মালভূমি কাকে বলে ? মালভূমির বৈশিষ্ট্য গুলি লেখ।

 ভূমিরূপ গঠনকারী প্রক্রিয়া ও পৃথিবীর বিভিন্ন ভূমিরূপ

                           মালভূমি (নবম শ্রেণী)


১) মালভূমি কাকে বলে ? মালভূমির বৈশিষ্ট্য গুলি লেখ।

উঃ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় 300 থেকে 600 মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট, উপরিভাগ যথেষ্ট তরঙ্গায়িত বা বন্ধুর এবং চারি দিকে খাড়া ঢাল যুক্ত, এরকম বিস্তৃত ভূমিকে মালভূমি বলে ।

যেমনঃ তিব্বতের মালভূমি, ব্রাজিলের মালভূমি, ভারতের ছোটনাগপুর মালভূমি ।


মালভূমির বৈশিষ্ট্যঃ

                মালভূমির বৈশিষ্ট্য গুলি হল----

 ১) মালভূমি হল একটি বিস্তৃত উচ্চভূমি।

২) মালভূমির উপরিভাগ কিছুটা তরঙ্গায়িত হয় এবং চারিদিকে বেশ খাড়া ঢাল যুক্ত হয়।

৩) মালভূমি দেখতে কিছুটা টেবিলের মত, তাই এর আরেক নাম টেবিল ল্যান্ড।

৪) মালভূমির উচ্চতা সাধারণত 300 থেকে 600 মিটার হয়।

৫)  মালভূমির উপরিভাগে পাহাড় থাকতে পারে।

৬) মালভূমি বয়সে প্রাচীন এবং নবীন উভয়ই হতে পারে।


২) পর্বত বেষ্টিত মালভূমি কাকে বলে ? চিত্রসহ পর্বতবেষ্টিত মালভূমির বৈশিষ্ট্যগুলি লেখ।

উঃ ভূ আলোড়নের ফলে ভঙ্গিল পর্বত তৈরি হবার সময় দুটি সমান্তরাল পর্বত শ্রেণীর মাঝখানের জায়গাগুলি চাপের জন্য উঁচু হয়ে মালভূমি সৃষ্টি করে । এই মালভূমির চারিদিকে পর্বত থাকে বলে একে পর্বতবেষ্টিত মালভূমি বলে ।

যেমনঃ তিব্বতের মালভূমি।

 বৈশিষ্ট্যঃ

 ১) পর্বতবষ্টিত মালভূমিগুলি সুউচ্চ প্রকৃতির হয় ।

 ২) এই জাতীয় মালভূমি গুলি নবীন ভঙ্গিল পার্বত্য অঞ্চলে সৃষ্টি হয় ।

৩) ইহা বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে অবস্থান করে ।

৪) পর্বতবেষ্টিত বলে এখানকার পরিবেশ সুস্থ প্রকৃতির হয়।

৫) পর্বত বেষ্টিত মালভূমির উচ্চতা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে পারে ।

৬) এই মালভূমির শিলাস্তরের জীবাশ্ম থাকতে পারে।


৩) ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি কাকে বলে ? উদাহরণ দাও।

উঃ নদী ,বায়ু, হিমবাহ প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তির মাধ্যমে প্রাচীন মালভূমি অঞ্চল ধীরে ধীরে ক্ষয় হয় এবং এর উচ্চতা কমে যায় । এর শাখা প্রশাখা মালভূমি থেকে ধীরে ধীরে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে ফেলে এইভাবে কোনো বিস্তৃত মালভূমি অঞ্চলের নদী উপত্যকার মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন হলে তাকে ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি বলে।

 যেমনঃ ভারতের ছোটনাগপুর মালভূমি, কর্ণাটক মালভূমির মালনাদ।


৪) টীকা লেখঃ লাভা মালভূমি 

উঃ অনেক সময় ভূগর্ভস্থ ম্যাগমা কোন বিস্ফোরণ ছাড়াই ভূত্বকের অসংখ্য ফাটল বা দুর্বল অংশের মধ্যে দিয়ে ভূপৃষ্ঠে লাভা রূপে সঞ্চিত হয় এবং ধীরে ধীরে ঠান্ডা ও কঠিন হয়ে মালভূমির সৃষ্টি করে, একে লাভা মালভূমি বলে।

 যেমনঃ ভারতের দাক্ষিণাত্য মালভূমির উত্তর-পশ্চিম অংশের লাভা মালভূমি । এর আরেক নাম ডেকান ট্রাপ।



৫) মালভূমির গুরুত্ব আলোচনা করো।

উঃ ক) খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ অধিকাংশ মালভূমি অঞ্চল। বিশেষত প্রাচীন মালভূমিগুলি খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ।

 যেমন-- ভারতের দাক্ষিণাত্য মালভূমি ও ছোটনাগপুর মালভূমি ।

খ) খনিজ সম্পদের ওপর ভিত্তি করে মালভূমিতে নানা ধরনের খনিজ সম্পদ ভিত্তিক শিল্প গড়ে ওঠে।

গ) মালভূমির নদীগুলিতে যথেষ্ট স্রোত থাকে বলে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে উপযোগী।

ঘ) মালভূমিতে বিস্তীর্ণ তৃণভূমি থাকায় পশুপালনের বিশেষ উন্নতি লক্ষ্য করা যায়।

ঙ) পার্বত্য অঞ্চলের তুলনায় বন্ধুরতা কম বলে যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত হয় এবং জনবসতি বেশি থাকে।

চ) মালভূমির অভ্যন্তরে বড় বড় নদী উপত্যকায় কৃষিকাজ যথেষ্ট ভালো হয়।


                               সমভূমি 

১) সমভূমি কাকে বলে ? সমভূমির বৈশিষ্ট্য গুলি লেখ। সমভূমির শ্রেণীবিভাগ করো।

উঃ স্থলভাগের যেসব বিস্তীর্ণ এলাকা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অল্প উঁচু এবং সামান্য ঢালু সেই ভূ-ভাগকে সমভূমি বলে।

সমভূমির বৈশিষ্ট্যঃ 

      সমভূমি বিস্তৃত এলাকা জুড়ে অবস্থান করে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা 5 মিটার থেকে 300 মিটার এর মধ্যে হয়ে থাকে সমভূমির উপরিভাগ সমতল উপরিভাগের কোথাও কোথাও তরঙ্গায়িত ভাব থাকলেও বন্ধুরতা বিশেষ থাকেনা। বেশিরভাগ সমভূমি সঞ্চয় কার্যের ফলে সৃষ্টি হলেও ভূগাঠনিক সমভূমিও আছে।

সমভূমির শ্রেণীবিভাগ 

উৎপত্তি ও ভূমিরূপ এর পার্থক্য অনুসারে প্রধানত সমভূমি কে তিন ভাগে ভাগ করা যায় সঞ্চয়জাত সমভূমি ক্ষয়জাত সমভূমি ভূগাঠনিক সমভূমি।

২) বদ্বীপ সমভূমি সৃষ্টির জন্য কি প্রয়োজন ?

উঃ ক) অসংখ্য উপনদীসহ সুদীর্ঘ নদী।

 খ) মোহনায় সমুদ্রস্রোতের অপসারণ ক্ষমতার তুলনায় নদীর অধিক সঞ্চয় ক্ষমতা ।

গ) মোহনায় নদীর ধীরগতি 

ঘ) সমুদ্রতলদেশের মৃদু ঢাল ইত্যাদি এগুলি না থাকলে মোহনায় পলি সঞ্চিত হবে না এবং তখন বদ্বীপ গঠনের সময় এজন্য সব নদীর মোহনায় বদ্বীপ সমভূমি সৃষ্টি হয় না।






Comments

Popular posts from this blog

কর্ভাস (Carvas)প্রফেসর শঙ্কুর ডায়রি

বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা তারতম্যের কারণগুলি আলোচনা কর।

আদর্শ ফুলের গঠন চিত্র ( দশম শ্রেণী)