প্রশ্নঃ 1857 খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের চরিত্র ও প্রকৃতি বিশ্লেষণ করো ?
প্রশ্নঃ 1857 খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের চরিত্র ও প্রকৃতি বিশ্লেষণ করো ?
ভূমিকাঃ
1857 খ্রিস্টাব্দের সিপাহি বিদ্রোহ বাংলার ব্যারাকপুরের সিপাহিদের নেতৃত্বে শুরু হয়েছিল। অল্প সময়েই এই বিদ্রোহ ভারতবর্ষের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল। সকল সম্প্রদায়ের মানুষ এই বিদ্রোহে অংশগ্রহণ করেছিল। একারণেই সিপাহী বিদ্রোহের চরিত্র বা প্রকৃতি নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মত পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। এই আন্দোলনে প্রায় সকল শ্রেণির মানুষের যোগদানের ফলে ব্রিটিশ শাসনের ভিত কেঁপে উঠেছিল।
সিপাহি বিদ্রোহের প্রকৃতিঃ
১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের প্রকৃতি নিয়ে ঐতিহাসিক ও গবেষকদের মধ্যে নানা মত পার্থক্য আছে। অনেকে মনে করেন এই বিদ্রোহ কেবল সিপাহীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। তাঁদের মতামতগুলি হল -
সামন্ত বিদ্রোহঃ
ঐতিহাসিক ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার, রজনীপাম দত্ত, সুরেন্দ্রনাথ সেন প্রমুখ মনে করেন 1857 খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহ ছিল সামরিক বা সামন্ত বিদ্রোহ। কারণ ইংরেজদের বিভিন্ন নীতির দ্বারা ক্ষমতাচ্যুত শাসকেরা, যেমন—রানি লক্ষ্মীবাঈ, নানা সাহেব, তাঁতিয়া টোপিসহ অনেক প্রাদেশিক শাসক এই বিদ্রোহে শামিল হন।
ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধঃ
ঐতিহাসিক বিনায়ক দামোদর সাভারকার 1857 খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহকে ভারতের প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধ বলে অভিহিত করেছেন। কিন্তু অধিকাংশ ঐতিহাসিক এই মতকে স্বীকার করেন না। কারণ এই বিদ্রোহীদের কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্য ছিল না বা এই বিদ্রোহ থেকে ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয়তাবাদের জন্মও হয় না। এছাড়া অনেক ভারতীয় রাজা, শিখ ও সৈনিকরা ইংরেজদের সাহায্য করেছিলেন।
গণবিদ্রোহঃ
ঐতিহাসিক জন কে, বেইলি, বল প্রমুখ 1857 খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহকে গণবিদ্রোহ বলার পক্ষপাতী ছিলেন। কারণ সিপাহিদের সাথে সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে এই বিদ্রোহকে গণবিদ্রোহের রূপ দিয়েছিল। এছাড়া অযোধ্যা, কানপুর, ঝাঁসি প্রভৃতি অঞ্চলের বিদ্রোহে গণবিস্ফোরণ ঘটে।
সিপাহী বিদ্রোহঃ
1857 খ্রিস্টাব্দে ভারত সচিব আর্ল স্ট্যানলি তাঁর এক প্রতিবেদনে এই বিদ্রোহকে ‘Sepoy Mutiny’ বলে উল্লেখ করেছেন। এক্ষেত্রে তাঁদের অভিমত হলো সিপাহিরা বিদ্রোহের সূচনা করে কিন্তু দেশের সকল শ্রেণির মানুষ, বিশেষ করে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি যোগদান করেনি। তাছাড়া এই বিদ্রোহের মূলে কোনো রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা ছিল না।
জাতীয় বিদ্রোহঃ
ডিসরেলি, আউট্রাম,রবার্টসন প্রমুখ 1857 খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহকে জাতীয় বিদ্রোহ বলে অভিহিত করেছেন। তাঁদের মতে, বিহার, উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন স্থানে সিপাহী নেতৃত্ব ছাড়াও স্থানীয় জমিদাররা বিদ্রোহে যোগদান করেন এবং দ্বিতীয় বাহাদুর শাহকে ভারতের সম্রাট বলে ঘোষণা করে বিদেশি শাসনমুক্ত একটি দেশীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হন।
মহাবিদ্রোহঃ
ভারতের বেশ কিছু জাতীয়তাবাদী ঐতিহাসিক এই বিদ্রোহের ব্যাপকতা লক্ষ্য করে এই বিদ্রোহকে মহাবিদ্রোহ বলে অভিহিত করেছেন। ঐতিহাসিক এরিখ বলেছেন যে, এই বিদ্রোহ ছিল ভারতে ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র আন্দোলনের শেষ অধ্যায়।
মূল্যায়নঃ
উপরিউক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, 1857 খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহ সিপাহীদের অসন্তোষের মূল কারণ হলেও এই বিদ্রোহের মূলে ছিল বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের গভীর অসন্তোষ ও হতাশা। অধ্যাপক রণজিৎ গুহ, গৌতম ভদ্র প্রমুখ নানা ত্রুটিবিচ্যুতির সত্ত্বেও এই আন্দোলনের গণচরিত্রের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।
Comments
Post a Comment
Haven't doubt please let me know.