নিয়ত বায়ু কাকে বলে বিভিন্ন প্রকার নিয়ত বায়ু প্রবাহ সমূহের গতিপথ বর্ণনা করো।

 প্রশ্নঃ নিয়ত বায়ু কাকে বলে বিভিন্ন প্রকার নিয়ত বায়ু প্রবাহ সমূহের গতিপথ বর্ণনা করো।

 অথবা, ভূমন্ডলীয় বায়ুচাপ বলয়ের সঙ্গে সম্পর্ক নির্দেশ করে বায়ু প্রবাহের শ্রেণীবিভাগ কর। 

উঃ 

নিয়ত বায়ুঃ

           যেসব বায়ু সারাবছর নিয়মিতভাবে নির্দিষ্ট ও স্থায়ী উচ্চচাপ বলয় থেকে নির্দিষ্ট ও স্থায়ী নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত হয় তাদের নিয়ত বায়ু বলে। নিয়ত বায়ুকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়, যেমন- ক) আয়ন বায়ু খ) পশ্চিমা বায়ু ও গ) মেরু বায়ু। 

ক) আয়ন বায়ুঃ 

                 নিরক্ষীয় অঞ্চলে সারাবছর প্রখর সূর্যরশ্মি এবং পৃথিবীর আবর্তন গতির জন্য বায়ুর গতি বিক্ষেপ ঘটে। ফলে এখানকার বায়ু উষ্ণ ও হালকা হয়ে উপরে উঠে যায়। তাই এখানে নিম্নচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হয়। চাপের সমতা রক্ষার জন্য সারা বছর কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে দুটি বায়ুপ্রবাহ নিয়মিতভাবে এই নিম্নচাপ বলয়ের দিকে ছুটে যায়, একেই আয়ন বায়ু বলে। 

                  উত্তর গোলার্ধে এই বায়ুকে উত্তর-পূর্ব আয়ন বায়ু এবং দক্ষিণ গোলার্ধে এই বায়ুকে দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ু বলে। ফেরেলের সূত্র অনুসারে এই বায়ু উত্তর গোলার্ধের ডান দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বাম দিকে বেঁকে প্রবাহিত হয়। 

বাণিজ্য বায়ুঃ 

             অতীতকালে পালতোলা জাহাজগুলি আয়ন বায়ু প্রবাহকে অনুসরণ করে নিয়মিতভাবে চলাচল করত বলে এই বায়ুকে বাণিজ্য বায়ু বলে। 

খ)  পশ্চিমা বায়ুঃ 

                 মেরুবৃত্ত প্রদেশীয় অঞ্চলে পৃথিবীর আবর্তনের বেগ বেশি হওয়ার ফলে যে নিম্নচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হয় তাকে পূরণ করার জন্য কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে দুটি বাতাস এই অঞ্চলের দিকে ছুটে আসে। মহাদেশের পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহিত হয় বলে একে পশ্চিমা বায়ু বলে। 

                  এই বায়ু ফেরেলের সূত্র অনুসারে উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে বেঁকে দক্ষিণ-পশ্চিম পশ্চিমা বায়ু নামে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বামদিকে বেঁকে উত্তর-পশ্চিম পশ্চিমা বায়ু নামে প্রবাহিত হয়। দক্ষিণ গোলার্ধে জলভাগের পরিমাণ বেশি থাকায় এই বায়ু ৪০ থেকে ৬০° দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যে সারা বছর প্রবল বেগে প্রবাহিত। একে গর্জনশীল চল্লিশা বলে। 

গ) মেরু বায়ুঃ 

               সুমেরু ও কুমেরু উচ্চচাপ বলয় থেকে সারাবছর নিয়মিতভাবে দুটি বায়ু মেরু বৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে ছুটে আসে,একে মেরু বায়ু বলে। 

               ফেরাদের সূত্র অনুসারে এই বায়ু উত্তর গোলার্ধে ডান দিকে বেঁকে উত্তর-পূর্ব মেরবায়ু নামে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বামদিকে বেঁকে দক্ষিণ-পূর্ব মেরু বায়ু নামে প্রবাহিত হয়। উত্তর গোলার্ধে এই বায়ু শীতল ও শুষ্ক প্রকৃতির হয়। তবে দক্ষিণ গোলার্ধে এই বায়ুর প্রভাবে প্রবল ঝড় বৃষ্টি হয়।


প্রশ্নঃ প্রতীপ ঘূর্ণবাত কাকে বলে ? এর উৎপত্তি গঠন ও বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর। 

উঃ 

প্রতীপ ঘূর্ণবাতঃ 

          ভূ-পৃষ্ঠের নাতিশীতোষ্ণ ও শীতল অঞ্চলের কোন স্থান যদি খুব শীতল হয়ে পড়ে তাহলে ওই স্থানে উচ্চচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হয়। এই উচ্চচাপ কেন্দ্রের শীতল ও ভারী বায়ু ঘুরতে ঘুরতে নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে ছুটে যায়। এরূপ কেন্দ্র বহির্মুখী ও নিম্নগামী ঘূর্ণায়মান বায়ু প্রবাহকে প্রতীপ ঘূর্ণিবাত বলে। 

প্রতীপ ঘূর্ণবাতের উৎপত্তিঃ 

             প্রতীপ ঘূর্ণবাত সাধারণভাবে শীতল নাতিশীতোষ্ণ মন্ডল বা হিম মন্ডলের স্থলভাগে সৃষ্টি হয়। এই অঞ্চলের বাতাস অত্যাধিক শীতল হয়ে পড়লে সেখানে প্রতীপ ঘূর্ণবাত সৃষ্টি হয়। 

প্রতীপ ঘূর্ণবাতের গঠনঃ 

                   হিমমন্ডল ও শীতল নাতিশীতোষ্ণ মন্ডলের কোন কোন স্থানে অত্যাধিক শীতলতার জন্য স্থানীয়ভাবে উচ্চ চাপের সৃষ্টি হয় । এই উচ্চ চাপের শীতল শুষ্ক ও ভারী বায়ু কুন্ডলাকারে চারিদিকে প্রবাহিত হয়। এই বায়ু প্রবাহ মূলত কেন্দ্র বহির্মুখী এবং অধোগামী হয়। 

                    এই বায়ু উত্তর গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার দিকে অর্থাৎ ডানদিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে অর্থাৎ বাম দিকে বেঁকে প্রবাহিত হয়। 



Comments

Popular posts from this blog

কর্ভাস (Carvas)প্রফেসর শঙ্কুর ডায়রি

বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা তারতম্যের কারণগুলি আলোচনা কর।

আদর্শ ফুলের গঠন চিত্র ( দশম শ্রেণী)