আমার বাংলা

                              আমার বাংলা

                       মেঘের গায়ে জেলখানা

(১) মেঘের গায়ে জেলখানা রচনা অবলম্বনে বক্সা জেলখানার বর্ণনা দাও?

উঃ        লেখক সুভাষ মুখোপাধ্যায় আসমুদ্র হিমাচল ব্যাপী অঞ্চলকে আমার বাংলার প্রেক্ষাপট রূপে স্পর্শ করেছেন। তিনি কোনো এক সময়ে উত্তরবঙ্গের বক্সাতে বেড়াতে গিয়েছিলেন এবং সেখানেই দেখেছিলেন মেঘের গায়ে জেলখানাটিকে। আলোচ্য রচনাংশে যেভাবে এই জেলখানা বর্ণিত হয়েছে তা আলোচনা করা হলো।

           মেঘের গায়ে জেলখানা বর্ণনা দিতে গিয়ে লেখক বলেছেন যে, এই জেলখানার চারিদিক ছিল কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা । গেটের সামনে বন্দুক নিয়ে সেপাই পাহারা দিচ্ছে। আর অনবরত মেঘ এসে চারিদিক অন্ধকার করে দিচ্ছে। আবার ক্ষনিকের মধ্যে সবকিছুই পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। সেই মেঘের গায়ে জেলখানা যেন হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

           পাহাড়ের উপরে অবস্থিত জেলখানাটিকে  দূর থেকে দেখে লেখকের পাহাড়টির হাটু বলে মনে হয়েছে। জেলখানার সদর দরজায় আছে একটি ছোট গেট। তার বাঁদিকে আছে জেলের অফিস এবং নিচু পদে কর্মীদের কোয়াটার। জেলের অন্দর মহলে প্রবেশ করতে হলে তিনটি ফটক পার হতে হয়। এই জেলের ঘরগুলিতে ছিল পাথরের মোটা দেওয়াল। ছাদ ছিল রং করা কাঠের এবং প্রতিটি ঘরেই জানালা ছিল। প্রতিটি ঘরে দুটি করে দরজা‌। একটি পেটাই করা লোহার এবং অপরটি মোটা কাঠের। সামনে কাঁটা তারে ঘেরা ছোট উঠান আছে। দিনের বেলা আলো দেওয়া পোস্টগুলিকে দেখলে মনে হয় ফাসির মঞ্চ।দেওয়ালের বাইরে দিনরাত পাহারা দেয় বন্দুকধারী সেপাই। এভাবেই লেখক আলোচ্য গদ্যাংশে বক্সা জেলখানার বর্ণনা দিয়েছেন।

(২) মেঘের গায়ে জেলখানা গল্পাংশ অবলম্বনে কয়েদিদের বর্ণনা দাও।

উঃ       পদাতিক কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় রচিত আমার বাংলা গ্রন্থের অন্তর্গত মেঘের গায়ে জেলখানা নামক গল্পাংশে লেখক জেলে বন্দি কয়েদিদের যে বর্ণনা দিয়েছেন তা আলোচনা করা হলো।

           জেলখানার ভেতরে ঢুকলে মনে হবে তা যেন মধ্যযুগের একটা প্রকাণ্ডকারখানা। সেখানে সব কাজ করানো হয় কয়েদিদের দিয়ে। শুধু জুতো সেলাই নয়। হাড়ি মেথরের কাজ থেকে চণ্ডীপাঠ সমস্ত কিছুই তাদেরকে দিয়ে করানো হতো। কেনা গোলামের মতোই কয়েদিদের বিনা মজুরিতে সারাদিন রাত খাটতে হতো। একটু ফাঁক পেলেই কয়েদিরা সেপাই দের দিকে আড়াল করে বসে নেশা করতো ও তিন তাসে জুয়া খেলতো। যারা সর্দার গোছের হাতে পয়সা আছে জেল তাদের হাতের মুঠোয়। দুনিয়া টাকার বশ এ তারা জানে। আর জানে বলেই তারা জেলে এসে দল পাকায়। অন্য  দলের লোককে ভাংচি দিয়ে দলে টানে।

            এই জেলখানায় একদল অভিজাত শ্রেণীর কয়েদি আছে । তাদের মধ্যে কেউ খাবার জিনিস এ বিষ মিশিয়ে বিক্রি করেছে। কেউ জাল নোট বা ব্যাংক থেকে লাখ লাখ টাকা চুরি করে দিব্যি ভদ্রলোক সেজে তারা বুক টান করে ঘুরে বেড়ায়। তারা সাধারণ চোর ছ্যাচরদের সমীহ করে চলে। এইভাবে আলোচ্য গল্পাংশে জেলে বন্দি কয়েদিদের পরিচয় পাওয়া যায়।

                     কলের কলকাতা

(১) মনা ঠাকুর তার কলকাতা ভ্রমণের যে বর্ণনা দিয়েছিল তা রচনা অংশ অবলম্বনে বর্ণনা দাও।

উঃ          সুভাষ মুখোপাধ্যায় রচিত আমার বাংলা গ্রন্থের অন্তর্গত কলের কলকাতা রচনাংশে মোনা ঠাকুর কলকাতা ভ্রমণ বৃত্তান্তের অসাধারণ বর্ণনা দিয়েছেন। এই মোনা ঠাকুর হলেন লেখকেরই গ্রামের এক বালক। তিনি কালীঘাটের মন্দিরে পৈতে নিতে এসে কলকাতার যে বিবরণ দিয়েছেন তা রচনাংশ অবলম্বনে আলোচনা করা হলো।

             প্রথমে তিনি কলকাতা শহরকে আজব শহর বলে উল্লেখ করেছেন। এখানে গাড়ি চলে হুসহুস করে। ট্রাম চলে ঠনঠন করে। এখানে রাস্তায় প্রচুর লোকের সমাগম লক্ষ্য করা যায়। এই শহরে কোথাও মাটি নেই, সাঁকো নেই।এখানে শুধু চুন,বালি ইট আর পাথরের বিশাল রাস্তা। কল খুললেই জল পাওয়া যায়। আঁধারে যেন জোৎস্না ফিনকি দেয়। তাই সে বলেছে এখানে রাত রাত নয়,দিন দিন নয়। এই শহরে কত বিশাল বিশাল বাড়ি। কত যে গলি ,আর কত যে মোর তা বলে শেষ করা যায় না। এখানে দুপাশারী দোকান।এখানে গাড়ি চাইলে গাড়ি পাওয়া যায়। বাড়ি চাইলে বাড়ি পাওয়া যায়। একপ্রকার যা চাইবে তাই পাবে এই শহরে।

            পরিশেষে বলা যায়, এই শহর হল কৌশলের শহর। এই শহর যন্ত্রের শহর। এখানে যতই ঘুরবে মাথা বনবন করবে, পা টনটন করবে। আলোচ্য রচনাংশে মোনা ঠাকুর এখানে আজব শহর কলকাতার বর্ণনা দিয়েছেন।

(২) "হঠাৎ একদিন ক্ষেপে উঠল কলের কলকাতা"- ক্ষেপে উঠেছিল কেন? সেই ক্ষ্যাপা কলকাতার বর্ণনা দাও।

উঃ        কলকাতা ক্ষেপে উঠেছিল ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে। ১৯৩০ সালে গান্ধীজি অহিংস্র আন্দোলন শুরু করেছিলেন। ১৯৩২ থেকে ৩৪ সালে সারা ভারতের মতো বাংলাতেও এই আন্দোলন এক উত্তাল পরিবেশের সৃষ্টি করেছিল।কিন্তু ইংরেজ সরকার ভারতকে স্বায়ত্ব শাসন টুকু দিতেও প্রস্তুত ছিলেন না।তাই তারা আন্দোলনের বিরুদ্ধে পুলিশ বাহিনীর দ্বারা জনতার ওপর আক্রমণ, গুলি চালানো, গ্রেপ্তার প্রভৃতি উৎপিরণমূলক ব্যবস্থা নিতে শুরু করে। সেই উৎপীরনকে তুচ্ছ করে কলকাতার মানুষও দলবদ্ধ ভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। এরই ফলস্বরূপ কলকাতা ক্ষেপে উঠেছিল।

          কলকাতায় বসবাসকারী নীচ ও ভদ্রলোক সকলে ইংরেজদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার দাবিতে পথে নেমেছিল। গোলপুকুর গোল দিঘির সভায় উত্তেজিত জনতা জড়ো হয়েছিল।স্কুলে স্কুলে পিকেটিং করে ইংরেজ সরকারের সঙ্গে অসহযোগিতা শুরু করেছিল।স্বদেশী কাপড় মাথায় তুলে নিয়ে বিদেশি কাপড়ে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিলো। ছাত্ররাও জল খাবারের পয়সা বাঁচিয়ে খদ্দরের টুপি কিনে মাথায় দিয়ে গর্ব অনুভব করেছিল। বন্দেমাতরম ধ্বনিতে সাড়া কলকাতা কেঁপে উঠেছিল। কংগ্রেস অফিসে হঠাৎ লাল পাকড়ি ওয়ালা পুলিশ এসে ধরপাকড় শুরু করেছিল। কিন্তু পুলিশের বন্দুক আর জুলুমকে তুচ্ছ করে সেদিন কলকাতা স্বাধীনতার দাবিতে ক্ষেপে উঠেছিল।

Comments

Popular posts from this blog

কর্ভাস (Carvas)প্রফেসর শঙ্কুর ডায়রি

বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা তারতম্যের কারণগুলি আলোচনা কর।

আদর্শ ফুলের গঠন চিত্র ( দশম শ্রেণী)