শেরশাহের শাসন সংস্কার সম্পর্কে আলোচনা কর।
প্রশ্নঃ শেরশাহের শাসন সংস্কার সম্পর্কে আলোচনা কর।
উত্তরঃ একজন প্রজাহিতৈষী রাজা ও সুশাসক হিসাবে শেরশাহ ভারতের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছেন। তার শাসন কার্যের মূল লক্ষ্য ছিল প্রজাদের মঙ্গল সাধন করা। সেই উদ্দেশ্যেই তিনি নানা জনহিতকর কাজ করেছিলেন।
রাজত্ব নীতিঃ সরকারের আয় বৃদ্ধি ও প্রজাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য তিনি একটি সুষ্ঠু রাজস্ব ব্যবস্থা চালু করেন। তিনি রাজ্যের সকল জমি জরিপ করেন এবং জমিতে ফসল উৎপাদন অনুসারে রাজস্বের পরিমাণ ঠিক করেন। উৎপন্ন ফসলের ⅓ অংশ রাজস্ব হিসাবে দিতে হতো। আর পাট্টায় কৃষকদের নাম, জমিতে কৃষকের অধিকার, কত রাজস্ব দিতে হবে প্রভৃতি লিখে রাখতেন। তার বদলে কৃষক রাজস্ব দেওয়ার কথা কবুল করে কবুলিয়ত নামে অন্য একটি দলিল রাষ্ট্রকে দিতো।
যোগাযোগ ব্যবস্থাঃ রাজ্যের অভ্যন্তরে যোগাযোগের জন্য শেরশাহ বহু রাস্তাঘাট নির্মাণ করেন। এগুলির মধ্যে সোনার গাঁ থেকে সিন্ধু উপত্যকা পর্যন্ত ১৪০০ মাইল দীর্ঘ গ্র্যান্ডট্রাঙ্ক রোড নির্মাণ করেন। এছাড়াও আগ্রা থেকে যোধপুর, লাহোর থেকে মুলতান পর্যন্ত প্রভৃতি রাস্তা ঘাট নির্মাণ করেন।
সরাইখানাঃ কেবলমাত্র রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে যোগাযোগ স্থাপনে নয়, রাজপথ গুলি বাণিজ্যিক বৃদ্ধির পক্ষে যথেষ্ট সহায়ক ছিল। পথিক ও বণিকদের সুবিধার জন্য তিনি রাস্তার ধারে ধারে প্রায় ১৭০০টি সরাইখানা নির্মাণ করেন এবং সেখানে খাদ্য ও বিশ্রামের ব্যবস্থা করেন।
ডাক ও গুপ্তচরঃ রাজ্যের অভ্যন্তরে খবরা-খবর আদান-প্রদানের জন্য তিনি সর্বপ্রথম ঘোড়ার পিঠে ডাক চলাচলের ব্যবস্থা করেন সবাই খানা গুলি ডাক চৌকি হিসাবে ব্যবহৃত হতো। প্রতিটি সরাইখানায় সব সময় দুটি করে ঘোড়া প্রস্তুত থাকতো আর রাজ্যের বিভিন্ন সংবাদ সংগ্রহের জন্য তিনি বহু গুপ্তচর নিয়োগ করেন।
সেনাবাহিনীঃ সেনাবাহিনীর ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে তিনি দাগ ও হুলিয়া ব্যবস্থা চালু করেন সেনাবাহিনীতে জায়গীরদারের পরিবর্তে তিনি বেতন দানের ব্যবস্থা করেন। অন্যের মাধ্যমে বেতন না দিয়ে তিনি নিজে বেতন দিতেন। সামরিক কর্মচারীদের দু'বছর অন্তর তিনি বদলির ব্যবস্থা করেন।
টীকা লেখ - পানিপথের প্রথম যুদ্ধ
উত্তরঃ ১৫২৫ খ্রিস্টাব্দে বাবর কামান, বন্দুক ও ১২ হাজার সৈন্য নিয়ে ভারত আক্রমণ করেন। দৌলত খাঁ লোদীকে পরাজিত করে তিনি পাঞ্জাব দখল করেন। পরে তিনি দিল্লির দিকে অগ্রসর হন। দিল্লির সুলতান ছিলেন ইব্রাহিম লোদী। তিনি বাবরকে বাধা দিতে গেলে দিল্লির কাছে পানিপথ নামক প্রান্তরে ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে দুপক্ষের মধ্যে যুদ্ধ হয়, এই যুদ্ধ পানিপথের প্রথম যুদ্ধ নামে পরিচিত।
ফলাফলঃ পানিপথের যুদ্ধের ফলে লোদী বংশের শাসন ক্ষমতা চিরতরে অবলুপ্ত হয়ে যায়। দিল্লি থেকে আগ্রা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বাবরের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। আগ্রায় সঞ্চিত ধনদৌলত বাবরের হাতে আসে। ফলে তার আর্থিক সংকট কিছুটা দূর হয়।
Comments
Post a Comment
Haven't doubt please let me know.