২) ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানে বরাহমিহিরের অবদান আলোচনা করো।

 

২) ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানে বরাহমিহিরের অবদান আলোচনা করো।

ভূমিকাঃ 

     আর্যভট্টের পরে ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানের ইতিহাসে বরাহমিহির বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তারই হাত ধরে প্রাচীন ভারতের ফলিত জ্যোতিষ শাস্ত্র পুষ্ট হয়েছিল। এর আগে আর্যভট্টের হাতে জ্যোতির্বিজ্ঞানের নানা সূত্র ও সিদ্ধান্ত রচিত হলেও তাকেই ভারতবর্ষের জ্যোতির্বিজ্ঞানের জনক বলা হয়।

লেখক পরিচয়ঃ 

        তিনি মগধের এক ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম আদিত্য দাস। রাজা বিক্রমাদিত্যের নবরত্নের একজন রত্ন ছিলেন । তিনি 487 খ্রিস্টাব্দ থেকে 587 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বর্তমান ছিলেন। 

রচনাবলীঃ 

     বরাহমিহির ফলিত জ্যোতিষ ও গণিত বিষয়ক গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। অনেকগুলি গ্রন্থ রচনা করলেও তাদের মধ্যে পঞ্চসিদ্ধান্তিকা ও বৃহৎসংহিতাই প্রধান। তিনি জ্যোতিষশাস্ত্রের উপরেও নানা বই লিখেছিলেন। সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল বৃহৎজাতক, লঘুজাতক প্রভৃতি।

পঞ্চসিদ্ধান্তিকাঃ 

          বরাহমিহির রচিত পঞ্চসিদ্ধান্তিকা হলো একটি জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ক গ্রন্থ। গ্রন্থটি রচিত হয়েছিল 575 খ্রিঃ। ইহা কোন মৌলিক গ্রন্থ নয়। ইহা একটি সংকলন গ্রন্থ ।এই গ্রন্থের মধ্যে গ্রিক-রোমান ও ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানের লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এই গ্রন্থে পাঁচটি সিদ্ধান্তের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হয়েছে। সেগুলি হল -ক)সূর্য সিদ্ধান্ত খ) রোমক সিদ্ধান্ত গ) পৌলিস সিদ্ধান্ত উঃ) বাশিষ্ট সিদ্ধান্ত এবং ঙ) পৈতামহ সিদ্ধান্ত 

পিতামহ সিদ্ধান্তঃ 

        এই সিদ্ধান্তে 12 টি অধ্যায় আছে। এখানে প্রতিবছরকে 365 দিনে এবং প্রতিটি যুগকে 60 টি সৌর মাসে এবং 61 টি চন্দ্র মাসে বিভক্ত করা হয়েছে। দিন রাত্রির হ্রাস বৃদ্ধির কথা এখানে বলা হয়েছে। 

বাশিষ্ট সিদ্ধান্তঃ 

        এই সিদ্ধান্তে বারোটি শ্লোকের কথা বলা হয়েছে। চন্দ্রের অবস্থান নির্ণয়ের সংক্ষিপ্ত পদ্ধতি, চন্দ্র কোন নক্ষত্রের পটভূমিতে অবস্থিত তা নির্ণয়ের সূত্র এখানে উল্লেখিত হয়েছে। 

সূর্যসিদ্ধান্তঃ 

      এই গ্রন্থের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হল সূর্যসিদ্ধান্ত। এখানে সূর্যগ্রহণ চন্দ্রগ্রহণের সময় কাল নির্ণয়ের  বিভিন্ন গণনা পদ্ধতি আছে। সময় পরিমাপ এবং ছায়ার দৈর্ঘ্যে নির্ণয় করার জন্য শঙ্কুযন্ত্র, গোলযন্ত্র  প্রভৃতি ব্যবহারের উল্লেখ পাওয়া যায়। 

রোমক সিদ্ধান্তঃ 

        এখানে পাশ্চাত্য গণিত জ্যোতিষের সারসংকলন বর্ণিত হয়েছে। পাশ্চাত্য জ্যোতির্বিজ্ঞানের সময় চক্রকে ভারতীয় পদ্ধতিতে বিন্যস্ত করা হয়েছে। 

পৌলিশ সিদ্ধান্ত্ঃ 

         ইহা পঞ্চসিদ্ধান্তিকা প্রথম অধ্যায়। ‌ এখানে দিন গণনার পদ্ধতি, অধিমাস ও তিথি বলয়ের সংখ্যা নির্ণয়, রবিপথ ও চান্দ্রপথের ভিন্নতা, সূর্যের বার্ষিক গতিপথ ও চান্দ্রপথের কৌণিক ব্যবধান বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে ‌‌। 

বৃহৎসংহিতাঃ 

         বৃহৎসংহিতা হলো একটি মৌলিক জ্যোতিষশাস্ত্র। ইহা একটি ফলিত জ্যোতিষ শাস্ত্র। গ্রন্থটি পদ্যাকারে রচিত। এই গ্রন্থটিতে 106 টি অধ্যায়ে আছে। বিষয়বৈচিত্র্যে গ্রন্থটি বিশ্বকোষ চরিত্রের। গ্রহণের গতি, আবহাওয়াবিদ্যা, বৃষ্টিপাত, শস্য উৎপাদন, ভৌগলিক বৃত্তান্ত, জাতকের জীবন লক্ষণ, বিবাহলগ্ন নির্ণয়, ধর্মানুষ্ঠান প্রভৃতি বিষয়ে উপদেশ আলোচিত হয়েছে। এছাড়া, পশু- পাখির ডাকের মধ্যে নিহিত ভবিষ্যতের কথা এবং নানা পাথরের লক্ষণ ও পরীক্ষার কথা বর্ণিত হয়েছে।

************************************************

Comments

Popular posts from this blog

কর্ভাস (Carvas)প্রফেসর শঙ্কুর ডায়রি

বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা তারতম্যের কারণগুলি আলোচনা কর।

আদর্শ ফুলের গঠন চিত্র ( দশম শ্রেণী)