি। তিনি এই নাটকে হাসির নাটক মঞ্চস্থ করার জন্য হাসির উপকরণের সন্ধান করেছেন। আর এই উপকরণ সন্ধান করতে গিয়েই তিনি ব্যাঙ্গের আশ্রয়ে সভ্যতার কুৎসিত চরিত্রকে তুলে ধরেছেন। নির্মম ঘটনার মধ্যেও মানুষ যে বিনোদন খোঁজে, জীবনের কঠিন স্বরূপকেও মানুষ যে এড়িয়ে চলতে চায় সেটাই তিনি আলোচ্য বক্তব্যে ফুটিয়ে তুলেছেন।
              আলোচ্য নাট্যাংশে আমরা দেখতে পাই, হাসির নাটক মঞ্চস্থ করার জন্য প্রথমে লভসিন এবং পরে প্রগ্রেসিভ লভসিন অভিনয় করেও তারা হাস্যরস সৃষ্টিতে ব্যর্থ হন। তাই নাটকের সম্পাদক শম্ভু মিত্রের মতে এই চার দেওয়ালের মধ্যে জীবনকে উপলব্ধি করা যাবে না। তার মতে বাইরে গতিশীল জীবনে হাসির উপকরণের সন্ধান করা যেতে পারে। কিন্তু সেখানেও তারা হাসির কোন উপকরণে খুঁজে পাননি। ঠিক এমন সময় সামান্য চাল ও কাপড়ের দাবি জানিয়ে একটি মিছিল আসে। সেই মিছিলকে ফিরে যাবার জন্য সার্জেন্ট নির্দেশ দেন। কিন্তু তাদের স্লোগান চলতেই থাকে। ফলে পুলিশের গুলিতে একজন ছেলে ও মেয়ে মাটিতে পড়ে যায়। ঠিক সেই সময়েই শম্ভু মিত্র দর্শকদের দিকে তাকিয়ে আলোচ্য কথাটি বলেছেন।
              পরিশেষে বলা যায়, আলোচ্য উক্তির মধ্য দিয়ে লেখক নাগরিক সমাজের আত্মকেন্দ্রিক মানসিকতাকে চাবুক মেরেছেন। যারা সস্তা মনোরঞ্জনকে উপলব্ধি করতে চায়, যারা জীবনের গভীরতাকে ছুঁতে চায় না, লেখক তাদের উদাসীনতাকেই তাচ্ছিল্য করেছেন।


৪) "তাই অনেক ভেবেচিন্তে আমরা একটা প্যাঁচ বের করেছি"- কে কোন প্রসঙ্গে মন্তব্যটি করেছেন, তা আলোচনা কর।


উঃ নাট্যকার শম্ভু মিত্র বিভাগ নাটকের সূচনায় আলোচ্য কথাটি বলেছেন তিনি দর্শকদের উদ্দেশ্য করে গ্রুপ থিয়েটারের নাটক অভিনয়ের ক্ষেত্রে নানা সমস্যার কথা উল্লেখ করেছেন তাই যাবতীয় প্রতিকূলতাকে অতিক্রম করে নাটক অভিনয় করার বর্ণনা প্রসঙ্গেই তিনি আলোচ্য মন্তব্যটি করেছেন।
                  শম্ভু মিত্রের গ্রুপ থিয়েটার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৪৮ সালে। এই গ্রুপ থিয়েটারের সঙ্গে জড়িয়ে আছে দুরন্ত অভাব। কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন যে, নাটক অভিনয়ের জন্য তাদের কোনো ভালো মঞ্চ নেই, নেই কোন আলোকসজ্জা, ঝালর প্রভৃতি নানা উপকরণ। থাকার মধ্যে আছে নাটক অভিনয় করার অদম্য প্রচেষ্টা। সেই অদম্য প্রচেষ্টাকে পাথেয় করে নাটক অভিনয় ফাঁদলেও বাধা হয়ে দাঁড়ায় সরকারের বিমাতৃসুলভ আচরণ। এইভাবে গ্রুপ থিয়েটার নানা সংকটের মুখে পড়ে। 
                    তাই এই সংকটের হাত থেকে বাঁচার জন্য তারা পথও বের করেন। এমন এক অভিনয় পরিকল্পনা করেন, যেখানে কোন মঞ্চের প্রয়োজন নেই। কোনোরকম দরজা, জানালা, বেঞ্চ, সিনসিনারি প্রয়োজন হবে না। এমনকি মঞ্চের বদলে একটা প্ল্যাটফর্ম হলেই হবে। প্রাচীন নাট্যশাস্ত্র থেকে তিনি এই সকল বিষয়ের সন্ধান পান। তাই অর্থনৈতিক সংকট ও সরকারের খাজনার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার বর্ণনা প্রসঙ্গে লেখক আলোচ্য কথাটি বলেছেন।




এরকম প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের ব্লগটিকে  ফলো করে রাখো। আর কমেন্ট করতে ভুলবেন না ।প্রয়োজন হলে অবশ্যই আমাকে কমেন্টে জিজ্ঞাসা করিও। আমি এর উত্তর দিয়ে দেব।



Comments

Popular posts from this blog

কর্ভাস (Carvas)প্রফেসর শঙ্কুর ডায়রি

বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা তারতম্যের কারণগুলি আলোচনা কর।

আদর্শ ফুলের গঠন চিত্র ( দশম শ্রেণী)