নদীর সঞ্চয় কার্যের ফলে শ্রেষ্ঠ ভূমিরূপ গুলির বিবরণ দাও।

 প্রশ্নঃ নদীর সঞ্চয় কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ গুলির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।             প্রশ্নের মান - ৫ 

উত্তরঃ পার্বত্য অঞ্চলে নদী প্রধানত ক্ষয়কাজ করে এবং সমভূমি অঞ্চলে সঞ্চয়কাজ করে। নদীর সঞ্চয় কার্যের ফলে গঠিত ভূমিরূপ সম্পর্কে আলোচনা করা হল- 

ক) পলল ব্যজনীঃ পলল শব্দের অর্থ পলি আর ব্যজনী কথার অর্থ হাতপাখা। সমভূমি অঞ্চলের ভূমির ঢাল হঠাৎ কমে যায়। ফলে নদীর গতিবেগ এবং বহন ক্ষমতা কমে যায়। তাই সমভূমির নদীখাতে পলি, বালি, কাঁকর প্রভৃতি জমে হাত পাখার মত ত্রিকোণাকার পললভূমি বা পলল ব্যজনীর সৃষ্টি করে।

উদাহরণঃ হিমালয়ের পাদদেশে গঙ্গার বিভিন্ন উপনদীতে পলল ব্যজনী দেখা যায়। 

খ) বালুচরঃ সমভূমি অঞ্চলে নদীর গতিবেগ কম থাকায় পার্বত্য অঞ্চল থেকে বয়ে আনা নুড়ি, পাথর, বালি প্রভৃতি নদীবক্ষে সঞ্চিত হয়ে চড়ের আকারে জেগে ওঠে একে নদীচর বা বালুচর বলে। 

উদাহরণঃ ব্রহ্মপুত্র নদের মাজুলী দ্বীপ ভারতের বৃহত্তম নদীচর।

গ) নদীবাঁকঃ সমভূমি অঞ্চলে নদীর গতিবেগ কমে যায়। এর ফলে সামান্য বাধা পেলেই নদী এঁকেবেঁকে প্রবাহিত হয়। একেই নদীবাঁক বা মিয়েন্ডার বলে।

উদাহরণঃ গঙ্গা নদীতে বহু নদী বাঁধ আছে।

ঘ) প্লাবনভূমিঃ সমভূমিতে ভূমির ঢাল কম থাকে বলে নদী ধীর গতিতে প্রবাহিত হয়‌। বর্ষাকালে গতিপথের এই অংশে নদীতে হঠাৎ জল বেড়ে গেলে নদীর দুই কুল ছাপিয়ে বন্যা বা প্লাবন সৃষ্টি করে। এই প্লাবিত অঞ্চলে জলের সঙ্গে বয়ে আসা কাদা, পলি, বালি প্রভৃতি সঞ্চিত হয়ে যে ভূমির সৃষ্টি করে তাকে প্লাবনভূমি বলে।

উদাহরণঃ বিহারে গঙ্গা নদীর গতিপথের দুই পাশে প্লাবনভূমি দেখা যায়। 

ঙ) অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদঃ মধ্যগতির শেষের দিকে এবং নিম্ন গতিতে নদীর প্রবাহ পথে অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদের সৃষ্টি হয়।এই সময়ে নদীর গতিবেগ খুব কম থাকে বলে সামান্য বাধা পেলেই নদী এঁকেবেঁকে প্রবাহিত হয়। ফলে জলপ্রবাহ পথে অন্তঃবাঁকের তুলনায় বহিঃবাঁকে গতিবেগ বেশি থাকে। তাই নদীর বহির বাঁকে ক্ষয়কার্য বেশি হয় কিন্তু অন্ত বাঁকে বলি কাদা ইত্যাদি সঞ্চিত হয়। নদী যখন খুব এঁকেবেঁকে প্রবাহিত হয় তখন এই দুই বাঁক কালক্রমে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে নদী সোজা পথে প্রবাহিত হতে থাকে। তখন পরিতক্ত বাঁকগুলিহ্রদে পরিণত হয়। এই হ্রদ দেখতে ঘোড়ার খুরের মতো ।তাই এর নাম অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ।

চ) বদ্বীপঃ নদীর জলের সঙ্গে বাহিত পলি, কাদা মোহনার কাছে সমুদ্রের লবণাক্ত জলের সংস্পর্শে সহজেই জমাট বেঁধে অগভীর সমুদ্রে জমা হয়। এগুলি ক্রমশ জমে জমে মোহনার কাছে যে নতুন ভূখণ্ডের সৃষ্টি করে তাকে দ্বীপ বলে। বিভিন্ন নদীতে এইভাবে যেসব দ্বীপ গড়ে ওঠে, সেগুলি দেখতে ঠিক মাত্রাহীন বাংলা ব অক্ষরের মত। তাই এদের বদ্বীপ বলে।



Comments

Post a Comment

Haven't doubt please let me know.

Popular posts from this blog

কর্ভাস (Carvas)প্রফেসর শঙ্কুর ডায়রি

বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা তারতম্যের কারণগুলি আলোচনা কর।

আদর্শ ফুলের গঠন চিত্র ( দশম শ্রেণী)