বহুরূপী গল্পের প্রশ্ন উত্তর
বহুরূপী
সুবোধ ঘোষ
প্রশ্নঃ বড় চমৎকার আজকের এই সন্ধ্যার চেহারা" -আজকে বলতে কোন দিনের কথা বলা হয়েছে?সন্ধ্যার চেহারার বর্ণনা দাও। ১+৪
উঃ প্রখ্যাত সাহিত্যিক সুবোধ ঘোষ রচিত "বহুরূপী"নামক গল্পাংশে আজকে বলতে, যেদিন হরিদা তার বন্ধুদের এক আশ্চর্য খেলা দেখানোর জন্য জগদীশ বাবুর বাড়িতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, সেই দিনের কথায় বলা হয়েছে।
সেই দিনের সন্ধ্যাবেলায় শান্ত ও স্নিগ্ধ চাঁদের আলো যেন সেখানকার পরিবেশকে আরো সুন্দর করে তুলেছিল। ফুরফুরে বাতাস বইছিল। জগদীশবাবুর বাড়ির বাগানে লাগানো গাছের পাতাগুলিও জানো ঝিরিঝিরি শব্দে কি যেন বলতে চাইছিল। এমনই এক মায়াময় পরিবেশে হাজির হয়েছিলেন বিরাগী রূপধারী হরিদা । মাথায় পড়েছিল শুকনো সাদা চুল। ধুলো মাখা পা, হাতে একটা ঝোলা এবং তার ভেতরে একটি গীতার বই। তার শীর্ণ শরীরটাকে দেখে প্রায় অশরীরী বলেই মনে হচ্ছিল । তার চোখ থেকে যেন ঝরে পড়ছিল এক অদ্ভুত উদাত্ত শান্ত ও উজ্জ্বল দৃষ্টি। তাই বলা যায়, বিশ্ব প্রকৃতি যেন এক মায়াময় জগত সৃষ্টি করে বহুরূপী হরিদার পরিপূরক হয়ে উঠেছিল।
২) "পরম সুখ কাকে বলে জানেন? সব সুখের বন্ধন থেকে মুক্ত হওয়া""--এই বক্তব্য হরিদ্বার জীবনী ইষ্ট মন্ত্র হয়ে উঠেছিল কিনা আলোচনা করো।
উঃ
৩) "তাতে যে আমার ঢং নষ্ট হয়ে যায় "--কোন প্রসঙ্গে কথাটি বলা হয়েছে? এই উক্তির মধ্য দিয়ে বক্তার কোন মনোভাবের পরিচয় পাওয়া যায়? ২+৩
উঃ প্রখ্যাত সাহিত্যিক সুবোধ সুবোধ ঘোষের লেখা "বহুরূপী"গল্পের অন্তর্গত হরিদা ছিলেন একজন পেশাদার বহুরূপী। বাঁধা নিয়ম করে কাজ করা তার পছন্দ নয় । তাই তিনি এই স্বাধীন পেশা গ্রহণ করেছিলেন। দু'মুঠো ভাতের জন্য তিনি পাগল, পুলিশ, বাইজি, কিরামিন সাহেব, বাউল প্রভৃতি সেজে সামান্য কিছু রোজগার করতেন।
একদিন জগদীশ বাবুর বাড়িতে আসা সন্ন্যাসীর প্রতি জগদীশবাবুর ভক্তি-শ্রদ্ধা দেখে তিনি মনে মনে মতলব করেন একবারে অনেক উপার্জন করার । কিন্তু হরিদা তা করলেন না। জগদীশবাবুর ভক্তিভরে দেওয়া একশো এক টাকাও তিনি ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। হরিদ্বার এরকম আচরণ জানতে চাইলে তিনি আলোচ্য প্রসঙ্গটি উল্লেখ করেন।
হরিদা ছিলেন একজন হতদরিদ্র মানুষ। কিন্তু তিনি ছিলেন নির্লোভী। তিনি একসঙ্গে অনেক উপার্জনের কথা ভাবলেও কার্যক্ষেত্রে তা করেননি। বহুরূপী হরিদাকে জগদীশবাবু চিনতে পারেননি। কিন্তু জগদীশবাবু বিরাগী ভেবে তাকে 101 টাকা দিলেও, হরিদা গ্রহণ করেননি। এর মধ্য দিয়ে হরিদার চরিত্রের মহানুভব প্রকাশ পায়। চরিত্রের সঙ্গে হরিদার সাজগোজ পোশাক এতটাই একাত্ম হয়ে গিয়েছিল , যে তার ঢং নষ্ট হওয়ার ভয়ে তিনি জগদীশবাবুর দেয়া টাকা অবলীলায় ত্যাগ করেন।
৪) বহুরূপী হরিদার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য লিপিবদ্ধ করো।৫
উঃ যেকোনো গল্পা ংশের মধ্য দিয়ে লেখক জীবনের সামগ্রিক রূপের সন্ধান করেন। সেই সময় লেখক যেসমস্ত ঘটনা বা চরিত্রের উল্লেখ করেন, তা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মূল বিষয়ের সাথে যুক্ত করেন। আলোচ্য বহুরূপী গল্পের প্রধান চরিত্র হলো হরিদা। গল্পাংশে তার চরিত্রের যে সকল বৈশিষ্ট্য গুলি ফুটে উঠেছে, তা আলোচনা করা হলো।
আত্মভোলাঃ
হরিদা চরিত্রটি একটি আত্নভোলা চরিত্র। নিজের দারিদ্র, অতি সাধারণ জীবনযাপন যাপন পদ্ধতি, বহুরুপ এর বৃত্তি নিয়েই তিনি জীবন অতিবাহিত করেছেন।
সততাঃ
হরিদা ছিলেন যথার্থই একজন সৎ প্রকৃতির মানুষ। তিনি কখনোই ঠকিয়ে অর্থ উপার্জন করতে চান না। আমরা দেখেছি, বিরাগী সাজে এবং পুলিশ সেজে হরিদা বেশি টাকা নেননি। এর মধ্য দিয়ে তার চরিত্রের সততার দিকটি প্রকাশিত হয়েছে।
প্রকৃত শিল্পীঃ
বহুরূপী হরিদার মধ্যে শিল্পীসত্তা প্রবল রূপে জাগ্রত হয়েছে। তাই যে কোন রূপ ধারণ করে তিনি সেই চরিত্রটিকে জীবন্ত করে তুলেছেন। বিরাগী সেজে তিনি বেশি পয়সা পেলেও, তা গ্রহণ করেননি কারন তাতে তার ঢং নষ্ট হয়ে যাবে। এই কথার মধ্য দিয়ে তার শিল্পীসত্তার দিকটি প্রকাশিত হয়।
পরিশেষে বলা যায়, উপরিউক্ত বৈশিষ্ট্য ছাড়াও হরিদা ছিলেন একজন স্বাধীনচেতা, বাস্তব বুদ্ধি সম্পন্ন, সাহসী প্রকৃতির মানুষ। এই সমস্ত বৈশিষ্ট্যের নিরিখে বলা যায় হরিদার যথার্থই একটি সার্থক চরিত্রে পরিণত হয়েছে।
৫) "আমি বলছি তোমরা সেখানে থেকো, তাহলে দেখতে পাবে"-- কোথায় থাকার কথা বক্তা বলেছেন? সেখানে কি দেখা গিয়েছিল?
অথবা
জগদীশ বাবুর বাড়িতে কি ঘটনা ঘটেছিল, বহুরূপী গল্প অবলম্বনে লেখ।
উঃ প্রখ্যাত সাহিত্যিক সুবোধ ঘোষ রচিত "বহুরূপী" গল্পের অন্তর্গত আলোচ্য উক্তিটির বক্তা হলেন হরিদা। তিনি গল্পকথক ও তার সঙ্গীদের উদ্দেশ্যে জগদীশ বাবুর বাড়িতে থাকার কথা বলেছিলেন ।
জগদীশবাবু ছিলেন একজন ধর্মভীরু মানুষ। তার বাড়িতে কোন সন্ন্যাসী বা বিরাগী বাড়িতে আসলে তিনি তাদের আপ্যায়ন করতেন। গল্পকথক ও তার সঙ্গীদের মুখে জগদীশবাবুর এই স্বভাবের কথা জানতে পেরে হরিদা, তাকে বোকা বানিয়ে মোটা কিছু অংকের টাকা আদায় করে নিতে চেয়েছিলেন। তাই সেই পরিকল্পনা মত হরিদা জগদীশ বাবুর বাড়িতে সন্ধ্যাবেলায় বিরাগীর ছদ্যবেশে হাজির হয়েছিলেন ।গেরুয়া বসন পরিহিত মানুষকেই আমরা যে সন্ন্যাসী বলে বুঝি হরিদার সাজ কিন্তু সেরকম ছিলনা। তার পরনে ছিল ছোট বহরের একটা সাদা থান, আদুর গায়ে ছিল সাদা উত্তরীয়, ধুলি মাখা পা, হাতে একটা ঝোলা আর সেই ঝোলার ভেতর ছিলো একটা গীতার বই। তার মাথায় উঠছিল ফুরফুরে সাদা চুল।
জগদীশবাবু ছদ্মবেশধারী হরিদাকে দেখে আহ্বান জানান। তাকে তার বাড়িতে কিছুদিন থেকে যেতে বলেন। রাজি না হওয়ায় করুনভাবে তাকে কিছু উপদেশ শোনাতে বলেন। কিছুক্ষণ পর জগদীশবাবু নোটের তারা ভর্তি থলি কাছে রেখে তার তীর্থ ভ্রমণের জন্য ওই টাকা গ্রহণ করতে বলেন। কিন্তু বিরাগী হরিদা তা অবলীলায় ফেলে রেখে সেখান থেকে চলে যান। জগদীশ বাবুর বাড়িতে এই ঘটনার কথা আমরা জানতে পারি।
Comments
Post a Comment
Haven't doubt please let me know.