Bharatbarsha Bengali class twelve
ভারতবর্ষ
সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ
দ্বাদশ শ্রেণীর বাংলা বিষয়ে ছোটপ্রশ্ন ও ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নের উত্তর আলোচনা
১) সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী গল্প হিসাবে ভারতবর্ষ ছোটগল্প কতখানি সার্থক তা আলোচনা করো
উঃ প্রখ্যাত সাহিত্যিক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ রচিত "ভারতবর্ষ" নামক ছোট গল্পে মিথ্যা বিভেদ সৃষ্টিকারী ধর্মীয় ভাবাবেগে, কিভাবে মানুষকে নিচে নামাতে পারে এবং কিভাবে তা বিধ্বংসী রূপ নিতে পারে, তারই এক জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত দেখিয়েছেন। নিজের ধর্ম, ধর্মগ্রন্থ এবং নিজ ধর্মের মানুষের পক্ষে থেকে অন্য ধর্মের মানুষ ও ধর্মগ্রন্থের বিরুদ্ধচারণ করাই হল সাম্প্রদায়িকতা। তাই এদিক থেকে গল্পাংশটি কতখানি সার্থক তা আলোচনা করা হল--
আলোচ্য গল্পাংশে দেখা যায়, পৌষের অকাল দুর্যোগে এক বৃদ্ধা ভিখারিনী দীর্ঘ সময় ধরে মৃতবৎ হয়ে থাকতে। ফলে তার মৃত্যু হয়েছে ভেবে দুই সম্প্রদায়ের গ্রামবাসীদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। একদিকে মোল্লা সাহেবের উস্কানিতে হিন্দুরা মারমুখী হয়ে রক্তক্ষয়ী দাঙ্গার পরিস্থিতি তৈরি করে। ঠিক সেইসময়ে সবাইকে অবাক করে দিয়ে বুড়িটি ক্রমে ক্রমে উঠে দাঁড়ায়। তারপর দুই সম্প্রদায়ের মানুষের দিকে তাকিয়ে ফ্যাক ফ্যাক করে হেসে ওঠেন। শেষে তাকে হিন্দু না মুসলমান জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি গালাগাল দিয়ে সাম্প্রদায়িক অকারণ উত্তেজনায় জল ঢেলে দিয়ে অদৃশ্য হয়ে যান।
পরিশেষে বলা যায়, ভারতবর্ষের দুই প্রধান সম্প্রদায় হল হিন্দু ও মুসলমান। এরা যেন একই বৃন্তে দুটি ফুল ।কিন্তু ধর্মের ধ্বজাধারী মৌলবাদীরা কিভাবে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে সাধারণ ধর্মবিশ্বাসীদের উত্তেজিত করে, তা গল্পাংশে চমৎকারভাবে চিত্রিত হয়েছে। আর বুড়িটি হল জাগ্রত, শুভবোধ' ও চেতনার প্রতীক। সেই জন্যই তিনি গল্পের জনতা ও পাঠককে নিয়ে যান অসাম্প্রদায়িক মহানুভবে। তাই এদিক থেকে ভারত বর্ষ গল্পের নামকরণ যথার্থই সার্থক হয়ে উঠেছে।
২) "দেখতে দেখতে প্রচণ্ড উত্তেজনা ছড়াল চারিদিকে"-- প্রসঙ্গ উল্লেখ করে এই উত্তেজনার বিবরণ দাও।
উঃ আলোচ্য অংশটি সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ রচিত "ভারতবর্ষ" নামক ছোট গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে। পৌষে বাদলা কাটার পর বটগাছের নিচে মৃতবৎ বৃদ্ধাকে, কয়েকজন হিন্দু গ্রামবাসী চৌকিদারের পরামর্শ নদীতে ফেলে দিয়ে আসে। বিকেলে দেখা যায়, কয়েকজন মুসলমান সেই বৃদ্ধাকে কবর দেওয়ার জন্য নিয়ে আসছে। ফলে বৃদ্ধা হিন্দু? না মুসলমান? এই নিয়ে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বচসা বেঁধে যায় এবং ক্রমে প্রচন্ড সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
এই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ায় দুপক্ষের গ্রামবাসীরা ছুটে আসে। ফলে তর্কাতর্কি ক্রমশ বেড়ে চলে। এই অবস্থায় কয়েকজন লোক বুড়িসহ বাঁশের মাচা নিয়ে টানাটানি শুরু করে। দুই সম্প্রদায়ের জনতা একে অপরকে গালাগাল বর্ষণ করতে থাকে। মোল্লা সাহেব চিৎকার করে ধর্মযুদ্ধ ঘোষণা করতে থাকেন। অপরদিকে ভট্টাচার্য মশাই চিৎকার করে মুসলমান হত্যার উদ্দেশ্যে মা কালীর জয়ধ্বনি করতে থাকে। ঠিক এই রকম পরিস্থিতিতে চৌকিদার সাহেব একটি লাঠি নিয়ে দুপক্ষের মাঝে দাঁড়িয়ে তাদের নিরস্ত্র করার চেষ্টা করতে থাকেন। কোন পক্ষ এগিয়ে আসার চেষ্টা করলেই তিনি পিচে লাঠি ঠুকে সাবধান বলে গর্জন করতে থাকেন। কিন্তু তার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার মুখেই বুড়ি ঘুম থেকে উঠে উত্তেজনায় জল ঢেলে অদৃশ্য হয়ে যায়। গল্পে এভাবেই এক উত্তেজনাময় পরিবেশ এর সৃষ্টি হয়েছিল।
৩) "কতক্ষণ সে এই মারমুখী জনতাকে ঠেকিয়ে রাখতে পারত কে জানে?"--- সে বলতে কার কথা বলা হয়েছে? জনতা মারমুখী হয়ে উঠেছিল কেন?
উঃ আলোচ্য অংশটি সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ রচিত "ভারতবর্ষ" নামক ছোট গল্পের অন্তর্গত। এখানে সে বলতে চৌকিদারের কথা বলা হয়েছে।
**জনতা মারমুখী হয়ে উঠেছিলো কেন? এই প্রশ্নের উত্তর দুই নম্বর প্রশ্নে দেওয়া আছে।
৪) ভারতবর্ষ নামক ছোটগল্পে বৃদ্ধার চরিত্রের বর্ণনা দাও।
উঃ সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ রচিত "ভারতবর্ষ" নামক ছোট গল্পংটি এক অসামান্য সৃষ্টি। তিনি সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী মনোভাব দেখাতে গিয়ে, এক থুরথুরে মৃতবৎ বৃদ্ধা চরিত্রের সৃষ্টি করেছেন। আলোচ্য গল্পাংশে এই বৃদ্ধার চরিত্রটি কতখানি প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে, তা আলোচনা করা হল--
উগ্র মেজাজিঃ
পৌষ মাসের অকাল দুর্যোগে এই বৃদ্ধা যখন চায়ের দোকানে চা পান করতে এসেছিল তখন সেই দোকানের লোকেরা বৃদ্ধাকে কোথা থেকে এসেছে জিজ্ঞাসা করলে, বৃদ্ধা মেজাজেই বলেছিল-- "সে কথায় তোমাদের কাজ কি বাছারা?" বৃদ্ধার এই উক্তির মধ্য দিয়ে তার মেজাজি স্বভাবের পরিচয় পাওয়া যায়।
আত্মসম্মানবোধঃ
গল্পে বর্ণিত বৃদ্ধা ছিল যথেষ্ট আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন। চায়ের দোকানে চা পান করে ন্যায্যমূল্য দিয়ে বৃদ্ধা যখন সেই দুর্যোগের মধ্যে বাইরে আসছিল তখন একজন জানায় যে, সে নির্ঘাত মরবে। একথা শুনে তার এবং তার শতগুষ্টির মৃত্যু কামনা করেছে। এর মধ্য দিয়ে তার ব্যক্তিত্ব সম্পন্নার পরিচয় পাওয়া যায়।
রসিকতাবোধঃ
হিন্দু ও মুসলমান এই দুই সম্প্রদায়ের মাঝে থেকে বাঁশের মাচাতেই ফ্যাক ফ্যাক করে হেসে দুই সম্প্রদায়ের বিবাদে জল ঢেলে দিয়েছিলেন। এর মধ্য দিয়ে বৃদ্ধা চরিত্রের রসিকতা বোধের পরিচয় পাওয়া যায়।
পরিশেষে বলা যায়, লেখক এই বৃদ্ধা চরিত্রের মধ্য দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতার দিকটি স্পষ্ট করেছেন। কারণ বৃদ্ধাকে হিন্দু না মুসলমান জিজ্ঞাসা করা হলে, বৃদ্ধা বলেছে,--" চোখের মাথা খেয়েছিস মিনষেরা? দেখতে পাচ্ছিস নে?" সুতরাং এই চরিত্রের মধ্য দিয়েই লেখক চেতনার উন্মেষ ঘটাতে চেয়েছেন যে, এ দেশ মুসলমানের নয় ,এ দেশ হিন্দুর নয়--- এ দেশ আপামর ভারতবাসীর। তাই এদিক থেকে বৃদ্ধা চরিত্রটি একটি সার্থক চরিত্র হিসাবে প্রতিফলিত হয়েছে, একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়।
৫) "আমি কে তা দেখতে পাচ্ছিস নে?"-- কোন প্রশ্নের উত্তরে বক্তা একথা বলেছেন? গল্প অনুসারে বক্তার স্বরূপ উদঘাটন কর।
উঃ প্রখ্যাত সাহিত্যিক সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের "ভারতবর্ষষ" নামক ছোটগল্পে বৃদ্ধাকে কেন্দ্র করে যখন মারমুখী উত্তেজিত হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায় বৃদ্ধাকে হিন্দু না মুসলমান? একথা জিজ্ঞাসা করলে বৃদ্ধা আলোচ্য কথাটি বলেছিল।
আলোচ্য অংশে বর্ণিত কুঁজো,থুত্থূরে ভিখারিনী। রাক্ষসের মত দেখতে, এক মাথাভর্তি সাদা চুল, পরনে ছিল একটা ছেঁড়া নোংরা কাপড়, শরীরে জড়ানো ছিল তুলোর একটা চিটচিটে কম্বল। তার হাতে ছিল একটি বেঁটে লাঠি।
গল্পের শেষে দেখা যায়, বৃদ্ধার মৃতদেহটিকে নিয়ে হিন্দু ও মুসলমান এই দুই সম্প্রদায়ের মানুষ সশস্ত্র সংঘর্ষে মেতে উঠেছিল। বৃদ্ধা হঠাৎ উঠে দুই জনতার দিকে তাকিয়ে ফ্যাক ফ্যাক করে হেসে উঠেছিল। তারপর বৃদ্ধাকে হিন্দু না মুসলমান? একথা জিজ্ঞাসা করা হলে বৃদ্ধ বলেছে -"চোখের মাথা খেয়েছিস মিনষেরা? দেখতে পাচ্ছিস নে?" এই বলে বৃদ্ধা ভিড় সরিয়ে নড়বড় করতে করতে রাস্তা দিয়ে অদৃশ্য হয়ে যায় ।
Comments
Post a Comment
Haven't doubt please let me know.