প্রশ্নঃ ‘বর্তমান ভারত’ গ্রন্থটির অবদান আলোচনা করো ?

প্রশ্নঃ ‘বর্তমান ভারত’ গ্রন্থটির অবদান আলোচনা করো ?

ভূমিকাঃ স্বামী বিবেকানন্দ কেবল ভারতবর্ষে নয় সারা বিশ্বদরবারে এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্কের মতো আমাদের জীবনকে আলোকিত করেছেন। তিনি ছিলেন ভারতীয় জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা। তাঁর লেখা ‘বর্তমান ভারত” গ্রন্থটি নবভারত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। ভারতীয়দের মধ্যে স্বদেশপ্রেম জাগ্রত করতে ‘বর্তমান ভারত’ এক অনন্য গ্রন্থ।

জাতীয়তাবাদ বিকাশে বর্তমান ভারতঃ    

                       জাতীয়তাবাদ বিকাশে বর্তমান ভারত গ্রন্থটি অসাধারণ ভূমিকা পালন করেছে।

স্বদেশপ্রেম জাগরণঃ 

            সমগ্র দেশবাসীকে দেশের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করতে বা নিজের দেশকে ভালোবাসার মনোভাব গড়ে তুলতে‘বর্তমান ভারত’ গ্রন্থটির অবদান অপরিসীম। এই গ্রন্থে স্বামী বিবেকানন্দ স্বদেশমন্ত্রে দিক্ষিত হয়ে লিখেছেন—“বল ভাই ভারতের মৃত্তিকা আমার স্বর্গ, ভারতের কল্যাণ, আমার কল্যাণ।” এই বাণীর মাধ্যমে বিবেকানন্দ ভারতীয়দের মধ্যে স্বদেশপ্রেমের জাগরণ ঘটান।

আত্মনির্ভরশীল হওয়াঃ 

                ‘বর্তমান ভারত’ গ্রন্থে বিবেকানন্দ সমগ্র ভারতবাসীকে আত্মনির্ভরশীল হবার মন্ত্র দিয়েছেন। তিনি সকল ভারতবাসীকে কাপুরুষতা দূর করে আত্মশক্তি ও আত্মবল লাভের কথা বলেছেন। তিনি বিদেশি সংস্কৃতি বর্জন করে প্রাচ্যের সাংস্কৃতিক রীতিনীতি অনুসরণ করার প্রস্তাব দিয়েছেন।

সৌভ্রাতৃত্ববোধঃ

       ‘বর্তমান ভারত” গ্রন্থে স্বামী বিবেকানন্দ সকল শ্রেণির মানুষের মধ্যে সৌভ্রাতৃত্বের বন্ধন গড়ে তুলতে সর্বদা সচেষ্ট ছিলেন। তিনি এই গ্রন্থে লিখেছেন- "বল আমি ভারতবাসী, প্রতিটি ভারতবাসী আমার ভাই। বল মূর্খ ভারতবাসী, দরিদ্র কাঙাল ভারতবাসী, ব্রাহ্মণ ভারতবাসী আমার ভাই।” অর্থাৎ সকল মানুষের মধ্যে সৌভাতৃত্বের পরিবেশ তৈরি করার ডাক দিয়েছেন।

 প্রাচ্য সংস্কৃতি গ্রহণঃ

             প্রাচীনকাল থেকে ভারতের বৈদিক রীতিনীতি গ্রহণ করে দেশীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতির হাত ধরেই দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতিতে নিজের দেশকে নতুনভাবে গড়ে তোলার ডাক দিয়েছেন স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর লেখা বর্তমান ভারত’ গ্রন্থের মাধ্যমে।

নারীজাতির সম্মানঃ 

            বিবেকানন্দের মতে, সমাজে নারীজাতিকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। কারণ তিনি মনে করতেন নারীজাতির উন্নয়ন ছাড়া যেকোনো দেশের সার্বিক উন্নয়ন কখনোই সম্ভব নয়। তিনি ভারতবর্ষের বিভিন্ন সময়ের মহান নারীদের শ্রেষ্ঠত্বকে তুলে ধরেছেন।

দেশকে মা বলে সম্মানঃ

               বিবেকানন্দ নিজের দেশ ভারতবর্ষকে ভারতমাতা বলে কল্পনা করেছেন। তাঁর “বর্তমান ভারত” গ্রন্থে তিনি পরিষ্কারভাবে তুলে ধরেছেন—“ভুলিও না—তুমি জন্ম হতে মায়ের জন্য বলিপ্রদত্ত।” এই মা হলেন ‘ভারতমাতা’, অর্থাৎ নিজের মাতৃভূমিকে তিনি মায়ের আসনে স্থান দিয়েছেন।

শূদ্র শ্রেণীর সামাজিক জাগরণঃ

                     তিনি দেখিয়েছেন সময় ও যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের মানসিকতারও পরিবর্তন ঘটবে। অর্থাৎ একসময় সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া শূদ্রশ্রেনী সবসময় পিছিয়ে থাকবে তা হতে পারে না। যুগের ও সময়ের পরিবর্তনে একসময় ভারতবর্ষে শূদ্র যুগের আগমন ঘটবে। তাই তিনি সমাজকে এই জাতিভেদ ত্যাগ করে সকলকে সমান নজরে দেখার ডাক দিয়েছেন।

উপসংহারঃ

         তিনি ভারতবর্ষের সকল মানুষের জাতীয় জাগরণ ও জনশক্তির জাগরণ এবং যুবশক্তির দৈহিক ও আধ্যাত্মিক বিকাশের ডাক দিয়েছেন ‘বর্তমান ভারত’ গ্রন্থের মাধ্যমে। এই গ্রন্থ ভারতীয় বিপ্লবীদের উজ্জীবিত করে স্বদেশপ্রেম ও স্বদেশমন্ত্র বিকাশে। জাতীয়তাবোধ বিকাশে সহায়ক হয়েছিল।




Comments

Popular posts from this blog

কর্ভাস (Carvas)প্রফেসর শঙ্কুর ডায়রি

বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা তারতম্যের কারণগুলি আলোচনা কর।

আদর্শ ফুলের গঠন চিত্র ( দশম শ্রেণী)