জেলখানার চিঠি প্রশ্ন উত্তর অষ্টম শ্রেণী বাংলা
জেলখানার চিঠি
সুভাষচন্দ্র বসু
১) সুভাষচন্দ্র বসু প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বিতাড়িত হয়েছিলেন কেন?
উঃ ভারত বিদ্বেষী ইংরেজ অধ্যাপক ওটাকে প্রহারের অভিযোগে সুভাষচন্দ্র বসু প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বিতারিত হয়ে ছিলেন।
২) রাসবিহারী বসু ওর কাছ থেকে তিনি কোন দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন?
উঃ রাসবিহারী বসুর কাছ থেকে সুভাষচন্দ্র বসুর আজাদ হিন্দ ফৌজ- এর দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন।
২) অনধিক তিনটি বাক্যে নিচের প্রশ্নগুলির উত্তর দাও
২.১) তোমার পাঠ্য পত্রখানি কে, কোথা থেকে, কাকে লিখেছিলেন?
উঃ আমাদের পাঠ্য পত্রখানির লেখক নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু। তিনি মান্দালয় জেল থেকে বন্ধু দিলীপ কুমার রায়কে পত্রখানি লিখেছিলেন।
২.২) কোন ব্যাপারটিকে পত্রলেখক আধ্যাত্নিক দৃষ্টিতে লেখার কথা বলেছেন?
উঃ পাঠ্য গল্পটিতে পত্র লেখক হলেন সুভাষচন্দ্র বসু। তিনি তার বন্ধু দিলীপ কুমার রায়কে মান্দালয় জেলে পাঠানো দিলীপ কুমার রায়ের চিঠির উত্তর হিসাবে এই চিঠিটা লিখেছিলেন।
নেতাজির জেলে থাকাটা বন্ধু দিলীপ কুমার রায়কে যে খুবই আঘাত করছে, এটা নেতাজি মনে করতেন। তাই নেতাজি তার জেলে থাকার কষ্টটা বড় করে না দেখে, এই পরিবেশ কোন মানুষকে আধ্যাত্নিক চেতনা জাগাতেও যে সাহায্য করে সেই দিকটি দেখার জন্য বন্ধু দিলীপ কুমার রায়কে পরামর্শ দিয়েছেন।
২.৩) বন্দিদশায় মানুষের মনে শান্তি সঞ্চারিত হয় কিভাবে?
উঃ মান্দালয় জেল থেকে দিলীপ কুমার রায়কে লেখা চিঠিতে সুভাষচন্দ্র জানিয়েছেন যে, সাধারণত একটা দার্শনিকভাব বন্দিদশায় মানুষের মনে শক্তি সঞ্চার করে। তিনি আরো বলেছেন, মানুষ যদি তার নিজের অন্তরে ভেবে দেখবার যথেষ্ট বিষয় খুঁজে পায়, তাহলে বন্দি হলেও তার কষ্ট নেই।
২.৪) ভারতীয় জেল বিষয়ে একটি পুস্তক সুভাষ চন্দ্রের লেখা হয়ে ওঠেনি কেন?
উঃ ভারতীয় জেলের অভিজ্ঞতা থেকে যে সমস্ত চিন্তা সুভাষচন্দ্রের মনে এসেছিল, সে সম্পর্কে তিনি তার পাতার পর পাতা অনায়াসে তিনি লিখে যেতে পারতেন। কিন্তু এই চিঠির ক্ষুদ্র পরিসরে লেখা সম্ভব নয়।
২.৫) মান্দালয় জেল কোথায় অবস্থিত ?
উঃ মান্দালয় জেল বর্তমানে মায়ানমারে অবস্থিত।
২.৬) সুভাষচন্দ্র কেন দিলীপ রায়ের প্রেরিত বইগুলি ফেরত পাঠাতে পারেননি?
উঃ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু যখন মান্দালয় জেলে বন্দি ছিলেন, সেসময় বন্ধু দিলীপ কুমার রায় তাকে কিছু বই পড়ার জন্য পাঠিয়েছিলেন। বইগুলোর প্রাপ্তি স্বীকার করে নেতাজি তাকে জানান যে, তার পাঠানো বই গুলো খুবই ভালো। দিলীপ কুমারের রুচির প্রশংসা করে তিনি আরো জানান যে, বইগুলি অনেক পাঠক তৈরি হওয়ায় তিনি সেগুলি তখনই ফেরত পাঠাতে পারছেন না। তাই তার থেকে আরও বেশি বই পেলে সেগুলিও সাদরে গৃহীত হবে।
৩) নিচের প্রশ্নগুলির উত্তর কয়েকটি বাক্যে লেখ।
৩.ক) নেতাজি ভবিষ্যতের কোন কর্তব্যের কথা এই চিঠিতে বলেছেন? কেন এই কর্তব্য স্থির করেছেন? কারা শাসন প্রণালী বিষয়ে কাদের পরিবর্তে তাদের প্রণালীকে তিনি অনুসরণযোগ্য বলে মনে করেছেন?
উঃ দিলীপ কুমার রায়কে মান্দালয় জেল থেকে 2 মে 1925 খ্রিস্টাব্দে লেখা একটি চিঠিতে নেতাজি ভারতবর্ষের কারাগার শাসন পদ্ধতির সংস্কার ঘটনাকেই তার ভবিষ্যতের একটি অন্যতম কর্তব্য রূপে চিহ্নিত করেছেন।
স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার কারণে ইংরেজ শাসনের অধীনে থাকা ভারতবর্ষে নেতাজিকে বহুবার কারাবরণ করতে হয়েছে। সেই দুঃসহ অভিজ্ঞতা থেকে নেতাজি দেখেছেন, জানা অজানা কোন কারনে কোন মানুষকে যদি জেলে থাকতে হয় তবে তার মানসিকতা জেলের পরিবেশের কারণেই বিকৃত হয়ে পড়ে। বন্ধুকে সেকথা লেখালেখির পাশাপাশি তিনি এটাও বলেছেন যে, অপরাধীদের অধিকাংশেরই কারাবাস কালে কোনো নৈতিক উন্নতি হয় না। বরং তারা আরও হীন হয়ে পড়ে। দেশের কারা প্রণালীর আমূল সংস্কার ঘটালেই একমাত্র সেই পরিস্থিতির উন্নতির সম্ভব। তাই তিনি সেই কাজকেই ভবিষ্যতের কর্তব্য স্থির করেছেন।
ভারতীয় কারাশাসন প্রণালী বিষয়ে তিনি কুৎসিত ব্রিটিশ আদর্শের বদলে আমেরিকার ইউনাইটেড স্টেটস এর মত উন্নত দেশগুলির ব্যবস্থা অনুসরণযোগ্য বলে মনে করেছেন।
৩.২) "সেজন্য খুবই খুশি হয়েছি"--- বক্তা কে? তিনি কি জন্য খুশি হয়েছেন?
উঃ আলোচ্য অংশের বক্তা হলেন মান্দালয় কারাগারে বন্দি থাকা সুভাষচন্দ্র বসু। প্রবন্ধে দিলীপ কুমার রায়কে সুভাষচন্দ্র একথা জানিয়েছেন যে, রাজনৈতিক বন্দী হিসাবে কারাগারে থাকা মানুষজনের কাছে কোনো চিঠিপত্র পৌঁছানোর আগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ডিস্টিলেশন বা দু'বার পরীক্ষা করে নেন। পরীক্ষায় আপত্তিকর কিছু থাকলে তা আর তাদের হাতে পৌঁছায় না। এক্ষেত্রে সুভাষচন্দ্র খুশি হয়েছেন। এই কারণেই এবারে তেমন কিছু ঘটেনি তাকে লেখা দিলীপ কুমার রায়ের 1925 খ্রিস্টাব্দে 24 মার্চ তারিখে চিঠিটি বিনা বাধাতেই তার হাতে এসে পৌঁছেছে।
৩.৩) "আমার পক্ষে এর উত্তর দেওয়া সুকঠিন"--- কে কাকে একথা বলেছেন ? কিসের উত্তর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে?
উঃ মান্দালয় কারাগারে বন্দি সুভাষচন্দ্র তার বন্ধু দিলীপ কুমার রায়ের 1925 খ্রিস্টাব্দে 24 মার্চ তারিখের চিঠির জবাব দিতে গিয়ে আলোচ্য মন্তব্যটি করেছেন।
আলোচ্য অংশে সুভাষচন্দ্র দিলীপ কুমার রায়ের চিঠির উত্তর দেবার কথা লিখেছেন। তিনি লিখেছেন যে ওই চিঠিটি তার হৃদয়কে এমন কোমলভাবে স্পর্শ করেছে এবং তার চিন্তা ও অনুভূতিকে অনুপ্রাণিত করেছে যে সেই চিঠির উত্তর দেওয়া তার পক্ষে সুকঠিন।
৩.৪) "আমার মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত আধ্যাত্নিক দিক দিয়ে অনেকখানি লাভবান হতে পারব"-- কোন প্রসঙ্গে বক্তার এই উক্তি! জেলজীবনে তিনি আধ্যাত্বিক দিক দিয়ে কিভাবে লাভবান হবেন?
উঃ মান্দালয় জেলে বন্দী থাকাকালীন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু তার বন্ধু দিলীপ কুমার রায়কে যে চিঠিটি ইংরেজিতে লিখেছিলেন, তার বাংলা অনুবাদ থেকে আলোচ্য অংশটি গৃহীত হয়েছে।
সুভাষ চন্দ্রের জেলবন্দি জীবনে অশেষ দুঃখ দুর্দশার কথা দিলীপ কুমার রায়কে লেখা এই পত্রটিত প্রকাশ পেয়েছে। সুভাষচন্দ্র একথাও স্বীকার করেছেন যে জেলে বন্দী জীবনে যে নির্জনতার মধ্যে মানুষকে কারণে বা অকারণে বাধ্য হয়ে দিন কাটাতে হয় সেই নির্জনতাই তাকে জীবনের চরম সমস্যাগুলি তলিয়ে বোঝার সুযোগ দেয়।
জেলের নির্জনতা নিজের সম্পর্কে ভাবতে গিয়ে লেখক দেখেছেন কিভাবে বছরখানেক আগেকার গভীর জটিল সমস্যাগুলির অনেক সুষ্ঠু সমাধান তিনি নিজেই খুঁজে পাচ্ছেন। তার যে সমস্ত মতামত আগে ছিল সেগুলি দুর্বল ও অস্পষ্ট। সেগুলি এই বন্দি জীবনে তার মনের মধ্যে স্পষ্ট ও পরিষ্কার হয়ে উঠেছে ।এসব বিষয়গুলো বিবেচনা করেই লেখক জানিয়েছেন যে তার কারাবাসের মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত আধ্যাত্নিক দিক দিয়ে তিনি অনেকখানি লাভবান হতে পারবেন।
৩.৫) Martyrdom শব্দটির অর্থ কি? এই শব্দটি উল্লেখ করে বক্তারা কি বক্তব্য রেখেছেন?
উঃ শব্দটির অর্থ আত্মবলিদান। রাজনৈতিক বিশ্বাস এর জন্য বা মহৎ কারণে প্রবল কষ্টভোগ।
সুভাষচন্দ্র বসুর কারাবাসের বিষয়টিকে তার বন্ধু দিলীপ কুমার রায় "Martyrdom"বলে অভিহিত করেছিলেন। সুভাষচন্দ্র বিষয়টিকে বন্ধুর গভীর অনুভূতি ও মহত্বের পরিচয় বলে মনে করেছেন। আবার অত্যন্ত বিনয়ের সাথে সুভাষচন্দ্র তাকে এটিও জানিয়েছেন যে, তুমি আশা করেন সামান্য কিছু humour ও proportion এ দুটির বোধ তার আছে। সেই কারণে তিনি নিজেকে martyr মনে করার মত স্পর্ধা তার নেই। Martyr জিনিসটিকে তিনি বড়জোর একটা আদর্শ বলেই মনে করেন।।
Comments
Post a Comment
Haven't doubt please let me know.