Madhyamic Bangla paragraph 

বাংলা প্রবন্ধ রচনা মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক 

এই সাইটে যে যে রচনা গুলি পাবেন , সেগুলি নীচে দেওয়া হলঃ

১) খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা
২) একটি শীতের সকাল
৩) বিজ্ঞানের আশীর্বাদ ও অভিশাপ



**********************************************

  খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা

ভূমিকাঃ

      খেলাধুলার প্রতি সকল মানুষের আকর্ষণ থাকা স্বাভাবিক। প্রায় জন্মের পর থেকেই শিশু আপন মনে, আপন খেয়ালে হাত-পা নেড়ে খেলা করে। দৈহিক অঙ্গ সঞ্চালন সুস্থ শরীরের পরিচায়ক।শরীর ও মনের যৌথ প্রচেষ্টায় অনাগত দিনের সুখ ও সমৃদ্ধি নির্ভর করে। মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশের সঙ্গে সঙ্গে খেলার রূপান্তর ঘটেছে।


শরীর চর্চার প্রয়োজনীয়তাঃ

                একসময়ের লেখাপড়ার সঙ্গে খেলাধুলার বিরোধ ছিল। কিন্তু দৈহিক পরিশ্রমের বিরোধ ছিল না। আজ স্কুলে লেখাপড়া সঙ্গে খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা স্বীকৃত। তাই বিদ্যালয়ে শরীরচর্চা আবশ্যক রূপে গণ্য করা হয়েছে। স্বাস্থ্যই সম্পদ। সমাজের উন্নতির জন্য এবং দেশ গঠনের জন্য সুস্থ শরীর একান্ত প্রয়োজন। সুস্থ দেহ মনের অধিকারী মানুষ কর্মোদ্যমী হয়। জীবনে সহজে সাফল্য লাভ করা যায় না। তাই ছেলেবেলা থেকেই খেলাধুলা ও শরীরচর্চা বিশেষ প্রয়োজন।


সুস্বাস্থ্যের গুরুত্ব ঃ

             খেলাধুলা ও শরীরচর্চা মানবদেহের কোষগুলিকে পুষ্ট করে। তাই সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে গেলে সকলকে খেলাধুলা ও শরীরচর্চা করতে হয়।জীবনে টিকে থাকতে হলে সুস্বাস্থ্য একান্ত প্রয়োজন। আনন্দের সঙ্গে বাঁচতে হলে স্বাস্থ্যই একমাত্র হাতিয়ার। মানসিক শক্তি ও শান্তি নির্ভর করে সুস্বাস্থ্যের উপর।


শরীরচর্চা ও খেলাধুলা নানা দিক ঃ

                  শরীরচর্চা ও খেলাধুলা নানাভাবে সম্ভব।ব্রতচারী থেকে শুরু করে ফুটবল-ক্রিকেট যোগচর্চা প্রভৃতি সবকিছুই শরীর চর্চার নানাদিক। দৌড় কুস্তি সাঁতার দেওয়াও শরীর গঠনের ক্ষেত্রে উপযুক্ত। এছাড়াও খালি হাতে ব্যায়াম বেশি উপযোগী।


চরিত্র গঠনে খেলাধুলাঃ

                  শরীর ও মনের যৌথ শৃঙ্খলাই মানুষের চরিত্রের ভিত্তিভূমি রচনা করে। শৃঙ্খলাবোধ, নিয়মানুবর্তিতা, ধৈর্য ও একনিষ্ঠতা প্রভৃতি গুণগুলি খেলাধুলার মাধ্যমে অর্জন করা সম্ভব। সাবলীল হওয়ার মানসিকতা, মানসিক তৎপরতা খেলাধুলার মাধ্যমে অর্জিত হয়। এছাড়া খেলাধুলা বিভিন্ন দেশের মধ্যে প্রীতির সম্পর্ক গড়ে তোলে।


উপসংহারঃ

           জীবনের পথ সহজ সরল নয়। প্রতি পদে পদে আছে বাধা বিপত্তি। এই বাধা-বিপত্তিকে পদদলিত করে জীবনকে উচ্চ শিখরে নিয়ে যেতে পারে এই খেলাধুলা। তবেই মানুষ সুখ সমৃদ্ধি লাভ এর দিকে এগিয়ে যেতে পারে। তাই বলা হয়,--"চাই বল ,চাই স্বাস্থ্য, আনন্দ উজ্জ্বল পরমায়ু, সাহস বিস্তৃত বক্ষপট"।


*************************************************

    একটি শীতের সকাল

ভূমিকাঃ

      ঋতু পরিবর্তনের ফলে হেমন্তকালের পরেই শীতের আগমন হয়। আমাদের দেশ মূলত গরমের দেশ। শীতের প্রাধান্য নেই বললেই চলে। তবুও দুমাসের জন্য যখন আসে তখন তার জন্য শুরু হয় নানা রকম আয়োজন। শীত আটকাবার জন্য ,শীতকে উপভোগ করার জন্য যেন তৎপরতা শেষ নেই। শীতকালের সকাল দুপুর কিংবা রাত্রি প্রতি অংশের আলাদা রূপ ও আলাদা স্বাদ অনুভব করি।

ঘুম থেকে ওঠার মুহূর্তঃ

          শীতকালে দিন ছোট ও রাত বড়। সন্ধ্যা নামে তাড়াতাড়ি আর সকাল হয় দেরিতে। যতই দেরিতে সকাল হোক না কেন, লেখছে রে বেরিয়ে আসতে ইচ্ছা করে না। বিশেষ করে যারা একটু অলস প্রকৃতির তাদের তো কথাই নেই। শীতকালে তাদের বিছানা থেকে ওঠনো বড়ই মুশকিল হয়ে ওঠে ।তবুও উঠতে হয় না উঠে উপায় থাকেনা। ঘুম ভাঙা চোখে তাকালে দেখতে পাওয়া যায় চারপাশে আরো ছড়িয়ে পড়েছে। কেউ কেউ গরম কাপড়ে সর্বাঙ্গ ঢেকে ভ্রমণে বেরিয়েছে।

শীতের সকালের সৌন্দর্যঃ

            শীতের সকালে বিছানা ছেড়ে উঠে আসার কষ্টটুকু স্বীকার করতে পারলে লোকসানের চেয়ে লাভই হয় বেশি। শীতের সকালের একটা সৌন্দর্য আছে। এমন উজ্জ্বল মিষ্টি রোদ অন্য কোন ঋতুতে পাওয়া যায় না। তাছাড়া শীতকালে প্রচুর মৌসুমী ফুল ফোটে। চন্দ্রমল্লিকা, ডালিয়া, গোলাপ ,গাঁদা প্রভৃতি নানা ফুলে শীতের সকাল অপরূপ সাজে সজ্জিত হয়ে ওঠে ।উজ্জ্বল রোদে ঘাসে ঘাসে শিশির বিন্দু  আকর্ষণীয় করে তোলে ।কখনো কখনো সন্ধ্যাবেলায় ঘন কুয়াশা জমে থাকে। দূরের জিনিস দেখ যায় না। আর এই কুয়াশা কেটে গেলেই বেরিয়ে আসে ঝকঝকে রোদ। 

শীতের সকালে সূর্যের উত্তাপঃ

            শীতের সকালে মিষ্টি রোদে বসে চায়ের কাপে চুমুক দেওয়ার মজাই আলাদা, সঙ্গে যদি খবরের কাগজ থাকে কিংবা গল্প করার মত সঙ্গি পাওয়া যায়, তাহলে তো আর কথাই নেই। শীতকালের সকালের সূর্যের উত্তাপ যেমন অনেকের কাছে মনোরম তেমনি কারও কারও কাছে এই সূর্যের উত্তাপ আবার প্রয়োজনীয় হয়ে দেখা দেয়। যাদের শীত নিবারণের পর্যাপ্ত পোশাক নেই, তাদের কাছে শীতের সকালের সূর্য একমাত্র ভরসা। শীতকালে তারা প্রতীক্ষা করে সকালবলার সূর্যের জন্য। 

খুশিতে ভরা শীতের সকালঃ

                শীতকালে গাছপালার পাতা ঝরে গিয়ে একটা শূন্যতার ভাব দেখা যায়। কৃষিজীবী মানুষের ঘর পূর্ণ থাকে ফসলে। অজস্র বাহারি ফুলে ঢেকে যায় চতুর্দিক। পিঠে,পুলি প্রভৃতি নানা সুখাদ্য প্রস্তুত হয়। মেলা বসে বিভিন্ন জায়গায়, সব মিলিয়ে মানুষের মন খুশিতে ভরে ওঠে। শীতকালে খেজুর গাছে ঝুলিয়ে রাখা হাঁড়িতে সারারাত ধরে একটু একটু করে খেজুর রস জমা হয় ।শীতল ও সুমিষ্ট এই রস পান করলে অমৃতের স্বাদ পাওয়া যায়। চারপাশে ঝকঝকে আলো উত্তাপ খেজুর রসের স্নিগ্ধতা এইসব নিয়ে এমন একটা অবস্থা তৈরী করে যে মনে হয় সকাল আরও দীর্ঘ হোক।

উপসংহারঃ

        সময় কারো অনুরোধ বা আদেশ মানে না। সময় প্রবাহমান বা নদীর মতোই চলমান। শীতের সকাল যতই ভালো লাগুক না কেন একসময় তারও বিদায় নেওয়ার সময় উপস্থিত হয়। সকালের ভালোলাগার রেশ মিলিয়ে না  যেতেই দুপুরের পদধ্বনি শুনতে পাওয়া যায়। দেখতে দেখতে সকাল শেষ হয়ে আসে দুপুর।

**************************************************************************************************


বিজ্ঞানের আশীর্বাদ ও অভিশাপ


ভূমিকাঃ

     সাধারণভাবে বিজ্ঞান বলতে আমরা যা বুঝি, তা হলো বিশেষ জ্ঞান। আর বিশেষ অর্থে বিজ্ঞান হল, সেই শাস্ত্র যেখানে কার্যকারণ তত্বের ওপর ভিত্তি করে, পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষণ এর মাধ্যমে নিশ্চিত সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায়। মানুষ যখন আগুনের আবিষ্কার করল তখন থেকেই বিজ্ঞানের জয়যাত্রা শুরু হল।  মানুষের মধ্যে দেখা দিলো নানা জিজ্ঞাসা। আর এই জিজ্ঞাসার উত্তর খুঁজতে গিয়েই নতুন নতুন আবিষ্কারের সূত্রপাত হতে লাগলো।


বিজ্ঞানের অবদানঃ

          যুগ যুগ ধরে অগণিত মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রমে, মানুষ জীবনধারণের জন্য অনেক সুযোগ আর সুখের অধিকারী হয়েছে। ঘুম থেকে উঠে দাঁত মাজা তারপরেই প্রাতরাশ। এর প্রস্তুতি মানুষ আজ নানা ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলেছে। ঘরে-বাইরে বিজ্ঞানের জয়যাত্রা অফিস স্কুল-কলেজ ব্যবসা সমস্তই বিজ্ঞানের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলেছে। শুধু তাই নয়, খনির গভীরে সম্পদের অনুসন্ধান করেছে।

সভ্যতা বিস্ময়ে বিজ্ঞানঃ

          আজকের বিজ্ঞান একদিকে অগ্রগতির অন্যদিকে ধ্বংসের প্রতিক। আমাদের পূর্বপুরুষেরা ভাবতেই পারেনি মানুষ একদিন চাঁদে যাবে, মঙ্গল গ্রহে যন্ত্র পাঠাবে, ঘরে বসে টিভির পর্দায় বিশ্বের নানা চিত্র পরিদর্শন করবে ।আজকের সভ্যতা স্যাটেলাইট, ইন্টারনেট ও বিদ্যুতের কার্যকারিতার উপর নির্ভরশীল। বিদ্যুৎ আবিষ্কার সারা পৃথিবীর অগ্রগতির পথ খুলে দিয়েছে। বিদ্যুতের কল্যাণে আলো-বাতাস, জল আমরা ঘরে বসেই পেয়ে থাকি। তবুও আজকের বিজ্ঞানের বিস্ময় বলতে পারি আগুন দিয়ে যে সভ্যতার শুরু হয়েছিল বিদ্যুৎ দিয়েই সেই সভ্যতার পরিসমাপ্তি ঘটবে। 


মানুষের অশুভ বুদ্ধি ও বিজ্ঞান প্রয়োগে বাধাঃ

                বহুযুগের সাধনায় যে বিজ্ঞানের অগ্রগতি, সেই বিজ্ঞানই মানুষকে আজ নানা অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এর জন্য দায়ী মানুষের অশুভবুদ্ধি। যে বিজ্ঞান দূরকে করেছে নিকট, সেই বিজ্ঞানই আবিষ্কার করেছে ডিনামাইট, পারমানবিক বোম,যা প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের মত সভ্যতাকে থামিয়ে দিয়েছিল। সেই যুদ্ধের লেলিহান শিখা এখনো গোটা পৃথিবীকে গ্রাস করেছে। বিজ্ঞানের এই অশুভ বুদ্ধি, অপপ্রয়োগ  কিছু মানুষের জন্যই মানবসভ্যতা ভবিষ্যৎ নিয়ে শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ গুলির মধ্যে দেখা দিয়েছে নানা জিজ্ঞাসা।


বিজ্ঞান অভিশাপ না আশীর্বাদঃ

            বিজ্ঞানের অশুভ বিষয়গুলিকে যেমন গ্রহণ করেছে আবার এর খারাপ দিক গুলিও কিছু মানুষ গ্রহণ করেছে। কৃষি-শিল্প ,চিকিৎসা সর্বক্ষেত্রেই দেখা দিয়েছে ঘোর সংশয়। বিজ্ঞানের উদ্দেশ্য মহৎ। কিন্তু মানুষের লোভ-লালসা বিজ্ঞানকে অভিশাপে পরিণত করেছে ।বিজ্ঞানকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে না পারায় দূষণের মাত্রা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। যুদ্ধের ফলে প্রকৃতি হারাচ্ছে তার সবুজ ভারসাম্য । বাতাস হয়ে পড়েছে ভারাক্রান্ত ।কখনো কখনো বৃষ্টিরাও ঝরতে ভুলে যাচ্ছে। তাই বলা যায়, আজকের বিজ্ঞান যতই আশীর্বাদের হোক না কেন তার অপপ্রয়োগ অভিশাপ।

উপসংহারঃ

        লিও টলস্টয় তার "ওয়ার এন্ড পিস" গ্রন্থে মানুষকে সতর্ক করে লিখেছেন যে, বিজ্ঞান একদিন বুমেরাং হয়ে ফিরে আসবে। তবুও আজ মানুষের চেতনা ফেরেনি ।তিনি আরো বলেছেন, যদি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হয় এবং মানুষ বেঁচে থাকে, তাহলে তারা পাথর আর তীর ছাড়া কিছুই পাবে না। তাই স্কুলে কলেজে ছেলেমেয়েরা স্লোগান দিচ্ছে ,--বিজ্ঞানের অপপ্রয়োগ বন্ধ হোক বন্ধ করো।

Comments

Popular posts from this blog

কর্ভাস (Carvas)প্রফেসর শঙ্কুর ডায়রি

বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা তারতম্যের কারণগুলি আলোচনা কর।

আদর্শ ফুলের গঠন চিত্র ( দশম শ্রেণী)