বাংলা চিত্রকলার ইতিহাস দ্বাদশ শ্রেণি
বাংলা চিত্রকলার ইতিহাস
১) বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে নন্দলাল বসুর অবদান লেখ।
উঃ বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে নন্দলাল বসু ছিলেন এক অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী। হুগলি জেলার তারকেশ্বরের নিকটবর্তী জেজুর গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি প্রথমে দ্বারভাঙ্গা এবং পরে কলকাতার সেন্ট্রাল কলেজিয়েট স্কুলে বিদ্যার্জন করেছিলেন । তিনি ছোটবেলা থেকেই চিত্রকলার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছিলেন।
চারপাশের গ্রামীণ প্রকৃতি, সাধারণ ও দরিদ্র মানুষের জীবনচিত্র হলো তাঁর ছবির মূল উপজীব্য। 1920 সালে তিনি শান্তিনিকেতনে স্থায়ীভাবে যোগদান করেন এবং শিল্পশিক্ষার এক বিশিষ্ট পদ্ধতিতে এই প্রতিষ্ঠানকে সমৃদ্ধ করে তোলেন। মৌলিক রচনা, প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ ও পরম্পরা এই তিনের মিলনে তার শিক্ষানীতিকে পরিচালিত করতে থাকেন। তাঁর বিখ্যাত ছবিগুলোর মধ্যে রয়েছে-- সতী, পার্থসারথি, হলকর্ষণ, রাঙ্গামাটির পথ, সিদ্ধিদাতা গণেশ, শিবের বিষপান প্রভৃতি। 1930 সালে ডান্ডি লবণ আন্দোলনে গান্ধীজি গ্রেপ্তারের পরে নন্দলাল বসুই সাদাকালোয় চলমান গান্ধীজিকে লাঠি হাতে এঁকেছিলেন। এই চিহ্নই পরে অহিংস আন্দোলনের প্রতীকে পরিণত হয়েছিল।
পরিশেষে বলা যায় নন্দলাল বসু ছিলেন চিত্রশিল্পচর্চার এক নব দিগন্তের দিশারী। তিনিই সর্বপ্রথম চিত্রশিল্পে আউটডোর স্টাডি বা নেচার স্টাডির উপর গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। তার স্মরণীয় কীর্তির মধ্যে বসু বিজ্ঞান মন্দির অলংকরণ ,হরিপুরাপট প্রভৃতি। 1954 খ্রিস্টাব্দে তিনি পদ্মবিভূষণ পুরস্কারে ভূষিত হন। অবশেষে 1966 সালে এই মহান চিত্রকরের প্রয়াণ ঘটে।
২) বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে রামকিঙ্কর বেইজের অবদান লেখ ।
উঃ বাংলা চিত্রকলার ইতিহাসে এক অসামান্য প্রতিভাবান ভাস্কর হলেন রামকিঙ্কর বেইজ। তিনি শুধু ভাস্কর্যে নয়, চিত্রশিল্প চর্চায় ছিলেন অগ্রগণ্য । তিনি 1906 সালে বাঁকুড়ার যুগিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন। দারিদ্র্যের সাথে জীবন অতিবাহিত হলেও শিল্পের প্রতি ছিল তাঁর গভীর অনুরাগ।
1925 খ্রিস্টাব্দে তিনি শান্তিনিকেতনে নন্দলাল বসুর সান্নিধ্য লাভ করেন এবং পরবর্তীকালে তিনি ভাস্কর্য ছেড়ে শান্তিনিকেতনের শিক্ষক হন। তার ছবিগুলো ছিল প্রকৃতি কেন্দ্রিক। তাঁর আঁকা বিখ্যাত ছবি গুলির মধ্যে অন্যতম হলো শিলং সিরিজ, শরৎকাল, কৃষ্ণের জন্ম, বিনোদিনী, মহিলা ও কুকুর , নতুন শস্য, গ্রীষ্মের দুপুর প্রভৃতি। তার ভাস্কর্যের প্রায় সব মূর্তিগুলি খোলা আকাশের নিচে গড়ে উঠত। তার শিল্পের লক্ষণীয় বিষয় হল গতিময়তা। তার ভাস্কর্য গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-- রবীন্দ্রনাথ, অবনীন্দ্রনাথ, বুদ্ধদেব, গান্ধীজী প্রমুখের মূর্তি ।
পরিশেষে বলা যায়, তিনি চিত্রকলা ও ভাস্কর্যে অসাধারণ ব্যক্তিত্ব। দেশের প্রধান প্রধান সংগ্রহশালায় তার শিল্পকর্ম স্থান পেয়েছে। 1970 সালে তিনি পদ্মভূষণ উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন।
Comments
Post a Comment
Haven't doubt please let me know.