চিরদিনের সুকান্ত ভট্টাচার্য

                          চিরদিনের 

                       সুকান্ত ভট্টাচার্য 


এখানে বৃষ্টিমুখর লাজুক গাঁয়ে

 এসে থেমে গেছে ব্যস্ত ঘড়ির কাঁটা,

 সবুজ মাঠের পথ দেয় পায়ে পায়ে

 পথ নেই, তবু এখানে যে পথ হাঁটা।


 জোড়াদিঘি, তার পাড়েতে তালের সারি

 দূরে বাঁশঝাড়ে আত্মদানের সাড়া, 

পচা জল আর মশাই অহংকারী 

নীরব এখানে অমর কিষান পাড়া।


 এ গ্রামের পাশে মজা নদী বারো মাস 

বর্ষায় আজ বিদ্রোহ বুঝি করে,

 গোয়ালে পাঠায় ইশারা সবুজ ঘাস 

এ গ্রাম নতুন সবুজ ঘাগড়া পরে।


 রাত্রি এখানে স্বাগত সান্ধ্য শাঁখে

 কিষানকে ঘরে পাঠায় যে আল-পথ;

 বুড়ো বটতলা পরস্পরকে ডাকে 

 সন্ধ্যায় সেখানে জড়ো করে জনমত।


 দুর্ভিক্ষের আঁচল জড়ানো গায়ে

এ গ্রামের লোক আজো সব কাজ করে,

 কৃষক-বধূরা ঢেঁকিকে নাচায় পায়ে

 প্রতি সন্ধ্যায় দীপ জ্বলে ঘরে ঘরে।

 

রাত্রি হলেই দাওয়ার অন্ধকারে 

ঠাকুমা গল্প শোনায় যে নাতনিকে,

 কেমন করে সে আকালেতে গতবারে,

 চলে গেল লোক দিশেহারা দিকে দিকে।


 এখানে সকাল ঘোষিত হয় পাখির গানে

 কামার, কুমোর, তাঁতি তার কাজে জোটে ,

 সারাটা দুপুর ক্ষেতের চাষির কানে 

একটানা আর বিচিত্র ধ্বনি ওঠে।


 হঠাৎ সেদিন জল আনবার পথে

 কৃষক-বধূ সে থমকে তাকায় পাশে,

 ঘোমটা তুলে সে দেখে নেয় কোনোমতে,

 সবুজ ফসলে সুবর্ণ যুগ আসে।।




।।।।

Comments

Popular posts from this blog

কর্ভাস (Carvas)প্রফেসর শঙ্কুর ডায়রি

বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা তারতম্যের কারণগুলি আলোচনা কর।

আদর্শ ফুলের গঠন চিত্র ( দশম শ্রেণী)