আর্দ্রতার তারতম্য অনুসারে কৃষিকাজের শ্রেণীবিভাগ আলোচনা কর
প্রশ্নঃ আর্দ্রতার তারতম্য অনুসারে কৃষিকাজের শ্রেণীবিভাগ আলোচনা কর।
উত্তরঃ আর্দ্রতার তারতম্য অনুসারে কৃষি কাজের শ্রেণীবিভাগ গুলি হল -
ক) আর্দ্র কৃষিঃ পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত যুক্ত অঞ্চলে সেচকার্য ছাড়াই পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের সাহায্যে যে কৃষিকাজ করা হয় তাকে আর্দ্র কৃষি বলে। এই কৃষি ব্যবস্থায় ভৌমজল স্তর ও মৃত্তিকা ভূপৃষ্ঠের নিকট অবস্থান করায় সর্বদা আর্দ্র থাকে বলে এবং ফসল চাষের সময় জলবায়ুও আর্দ্র থাকে বলে এই কৃষি ব্যবস্থাকে আর্দ্র কৃষি বলা হয়। উদাহরণ - বাংলাদেশের ধান চাষ ।
খ) শুষ্ক কৃষিঃ পৃথিবীর যে সমস্ত অঞ্চলে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয় না এবং জলসেচের কোনরকম সুব্যবস্থা নেই, সেখানে নামমাত্র বৃষ্টির জলকে কাজে লাগিয়ে শুষ্ক পরিবেশে কৃষিকাজ করা হয় বলে তাকে শুষ্ক কৃষি বলে।
উদাহরণ - রাজস্থানের মিলেট চাষ।
গ) সেচন কৃষিঃ পৃথিবীর যে সমস্ত অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ যথেষ্ট কম কিন্তু জলসেচের ব্যাপক সুযোগ সুবিধা আছে সেখানে জলসেচের মাধ্যমে যে কৃষিকাজ করা হয় তাকে সেচন কৃষি বলে।
উদাহরণ - মিশরের কার্পাস চাষ।
ফসল উৎপাদন পদ্ধতির সংখ্যা অনুসারে কৃষি কাজের শ্রেণীবিভাগ-
ক) এক ফসলি কৃষিঃ পৃথিবীর যে সমস্ত অঞ্চলে জল সেচের সু ব্যবস্থা নেই এবং মৃত্তিকার উর্বরতা অপেক্ষাকৃত কম সেখানে পরিমিত বৃষ্টির জলকে কাজে লাগিয়ে বছরে প্রধানত একবারই একটি ফসলের চাষ করা হয়। একে এক ফসলি কৃষি বলে।
এক্ষেত্রে মৃত্তিকা ও জলবায়ু অনুসারে যে ফসলটি চাষ করা সব থেকে সুবিধা জনক সেই ফসলটিকে নির্বাচন করা হয়।
উদাহরণ - অস্ট্রেলিয়ার গম চাষ
খ) দোফসলি কৃষিঃ একই জমিতে বছরে দুবার দুটি ভিন্ন ফসল চাষ করাকে দোফসলি কৃষি বলে। এক্ষেত্রে একটি ফসল বৃষ্টিপাতের সাহায্যে এবং অন্য ফসলটি জলসেচের সাহায্যে চাষ করা হয়।
উদাহরণ- দোফসলি কৃষি ব্যবস্থায় পশ্চিমবঙ্গে একই জমিতে গ্রীষ্মকালে বৃষ্টিপাতের সাহায্যে ধান চাষ এবং শীতকালে জল সেচের সাহায্যে গম চাষ করা হয়।
গ) বহুফসলি কৃষিঃ কৃষিজ ফসল উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং জমির উর্বরতা বজায় রাখার জন্য একই জমিতে বারবার একই ফসল উৎপাদন না করে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বিভিন্ন ফসল চাষ করার পদ্ধতিকে বহু ফসলি কৃষি বলে।
উদাহরণ - চীন, জাপান, ভারত, বাংলাদেশসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এবং পশ্চিম ইউরোপের কোন কোন দেশে বহু ফসলি কৃষি ব্যবস্থা প্রচলিত আছে।
ঘ ) আন্তঃকৃষি বা ইন্টার কালচারঃ বহু ফসলি কৃষি ব্যবস্থার একটি বিশেষ রূপ হল আন্তঃকৃষি বা ইন্টার কালচার। যেসব দেশে কৃষিজমির তুলনায় জনসংখ্যা চাপ খুব বেশি সেখানে শস্যাবর্তন কৃষি ব্যবস্থার পাশাপাশি আরও এক ধরনের কৃষি ব্যবস্থার প্রচলন আছে। এই কৃষি ব্যবস্থায় একই জমিতে একই সময়ে বিভিন্ন সরিতে বিভিন্ন ফসল চাষ করা হয়। যাদের পাকার সময় আলাদা আলাদা। এরফলে একই কৃষি জমি থেকে সারা বছর ধরে কিছু না কিছু ফসল পাওয়া যায়। উৎপাদনের এই বিশেষ পদ্ধতিকে আন্তঃকৃষি বা ইন্টার কালচার বলে।
উদাহরণ - জাপানের কোয়ান্টো সমভূমি।
মালিকানার ভিত্তিতে কৃষি কাজের শ্রেণীবিভাগঃ মালিকানার ভিত্তিতে কৃষি কাজের শ্রেণীবিভাগ গুলি হল-
ক) ব্যক্তিগত মালিকানাধীন কৃষিঃ পৃথিবীর অধিকাংশ দেশের কৃষিজমির উপর ব্যক্তিগত মালিকানা স্বীকৃত। ওই সমস্ত দেশের কৃষিকাজ ব্যক্তিগত মালিকানার ভিত্তিতে পরিচালিত হয় বলে, একে ব্যক্তিগত মালিকানাধীন কৃষি বলে।
উদাহরণ - ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর অধিকাংশ গণতান্ত্রিক দেশে মালিকানাধীন কৃষি ব্যবস্থা প্রচলিত আছে।
খ) যৌথ মালিকানাধীন কৃষিঃ সমাজের বহু কৃষক একত্রে মিলিত হয়ে সমবায় গঠনের মাধ্যমে কৃষিকাজ পরিচালনা করার পদ্ধতিকে যৌথ মালিকানাধীন কৃষি বলে। এক্ষেত্রে কৃষিজমি ব্যক্তিগত মালিকানার পরিবর্তে গোষ্ঠী মালিকানাধীন হয়ে থাকে।
উদাহরণ - চীন, উত্তর কোরিয়া, ভিয়েতনাম ইত্যাদি সমাজতান্ত্রিক দেশে যৌথ মালিকানাধীন কৃষি ব্যবস্থার প্রচলন আছে।
গ) রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কৃষিঃ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কিছু সরকারি খাস জমে থাকে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এই খাস জমিগুলিতে রাষ্ট্রের পরিচালনায় যে কৃষিকাজ সম্পন্ন হয় তাকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কৃষি বা সরকারি কৃষি বলে।
উদাহরণ - রাজস্থানের সুরতগড়ের কৃষি খামার।
Comments
Post a Comment
Haven't doubt please let me know.