পরিবেশ ব্যবস্থাপনা এনভারমেন্টাল ম্যানেজমেন্ট

     পরিবেশ ব্যবস্থাপনা 

environmental management class 12 দ্বাদশ শ্রেণীর পরিবেশ ব্যবস্থাপনা অধ্যায় থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর এখানে আলোচনা করা হয়েছে। 

                                             প্রতি প্রশ্নের মান - ৮ 

১) উন্নয়ন এবং পরিবেশ ব্যবস্থাপনার মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক ব্যাখ্যা কর।

উঃ উন্নয়ন বলতে মানবজাতির অর্থনৈতিক বৃদ্ধি, শিল্পের প্রসার এবং জাতীয় উন্নতিকে বোঝায়। অর্থাৎ কোন দেশের সামগ্রিক প্রগতি হলো উন্নয়ন। উন্নয়নের সঙ্গে পরিবেশের কোন নেতিবাচক সম্পর্ক নেই। উন্নয়ন মানে পরিবেশের ক্ষতি বা বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্য নষ্ট নয়। কোন রাষ্ট্র পরিবেশকে বিপন্ন করে উন্নয়নে সামিল হয় না। তবে কিছু স্বার্থলোভী মানুষের জন্য অনেক ক্ষেত্রে পরিবেশের অবক্ষয় ঘটে। পরিবেশকে অবক্ষয় রোধের জন্য প্রয়োজন পরিবেশ ব্যবস্থাপনা। 

উন্নয়ন ও পরিবেশ ব্যবস্থাপনাঃ 

                      পৃথিবীর উন্নত দেশগুলি প্রধানত ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকার দেশগুলি অর্থনৈতিক উন্নয়নের হার অনেক বেশি। এই দেশগুলিতে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ২০% মানুষ বসবাস করলেও প্রাকৃতিক সম্পদের ৮০%, সঞ্চিত খনিজ তেলের ৮৫%, বিদ্যুতের ৮৩%, বনজ সম্পদের ৮৫% ভোগ করে থাকে। ফলে এই দেশগুলিতে পরিবেশের অবক্ষয় ঘটার পরিমাণ বেশি। কিন্তু বর্তমানে জৈব জ্বালানির পরিমাণ কমিয়ে অচিরাচরিত শক্তির পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে।

উন্নয়নশীল দেশগুলির উন্নয়ন ও পরিবেশ ব্যবস্থাপনাঃ 

                        দক্ষিণ পশ্চিম এশিয়া, আফ্রিকা প্রভৃতি দেশগুলিতে উন্নয়নের হার অনেক কম হলেও এই দেশগুলোর প্রধান সমস্যা দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি। এরফলে খাদ্যের চাহিদা পূরণ করতে বনাঞ্চল কেটে কৃষিজমিতে পরিণত করা হয়েছে। অতিরিক্ত ফসলের আশায় প্রচুর পরিমাণে রাসায়নিক সার, কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়েছে।ফলে কৃষিজমি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। জমির উর্বরতা শক্তি নষ্ট হচ্ছে। বিপুল জনগোষ্ঠীর বাসস্থানের প্রয়োজনে বনাঞ্চল কেটে ফেলা হচ্ছে। বৈদ্যুতিক শক্তির চাহিদা মেটাতে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানো হচ্ছে। এর ফলে ক্ষতিকর গ্যাস বাতাসে মিশছে। ফলে বায়ু দূষণ বাড়িয়ে তুলেছে।

সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনাঃ 

                          পরিবেশ দূষণ দিনের পর দিন বেড়ে চলেছে। তাই পরিবেশের সুরক্ষা বিঘ্নিত হচ্ছে। এই কারণে সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় পরিবেশ সুরক্ষার জন্য কতগুলি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে ।এই ব্যবস্থা গুলি হল- ক) দূষণ পর্যবেক্ষণ এবং নিয়ন্ত্রণ খ) পরিবেশের ক্ষয়ক্ষতির হিসাব গ) পরিবেশ উন্নয়ন ঘ) পরিবেশ নীতি এবং আইন ঙ) পরিবেশ তথ্য চ) সম্পদ সংরক্ষণ ছ) আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জ) কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রশাসিত রাজ্যগুলির মধ্যে সমন্বয় ইত্যাদি।

২) পরিবেশ সুরক্ষায় গণসচেতনতা ও পরিবেশ আইনের প্রয়োজনীয়তা উদাহরণসহ আলোচনা কর। ৪+৪

উঃ প্রাকৃতিক পরিবেশের অবক্ষয় এবং পরিবেশ দূষণ আজ প্রতিটি দেশের কাছে ভয়াবহ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে সেই সঙ্গে বেড়ে চলেছে গ্রীন হাউস এফেক্ট এবং বিশ্ব উষ্ণায়নের মত মারাত্মক ঘটনা। তাই প্রতিটি দেশ এখন পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়ে সচেতন হয়ে উঠেছে। পরিবেশ সুরক্ষার ক্ষেত্রে গণ সচেতনতা গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তাগুলি হল - 

ক) সাধারণ মানুষের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক যে অতি নিবিড় তা বোঝাতে হবে।।

খ) প্রাকৃতিক সম্পদের বিভিন্ন উপাদান বেশি মাত্রায় ব্যবহার করলে তা একদিন শেষ হয়ে যাবে। তাই গণসচেতনতার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে প্রাকৃতিক সম্পদের যথাযথ ব্যবহারের সুফল সম্পর্কে জানাতে হবে। 

গ) পরিবেশ সুরক্ষার ক্ষেত্রে অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে পরিবেশ দূষণ। তাই প্রতিটি দেশের মানুষের মধ্যে পরিবেশ দূষণ ও তার ফলে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে জানাতে হবে এবং দূষণ রোধ করার চেষ্টা করতে হবে। 

ঘ) সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভিন্ন প্রকার প্রাকৃতিক এবং মনুষ্যসৃষ্ট বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাওয়ার উপায় সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। 

পরিবেশ আইনের প্রয়োজনীয়তাঃ 

                          প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার, পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা এবং পরিবেশ দূষণ রোধ করার জন্য কোনো দেশ জাতীয় ও রাজ্য স্তরে যে সকল আচরণ বিধি প্রণয়ন করে তাকে পরিবেশ আইন বলে। এই পরিবেশ আইনের প্রয়োজনীয়তা গুলি হল -

ক) পরিবেশের সামগ্রিক উন্নতির জন্য পরিবেশ সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করা প্রয়োজন। এই উদ্দেশ্যেই ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দে "পরিবেশ সুরক্ষা" আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। 

খ) অতিরিক্ত বায়ু দূষণের ফলে বায়ুমণ্ডল দূষিত হচ্ছে। এই উপলক্ষে 1981 খ্রিস্টাব্দে আমাদের দেশে "বায়ুদূষণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ" আইন চালু করা হয়। 

গ) জল আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ বর্তমানে নানা ক্রিয়া-কলাপ এর জন্য জল দূষিত হচ্ছে এর ফলে স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর হচ্ছে তাই ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে "জলদূষণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ আইন" চালু করা হয়েছে।

ঘ) মানুষ সামাজিক জীব। তাই সমাজে মিলেমিশে বাস করে। কিন্তু সমাজে যানবাহন, শিল্প- কলকারখানা, হাটবাজারের তীব্র আওয়াজ শব্দ দূষণ ঘটাচ্ছে। তাই দূষণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ২০০০ খ্রিস্টাব্দে "শব্দদূষণ আইন" প্রণয়ন করা হয়েছে। 

ঙ) জীব বৈচিত্র কোন দেশের সমৃদ্ধির পরিচয়ক বর্তমানে অনিয়ন্ত্রিত বৃক্ষচ্ছেদন চোরাশিকার কলকারখানা স্থাপন প্রভৃতি বিভিন্ন কারণে জীব বৈচিত্র ধ্বংস হতে চলেছে তাই জীব বৈচিত্র্য কে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করার জন্য ২০০২ খ্রিস্টাব্দে জীব বৈচিত্র আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। এছাড়া বন্যপ্রাণীদের সুরক্ষার জন্য ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে "বন্যপ্রাণী সুরক্ষা আইন" চালু করা হয়েছে।



।।

Comments

Popular posts from this blog

কর্ভাস (Carvas)প্রফেসর শঙ্কুর ডায়রি

বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা তারতম্যের কারণগুলি আলোচনা কর।

আদর্শ ফুলের গঠন চিত্র ( দশম শ্রেণী)