ডাকাতের মা সতীনাথ ভাদুড়ী

                 ডাকাতের মা

                             সতীনাথ ভাদুড়ী 

                                                           পূর্ণমান - ১

১) ডাকাতের মা গল্পের লেখক কে ?

উঃ সতীনাথ ভাদুড়ী 

২) ডাকাতের মা গল্পের মূল গ্রন্থের নাম কি 

উঃ চোকাচোকী 

৩) ডাকাতের মায়ের ঘুম কেমন হওয়া প্রয়োজন ?

উঃ পাতলা 

৪) টকটক করে দুটো কার শব্দ থেমে থেমে তিনবার হলে কি বুঝতে হবে ?

উঃ দলের লোক টাকা দিতে এসেছে। 

৫) তিনবার টোকার পর আরো একবার টোকার শব্দ হলে কি বুঝতে হবে ?

উঃ সৌখি নিজে বাড়ি ফিরেছে 

৬) "ছেলের আবার করা হুকুম"- ছেলের কড়া হুকুমটি কি ?

উঃ দরজায় টোকার শব্দ হলে হুট করে দরজা না খুলে দশবার নিঃশ্বাস ফেলতে যতক্ষণ সময় লাগে ততক্ষণ অপেক্ষা করে দরজা খুলতে হবে। 

৭) সৌখি কতদিন জেলে গেছে ?

উঃ পাঁচ বছর 

৮) দলের লোক কত দিন টাকা দিতে আসতো ?

উঃ প্রথম দুবছর 

৯) সৌখের বাড়ির দরজা কি দিয়ে তৈরি ?

উঃ টিন 

১০) সৌখি যখন জেলে যায় তখন তার বউ ছিল-----।

উঃ অন্তঃসত্ত্বা 

১১) বেয়াইয়ের কটি মোষ ছিল ?

উঃ দুটো 

১২) গন্ধগোকুল কি ?

উঃ খট্টাস জাতীয় প্রাণী  

১৩)"কথা বলতে হবে সাবধানে "- কেন ?

উঃ দলের লোকের নাম যাতে মুখ থেকে বেরিয়ে না যায় তাই সাবধানে কথা বলতে হবে।

১৪) কে জেল দেখতে গিয়েছিল ?

উঃ লাট সাহেব 

১৫) সৌখি কাকে টাকা খাইয়েছিল ?

উঃ হেড জমাদারকে 

১৬) "তাই রেমিশন পেয়ে গেলাম"- রেমিসন কথার অর্থ কি? 

উঃ জামিন 

১৭) "বাড়ি ফেরার আনন্দ অর্ধেক হয়ে গিয়েছে"- কেন ?

উঃ সৌখি জেল থেকে বাড়ি ফিরে ছেলে বউকে না দেখতে পাওয়ার জন্য তার বাড়ি ফেরার আনন্দ অর্ধেক হয়ে গিয়েছিল ।

১৮) সৌখির ছেলের বয়স কত ?

উঃ ৪-৫ বছর।

১৯) সৌখির মায়ের জীবিকা কি? 

উঃ খই, মুড়ি বিক্রি করা, 

২০) কাছারির ঘড়িতে কটা বাজার কথা বলা হয়েছে ?

উঃ দুটো 

২১) কার লোটা চুরি গিয়েছিল ?

উঃ মাতাদিন পেশকার  সাহেবের 

২২) "লোটা হলো বাড়ির লক্ষ্মী"- উক্তিটি কার?

উঃ খোকার মা( মাতাদিন পেশকারের স্ত্রী)

২৩) মাতাদিন কিভাবে তার ঘটি চিনেছিল?

উঃ খুড়োর নিচে তারা চিহ্ন দেখে 

২৪) সৌখির মা কত টাকায় ঘটি বিক্রি করেছিল ?

উঃ ১৪ আনায় 

২৫) দারোগা সাহেব কিসে করে এসেছিল ?

উঃ সাইকেল। 

২৫) "সৌখি মনে মনে ঠিক করেছে"- কি ঠিক করেছে ?

উঃ বেলা বারোটার আগে সে ঘুম থেকে উঠবে না। 

২৬) "বুড়ির বুক কেঁপে ওঠে"- কেন ?

উঃ দারোগা পুলিশসহ মাতাদিন পেশকারকে দেখে 

২৭) ৫-৭ বছর আগে পুলিশ একবার কখন শৌখিদের বাড়ি ঘেরাও করেছিল ?

উঃ ভোররাতে 

২৮) সৌখি জেলের ঠিকাদারদের থেকে কত টাকা রোজগার করে এনেছিল ?

উঃ ৯০ টাকা 

২৯) কদুচোরদের কতদিনের সাজার কথা বলা হয়েছে ?

উঃ দু-তিন মাস 

৩০) সৌখি দারোগার সঙ্গে যাবার সময় খাটিয়ার উপর কি রেখে গেল ?

উঃ কোমর থেকে বাটুয়া বের করে 

৩১) "বুড়ির ঘুম আসতে চায় না"- কারণ কি?

উঃ পরের দিন ছেলেকে কি খেতে দেবে সেই দুশ্চিন্তায়।

৩২) "দারোগা বাবুর প্রশ্ন কানে গেল কি না সে কথা বোঝাও যায় না"- কেন ?

উঃ আত্ম ধিক্কার ও ছেলের অপমানের আশঙ্কায় তিনি নির্বাক হয়ে গেছেন।

                               

                                             পূর্ণমান - ৫

১) ডাকাতের মা গল্পাংশের নামকরণের সার্থকতা আলোচনা কর।

উঃ কোনো গল্পাংশের নামকরণ বা কোনো শিল্পের নামকরণের পিছনে লেখকের মানসিক অভিপ্রায় লুকিয়ে থাকে। কখনও তিনি গল্পের প্রধান চরিত্রের নামে নামকরণ করে থাকেন, কখনও বিশেষ বস্তু বা ঘটনাকে নামকরণের জন্য বেছে নেন ,কখনো রূপক সাংকেতিক নামকরণ করে থাকেন। আলোচ্য ডাকাতের মা গল্পাংটি একটি চরিত্র কেন্দ্রিক গল্পাংশ।এই চরিত্রের অন্তরালে থেকে গল্পাংশটির নামকরণ কতখানি সার্থক হয়ে উঠেছে তা আলোচনা করা হল- 

            আলোচ্য গল্পাংশটির প্রধান চরিত্র হলো ডাকাতের মা, কারণ তাকে ঘিরেই গল্পাংশটির ক্রম পরিণতি ঘটেছে। সৌখির মায়ের রাত্রি কালীন চিন্তা ভাবনা দিয়ে শুরু হয়ে পরের দিন ভোরে সৌখীকে পুলিশে ধরে নিয়ে যাওয়ার কাহিনী দিয়ে শেষ হয়েছে। সৌখি জেলে যাওয়ার পর তার মা বাড়িতে বাড়িতে খই,মুড়ি বিক্রি করে সংসার চালিয়েছে। সংসারের অচল অবস্থা দেখে তিনি বৌমাকে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন। এর ফলে অভুক্ত অবস্থাতেও তার মায়ের স্বপ্নধুলায় মিশে যায়নি।সে বিষয়ে তিনি অহংকার প্রকাশ করে বলেছেন -"সৌখির মায়ের নাতি পথের ভিখারি নয়"।

               গল্পের শেষে আছে নাটকীয়তা। ছেলের খাবারের জন্য পয়সা জোগাড় করা, মাতাদিন পেশকার সাহেবের লোটা চুরি করা এবং পরের দিন দারোগাবাবুর হাতে সৌখির গ্রেফতার হওয়া পাঠককে যথার্থই উৎকন্ঠিত করে তুলেছে। 

              পরিশেষে বলা যায়,সৌখির মা ছিলেন একজন যথেষ্ট বাস্তববুদ্ধি সম্পন্না মহিলা। তিনি নিরক্ষর হলেও পুরুষতন্ত্রের প্রতি আস্থা ছিল প্রবল। কিন্তু আবেগতাড়িত হয়ে ভুল সিদ্ধান্তের জন্যই গল্পটি পরিসমাপ্তির দিকে অগ্রসর হয়েছে। তাছাড়া এই গল্পে বহু চরিত্রের সমাবেশ ,ঘটনার ঘনঘটা সবদিক বিচার করে বলা যায় ডাকাতের মা গল্পাংশের নামকরণ যথার্থই সার্থক হয়ে উঠেছে।


২) ডাকাতের মা ছোটগল্প অবলম্বনে সৌখির মায়ের চরিত্র আলোচনা করো।

উঃ যেকোনো গদ্যাংশ বা যেকোনো বিষয়ের মধ্য দিয়ে লেখক জীবনের সামগ্রিক রূপের সন্ধান করেন। সেই সময়ে লেখক যে সমস্ত ঘটনা বা চরিত্রের উল্লেখ করে থাকেন, তা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মূল বিষয়ের সাথে যুক্ত করে থাকেন । আলোচ্য 'ডাকাতের মা 'গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র হলো ডাকাতের মা বা সৌখির মা । তাই গল্পাংশের অন্তরালে থেকে সৌখির মায়ের চরিত্রটি কতখানি প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে তা আলোচনা করা হলো--

 অত্যন্ত স্নেহঃ 

                 অপত্য স্নেহ ছিল সৌখির মায়ের চরিত্রের এক অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তিনি ছিলেন অত্যন্ত পুত্রবৎসল। পুত্রের চিন্তাভাবনা, আচার-আচরণে তার পূর্ণ সমর্থন ছিল। তাই জেল থেকে ফিরে আসার পরেই পুত্রকে তিনি দারিদ্র্যের কথা জানাতে পারেনি।

পুত্রবধুর প্রতি স্নেহ পরায়নতাঃ

                    পুত্রবধুর প্রতি স্নেহ পরায়নতা তার চরিত্রের মধ্যে সুস্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যায়। ডাকাতের মা যখন বলেছে - "এ বৌমা যে খাটতে পারে না ওই শরীর নিয়ে" আবার "আর বছর খানেক বাদেই তো সৌখি জেল থেকে ছাড়া পাবে তখন সে বৌমাকে রুপোর গহনা দিয়ে মুড়ে দেবে" এর মধ্য দিয়েই পুত্রবধূর প্রত শাশুড়ি মায়ের স্নেহের পরিচয় পাওয়া যায়।

কঠোর পরিশ্রমীঃ 

              সৌখির মা ছিল অত্যন্ত পরিশ্রমী এক প্রৌঢ়া মহিলা। সৌখি জেলে যাওয়ার দু'বছর পর থেকেই তার দলের লোকেরা টাকা পাঠানো বন্ধ করে দেয়। তখন তিনি নিজেই বাড়িতে বাড়িতে খই, মুড়ি বিক্রি করে নিজের পেট চালিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে তার চরিত্রের পরিশ্রমের দিকটিই প্রতিভাত হয়।

                পরিশেষে বলা যায়, সৌখির মা ছিলেন যথেষ্ট বাস্তব বুদ্ধির সম্পন্না। নিরক্ষর মহিলা হলেও পুরুষতন্ত্রের প্রতি তার আস্থা ছিল প্রবল। তার চরিত্রের মধ্যে এই সমস্ত বৈশিষ্ট্য থাকলেও আবেগ তাড়িত হয়ে ভুল সিদ্ধান্তের জন্য গল্পটি বিষাদময় পরিশমাপ্তির দিকে অগ্রসর হয়েছে। তাই এসব দিক বিচার করেই বলা যায় সৌখির মায়ের চরিত্রটি একটি স্বার্থক চরিত্রে পরিণত হয়েছে। 


৩) "কিন্তু আজ যে অন্য ব্যাপার"- কোন দিনের কথা বলা হয়েছে সেদিনের অন্য ব্যাপারটির পরিচয় দাও।

উঃ আলোচ্য অংশটি সতীনাথ ভাদুড়ীর লেখা "ডাকাতের মা" গল্পের অন্তর্গত। এখানে সেই দিন বলতে, সৌখির মা যেদিন ভোররাতে লোটা চুরি করেছিল, সেই দিনের কথা বলা হয়েছে। 

          সৌখি হঠাৎ জেল থেকে ফিরে আসে। পরের দিন সকালে ছেলেকে কি খেতে দেবে সেই চিন্তায় সৌখির মা বিছানায় শুয়ে অস্থির হয়ে পড়ে। সকালে সৌখীকে তার প্রিয় আলুচচ্চড়ি ভাত খাওয়ানোর জন্য সবই তাকে কিনতে হবে। তাই কোন উপায় না পেয়ে সৌখির মা মাঝরাতে মাতাদিন পেশকার সাহেবের দামি ঘটি চুরি করে ১৪ আনায় বাসনের দোকানে বিক্রি করে। সৌখি সকালে যখন বিছানায় নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছিল এবং তার মা  আলুচচ্চড়ি চাপিয়েছিল তখনই সেই বাসনওয়ালা এবং পেশকার সাহেবসহ দারোগাসাহেব এসে উপস্থিত হন সৌখির বাড়িতে। তাদের দেখে বুড়ির বুক কেঁপে ওঠে।ডাকাত সর্দারের বিধবা বউ বা ডাকাত সর্দারের মা হিসাবে পুলিশকে তার ভয় পাওয়ার কথা নয়।কারণ এর আগে অনেকবার পুলিশ তাদের বাড়িতে হানা দিয়েছে। কিন্তু সদ্য ছিঁচকে চুরির সাক্ষী প্রমাণসহ আজ তাদের বাড়িতে পুলিশের আগমন ঘটেছে। তাই সেই দিনটিতে পুলিশ দেখে বুড়ির বুক কেঁপে উঠেছিল।


৪) "ছেলের নামে কলঙ্ক এনেছে সে"- কে ছেলের নামে কলঙ্ক এনেছে? কলঙ্ক শব্দটি ব্যবহারের কারন কি?

উঃ প্রখ্যাত গল্পকার সতীনাথ ভাদুড়ীর লেখা "ডাকাতের মা" ছোটগল্পে ডাকাত সর্দার সৌখির মায়ের ছেলের নামে কলঙ্ক আনার কথা বলা হয়েছে। 

                জেল থেকে বাড়ি ফিরে আসা সৌখিকে আলুচচ্চড়ি ভাত খাওয়ানোর জন্য তার মা ভোর রাতে প্রতিবেশী মাতাদিন পেশকারসাহেবের ঘটি চুরি করেছিল। কিন্তু সকালবেলাতে সেই ছিঁচকে চুরির সাক্ষী প্রমাণসহ পুলিশকে দেখে লজ্জায় অপমানে বুড়ির বুক কেঁপে ওঠে। সেইসময় সৌখি সবকিছু বুঝতে পেরে যখন মাকে বাঁচাতে চুরির দায় নিজের ঘাড়ে নেয়, তখনই সৌখির মা এই কথা ভেবে ভেঙে পড়ে যে -"ছেলের নামে কলঙ্ক এনেছে সে"। 

              ডাকাত সর্দারের মা হিসাবে সৌখির মা যথেষ্ট গর্বিত ছিল। সে মনে প্রাণে বিশ্বাস করত যে, ডাকাতি করা তার স্বামী পুত্রের হকের পেশা, মরদের কাজ, ধর্মের জিনিস‌।ডাকাত সর্দার হিসেবে সৌখি এতটাই আত্ম অহংকারী ছিল যে, কারাগারে থাকাকালীন সে কখনো ছিঁচকে কদু চোরদের সাথে, এমনকি ছোট ছোট অপরাধীদের সঙ্গেও কথা বলত না। তার নামে চৌকিদার সাহেব কাঁপে, দারোগা সাহেব পর্যন্ত তুই তরকারি করতে সাহস করেনি কোনদিন। ছেলের সেই উচ্চ ভাবমূর্তি তার দোষে কালিমালিপ্ত হয়েছিল বলেই 'কলঙ্ক' শব্দটি ব্যবহার করেছে।





Comments

Popular posts from this blog

কর্ভাস (Carvas)প্রফেসর শঙ্কুর ডায়রি

বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা তারতম্যের কারণগুলি আলোচনা কর।

আদর্শ ফুলের গঠন চিত্র ( দশম শ্রেণী)