বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাস দ্বাদশ শ্রেণী
পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ কর্তৃক প্রণীত সিলেবাস অনুযায়ী বাঙালির ভাষা শিল্প ও সংস্কৃতি বিভাগে মে সকল গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন প্রতিবছর আসে সেই বিষয়ে প্রশ্ন উত্তরসহ আলোচনা করা হয়েছে।
বাঙালির ভাষা ও শিল্প-সংস্কৃতি।। দ্বাদশ শ্রেণি।। বাংলা চলচ্চিত্র।। চলচ্চিত্রের ইতিহাস।। সত্যজিৎ রায়।। মৃণাল সেন।। পরিতোষ সেন
বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাস
দ্বাদশ শ্রেণী
১) বাংলা চলচ্চিত্রে সত্যজিৎ রায়ের অবদান আলোচনা করো।
উঃ ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সঙ্গে সঙ্গে বাংলা দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এর ফলে বাংলা সিনেমার বাণিজ্যের পরিসর ক্রমশ সংকুচিত হয়ে পড়ে। কারণ কলকাতার তৈরি বাংলা সিনেমাগুলি বাংলাদেশে প্রদর্শনের ক্ষেত্রে বহু বাধা-নিষেধ আরোপিত হয়। এই সময়ে বাংলা চলচ্চিত্রে সত্যজিৎ রায়ের আবির্ভাব বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে।
সত্যজিৎ রায় প্রথম জীবনে এক বিজ্ঞাপন সংস্থায় কাজ করতেন। সেই সূত্রেই তাকে লন্ডনে যেতে হয়। ইংল্যান্ডে থাকাকালীন সময়ে তিনি ইউরোপের বিখ্যাত সব সিনেমা দেখার সুযোগ পান। ফলে চলচ্চিত্রে নিজস্ব ভাষা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা তৈরি হয়। এরপর তিনি দেশে ফিরে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ''পথের পাঁচালী" উপন্যাসকে চলচ্চিত্রায়িত করেন। তার এই ছবিটি অপূর্ব শিল্প সুষমায় মানুষের মনের আঙিনায় পৌঁছে যায়। তারপর পথের পাঁচালীর পরবর্তী অংশ নিয়ে তৈরি করলেন অপরাজিত ও অপুর সংসার। প্রত্যেক বছরই ধারাবাহিকভাবে মুক্তি পেতে থাকে বিভিন্ন সিনেমাগুলি। সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-- পরশপাথর, জলসাঘর, দেবী, তিনকন্যা, চারুলতা, গুপিগাইন বাঘাবাইন, সোনার কেল্লা, হীরক রাজার দেশ প্রভৃতি।
এককথায় বলা যায়, বাংলা চলচ্চিত্রে তিনি সাফল্য এনে দিয়েছেন। তিনি বিশ্বের সিনেমা দর্শকদের মুগ্ধ করেছেন। তিনি 40 বছর ধরে প্রায় 36 টি ছবি তৈরি করেছিলেন। 1992 সালে তিনি ভারতরত্ন সম্মানে সম্মানিত হয়েছেন। বাংলা চলচ্চিত্রে কেন বিশ্ব চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সত্যজিৎ রায় যথেষ্ট খ্যাতি ও প্রতিষ্ঠা অর্জন করে আছেন।
২) বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে মৃণাল সেনের অবদান লেখ।
উঃ বাংলা চলচ্চিত্রাকাশে এক উজ্জ্বলতম জ্যোতিষ্ক। তিনি বাংলা সিনেমায় এক নতুন ধারা বয়ে আনেন। চলচ্চিত্রের প্রতি তাঁর ছিল গভীর অনুরাগ, ভালোবাসা ও আবেগ। তাই তিনি অল্প দিনের মধ্যেই শ্রেষ্ঠত্বের আসনে অলংকৃত হয়েছেন।
১৯৫৫ সাল থেকে তিনি চলচ্চিত্র জগতে পদার্পণ করেন। টেলিফিল্ম, শর্টফিল্ম প্রভৃতি সব মিলিয়ে প্রায় 50 বা তার কিছু বেশি ছবিতে কাজ করেছেন। তার প্রথম ছবি - রাতভোর। যদিও এই ছবিটি খুব একটা প্রচার পায়নি । কিন্তু এর ব্যর্থতা তাকে দমাতে পারেনি। তার দ্বিতীয় ছবি নীল আকাশের নীচে। এই ছবিটিতে তিনি সাফল্য পান এবং যথেষ্ট পরিচিতি লাভ করেন। তৃতীয় ছবি বাইশে শ্রাবণ। এখান থেকেই তিনি নিজের চলার পথ খুঁজে পেয়েছিলেন। এছাড়াও তার পরিচালিত ছবিগুলি হল-- পুনশ্চ, আকাশকুসুম, ইন্টারভিউ, পদাতিক, একদিন প্রতিদিন, মহাপৃথিবী, আকাশ ভূবন প্রভৃতি।
তিনি বহু ধারাবাহিক চিত্রনাট্যতেও পারদর্শী ছিলেন। যেমন-- দশ সাল বাদ, আজনবী, কানামাছি প্রভৃতি।
পরিশেষে বলা যায়,মৃণাল সেন যেন বাংলা ছবিকে সারা বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিয়েছেন। সারা জীবনে তিনি অসংখ্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারে পুরস্কৃত হয়েছেন। তা যাইহোক, তিনি যেন বাংলা তথা ভারতীয় সিনেমা সম্পর্কে শ্রদ্ধাশীল হতে বাধ্য করেছিলেন।
৩) বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে ঋত্বিক ঘটকের অবদান লেখ।
উঃ সত্যজিৎ রায়ের সমকালীন বাংলা চলচ্চিত্রের এক বিস্ময়কর প্রতিভা হলেন ঋত্বিক ঘটক। বিমল রায়ের কাছে তার চলচ্চিত্রে হাতখড়ি। অবিভক্ত বাংলার স্মৃতি আর দেশবিভাগের যন্ত্রণাকে অবলম্বন করে তার ছবিগুলির আত্মপ্রকাশ ঘটে।
ঋত্বিক ঘটকের প্রথম ছবি হল নাগরিক।ছবিটি আর্থিক কারণে মুক্তি পায়নি। 1958 সালে তৈরি 'অযান্ত্রিক' তাঁর দ্বিতীয় হলেও, ইহা তার প্রথম প্রদর্শিত ছবি । সুবোধ ঘোষের গল্প অবলম্বনে নির্মিত এই সিনেমার বিষয়বস্তু একটি গাড়ি ও তার চালকের সম্পর্কের টানাপোড়েন। অনেকের মতে অযান্ত্রিক হলো তার শ্রেষ্ঠ ছবি। তবে তিনি পরিচিতি লাভ করেন চলচ্চিত্রের পরিচালক হিসাবে । তাঁর পরিচালিত ছবি গুলি হল -- অযান্ত্রিক, বাড়ি থেকে পালিয়ে, মেঘে ঢাকা তারা, তিতাস একটি নদীর নাম প্রভৃতি।
পরিশেষে বলা যায়, অতি সূক্ষ্ম মনস্তাত্ত্বিক বিচারে, অপূর্ব ক্যামেরার নৈপুণ্যে তিনি উৎকর্ষের শিখরে পৌঁছেছেন। তিনি বাস্তুহারা জেলেদের জীবন কাহিনী, সমকালীন রাজনীতি মূলক সিনেমায় অদূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন। এককথায় তার ছবিগুলি ছিল শিল্পধর্মী ও বাস্তববাদী। ঋত্বিকের অযান্ত্রিক ছবি সম্পর্কে সত্যজিৎ রায় বলেছেন--- ঋত্বিক এই ছবির বিষয় নির্বাচনে অসীম সাহসের পরিচয় দিয়েছিলেন,ঠিক এই জাতীয় ছবি তার আগে বাংলা চলচ্চিত্রে কেউ করেনি। এটাই তার বিশেষত্ব এবং এখানেই তিনি ব্যতিক্রমী।
Comments
Post a Comment
Haven't doubt please let me know.