ভারতে প্রচলিত চারটি ভাষা বংশের নাম লেখ ও তাদের বিবরণ দাও
* ভারতে প্রচলিত চারটি ভাষাবংশের নাম লেখ ও তাদের বিবরণ দাও?
উঃ ভারতে প্রচলিত চারটি ভাষাবংশ হলো---
ক) ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাবংশ
খ) অস্ট্রিক ভাষাবংশ
গ) দ্রাবিড় ভাষাবংশ
ঘ) ভোটচিনীয় ভাষাবংশ
ক) ইন্দো ইউরোপীয় ভাষাবংশঃ
পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা প্রাচীন ভাষা হল ইন্দো ইউরোপীয় ভাষা । সংস্কৃত ও ল্যাটিন ভাষা এই ভাষাবংশের অন্তর্গত। ভারত, ইরান এবং ইউরোপের অধিকাংশ ভাষা এই ভাষাবংশ থেকে উৎপন্ন হয়েছে। মূল ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাটি দশটি শাখার বিভক্ত। তারমধ্যে ইন্দো-ইরানীয় শাখাটি আবার দুটি প্রশাখায় বিভক্ত । ইরানীয় শাখা এবং ভারতীয় আর্যভাষা। পরবর্তীকালে ভারতীয় আর্য ভাষা তিনটি স্তরে বিভক্ত হয়ে পড়ে--১) প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা ২) মধ্য ভারতীয় আর্যভাষা এবং ৩) নব্য ভারতীয় আর্য ভাষা।
খ) অস্ট্রিক ভাষাবংশ ঃঃ
বিভিন্ন ভাষাতাত্ত্বিকদের মতে ভারতে প্রচলিত চারটি ভাষা বংশের মধ্যে সর্বাপেক্ষা প্রাচীন ভাষাবংশ হলো অস্ট্রিক ভাষাবংশ। এই ভাষাবংশের একাধিক শাখার মধ্যে কোল,মুন্ডা,খাসি এবং মোনখমের ভাষা রয়েছে । ভারতে প্রচলিত কোল বা মুন্ডা শাখাটিকে দুটি নাম দেয়া হয়েছে-- পশ্চিমা এবং পূর্বী। সবার হল পশ্চিমা শাখা এবং সাঁওতালি, মুন্ডারি প্রভৃতি পূর্বী শাখার অন্তর্গত ।
গ) দ্রাবিড় ভাষাবংশঃ
এই ভাষাবংশটি দক্ষিণ ভারতে প্রচলিত। মালয়ালম, তামিল-তেলেগু ,কন্নড় ভাষা এর অন্তর্গত। ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশে তেলেগু ভাষা, তামিলনাড়ু, পন্ডিচেরিতে তামিল ভাষা, কেরালার মালয়ালম ভাষা প্রভৃতি দ্রাবিড় ভাষাবংশ থেকেই উৎপন্ন হয়েছে।
ঘ) ভোটচিনীয় ভাষাবংশঃ
হিমালয়ের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে এবং অসমের কিছু অঞ্চলে এই ভাষাবংশ প্রচলিত আছে। ইহা তিনটি শাখায় বিভক্ত-- চিনীয়, থাই, ভোটবর্মী । এর কতগুলি উপশাখা হল গারো, নাগা, মনিপুরী বর্মী প্রভৃতি।
* ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর সম্বন্ধে যা জানো লেখ।
উঃ সমগ্র পৃথিবীতে তিন হাজারের বেশি ভাষা প্রচলিত ছিল। তাদের মধ্যে এখনও 26 টি ভাষা পরিবার জীবিত আছে। বিশ্বের ভাষাগোষ্ঠীর মধ্যে এই ভাষাগোষ্ঠী হল সর্বাধিক প্রাচীন । এই ভাষা সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য ।এই ভাষাগোষ্ঠীকে অবলম্বন করেই পৃথিবীর ভাষাবিজ্ঞান তৈরি হয়েছে।
ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা প্রধান দুটি শাখায় বিভক্ত। যথা,-- কেন্তুম ও শতম। এই দুটি শাখা থেকে আবার দশটি ভাষাগোষ্ঠীর সৃষ্টি হয়েছে। এই ভাষা গোষ্ঠীর মধ্যে ইন্দো-ইরানীয়,বালতোস্লাভিক, আলবানীয় ও আর্মেনীয় ভাষাগোষ্ঠী নিয়ে গঠিত হয় সতম শাখা। অপরদিকে গ্রিট, ইতালিক, কেল্টিক,টিউটনিট এবং হিট্টাইট ভাষাগোষ্ঠী নিয়ে তৈরি হয়েছে কেন্তুম শাখা।
ইন্দো-ইরানীয় ভাষাগোষ্ঠী আবার দুটি শাখায় বিভক্ত-- একটি হলো ভারতীয় আর্যভাষা এবং অপরটি হল ইরানীয় ভাষা। এই ইন্দো-ইরানীয় শাখাটি হলো আর্যভাষা। এই ভাষাতেই বেদ, সংহিতা রচিত হয়েছে । এই বৈদিক ভাষা থেকেই সংস্কৃত, পালি, অপভ্রংশ, বাংলা, হিন্দি ,মারাঠি প্রভৃতি ভাষার জন্ম হয়েছে।
Comments
Post a Comment
Haven't doubt please let me know.