মহম্মদ বিন তুঘলককে পাগলা রাজা বলার কারণ কি
প্রশ্নঃ মহম্মদ বিন তুঘলককে পাগলা রাজা বলার কারণগুলি আলোচনা করো।
ভূমিকাঃ
গিয়াস উদ্দিন তুঘলকের মৃত্যুর পর তার পুত্র জুনা খাঁ মহম্মদ বিন তুঘলক উপাধি ধারণ করে দিল্লির সিংহাসনে বসেন। তিনি নানা গুণের অধিকারী হলেও তার ধৈর্যহীনতা, অস্থিরচিত্ততা তাকে পাগলা রাজা হিসাবে অভিহিত করেছে।
রাজস্ব নীতিঃ
সিংহাসনে আরোহন করে তিনি রাজস্ব ব্যবস্থার আয়-ব্যয়ের হিসাব সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেন। রাজ্যের সর্বত্রই একই হারে রাজস্ব আদায়ের ব্যবস্থা করেন, যা ছিল তার অন্যতম ভুল।
দোয়াব অঞ্চলে রাজস্ব বৃদ্ধিঃ
তিনি রাজ্যের আয় বৃদ্ধির জন্য দোয়াব অঞ্চলে রাজস্ব বৃদ্ধি করেন। এই সময়ে অনাবৃষ্টির ফলে ফসল না হওয়ায় কৃষকদের অবস্থা খারাপ হয়ে পড়ে। বাড়তি কর দিতে কৃষকরা অস্বীকার করে। তারা কৃষিকাজ ছেড়ে বন জঙ্গলে পালিয়ে যেতে থাকে। ফলে কৃষিকাজ বন্ধ হয়ে যায় এবং দেশে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়।
কৃষির উন্নতির চেষ্টাঃ
কৃষির উন্নতি ও পতিত জমি উদ্ধারের জন্য তিনি আমির-ই- কোহি নামে একটি কৃষি বিভাগ গড়ে তোলেন। দু বছরে প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা ব্যয় করে এই পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। কারণ সেই জমিগুলি ছিল চাষের পক্ষে অনুপযুক্ত।
রাজধানীর স্থানান্তরঃ
তিনি দিল্লি থেকে দেবগিরিতে রাজধানীর স্থানান্তর করেন। রাজ্যের কেন্দ্রে অবস্থিত দেবগিরি রাজধানী হিসেবে নিশ্চয় উপযুক্ত ছিল। দিল্লিতে মঙ্গল আক্রমণের সম্ভাবনা থাকলেও দেবগিরিতে তা ছিল না। কিন্তু সেই অঞ্চলের সকল নাগরিককে তিনি দেবগিরিতে যেতে বাধ্য করেন। ফলে নাগরিকদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা যায়।
তামার মুদ্রা প্রচলনঃ
রাজকোষের অর্থাভাব মেটানোর জন্য তিনি রুপার মুদ্রার পরিবর্তে তামার মুদ্রা প্রচলন করেন। ওই মুদ্রা যাতে জাল না হয় তার জন্য কোন ব্যবস্থা নেননি। ফলে রাজ্যে জাল নোটে ছেয়ে যায়। তাই জাল মুদ্রা তুলে নিতে রাজকোষ থেকে অনেক অর্থ ব্যয় হয়।
এইসব নানা কারণের জন্য মহম্মদ বিন তুঘলককে পাগলা রাজা বলে আখ্যা দেওয়া হয়।
প্রশ্নঃ সুলতান ইলতুৎমিসের সামনে প্রধান তিনটি সমস্যা কি ছিল ?
উত্তরঃ প্রথম জীবনে ইলতুৎমিস কুতুবউদ্দিনের ক্রীতদাস ছিলেন। পরে তিনি নিজের কর্ম দক্ষতার গুনে দাসত্ব থেকে মুক্তিলাভ করেন। কুতুবউদ্দিন নিজ কন্যার সঙ্গে তার বিবাহ দিয়েছিলেন এবং তাকে বদাউন প্রদেশের শাসনকর্তা হিসাবে নিযুক্ত করেছিলেন।
সমস্যাঃ
সিংহাসনে আরোহন করে ইলতুৎমিস যেসব সমস্যার সম্মুখীন হন, সেগুলি হল -
ক) কুতুব উদ্দিনের সহকর্মী নিজেকে স্বাধীন রাজারূপে ঘোষণা করে লাহোর জয় করেন এবং পাঞ্জাব দখলের পরিকল্পনা করেন।
খ) কুতুব উদ্দিনের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী তাজউদ্দিন গজনির শাসক হিসেবে ভারতের উপর নিজ সার্বভৌমত্ব দাবি করেন এবং ইলতুৎমিসকে নিজের প্রতিনিধি হিসাবে গণ্য করতে চান।
গ) নানা বিশৃঙ্খলার সুযোগ নিয়ে আজমির, গোয়ালিয়র প্রভৃতি স্থানের রাজপুত্রগণ পুনরায় ক্ষমতা দখল করেন এবং ইলতুৎমিসের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। ফলে নব প্রতিষ্ঠিত সুলতানি শাসন ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়।
প্রশ্নঃ ইকতা কি ? সুলতানরা কেন ইকতা ব্যবস্থা চালু করেছিলেন?
উঃ সুলতানদের শাসনব্যবস্থা পুরোপুরি সামরিক শক্তির উপর নির্ভর করে সাম্রাজ্যের আয়তন বাড়াতেন। নতুন অধিকার করা অঞ্চল থেকে যেমন রাজস্ব আদায় করতেন তেমনি সেই রাজ্যগুলির শান্তি -শৃঙ্খলাও বজায় রাখতেন। এই নতুন রাজ্য গুলিকে ইকতা বলা হয়।
ইকতা ব্যবস্থা চালু করার কারণঃ
খ্রিস্টীয় নবম শতকে এই ইকতা ব্যবস্থার উৎপত্তি হয়। রাজকোষে তখন যথেষ্ট পরিমাণে রাজস্ব জমা পড়ছিল না। যুদ্ধ করেও তেমন ধন-সম্পদ পাওয়া যায়নি। তাই সামরিক নেতাদের বেতনের বদলে ইকতা দেওয়ার ব্যবস্থা চালু হয়েছিল।
Comments
Post a Comment
Haven't doubt please let me know.