শব্দ গঠনের কৌশল ও বাংলা শব্দ ভান্ডার

 শব্দ গঠনের কৌশল ও বাংলা শব্দ ভান্ডার ।। প্রথম পাঠ।। শব্দ গঠনের কৌশল।। ‌‌‌‌


            ।।  শব্দ গঠনের কৌশল ।।


১) মানুষের মুখ থেকে বের হওয়া একটি ধ্বনি বা একাধিক ধ্বনির সমষ্টি যদি একটি বস্তু বা ভাব প্রকাশ করে তাহলে তাকে শব্দ বলে।

                    এই শব্দ গঠিত হয় মূলত দুটি ভাবে---১) অর্থহীন এক বা একাধিক ধ্বনি যুক্ত হয়ে এবং ২) অর্থযুক্ত এক বা একাধিক ধ্বনি যুক্ত হয়ে।

         

                          ।। উপসর্গ।।


২) উপসর্গ কাকে বলে ? 

উঃ যেসব অব্যয় ধাতু বা শব্দের আগে বসে এবং অর্থের পরিবর্তন ঘটিয়ে নতুন শব্দ গঠনে সাহায্য করে তাদের বলা হয় উপসর্গ।


২) অব্যয় কাকে বলে ?

উঃ অব্যয় হলো সেই শব্দ, যার লিঙ্গ বা কারক ভেদে কোন পরিবর্তন হয় না তাকে অব্যয় বলে।


৩) অব্যয় শব্দের অর্থ কি ? 

উঃ যার কোনো ব্যয় বা পরিবর্তন নেই 


৪) উপসর্গের কাজ ও বৈশিষ্ট্য লেখ।

উঃ উপসর্গের প্রাথমিক কাজ হলো নতুন শব্দ গঠন করা। এক্ষেত্রে অবশ্যই উল্লেখ করা দরকার, একটি উপসর্গ অন্য একটি ধাতু বা শব্দের আগে যুক্ত হলে যে ধরনের পরিবর্তন হয় তা হল--

 ক) নতুন অর্থবোধক শব্দের সৃষ্টিঃ   ছায়া > প্রছায়া

খ) শব্দের অর্থের পরিপূর্ণতা লাভঃ   পুষ্টি > পরিপুষ্টি 

গ) শব্দের অর্থের সম্প্রসারণঃ    তাপ > প্রতাপ 

ঘ) শব্দের অর্থের সংকোচনঃ   দান > অনুদান 

ঙ) শব্দের অর্থের পরিবর্তনঃ  কথা  > কুকথা 


উপসর্গের বৈশিষ্ট্য গুলি হল ঃঃ

১) উপসর্গ বিভিন্ন শব্দ বা ধাতুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে নতুন অর্থবোধক শব্দ গঠন করে।

২) উপসর্গ সবসময় শব্দ বা ধাতুর আগে যুক্ত হয়

 ৩) উপসর্গগুলি প্রকৃতপক্ষে অব্যয় শব্দ 


৫) উপসর্গের শ্রেণীবিভাগ আলোচনা করো।

উঃ বাংলা ভাষার উপসর্গ গুলিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যায় --- ক) সংস্কৃত উপসর্গ খ) বাংলা উপসর্গ এবং গ) বিদেশী উপসর্গ 

ক) সংস্কৃত উপসর্গঃ

               সংস্কৃত উপসর্গ ২০ টি । সেগুলি হল -- প্র ,পরা অপ,সম,নি,অব,অনু,নির,দুর,বি,অধি,সু,উদ,পরি,পরবর্তি,অভি,অতি,অপি,উপর,আ। সংস্কৃত উপসর্গগুলি কোন কোন অর্থে বিভিন্ন ধাতুর পূর্বে বসে নতুন শব্দ গঠন করে তার একটি উদাহরণ দেওয়া হলো --  

উৎকর্ষ অর্থেঃ  প্র - প্রখ্যাত, প্রদান 

বৈপরীত্য অর্থেঃ পরা - পরাজয়,পরাভব 

পশ্চাৎ অর্থেঃ অনু - অনুচর, অনুরাগ প্রভৃতি 


খ) বাংলা উপসর্গ ঃঃ

            অ,আর,কু,সু,ভর,ভরা না,নাই ,তে  প্রভৃতি হল বাংলা উপসর্গ। কয়েকটি বাংলা উপসর্গের প্রয়োগ আলোচনা করা হল-- 

অ-- অজানা, অপাত্র 

আ-- আকাশ, আগাছা

 কু -- কুকথা,কুকাজ 

ভর-- ভরদুপুর,ভরপেট প্রভৃতি 


গ) বিদেশি উপসর্গঃ

                আরবি ,ফারসি, ইংরেজি প্রভৃতি বিদেশি ভাষার বহু শব্দ বাংলা উপসর্গ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন-- গর, ফি, বদ, হর, হেড, ফুল, কার প্রভৃতি। কয়েকটি বিদেশি উপসর্গের প্রয়োগ দেখানো হচ্ছে।


৬) সংস্কৃত উপসর্গ ধাতু ছাড়াও বিশেষ্য এবং বিশেষণ শব্দের আগেও ব্যবহার হয় তার একটি উদাহরণ দাও।

উঃ প্র + পিতামহ = প্রপিতামহ , প্র + আর = প্রখর।


৭) সংস্কৃত উপসর্গ গুলির মধ্যে কোন কোন উপসর্গের স্বাধীন প্রয়োগ দেখা যায়?

উঃ প্রতি, অতি 


৮) ব্যাকরণের গতি বলতে কী বোঝো ?

উঃ কুড়িটি সংস্কৃত উপসর্গ ছাড়াও উপসর্গের মত কিছু আছে যেগুলি উপসর্গের মতোই ধাতুর আগে যুক্ত হয় তাকে গতি বলে। 

উদাহরণ ঃঃ অলম, প্রকাশ,উৎপত্তি প্রভৃতি।


৯)   মনে রেখো বিদেশি উপসর্গ গুলো ধাতুর আগে না বসে বিশেষ্য ও বিশেষণ পদের আগে বসে নতুন শব্দ গঠন করে ।

যেমনঃ গরহাজির, গরমিল, হরবোলা, বেআইনি প্রভৃতি।


                          ।।অনুসর্গ।।


১০) অনুসর্গ কাকে বলে ?

উঃ যেসব অব্যয় বিশেষ্য বা সর্বনাম পদের পরে পৃথক ভাবে বসে শব্দ বিভক্তির কাজ করে তাদের অনুসর্গ বলা হয়।

 যেমনঃ দ্বারা, দিয়া, কর্তৃক, হইতে, থেকে, চেয়ে প্রভৃতি।


১১) একটি বাক্য প্রয়োগ করে অনুসর্গের উদাহরণ দাও।

উঃ স্বপ্ন দিয়ে তৈরি সে দেশ স্মৃতি দিয়ে ঘেরা। এই বাক্যে দিয়ে হল অনুসর্গ।


১২)  অনুসর্গের অপর নাম কি ?

উঃ পরসর্গ, কর্মপ্রবচনীয় 


১৩) অনুসর্গ কয় প্রকার ও কি কি ?

উঃ অনুসর্গ দুই প্রকার--ক) ক্রিয়াজাত অনুসর্গ এবং খ) শব্দজাত অনুসর্গ।


১৪)  ক্রিয়াজাত অনুসর্গ কাকে বলে ? 

উঃ অনেক অসমাপিকা ক্রিয়া বাংলায় অনুসর্গ রূপে ব্যবহৃত হয়, এগুলিকে ক্রিয়াজাত অনুসর্গ বলা হয়ে থাকে ।

যেমনঃ দিয়া, দিয়ে, ধরিয়া, ধরে

বাক্যপ্রয়োগে উদাহরণ--- পাঁচ দিন ধরে বৃষ্টি পড়ছে। এই বাক্যে ধরে শব্দটি ক্রিয়াজাত অনুসর্গ ।


১৫) শব্দজাত অনুসর্গ কাকে বলে ?

উঃ দ্বারা, জন্য, সহিত, অপেক্ষা প্রভৃতিকে বলা হয় শব্দজাত অনুসর্গ।

 যেমনঃ আজ অবধি সে এখানে আসেনি। রাম অপেক্ষা শ্যাম বেশি বুদ্ধিমান।


১৬) এ,কে,রে,তে এই চারটি বিভক্তি ছাড়া বাংলায় বিভক্তির অভাব পূরণ করে কে? 

উঃ অনুসর্গ 


১৭) পদ কাকে বলে ?

উঃ শব্দ যখন বাক্যে বিভক্তি যুক্ত হয়ে ব্যবহার হয় তখন তাকে পদ বলে।


১৮) শব্দ ও পদের মধ্যে পার্থক্য লেখ।

উঃ ক) শব্দ একক ভাবে ব্যবহৃত হতে পারে কিন্তু পদ শুধু বাক্যে ব্যবহৃত হয়।

খ) শব্দের সঙ্গে বিভক্তি যুক্ত থাকে না কিন্তু পদের সঙ্গে বিভক্তি যুক্ত হয়।


১৯) শব্দকে কয়টি ভাগে ভাগ করা যায় ?

উঃ শব্দকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়


২০) শব্দ গঠনের ব্যুৎপত্তিগত দিক থেকে শব্দ কিভাবে গড়ে ওঠে ?

উঃ শব্দ গঠনের ব্যুৎপত্তিগত দিক থেকে শব্দ তিন ভাবে গড়ে ওঠে ।


২১) শব্দ বা ধাতুর সঙ্গে কি যুক্ত করে নতুন শব্দ গঠন করা হয় ?

উঃ শব্দ বা ধাতুর সঙ্গে প্রত্যয় যুক্ত করে নতুন শব্দ গঠন করা হয়।


২২) ধাতুর উত্তর যে প্রত্যয় যুক্ত হয়, সেই প্রত্যয়কে কি বলা হয় ?

উঃ কৃৎ প্রত্যয় 


২৩) সাধিত ধাতু কাকে বলে ?

উঃ কোন সিদ্ধ ধাতু বা শব্দের সঙ্গে এক বা একাধিক প্রত্যয় যোগ করে যে ধাতু গঠিত হয় তাকে সাধিত ধাতু বলে ।


২৪) যৌগিক ধাতু কাকে বলে ?

উঃ অসমাপিকা ক্রিয়ার সঙ্গে মৌলিক ধাতু যোগে গঠিত ধাতুকে যৌগিক ধাতু বলে।

 যেমনঃ খেয়ে ফেল, বসে পড় 


                            ।।ধাতু।।


২৫) ক্রিয়াপদের অবিভাজ্য অংশকে কি বলে ?

উঃ ধাতু বলে।


২৬) উৎপত্তি ও প্রকৃতির দিক থেকে বিচার করে ধাতুকে কয় ভাগে ভাগ করা যায় ও কি কি ?

উঃ চার ভাগে ভাগ করা যায়।-- মৌলিক ধাতু, সাধিত ধাতু, সংযোগমূলক ধাতু এবং যৌগিক ধাতু।


২৭) মৌলিক ধাতু কাকে বলে ? উদাহরণ দাও।

উঃ যে ধাতুকে বিশ্লেষণ করলে কোনো প্রত্যয় পাওয়া যায় না তাদের বলা হয় মৌলিক ধাতু।

 যেমনঃ কর্ , পড়্ , চল্ ইত্যাদি।


২৮) সাধিত ধাতু কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

উঃ প্রত্যয়যোগে গঠিত ধাতুকে সাধিত ধাতু বলা হয়।

 যেমনঃ পড় + আর = পড়া 


২৯) গঠন অনুযায়ী সাধিত ধাতু কয় প্রকার ও কি কি ?

উঃ তিন প্রকার-- নামধাতু, প্রযোজক ধাতু এবং ধন্যাত্মক ধাতু ।


৩০) নাম ধাতু কাকে বলে ? উদাহরণ দাও।

উঃ বিশেষ্য, বিশেষণ এবং ধনাত্মক অব্যয় এই ধরনের নাম শব্দের পরে আ- প্রত্যয় যোগ করে যে সাধিত ধাতু গঠিত হয় তাকে বলা হয় নামধাতু।

 যেমনঃ হাত + আর = হাতা 


৩১) প্রযোজক ধাতু কাকে বলে? উদাহরণ দাও।

উঃ অন্যকে দিয়ে কোন কিছু করানো বোঝাতে মৌলিক ধাতুর পরে আ- প্রত্যয় যোগ করে যে সাধিত ধাতু গঠিত হয় তাকে প্রযোজক ধাতু বলে।

যেমন- পড়্ + আর = পড়া, দেখ্ + আ = দেখা 


৩২) ধনাত্মক ধাতু কাকে বলে? উদাহরণ দাও

উঃ যে সব ধনাত্মক বা অনুকার শব্দ ধাতু রূপে ব্যবহৃত হয় তাদের ধনাত্মক ধাতু বলে।

যেমন- কনকন, ঝলমল ইত্যাদি 


৩৩) সংযোগমূলক ধাতু কাকে বলে? উদাহরণ দাও 

উঃ বিশেষ্য, বিশেষণ ও ধনাত্মক অব্যয় এর সঙ্গে কর, দি, পাখ ইত্যাদি কয়েকটি মৌলিক ধাতুর সঙ্গে যে ধাতু গঠিত হয় তাকে সংযোগমূলক ধাতু বলে। 

যেমনঃ জিজ্ঞাস কর,


৩৪) যৌগিক ধাতু কাকে বলে ? উদাহরণ দাও 

উঃ ইতে, ইয়া বিভক্তিযুক্ত অসমাপিকা ক্রিয়া যখন সমাপিকা ক্রিয়ার ঠিক আগে বসে যে সাধিত ধাতু গঠন করে তাকে বলে যৌগিক ধাতু।

 যেমন - দেখে পড়, দেখতে থাক।


                          ।। প্রত্যয় ।।


৩৫) প্রত্যয় কাকে বলে ?

উঃ যেসব ধ্বনি বা ধ্বনি গুচ্ছ ধাতু ও নাম প্রকৃতির পরে যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ সৃষ্টি করে তাদের প্রত্যয় বলে।

যেমনঃ কৃ + তব্য = কর্তব্য 


৩৬) প্রত্যয় কয় প্রকার ও কি কি ? 

উঃ প্রত্যয় দু-প্রকার-ক) কৃৎ প্রত্যয় ও খ) তদ্ধিত প্রত্যয়


৩৭) কৃৎ প্রত্যয় কাকে বলে ?

উঃ ধাতুর পরে যে প্রত্যয় যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ সৃষ্টি করে তাকে কৃৎ প্রত্যয় বলে।

 যেমন-- তব্য, অনীয় প্রভৃতি 


৩৮) কয়েকটি সংস্কৃত কৃৎ প্রত্যয়ের উদাহরণ দাও।

উঃ তব্য, অনীয়, ন্যৎ প্রভৃতি ।


৩৯) কৃৎ প্রত্যয় ও তদ্ধিত প্রত্যয়ের মিশ্রণ কি ?

উঃ ধাত্ববয়ব প্রত্যয় 


৪০) সংস্কৃত ধাত্ববয়ব প্রত্যয়ের উদাহরণ দাও।

উঃ সন্,ণিচ 


৪১) তদ্ধিত প্রত্যয় কাকে বলে ?

উঃ যেসকল প্রত্যয় শব্দের পরে যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে তাদের তদ্ধিত প্রত্যয় বলে।


৪২) স্বরের গুণ বলতে কী বোঝো ?

উঃ ই-কার বা দীর্ঘ-ঈ-কারের স্থানে এ-কার, উ- কার বা ঊ-কারের স্থানে ও কার এবং ঋ-কারের স্থানে অর হওয়ার রীতিকে স্বরের গুণ বলা হয়।


৪৩) উপধা কাকে বলে ?

উঃ কোন শব্দের শেষ বর্ণের ঠিক আগের বর্ণকে উপধা বলে ।


৪৪) আদেশ বলতে কি বোঝো ?

উঃ কোন বর্ণ বা শব্দাংশের জায়গায় অন্য বর্ণ বা শব্দাংশ এলে তাকে ব্যাকরণে আদেশ বলা হয়।


৪৫) ব্যাকরণে সম্প্রসারণ বলতে কী বোঝো ?

উঃ য ই-কারে,র ঋ-কারে এবং অন্তঃস্থ ব উ-কারে পরিণত হওয়াকে ব্যাকরণের ভাষায় সম্প্রসারণ বলা হয়।


৪৬) প্রাতিপদিক কাকে বলে ?

উঃ বিভক্তিহীন বিশেষ্য, বিশেষণ শব্দকে প্রাতিপদিক বলা হয় । 


৪৭) ব্যাকরণে স্বরের বৃদ্ধি বলতে কী বোঝো?

উঃ অ কারের বদলে আ-কার, ই-কার বা ঈ-কারের ঐ-কার,উ বা ঊ- কারের বদলে ঔ-কার এবং ঋ-কারের বদলে আর হওয়ার রীতিকে ব্যাকরণে স্বরের বৃদ্ধি বলা হয়। 


৪৮) তুলনা বাচক তদ্ধিত প্রত্যয় এর দুটি উদাহরণ দাও।

উঃ তর,তম 


৪৯) ধাত্ববয়ব প্রত্যয় কাকে বলে ?

উঃ শব্দ বা ধাতুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে যে প্রত্যয় নতুন ধাতু গঠন করে তাকে ধাত্ববয়ব প্রত্যয় বলে ।

যেমন-- দেখ্ + আ = দেখা ।











Comments

Popular posts from this blog

কর্ভাস (Carvas)প্রফেসর শঙ্কুর ডায়রি

বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা তারতম্যের কারণগুলি আলোচনা কর।

আদর্শ ফুলের গঠন চিত্র ( দশম শ্রেণী)