অধীনতা মূলক মিত্রতা নীতি ও স্বত্ববিলোপ নীতি অষ্টম শ্রেণী ইতিহাস
১) অধীনতামূলক মিত্রতা নীতিঃ টীকা লেখ
উঃ ইংরেজরা যে শুধুমাত্র যুদ্ধের মাধ্যমে ভারতে সাম্রাজ্য বিস্তার করেছিল তা নয়,তারা অনেক ক্ষেত্রে নানা ছলনার আশ্রয় নিয়েছিল। যেখানে যুদ্ধের মাধ্যমে রাজ্য জয় করতে অসুবিধা হতো সেখানে তারা কূটনীতির আশ্রয় গ্রহণ করতেন। তেমনই একটি নীতি হলো অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি। ১৭৯৮ খ্রিস্টাব্দে লর্ড ওয়েলেসলি এই নীতি প্রবর্তন করেছিলেন।
নীতির শর্তঃ
কোন দেশীয় রাজা অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি গ্রহণ করলে তাকে কয়েকটি শর্ত পালন করতে হতো। যেমন-
ক) মিত্রতায় আবদ্ধ দেশীয় রাজ্যগুলিকে কোম্পানির বশ্যতা স্বীকার করতে হবে।
খ) সংশ্লিষ্ট দেশীয় রাজ্যগুলি নিজেদের খরচে একদল ইংরেজ সৈন্য এবং একজন ইংরেজ রেসিডেন্ট রাখতে হবে।
গ) মিত্র রাজ্যগুলির বৈদেশিক নীতি ইন্ডিয়া কোম্পানি ধারণ করবে।
ঘ) চুক্তিবদ্ধ রাজ্যে ব্রিটিশ ছাড়া অন্য সমস্ত ইউরোপীয়কে তাড়িয়ে দিতে হবে।
ঙ) এইসব বশ্যতার বিনিময় কোম্পানি সেই রাজ্যকে অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ বৈদেশিক আক্রমণ ও অন্যান্য বিপদ থেকে রক্ষা করবে।
রাজ্য দখলঃ
এই নীতি সর্বপ্রথম গ্রহণ করেন হায়দ্রাবাদের নিজাম। এরপর অযোধ্যা ,তাঞ্জোর, সুরাট ,পুনা প্রভৃতি রাজ্যগুলি এই নীতিতে আবদ্ধ হয়ে ইংরেজদের আশ্রিত রাজ্যে পরিণত হয়।
ফলাফলঃ
লর্ড ওয়েলেসলির অধীনতামূলক মিত্রতা নীতির ফলে -
ক) ব্রিটিশদের বিরাট সেনাবাহিনী পরিচালনার খরচ কমে যায় ।
খ) দেশীয় রাজ্যগুলোর ঐক্যে ফাটল ধরে ।
গ) প্রকৃতপক্ষে ব্রিটিশ শক্তি ভারতের প্রধান সার্বভৌম শক্তিতে পরিণত হয়।
২) টীকা লেখঃ স্বত্ববিলোপ নীতি
উঃ যুদ্ধের মাধ্যমে রাজ্য বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে লর্ড ডালহৌসি ১৮৪৮ খ্রিস্টাব্দে স্বত্ববিলোপ নীতি প্রবর্তন করেন।
নীতির শর্তঃ
স্বত্ববিলোপ নীতির মূল কথা ছিল যে,
ক) ইংরেজদের আশ্রিত কোন রাজ্যের উত্তরাধিকারী না থাকলে সেই রাজ্য ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত করা হবে।
খ) হিন্দু আইনে বৈধ দত্তক পুত্র গ্রহণ করা যাবেনা।
গ) কোম্পানির আশ্রিত করদ রাজ্যের ক্ষেত্রে দত্তক গ্রহণ ছিল কোম্পানির অনুমোদন সাপেক্ষ। অনুমোদন না পেলে এই রাজ্যের স্বত্ব লোপ পাবে।
ঘ) স্বাধীন রাজ্যগুলির ক্ষেত্রে দত্তক গ্রহণে কোম্পানির কোনো আপত্তি থাকবে না।
সাম্রাজ্য বিস্তারঃ
লর্ড ডালহৌসি স্বত্ববিলোপ নীতি প্রয়োগ করে সাতারা, সম্বলপুর, নাগপুর, ঝাঁসি, উদয়পুর, ভগত প্রভৃতি রাজ্যগুলি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন।
ফলাফলঃ
স্বত্ববিলোপ নীতি ছিল একটি কুটিল ও ত্রুটিপূর্ণ নীতি। এই নীতিতে হিন্দু সমাজের সনাতন দত্তক প্রথা রোদ হয়।ফলে লোক অসন্তুষ্ট হয়। এই নীতি-নির্বিচারে প্রয়োগ করায় ডালহৌসি মহাবিদ্রোহের পথ প্রস্তুত করেন।
৩) মীর কাশিমের সঙ্গে ব্রিটিশ কোম্পানির বিরোধের ক্ষেত্রে কোম্পানির বণিকদের ব্যক্তিগত ব্যবসার কি ভূমিকা ছিল ?
উঃ ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে মীরজাফরের জামাতা মীর কাসিমকে বাংলার সিংহাসনে বসানো হয়। কোম্পানির সাথে চুক্তি অনুযায়ী মীর কাসিম কোম্পানিকে বর্ধমান মেদিনীপুর ও চট্টগ্রামের রাজস্ব আদায়ের অধিকার দিয়ে দেন। ইংরেজদের প্রভাব প্রতিপত্তি থেকে মুক্ত রাখার জন্য তিনি নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
কোম্পানি বণিকদের ব্যক্তিগত ব্যবসারঃ
কোম্পানির বণিকদের তরফে বেআইনি ব্যবসার ফলে বাংলার অর্থনীতি সমস্যার মুখে পড়েছিল। কোম্পানি শুল্ক ফাঁকি দেওয়ায় নবাবের প্রাপ্য রাজস্বের ঘাটতি পড়েছিল। অন্যদিকে দেশীয় বণিকরা শুল্ক দিতে বাধ্য হওয়ায় অসম প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছিল। এছাড়া অন্যান্য বিদেশি বণিক গোষ্ঠীও ব্রিটিশ কোম্পানির ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে নবাবের কাছে নালিশ চালাতে থাকে। শেষ পর্যন্ত নবাব দেশীয় বণিকদের ওপর বাণিজ্য শুল্ক তুলে নেন। ফলে অসম প্রতিযোগিতার হাত থেকে দেশীয় বণিকরা রক্ষা পেলেও নবাবের কোষাগার অর্থ সংকটের মুখে পড়েছিল।
Comments
Post a Comment
Haven't doubt please let me know.