আমি দেখি শক্তি চট্টোপাধ্যায়
আমি দেখি
শক্তি চট্টোপাধ্যায়
(১) "এই সবুজের ভীষণ দরকার"- ওই সবুজ বলতে কি বোঝানো হয়েছে? তা ভীষণ দরকার কেন আলোচনা কর?
উঃ অরণ্য প্রেমিক কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় 'আমি দেখি' কবিতায় আলোচ্য উক্তিটি করেছেন। এখানে গাছের প্রতীক হিসাবে তিনি সবুজ কথাটি ব্যবহার করেন।
গাছ হল মানুষের পরম বন্ধু। সভ্যতার উষা লগ্নে আমাদের পৃথিবী গাছপালায় পরিপূর্ণ ছিল। তখন মানুষ এই বৃক্ষ তথা অরণ্যের কোলে সুখে লালিত-পালিত হয়েছে। মানুষ তখন ছিল অরণ্যচারী। সেই অরণ্যেরই ফলমূল খেয়ে তারা দিন কাটিয়েছে। অরণ্যের তাজা অক্সিজেন গ্রহণ করে প্রকৃতির মুক্ত পরিবেশে নিজেদের বিলিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু যখন মানুষ সভ্য হলো নগর গড়ে তুলল তখন গাছপালা ধ্বংস হতে থাকল। মানুষের শরীরের মধ্যে দেখা দিল রোগের আস্তানা। তাই বর্তমান নগর জীবনের ব্যস্ততা ক্লান্তি আর একঘেয়েমি থেকে মুক্তির জন্য মানুষ প্রকৃতির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতে থাকলো। কবিতার শুরুতেই আমরা দেখি যে, গাছ দেখে যাওয়াই কবির একমাত্র প্রয়োজন তার শরীরের জন্য সবুজ গাছের সান্নিধ্য লাভ করা বড় প্রয়োজন। প্রকৃতির বুকে নিজেকে মেলে ধরার জন্যই কবি গাছ বসাতে বলেছেন। তার চেতনাকে সজীব করার জন্য মনের সতেজতা শারীরিক ও মানসিক আরোগ্য লাভের জন্য ওই সবুজের ভীষণ দরকার বলে কবি তীব্র আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছেন।
(২) "গাছগুলো তুলে আনো, বাগানে বসাও"- এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে গাছে সম্পর্কে কবির মনোভাব ব্যাখা করো।
উঃ 'আমি দেখি' কবিতায় কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় প্রকৃতির প্রতি গভীর আকর্ষণ ও ভালোবাসার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। তার জীবন যাপনের প্রধান অবলম্বন হলো গাছ। তাই গাছেদের সম্পর্কে কবির মনোভাব যেভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে তা আলোচনা করা হলো।
আলোচ্য কবিতায় কবি প্রকৃতপক্ষে বৃক্ষবন্দনা করেছেন। নিজের বেঁচে থাকার জন্য কবি গাছকে বেছে নিয়েছেন। তার শরীরের জন্য গাছের সবুজ স্নেহ স্পর্শ অত্যন্ত জরুরী। গাছেদের প্রতি ভালোবাসা থেকে কবি জঙ্গলে যাওয়ার আকুলতা অনুভব করেছেন। বর্তমান সভ্যতায় যে বৃক্ষছেদন চলছে তা কবির মনে গভীর বিষাদের সৃষ্টি হয়েছে। তাই সবুজের অভাব দূর করার জন্যই গাছ তুলে এনে বাগানে লাগাতে বলেছেন। কবির মনে হয়েছে যে চোখ যেন সবুজের শান্তি খোঁজে আর দেহ চায় সবুজের সান্নিধ্য। শহরের ক্লান্তিকর পরিবেশ থেকে স্বস্তি ও সতেজতার জন্য কবি একান্তভাবে গাছেদের উপস্থিতি কামনা করেছেন। প্রকৃতির প্রতি তার ভালোবাসা ও বৃক্ষ প্রেমেরই প্রকাশ ঘটিয়েছেন আলোচ্য পঙক্তির মাধ্যমে।
(৩) "শহরের অসুখ হাঁ করে কেবল সবুজ খায়"-কবির এই উদ্ধৃতিটির তাৎপর্য লেখো।
উঃ আলোচ্য অংশটি প্রকৃতি প্রেমিক কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের 'আমি দেখি' কবিতাংশ থেকে নেওয়া হয়েছে।
নগর সভ্যতা বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে শহর জীবন থেকে গাছ অর্থাৎ সবুজ হারিয়ে যাওয়ার বর্ণনা প্রসঙ্গে কবি আলোচ্য প্রসঙ্গটির অবতারণা করেছেন।
আলোচ্য অংশে সবুজ বলতে গাছকে বোঝানো হয়েছে। আর শহরের অসুখ বলতে সবুজ খাওয়া (ধ্বংস করার) কথা বোঝানো হয়েছে। শহরের যেখানে যতটুকু অংশ গাছপালা লতাপাতা আছে তাকে গ্রাস করে ফেলাই একমাত্র লক্ষ। নির্বিচারে ধ্বংস করে সেই জায়গায় কংক্রিটের বড় প্রাসাদ ও রাস্তা বানানোর হলো শহরের ব্যাধি সেই জন্যই শহরে প্রায় গাছ থাকে না বললেই হয় ফলে সেখানে সবুজের ভয়ানক অভাব দেখা দেয়।
Comments
Post a Comment
Haven't doubt please let me know.