ছন্নছাড়া কবিতার বিষয়বস্তু ও অনুশীলনী

ছন্নছাড়া

             অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত

 

১) ছন্নছাড়া কবিতার উৎস ও বিষয়বস্তু লেখ।


উঃ ছন্নছাড়া কবিতাটি কবি অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের 'শ্রেষ্ঠ কবিতা' থেকে নেওয়া হয়েছে।


বিষয়বস্তুঃ 

          'ছন্নছাড়া' কবিতায় কবি বেকার যুবকদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন। এই কবিতায় একটি গাছকে তিনি প্রতীক হিসাবে ব্যবহার করেছেন। প্রথমে দেখা যায়, এই গাছটি জীর্ণ, শুষ্ক, লতাপাতাহীন ছিল। সবকিছু হারানো গাছের প্রেতছায়াকে তিনি বেকার যুবকদের পরিস্থিতির সঙ্গে তুলনা করেছেন। সিনেমার টিকিট থেকে হাসপাতালের বেড, কলেজের সিট থেকে অনুসরণ করার মতো নেতা বা অনুপ্রেরণা যোগানোর প্রেম কিংবা মধ্যবিত্ত বাড়ির ফালতু এক চিলতে রক কোন কিছুই এদের জন্য নয়। অথচ নিরীহ বেওয়ারিশ গাড়ি চাপা পড়লে তাকে বাঁচানোর জন্য এরাই লড়াই চালায়। জীবনের মর্ম তারা বোঝে । সমাজ তাদের যতই বাঁকা চোখে দেখুক না কেন এরাই শেষ পর্যন্ত সমাজের অবহেলিত মানুষের পাশে দাঁড়ায়।

            তাই কবি কবিতার শেষে আবার প্রতীক হিসাবে গাছটিকেই ফিরিয়ে এনেছেন। কবিতার শেষে দেখা যায়, সেই রুক্ষ্ম, রিক্ত, জীর্ণ গাছটি ভরে উঠেছে লতায় পাতায়, ফলে- ফুলে। সবুজে সবুজ হয়ে উঠেছে সেই গাছ। আসলে এই কবিতায় মৃতপ্রায় ভিখারিটির মধ্যে 'প্রাণ আছে 'কথাটি সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ। মৃতপ্রায় গাছটি আবার পাতা, ফুলে ভরে ওঠার মধ্য দিয়ে সেই প্রাণের চিহ্ন পাওয়া গেছে। মানুষ আর প্রকৃতি এই কবিতায় মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে।



হাতে কলমের সমাধান 


১.১ অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের লেখা দুটি বইয়ের নাম লেখ।

উঃ অমাবস্যা ও কল্লোল যুগ 


১.২) তিনি কোন পত্রিকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন ?

উঃ কল্লোল পত্রিকা 


২. নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর একটি বাক্যে লেখ। 

২.১) কবি প্রথমে গাছটিকে কেমন অবস্থায় দেখেছিলেন ?

উঃ কবি অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত প্রথমে গাছটিকে সবুজের লেশমাত্রহীন, জীর্ণশীর্ণ, রুক্ষ, সূক্ষ্ম ,কঙ্কালসার অবস্থায় দেখেছিলেন।


২.২) ড্রাইভার বলল ওদিকে যাবো না।'- ওদিকে না যেতে চাওয়ার কারণ কি ?

উঃ রাস্তার মাঝখানে কয়েকটি বেকার যুবকদের আড্ডা দিতে দেখে ড্রাইভার সেই পথ দিয়ে গাড়ি নিয়ে যেতে চায়নি। কারণ তার মতে ওই যুবকরা হয়তো তার গাড়িতে উঠতে চাইবে এবং ঘুরে বেড়ানোর মতলব করবে। 


২.৩) "তাই এখন পথে এসে দাঁড়িয়েছে সড়কের মাঝখানে"- সড়কের মাঝখানে পথে এসে দাঁড়ানোর কারন কি ?

উঃ 'ছন্নছাড়া' যুবকদের সড়কের মাঝখানে পথে এসে দাঁড়ানোর কারণ হলো ঘরে তাদের স্থান নেই, খেলার জন্য মাঠ নেই, আড্ডা দেওয়ার জন্য মধ্যবিত্ত বাড়ির এক চিলতে রকটাও ভেঙে দেওয়া হয়েছে। 


২.৪) "আমি বললুম না ওখান দিয়েই যাব"- কবির ওখান দিয়েই যেতে চাওয়ার কারণ কি?

উঃ ওখান দিয়ে গেলে পথ কম হয় অর্থাৎ পথটি সময় বাঁচায় বলে কবি ওই পথ দিয়েই যেতে চেয়েছেন। 


২.৫) "ওই দেখতে পাচ্ছেন না ভিড়?"- ওখানে কিসের ভিড়?

উঃ আলোচ্য প্রশ্নোদ্ধৃত স্থানে একটা বেওয়ারিশ ভিখারী গাড়ি চাপা পড়েছিল, আর সেটা দেখতেই লোকের ভিড় জমে উঠেছিল। 


২.৬) "কে সে লোক?"- লোকটির পরিচয় দাও।

উঃ আলোচ্য অংশে লোকটি হল একটি নিরীহ বেওয়ারিস ভিখারী।


২.৭)" চেঁচিয়ে উঠলো সমস্বরে"-কি বলে তারা সমস্বরে চেঁচিয়ে উঠলো?

উঃ প্রাণ আছে ,এখনো প্রাণ আছে বলে তারা সমস্বরে চেঁচিয়ে উঠেছিল। 


২.৮) "আমি নেমে পড়লাম তাড়াতাড়ি।"- কবি তাড়াতাড়ি নেমে পড়লেন কেন ?

উঃ গাড়িচাপা পড়া ভিখিরির রক্তের দাগ যাতে কবির জামা কাপড়ে লেগে না যায়, সেজন্য তিনি গাড়ি থেকে তাড়াতাড়ি নেমে পড়লেন।


২.৯) "ফিরে আসতেই দেখি"- ফেরার পথে কবি কি দেখতে পেলেন?

উঃ কবি যখন ফিরে এলেন তখন তিনি দেখলেন, গলির মোড়ের সেই শুকনো গাছটা সোনালী কচি পাতায় গুচ্ছ গুচ্ছ ফুল ও তার গন্ধে এবং রংবেরঙের পাখিতে ভরে গেছে। 


২.১০)" অবিশ্বাস্য চোখে দেখলুম"- কবির চোখে অবিশ্বাসের ঘোর কেন ?

উঃ আপাত প্রাণহীন, শুষ্ক রুক্ষ গাছের মধ্যে লুকিয়ে থাকা অনন্ত প্রাণের প্রকাশ দেখে কবির চোখে অবিশ্বাসের ঘোর লেগে।


৩) নির্দেশ অনুসারে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।

৩.১) "ওই পথ দিয়ে/ জরুরী দরকারে যাচ্ছিলাম ট্যাক্সি করে।"- কবির যাত্রাপথের অভিজ্ঞতার 

বিবরণ দাও। 

উঃ কবি ট্যাক্সি করে যে পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন সেই পথেই গলির মোড়ে লতাপাতাহীন শুকনো মৃতপ্রায় একটি গাছ দেখেছিলেন। একটু দূরে পথের মাঝখানে একদল ছন্নছাড়া যুবক আড্ডা দিচ্ছিল। যারা যখন তখন হাওয়া খাওয়ার জন্য গাড়ি থামিয়ে লিফট চায়। তাই ড্রাইভার সে পথে যেতে চাইনি। কিন্তু সে পথেই কবি যান এবং শেষ পর্যন্ত সেই সব ছন্নছাড়া যুবক গাড়িচাপা পড়া এক ভিখারির দলা পাকানোর রক্তাক্ত দেহকে ওই ট্যাক্সিতে তুলে নেয়। রক্তের দাগ থেকে নিজেকে বাঁচাতে ট্যাক্সি থেকে নেমে পড়েন। 


৩.২) "গলির মোড়ে একটা গাছ দাঁড়িয়ে/ গাছ না, গাছের প্রেতচ্ছায়া।"- একটি গাছ দাঁড়িয়ে আছে বলেও কেন পরের পংক্তিতে তাকে গাছের প্রেতচ্ছায় বলা হয়েছে তা বুঝিয়ে দাও।


উঃ গাছ বলতে বোঝায় পাতা ফুল সঁতেজতা সরসতা এসবের কোন কিছুই কোভিদ দেখা গাছটিতে ছিল না বরং সেটি ছিল শুষ্ক রুক্ষ জীর্ণ কাঠি দিয়ে সাজানো গাছের কঙ্কাল কোন লতাপাতা ছাল বাকল নেই অথবা কোন সবুজের ছোঁয়া সেই গাছের ছিল না। তাই কবি গাছ না বলে তাকে গাছের প্রেতচ্ছায়া বলেছেন।


৩.৪)" ওরা কারা?"- কবিতা অনুসরণে ওদের পরিচয় দাও।

উঃ অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত রচিত "ছন্নছাড়া" কবিতায় ওরা বলতে আমাদের দেশের হাজার হাজার বেকার যুবকদের কয়েকজনকে বোঝানো হয়েছে। ছন্নছাড়া যুবকদের সম্বন্ধে বলা হয়েছে যে, বেকার যুবকরা নীতিহীন, আদর্শহীন। এদের ভদ্রতা বোধ নেই, এরা স্বাধীনতা বোঝে না। এদের জন্য কলেজে সিট নেই, অফিসে চাকরি নেই, কারখানায় কাজ নেই, ঘরে বাইরে কোথাও কোন জায়গা নেই, প্রেম নেই, দরদ নেই। এমনকি সামান্য আড্ডা দেওয়ার জন্য মধ্যবিত্ত বাড়ির যে রক বরাদ্দ ছিল সেটিও ভেঙে দেওয়া হয়েছে। 


৩.৫) "ঘেষবেন না ওদের কাছে"- এই সাবধান বাণী কে উচ্চারণ করেছেন? ওদের বলতে কাদের কথা বোঝানো হয়েছে? ওদের কাছে না ঘেষার পরামর্শ দেওয়া হল কেন?


উঃ আলোচ্য অংশটি ছন্নছাড়া কবিতার অন্তর্গত। এখানে প্রশ্নোদ্ধৃত সাবধান বাণীটি উচ্চারণ করেছিলেন ট্যাক্সি ড্রাইভার।

               এখানে ওদের বলতে রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আড্ডা দেওয়া একদল ছন্নছাড়া বেকার যুবকদের বোঝানো হয়েছে। যাদের পরনে চোঙা প্যান্ট, চোখা জুতো আর মেজাজ রুক্ষ।

                এই যুবকরা ছন্নছাড়া, নীতিহীন, বিনয় ভদ্রতাহীন এক বাসিন্দা।ওরা গাড়ি দেখলেই লিফট চায় এবং ড্রাইভার ও যাত্রীদের হেনস্তা করে। তাই ট্যাক্সি ড্রাইভার কবিকে এই সাবধান বাণী উচ্চারণ করেছিলেন।


৩.৬)" তাই এখন এসে দাঁড়িয়েছে সড়কের মাঝখানে"- এখানে কাদের কথা বলা হয়েছে? তাদের জীবনের এমন পরিনতির কারণ কবিতায় কিভাবে ধরা পড়েছে তা নির্দেশ কর। 


উঃ অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত রচিত ছন্নছাড়া কবিতার অন্তর্গত আলোচ্য অংশে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা একদল ছন্নছাড়া বেকার যুবকদের কথা বলা হয়েছে।

           এই যুবকদের এরকম পরিস্থিতির কারণ হলো শিক্ষার শেষে কাজের সুযোগ না পাওয়া। এদের জীবনে কিছুই নেই। কলেজের সিট থেকে আরম্ভ করে খেলার টিকিট, হাসপাতালের বেড, বাড়িতে ঘর, খেলার মাঠ, প্রেরণা জাগানো প্রেম কিছুই নেই। এমনকি মধ্যবিত্ত বাড়ির আড্ডা দেয়ার জন্য যে রক ছিল সেটিও ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ফলে দেশের যুব সম্প্রদায় নেমে এসেছে রাস্তায়, সেখানেই তাদের আড্ডা। 


৩.৮) "প্রাণ আছে, এখনো প্রাণ আছে"- এই দুর্মর আশাবাদের তপ্ত শঙ্খধ্বনি কবিতায় কিভাবে বিঘোষিত হয়েছে তা আলোচনা কর।


উঃ কবি অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত তার ছন্নছাড়া কবিতায় প্রাণের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

                        কবিতায় বর্ণিত বেকার যুবকরা সমাজের ছন্নছাড়া হিসাবেই পরিচিত। তাদের ভদ্রতা, শালীনতা নেই। তাদের জন্য সর্বত্রই না। আপাততভাবে ছন্নছাড়া এই যুবকরাই রাস্তায় পড়ে থাকা এক বেওয়ারিস ভিখারির মরণাপন্ন  দেহের পাশে দাঁড়ায়।তাকে বাঁচিয়ে তুলতে তারা তৎপর হয়। চারপাশের প্রতিবন্ধকতা ও নিরাশার মধ্যেও তারা প্রাণের সন্ধান করে।



এরকমই প্রশ্নের যথাযথ উত্তর পেতে আমাদের ব্লগটি ফলো করে রাখো। আর কোন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করার থাকলে অবশ্যই কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করো। আমি অবশ্যই কমেন্ট বক্সে দেখে উত্তর দেওয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করব।


Comments

Popular posts from this blog

কর্ভাস (Carvas)প্রফেসর শঙ্কুর ডায়রি

বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা তারতম্যের কারণগুলি আলোচনা কর।

আদর্শ ফুলের গঠন চিত্র ( দশম শ্রেণী)