পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুরে লৌহ ইস্পাত শিল্প গড়ে ওঠার কারণ কি
প্রশ্নঃ পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুরে লৌহ ইস্পাত শিল্প গড়ে ওঠার কারণ কি ?
উঃ
পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার দুর্গাপুরে দামোদর নদের তীরে ব্রিটিশ কোম্পানি ইসকনের সহযোগিতায় গড়ে ওঠা দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্ট হল ভারতের একটি উল্লেখযোগ্য লৌহ ইস্পাত শিল্প কেন্দ্র। পূর্ব ভারতের অন্যান্য লৌহ ইস্পাত শিল্প কেন্দ্রের মতো এই লৌহ ইস্পাত শিল্প কেন্দ্রটিও কতগুলি প্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিক কারণে গড়ে উঠেছে। নিম্নে পশ্চিমবঙ্গের দুর্গাপুরে লৌহ ইস্পাত শিল্প গড়ে ওঠার কারণ গুলি আলোচনা করা হলো -
অ) প্রাকৃতিক কারণ
ক) আকরিক লোহার জোগানঃ
লৌহ ইস্পাত শিল্পের প্রধান কাঁচামাল হল লৌহ আকরিক। ঝাড়খণ্ডের সিংভূম, নোয়ামুন্ন্ডি, পানসিবুরু, বুদাবুরু, নুটুবুরু, উড়িষ্যার গুরুমহিষিনি পাহাড়, বাদাম পাহাড় ইত্যাদি স্থান থেকে প্রাপ্ত লৌহ আকরিকের সাহায্যে এই অঞ্চলে লৌহ ইস্পাত শিল্প গড়ে উঠেছে।
খ) কয়লার সহজলভ্যতাঃ
দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের রানীগঞ্জ, অন্ডাল এবং ঝরিয়া কয়লা খনি থেকে বিটুমিনাস জাতীয় উচ্চমানের কয়লার সহজলভ্যতার কারণে এই অঞ্চলে লৌহ ইস্পাত শিল্প গড়ে উঠেছে।
গ) চুনাপাতর, ডলোমাইট ও ম্যাঙ্গানিজের যোগানঃ
দুর্গাপুর লৌহ ইস্পাত শিল্প কেন্দ্রের প্রয়োজনীয় চুনাপাথর ও ডলোমাইট উড়িষ্যার বীরমিত্রপুর ও গাংপুর এবং ম্যাঙ্গানিজ উড়িষ্যার গাংপুর ও হাতিয়াড়ি থেকে সহজেই পাওয়া যায়।
ঘ) জলের যোগানঃ দুর্গাপুর লৌহ ইস্পাত শিল্প কেন্দ্রের প্রয়োজনীয় জল এখানকার দামোদর নদ থেকে সহজেই পাওয়া যায়।
আ) অর্থনৈতিক কারণ
ক) বিদ্যুতের যোগানঃ
দুর্গাপুর লৌহ ইস্পাত শিল্প কেন্দ্রের প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ এখানকার কোলাঘাট, ব্যান্ডেল, সাঁওতালডিহি ইত্যাদি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং মাইথন, পাঞ্চেৎ ইত্যাদি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে সহজেই পাওয়া যায়।
খ) সুলভ শ্রমিকঃ
ঝাড়খন্ড সংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমভাগ ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় এখানকার লৌহ ইস্পাত শিল্পের প্রয়োজনীয় শ্রমিক সহজে ও সুলভে পাওয়া যায়। এছাড়া কলকাতা ও খড়্গপুরের কারিগরি শিক্ষা কেন্দ্রগুলি থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার প্রাপ্তির সুবিধা এখানে আছে ।
গ) বন্দরের নৈকট্যঃ
কলকাতা ও হলদিয়া বন্দর নিকটবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় এখানকার লৌহ ইস্পাত শিল্পের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি বিদেশ থেকে আমদানি এবং লৌহ ইস্পাত শিল্পজাত দ্রব্য বিদেশে রপ্তানি সুবিধা আছে।
ঘ) উন্নত পরিবহন ব্যবস্থাঃ
দুর্গাপুর লৌহ ইস্পাত শিল্প কেন্দ্রটি পূর্ব রেলপথ, দু'নম্বর জাতীয় সড়ক, কলকাতা দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে, এবং দামোদর উপত্যকা পরিকল্পনার অন্তর্গত নৌপরিবহনযোগ্য খাল পথের মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী অঞ্চল ও হুগলি শিল্পাঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত।
Comments
Post a Comment
Haven't doubt please let me know.