Amar Bangla - subhas mukhapadhya
আমার বাংলা
গাড়ো পাহাড়ের নীচে
১. "যেন রাবণের চিতা জ্বলছে তো জ্বলছেই" রাবণের চিতার মতো আগুন কারা কি উদ্দেশ্যে কোথায় জালিয়েছে এই আগুন তাদের কিভাবে সাহায্য করে তা লেখ।
উঃ আলোচ্য অংশটি পদাতিক কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের লেখা 'আমার বাংলা' গ্রন্থের অন্তর্গত 'গাড়ো পাহাড়ের নিচে' অংশ থেকে নেওয়া হয়েছে। এখানে গাড়ো পাহাড়ে বসবাসকারী গাড়ো নামক পাহাড়ি উপজাতিদের কথা বলা হয়েছে। এই সমস্ত উপজাতিদের চাষাবাদ বর্ণনা প্রসঙ্গে লেখক কথাটি উল্লেখ করেছেন।
গাড়ো পাহাড়ি উপজাতিদের জীবনযাত্রা বর্ণনা প্রসঙ্গে লেখক বলেছেন যে,এই সমস্ত উপজাতিরা চৈত্র মাসে চাষবাস করে । কিন্তু পাহাড়ে মাটির অভাব, তা ছাড়া চাষের জন্য যে লাঙ্গল বলদ কিছুই নেই। অথচ তারা এক অভিনব পন্থায় চাষাবাদ করে। সারা বছর খাবারের যোগানের উদ্দেশ্যে তারা পাহাড়ের শুকনো ঝোপ ঝাড়ে আগুন লাগিয়ে দেয়। এই আগুন যখন পাহাড়ের জঙ্গলে সর্বত্র ছড়িয়ে রাঙ্গা হয়ে জ্বলতে থাকে, লেখক সেটাকেই রাবনের চিতা বলে উল্লেখ করেছেন।
জঙ্গলের এই আগুন যেমন তাদের মজা এনে দেয় অন্যদিকে চাষবাসেও সুবিধা করে। কারণ হিসাবে বলেছেন এই আগুনের ভয়ে বন্য জীবজন্তুরা প্রাণের ভয়ে যখন ছুটে ছুটি করে তখন নারী-পুরুষ উভয়েই মনের সুখে হরিণ শুয়োর শিকার করে। তারপর শিকার সেড়ে সন্ধ্যাবেলায় গোল হয়ে ঘিরে নাচ গান করে। এদিকে জঙ্গল পুরে ছাই হয়ে গেলে পাহাড়ি উপত্যকার উপর মোটা আস্তরণ পড়ে এবং কয়েকদিন পরে বৃষ্টি হলে তারা বীজ ছড়িয়ে দেয় তারপর কিছুদিনের মধ্যেই জমিতে সবুজ রং ধরে সেখানে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে ধান, তামাক প্রকৃতি ফসল। বনের আগুন এভাবেই তাদের সাহায্য করে।
(২) গাড়ো পাহাড়ের নিচে রচনাংশ অবলম্বনে সুসং পরগনার নিঃসর্গ প্রকৃতি ও মানব প্রকৃতির বর্ণনা দাও।
উঃ গাড়ো পাহাড়ের নিচে রচনাংশে লেখক অবিভক্ত বাংলার এক সমৃদ্ধ ছবি লিপিবদ্ধ করেছেন। সেই পাহাড়ি অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য এবং সেখানকার আদিবাসী সম্প্রদায়ের বর্ণনা দিতে গিয়ে লেখক সেখানকার নিঃসর্গ প্রকৃতি ও মানব প্রকৃতির যে বর্ণনা দিয়েছেন তা রচনা অবলম্বনে আলোচনা করা হলো।
গাড়ো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত সুসং পরগনা রেললাইন থেকে অনেক দূরে অবস্থিত। সেখানকার রাস্তা খারাপ হওয়ায় গাড়ির চেয়ে হেঁটে যাওয়া বেশি আরামদায়ক। এই শহরের পাশ দিয়েই বয়ে গেছে সমেশ্বরী নদী। শীতকালে এই নদীর জল কম থাকলেও পা দিলেই বোঝা যায় ইহা প্রচন্ড স্রোতে প্রবাহিত হয়। এই পরগনা যেন ধানক্ষেতে সেরা। পাহাড়ে উঠে চারিদিকে তাকালে মনে হবে একটা সীমাহীন নীল সমুদ্র যেন আহ্লাদে হঠাৎ সবুজ হয়ে গেছে।
এই অঞ্চলে মানব প্রকৃতির বর্ণনাও উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে। এখানে হাজং, গাড়ো, কোচ প্রভৃতি জাতি বসবাস করে। এরা সকলেই চাষাবাদে দক্ষ। এদের বাসস্থানে নানা বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। কারো জাতি মাচা করে ঘর বাঁধে, সেই মাচার উপরেই তারা ছোঁয়া বসা রান্না বান্না প্রকৃতি করে থাকে। এদের মধ্যে হাজংরাই চাষে বেশি দক্ষ। তাই তারা চাষের পোকা নামে পরিচিত। একসঙ্গে বসবাস করলেও তাদের ভাষাগত বৈশিষ্ট্য ছিল। তারা বাংলা ভাষাতে কথা বললেও উচ্চারণগত বৈষম্য লক্ষ্য করা যায়। তারা দুধ বলে ডুড, তামাককে বলে টামাক । এভাবেই আলোচ্য রচনাংশে নিসর্গ প্রকৃতি ও মানব প্রকৃতির বর্ণনা পাওয়া যায়।
ছাতির বদলে হাতি
(১) ছাতির বদলে হাতি রচনাংশ অবলম্বনে গাড়ো পাহাড়ের নিচে জমিদারের শোষণ ও অত্যাচার বর্ণনা কর।
উঃ ছাতির বদলে হাতি রচনাংশে সুভাষ মুখোপাধ্যায় গারো পাহাড়িদের চরম দুর্দশার মর্মান্তিক চিত্র তুলে ধরেছেন। তিনি পাহাড়ি জাতিদের দূরবস্থার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে যে সমস্ত শোষক শ্রেণীর কথা উল্লেখ করেছেন, তারা হলো জমিদার , ব্যবসায়ী, মহাজন প্রভৃতি। এই সমস্ত শোষকরা পাহাড়ী অধিবাসীদের জীবন দুর্বিসহ করে তোলে।
বাংলায় ভূমি নির্ভর পাহাড়ি জাতির কৃষকরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ফসল উৎপন্ন করে। কিন্তু তার সত্বেও তাদের অর্ধাহারে থাকতে হয়। কারণ জমিদারদের খাজনা পরিশোধ করতে তাদের ঋণগ্রস্থ হতে হয়। এক টাকা ধারের জন্য তাদের এক মন ধান দিতে হয় যা মূল করে চেয়ে অতিরিক্ত করের পরিমাণ ছিল বেশি। এই কথাটি লেখক বলেছেন 'খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি'।
এছাড়াও কখনো তাদের ছাতা নিয়ে সেই ছাতার সুদ আসল বাবদ হাতির দামের সমান ঋণ মেটাতে হয়। কখনো ৬৬ বিঘা জমি দেনার দায়ে জমিদারকে দিতে হয়, আবার কখনো কোনো চাষীকে কোদালের দাম না মেটাতে পারলে ১৫ বিঘা জমি হারাতে হয়। সত্ত্ব ভাবেই জমি চাষ করতে দিলে তার পিছনে আড়াই টাকা কর ধার্য করা হয়। সেই খাজনা মেটাতে না পারলে প্রজাদেরকে জমিদারের কাছারিতে মারধর করতো, গুদাম ঘরে আটকে রাখত এবং পরে নিলাম ডেকে সেই সম্পত্তি জমিদারের দখলে চলে আসতো। এই ভাবেই আলোচ্য রচনাংশে প্রজাদের ওপর জমিদারের শোষণ অত্যাচারের চিত্র বর্ণিত হয়েছে।
Comments
Post a Comment
Haven't doubt please let me know.