সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস তৃতীয় অধ্যায় প্রশ্ন ও উত্তর

ভারতের সমাজ, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির কয়েকটি ধারা: খ্রিস্টীয় সপ্তম দ্বাদশ শতক

        ইতিহাস সপ্তম শ্রেণি 

          (তৃতীয় অধ্যায়)

প্রশ্নঃ পাল ও সেন যুগে অর্থনীতি কেমন ছিল ? 

উঃ পাল ওসেন যুগে বাংলার অর্থনীতির মূল ভিত্তি ছিল কৃষি শিল্প ও বাণিজ্য। এ বিষয়ে নিম্নে আলোচনা করা হলো।

কৃষিঃ পাল ও সেন যুগে কৃষি ছিল মানুষের প্রধান জীবিকা। প্রতিটি গ্রামে কৃষিজমি ওগোচরণ জমি ছিল। এই যুগে রাজারা উৎপন্ন ফসলের ১/৬ কৃষকদের কাছ থেকে কর হিসাবে নিতেন। এর পাশাপাশি রাজারা নিজেদের জন্য ফুল ফল কাট প্রভৃতি প্রজাদের কাছ থেকে কর হিসাবে আদায় করতেন।

বাণিজ্যঃ পালোসেন যুগে বাংলার অর্থনীতিতে বাণিজ্যের গুরুত্ব কমে এসেছিল। বনিকরাও তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য রাজাকে কর দিত। এই যুগে সোনা রুপার ব্যবহার কমে গিয়েছিল। কড়ি ছিল জিনিস কেনাবেচার প্রধান মাধ্যম।

শিল্পঃ শিল্প দ্রব্যের মধ্যে কার্পাস বস্তু ছিল প্রধান। এই যুগে হস্তশিল্প ছিল উল্লেখযোগ্য। এই যুগে কাপড়ের খ্যাতি দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল।

অন্যান্য সুবিধাঃ পাল ও সেন যুগে গৃহপালিত ও বন্য পশুদের মধ্যে ছিল গরু ছাগল হাঁস মুরগি বানর ইত্যাদি। এই সমস্ত গৃহপালিত পশুরা মাংসের প্রয়োজন মেটাতো। গ্রামবাসীরা গ্রামের ওপর কর দিত এবং হাট বাজার খেয়া ঘাটের উপরেও কর দিত রাজাকে। 

টীকা লেখঃ নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ।

উঃ প্রাচীন ভারতের শিক্ষা সংস্কৃতির ইতিহাসে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল।

             বর্তমানে এই বৌদ্ধবিহারটি বিহার রাজ্যে অবস্থিত। সম্ভবত গুপ্ত যুগে এই বৌদ্ধবিহারটি তৈরি হয়েছিল। কালক্রমে সমগ্র এশিয়ায় এর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল। সুদূর তিব্বত, চীন, কোরিয়া, মঙ্গোলিয়া থেকে ছাত্ররা এখানে পড়তে আসতো। এখানে একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো চীন দেশের ছাত্রদের জন্য বিশেষ তহবিলের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ছাত্ররা এখানে পড়ার সুযোগ পেতো। ইউয়েন সাঙ এই বৌদ্ধবিহারে শিক্ষা লাভ করেছিলেন। 

প্রশ্নঃ পাল ও সেন যুগে বাংলায় কি কি ফসল উৎপন্ন হতো ? সেই ফসল গুলির মধ্যে কোনটি এখনও চাষ করা হয় ? 

উঃ পাল ওসেন যুগে অর্থনীতির ভিত্তি ছিল কৃষি। এই যুগের প্রধান ফসল গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ধান। এছাড়া সরষে, তুলো, পান, সুপারি, এলাচ, মহুয়া ইত্যাদি প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন করা হতো। নানা রকম ফলের মধ্যে ছিল আম, কাঁঠাল, কলা, খেজুর, ডালিম, নারকেল ইত্যাদি।

        এই যুগের ফসলগুলির মধ্যে বর্তমানে চাষ করা হয় ধান, সরষে ইত্যাদি। বাঙ্গালীদের খাদ্য তালিকায় ডাল একটি খাদ্যের প্রধান উপাদান। কিন্তু সেই যুগে ডাল উৎপন্ন হতো না। 

ভারতের সমাজ, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির কয়েকটি ধারা: খ্রিস্টীয় সপ্তম দ্বাদশ শতক

টীকা লেখঃ বিক্রমশীল মহাবিহার। 

উঃ নালন্দা মহাবিহার এর খ্যাতি যখন ধীরে ধীরে কমে আসে তখন উচ্চশিক্ষার স্থান হিসেবে বিক্রমশীল মহাবিহারটির প্রতিষ্ঠিত হয়। 

          পাল যুগের বিক্রমশীল মহাবিহার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। পাল রাজা ধর্মপাল এই মহাবিহারটি প্রতিষ্ঠা করেন। ইহা মগধের উত্তর ভাগে গঙ্গার তীরে গড়ে উঠেছিল। নানা জায়গা থেকে পড়াশোনার জন্য ছাত্ররা এখানে আসতো। এখানে ব্যাকরণ, দর্শন, তর্কশাস্ত্র ইত্যাদি বিষয়ে পড়ানো হতো। প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ছাত্ররা ভর্তির সুযোগ পেতো। বিখ্যাত অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান ছিলেন এই মহাবিহারের একজন অন্যতম মহাচার্য। এখানে ধর্মচর্চা ও শিক্ষার জন্য ১০০র বেশি আচার্য ছিলেন। তিন হাজার ছাত্র এখানে পড়তো বিনা খরচে। 

প্রশ্নঃ রাজা লক্ষণ সেনের রাজসভার সাহিত্যচর্চার পরিচয় দাও। 

উঃ রাজা লক্ষণ সেন ছিলেন সাহিত্যানুরাগী। তিনি তার পিতার অসমাপ্ত গ্রন্থ অদ্ভুত সাগর সমাপ্ত করেছিলেন।

পঞ্চরত্নঃ 

প্রশ্নঃ পাল শাসনের তুলনায় সেন শাসন কেন বাংলায় কম দিন স্থায়ী হয়েছিল ? 

উঃ বাংলায় পাল শাসন প্রায় ৪০০ বছরেরও বেশি দিন স্থায়ী হয়েছিল। কিন্তু সেই তুলনায় সেন শাসন চলেছিল মাত্র ১০০ বছরের কিছুদিন বেশি।এর কারণগুলি হল- 

জনসমর্থনঃ বিভিন্ন সামন্ত রাজার দ্বারা নির্বাচিত হয়ে গোপাল বাংলার রাজা হয়েছিলেন। তাই পাল রাজাদের রাজা হওয়ার পিছনে প্রচুর জনসমর্থন ছিল। কিন্তু সেন বংশের প্রতিষ্ঠাতা বিজয় সেন এমন কোন জনসমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় আসেননি। 

গ্রহণযোগ্যতাঃ পাল রাজারা তাদের শাসনকালে জনগণের কাছে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠতে পেরেছিলেন কিন্তু সেন্স শাসকরা সেভাবে নিজেদের গ্রহণযোগ্য করে তুলতে পারেননি। 

অন্যান্য বিষয়ঃ শিল্প ও সাহিত্যচর্চা এবং ধর্মীয় উদারতায় পাল রাজাদের তুলনায় সেন শাসকরা অনেকখানি পিছিয়ে ছিলেন।  

            এসব কারণেই পাল শাসনের তুলনায় সেন্সাসন বাংলায় কম দিন স্থায়ী হয়েছিল।

প্রশ্নঃ পাল আমলে বাংলার শিল্প ও স্থাপত্যের কি পরিচয় পাওয়া যায় ? 

উঃ পাল যুগের বাংলায় স্থাপত্য ও ভাস্কর্যে এক উল্লেখযোগ্য অধ্যায় রচিত হয়েছিল। খ্রিস্টীয় নবম শতক থেকে দ্বাদশ শতক পর্যন্ত এই যুগের শিল্পকলাকে সাধারণভাবে পাল,সেন যুগের শিল্পকলা বলা হয়। 

              বাংলার সোমপুর, পাহাড়পুর, ওদন্তপুর প্রভৃতি স্থানের বৌদ্ধবিহার ও মন্দিরগুলি বাংলার স্থাপত্যের উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। এই মন্দিরগুলির গায়ে অঙ্কিত বিভিন্ন মূর্তিগুলি ভাস্কর্যের সাক্ষ্য বহন করে। পোড়া মাটি ইট ও কাদার গাঁথনিতে মন্দির গুলি তৈরি হতো। ধীমান ও বিটপাল ছিলেন এই যুগের শ্রেষ্ঠ ভাস্কর। তার মৃৎশিল্প ধাতব মূর্তি শিল্প ও চিত্রকলায় বিশিষ্ট শিল্প গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

প্রশ্নঃ পাল ও সেন যুগের সমাজ ও সংস্কৃতি সম্পর্কে আলোচনা কর। 

উঃ

প্রশ্নঃ সুলতান মাহমুদের ভারত আক্রমণের কারণগুলি লেখ। 

উঃ সুলতান মাহমুদ ১৭ বার ভারত আক্রমণ করেছিলেন তার ভারত আক্রমণের পিছনে ঐতিহাসিকদের মধ্যে নানা মতপার্থক্য আছে। তবে কিছু কারণ সম্পর্কে নেমে আলোচনা করা হলো। 

ধর্মীয় কারণঃ 

            মাহমুদ ছিলেন একজন মুসলিম শাসক তিনি ভারতের হিন্দু রাজ্যগুলিকে পরাজিত করে ইসলাম ধর্ম প্রচার করতে চেয়েছিলেন।

অর্থনৈতিক কারণঃ 

             ভারত ছিল একটি সমৃদ্ধশালী দেশ তিনি সম্পদ লুট করতে চেয়েছিলেন ভারত থেকে ধন-সম্পদ ও মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে তার সাম্রাজ্যের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে চেয়েছিলেন। 

রাজনৈতিক কারণঃ 

               সুলতান মাহমুদ তার শক্তি ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ভারত আক্রমণ করেছিলেন তিনি ভারতের বিভিন্ন রাজ্যকে পরাজিত করে তার সাম্রাজ্যের আকার ও প্রভাব বাড়াতে চেয়েছিলেন। 

প্রশ্নঃ সামন্ততন্ত্র কাকে বলে ? 

উঃ সামন্ততন্ত্র মূলত এক প্রকার ভূমি ব্যবস্থাপনা। খ্রিস্টীয় নবম শতকে পশ্চিম ইউরোপে এক রকমের সামরিক ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা দেখা গিয়েছিল একে সামন্ততন্ত্র বলে। 

            সামন্ত কাঠামো ছিল ত্রিভুজের মতো। এর সর্বোচ্চ স্তরে ছিলেন রাজা এবং সর্বশেষ স্তরে জনগণ থাকতেন ।এর মাঝের স্তরগুলিতে কিছু মাঝারি শাসক ও মহাসামন্ত বিরাজ করতেন। রাজস্ব ও শাসনের অধিকার এইভাবে স্তরে স্তরে ভাগ হয়ে যাওয়ার ব্যবস্থাকেই সামন্ত ব্যবস্থা বলা হয়।

প্রশ্নঃ টীকা লেখ- চক্রপানি দত্ত 

উঃ পাল যুগের একজন বিখ্যাত চিকিৎসক ও বিজ্ঞানী ছিলেন চক্রপানি দত্ত।

           তিনি বীরভূম জেলায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন ।তিনি একজন টীকাকার হিসেবে সর্বাধিক প্রসিদ্ধ ছিলেন। চরক ও সুশ্রুত সংহিতার ওপর তিনি টীকা লিখেছিলেন। এছাড়া তিনি নানা গাছ-গাছড়া, এক কথায় নানা ভেষজ উদ্ভিদের ঔষধ নিয়েও বই লিখেছিলেন। তার লেখা শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ হল চিকিৎসা সংগ্রহ।

প্রশ্নঃ পাল যুগের শিল্পকলা সম্পর্কে যা জান লেখ। 

উঃ খ্রিস্টীয় নবম শতক থেকে দ্বাদশ শতক পর্যন্ত সময়ের শিল্পকলাকে পাল যুগের শিল্পকলা বলা হয়। এই সময়ে স্থাপত্য ভাস্কর্য ও চিত্রকলার অবদান ছিল যথেষ্ট উল্লেখযোগ্য। বাংলার সোমপুর, পাহাড়পুর, ওদন্তপুর প্রভৃতি স্থানের বৌদ্ধবিহার ও বিভিন্ন স্থানের মন্দিরগুলি বাংলার কীর্তির উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। এইসব বিহার ও মন্দিরের গায়ে নানা মূর্তিগুলি বাংলার উন্নত ভাস্কর্যের সাক্ষ্য বহন করে। ধীমান ও বিট পাল ছিলেন এই যুগের শ্রেষ্ঠ ভাস্কর।

         তারা মৃৎশিল্প ধাতব মূর্তি শিল্প ও চিত্রকলার এক বিশিষ্ট শিল্পীগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠা করেন। পাথর ও পোড়া মাটির উপর সূক্ষ্ম কারুকার্যে তারা দক্ষ ছিলেন। চিত্রশিল্পেও বাংলা সেদিন যথেষ্ট উন্নত ছিল। রামপালের আমলে রচিত চিত্রগুলি ছিল সেযুগের উল্লেখযোগ্য নিদর্শন। এই যুগের শ্রেষ্ঠ শিল্পী ছিলেন শূলপানি দত্ত।

প্রশ্নঃ ব্রহ্মদেয় ব্যবস্থা বলতে কী বোঝো ? 

উঃ প্রাচীন ভারতে রাজা বা ধনী ব্যক্তিরা নিজেদের পুণ্য অর্জনের জন্য ব্রাহ্মণ বা বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে জমি দান করতেন, ইহা ব্রহ্মদেয় ব্যবস্থা নামে পরিচিত। 

             কৃষি জমির পরিমাণ বৃদ্ধির উদ্দেশ্যেই ব্রাহ্মণদের অনেক সময় জমিদান করা হতো। ব্রাহ্মণদের দেওয়া এই জমির ওপর কোনো কর নেওয়া হতো না। দক্ষিণ ভারতে মূলত চোল শাসনকালে এই ব্যবস্থা চালু ছিল।

প্রশ্নঃ পাল ও সেন যুগের সমাজ ও সংস্কৃতি সম্পর্কে আলোচনা কর। 

উঃ

প্রশ্নঃ পাল আমলে বাংলার শিল্প ও স্থাপত্যের কি পরিচয় পাওয়া যায় ? 

উঃ খ্রিস্টীয় নবম শতক থেকে দ্বাদশ শতক পর্যন্ত সময়ের শিল্পকলা কে পাল যুগের শিল্পকলা বলা হয়। এই সময়ে শিল্প ও স্থাপত্যে বাংলার এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় রচনা করেছিল। 

প্রাচ্য শিল্প রীতিঃ পাল যুগের শিল্প রিতির নাম ছিল প্রাচ্য শিল্প রীতি। এই শিল্প রীতির পূর্বসূরী ছিল গুপ্তযুগের শিল্পকলা। পাল আমলের স্থাপত্যের মধ্যে ছিল স্তুপ, বিহার ও মন্দির। 

স্তূপঃ পাল শাসনকালে তৈরি স্তূপ গুলি দেখতে ছিল শিখরের মত এই যুগে নির্মিত স্তূপ গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বাংলাদেশের ঢাকা জেলার আশরাফপুর, রাজশাহীর পাহাড়পুর, চট্টগ্রাম এবং পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার ভরতপুর গ্রামের বৌদ্ধস্তূপ।

বৌদ্ধবিহারঃ বিহারগুলি ছিল বৌদ্ধ ভিক্ষুদের বাসস্থান এবং বৌদ্ধ জ্ঞান চর্চার অন্যতম প্রধান কেন্দ্র। বাংলার সোমপুর, পাহাড়পুর, ওদন্তপুর প্রভৃতি স্থানে বৌদ্ধবিহার ছিল পাল আমলের উল্লেখযোগ্য বিহার। 

মন্দিরঃ  পাল আমলে মন্দির তৈরিতে স্থানীয় পোড়ামাটির ইট এবং কাদার গাঁথুনি ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। মন্দিরের গায়ে নানা মূর্তিগুলি বাংলার উন্নত ভাস্কর্যের স্বাক্ষর বহন করে।

প্রশ্নঃ খলিফা ও খিলাফত কি ?

উঃ

প্রশ্নঃ পাল যুগে কেন বেশি স্তুপ বানানো হয়েছিল ? 

উঃ 








       

Comments

Popular posts from this blog

কর্ভাস (Carvas)প্রফেসর শঙ্কুর ডায়রি

বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা তারতম্যের কারণগুলি আলোচনা কর।

আদর্শ ফুলের গঠন চিত্র ( দশম শ্রেণী)