হিমবাহের ক্ষয় কার্যের ফলে সৃষ্ট তিনটি ভূমিরূপ এর সচিত্র বিবরণ

 প্রশ্নঃ হিমবাহের ক্ষয় কার্যের ফলে সৃষ্ট তিনটি ভূমিরূপ এর সচিত্র বিবরণ দাও।

উঃ হিমবাহের ক্ষয়কার্য কেবল পর্বতের উপরেই সীমাবদ্ধ থাকে। হিমবাহের ক্ষয় কার্যের ফলে উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে যে বিভিন্ন প্রকার ভূমিরূপের সৃষ্টি হয় তা হল -

ক) করি বা সার্কঃ উচ্চ পর্বত গাত্রে হিমবাহের ক্ষয় কার্যের ফলে গঠিত হাতলযুক্ত চেয়ারের মতো আকৃতি বিশিষ্ট ভূমিরূপকে করি বা সার্ক বলে।

গঠনঃ করির তিনটি অংশ মস্তক দেশে খাড়া দেওয়াল মধ্যভাগে গর্ত এবং নিম্নদিকে ধীবির মতো উঁচু শিলাস্তূপ।

বৈশিষ্ট্যঃ ক) করির পিছনের দেওয়াল খুব খাড়া হয়।

খ) করির উপরিভাগে একটি হিমবাহ অবস্থান করে।

গ) করির মধ্যভাগের গর্তে জল জমে হ্রদ তৈরি হয়, যেটিকে করি হ্রদ বা টার্ন হ্রদ বলে। 


২) হিমদ্রোণীঃ হিমবাহের ক্ষয় কার্যের ফলে সৃষ্ট উপত্যকাকে হিমদ্রোণী বলে।

গঠনঃ যে উপত্যকার মধ্য দিয়ে হিমবাহ প্রবাহিত হয় সেই উপত্যকাটি হিমবাহের ক্ষয়কার্যের দ্বারা অত্যন্ত প্রশস্ত, মোটামুটি মসৃণ তলদেশ ও পার্শ্বদেশে খাড়া ঢাল বিশিষ্ট উপত্যকায় পরিণত হয়। ইহা ইংরেজি U আকৃতি বিশিষ্ট হয়।

বৈশিষ্ট্যঃ ক) অনেক সময় এইরকম গভীর উপত্যকায় হিমবাহ গলা জল জমে হ্রদের সৃষ্টি হয়।

খ) অনেক সময় হিমদ্রোণীতে হিমসোপান বা সিঁড়ির মতো ধাপ দেখা যায়।


৩) রসে মতানেঃ হিমবাহের ক্ষয় কার্যের দ্বারা একদিক মসৃণ ও অপরদিক অমসৃণ ভূমিরূপকে রসে মতানে বলে।

গঠনঃ হিমবাহের প্রবাহ পথে কোন কঠিন শিলা উঁচু ঢিবির আকারে অবস্থান করলে হিমবাহের অবঘর্ষের ফলে ঢিবির প্রতিবাদ ঢাল অর্থাৎ হিমবাহে প্রবাহের দিকটি মসৃণ, ক্রমশ ঢালু হয় এবং অনুবাত ঢালটি উৎপাটন ক্রিয়ার ফলে এবড়োখেবড়ো, খাঁজকাটা ও ভগ্ন হয়।

বৈশিষ্ট্যঃ ক) রসে মতানে একটি মাত্র শিলায় গঠিত হয়।

খ) এর উচ্চতা বেশি হলেও বিস্তৃতি ও দৈর্ঘ্য কম হয়।

গ) এই ভূমিরূপ থেকে হিমবাহের গতিপথের ধারণা পাওয়া যায়।


৪) ঝুলন্ত উপত্যকাঃ অনেক সময় পার্বত্য অঞ্চলে সৃষ্ট অপেক্ষাকৃত বেশি শক্তিশালী প্রধান হিমবাহ উপত্যকায় দু-পাশ থেকে অনেক কম শক্তিশালী ছোট ছোট হিমবাহ এসে মেশে। দেখে মনে হয় যেন উপহিমবাহ উপত্যকাটি প্রধান হিমবাহ উপত্যকার উপর ঝুলন্ত অবস্থায় আছে। এইভাবে ঝুলে থাকা উপহিমবাহ উপত্যকাকে ঝুলন্ত উপত্যকা বলে।

বৈশিষ্ট্যঃ ক) প্রধান হিমবাহ উপত্যকার উপরে ঝুলন্ত উপত্যকা গুলি থেকে ছোট ছোট হিমবাহ নেমে আসে।

খ) ঝুলন্ত উপত্যকায় নদী ও জলপ্রপাত তৈরি হতে পারে।

উদাহরণ - বদ্রিনাথের কাছে ঋষিগঙ্গা উপত্যকা।


৫) পিরামিড চূড়াঃ পার্বত্য উপত্যকায় হিমবাহের ক্ষয় কার্যের অন্যতম নিদর্শন হল পিরামিড চূড়া। একটি পর্বতের বিভিন্ন দিকে পাশাপাশি তিন চারটি বিপরীতমুখী করীর সৃষ্টি হলে, সেগুলি ক্রমাগত মস্তক দেশের দিকে ক্ষয় প্রাপ্ত হয়ে একটি পিরামিডের মতো আকৃতির চূড়া গঠন করে। একে পিরামিড চূড়া বলে।

বৈশিষ্ট্যঃক) পিরামিড চূড়ার বিভিন্ন দিকে বেশ কয়েকটি করি থাকে।

খ) পিরামিড চূড়া পর্বতের শীর্ষ দেশ বা শৃঙ্গ বিশেষ।

উদাহরণ - আল্পস পর্বতের ম্যাটার হর্ন ।



Comments

Post a Comment

Haven't doubt please let me know.

Popular posts from this blog

কর্ভাস (Carvas)প্রফেসর শঙ্কুর ডায়রি

বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা তারতম্যের কারণগুলি আলোচনা কর।

আদর্শ ফুলের গঠন চিত্র ( দশম শ্রেণী)